Loading AI tools
কীটপতঙ্গের গণ উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
ড্রসোফিলা হল ছোট মাছিদের একটি গণ যা ড্রসোফিলিডি গোত্রের অন্তর্ভুক্ত। এই গণের সদস্যদেরকে প্রায়ই “ফলের মাছি” অথবা (মাঝেমাঝে) ছোবড়া মাছি, সির্কা মাছি, বা ওয়াইন মাছি বলা হয় কারণ এদের অনেককেই অতিপক্ব বা পচাগলা ফলাদির আশেপাশে ঘুরঘুর করতে দেখা যায়। অনেক সময় এই গণের মাছিগুলোকে আরেকটি ভিন্ন গণের মাছির সাথে গুলিয়ে ফেলা হয়। ঐ গণটির নাম টেফ্রিটিডি যেটি ড্রসোফিলিডি'র মতোই ফলের উপর নির্ভরশীল, তবে একে মাঝেমাঝে “প্রকৃত ফলের মাছি” বলা হয়। টেফ্রিটিডি গণের মাছিরা মূলত অপরিপক্ব অথবা পক্ব ফলমূল খেয়ে জীবন ধারণ করে যদিও এদেরকে ফসলের ক্ষতিকারক বালাই বলে গণ্য করা হয়। এমন একটি সংহারক প্রজাতি হল ভূমধ্যসাগরীয় ফলের মাছি। ড্রসোফিলিডি গণের সবচাইতে জনপ্রিয় প্রজাতির নাম ড্রসোফিলা মেলানোগেস্টার (D. melanogaster), কারণ এটি জিনতত্ত্ব গবেষণায় ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়েছে, তাছাড়া বিকাশমূলক জীববিজ্ঞানে এটি একটি প্রচলিত মডেল জীব। জীববিজ্ঞানের আধুনিক গবেষণাপত্রগুলিতে “ফলের মাছি” ও ড্রসোফিলা উভয় পদকে সমার্থকরূপে ব্যবহার করা হয়। তথাপি, ড্রসোফিলার সম্পূর্ণ গণ ১৫০০-এরও অধিক প্রজাতি নিয়ে গঠিত যাদের বাহ্যিক চেহারা, আচরণ, এবং প্রজনন আবাস অত্যন্ত বৈচিত্রপূর্ণ।[1]
ড্রসোফিলা | |
---|---|
ড্রসোফিলা রেপলেটা | |
বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস | |
জগৎ: | Animalia |
পর্ব: | Arthropoda |
শ্রেণী: | Insecta |
বর্গ: | Diptera |
পরিবার: | Drosophilidae |
গণ: | Drosophila |
আদর্শ প্রজাতি | |
ড্রসোফিলা ফুনেব্রিস ফাব্রিসিউস, ১৭৮৭ | |
উপগণ | |
| |
প্রতিশব্দ | |
ওইনোপোটা কিরবি ও স্পেন্স, ১৮১৫ |
ড্রসোফিলা, যার অর্থ “শিশির-প্রেমী”, একটি আধুনিক বৈজ্ঞানিক লাতিন অভিযোজন যেটিকে গ্রীক শব্দ δρόσος, ড্রসোস, “শিশির”, এবং φίλος, ফিলোস, “প্রেমময়” থেকে লাতিন -a সহ গ্রহণ করা হয়েছে।
ড্রসোফিলা হল লাল চক্ষুবিশিষ্ট মাছি যার বর্ণ সাধারণত পান্ডুর হলুদ থেকে লালচে বাদামী বা কালো হয়। অনেক প্রজাতির পাখায় সুনির্দিষ্ট কালো ঢক রয়েছে। গ্রোত্রটিকে চেনার জন্য যেসব বৈশিষ্ট্য ব্যবহার করা হয় সেগুলো হল—পালকবিশিষ্ট অ্যারিস্টা, মস্তক ও বক্ষের কন্টকময়তা, এবং পাখার শিরাবিন্যাস। অধিকাংশ মাছিই ছোটছোট, প্রায় ২-৪ মিলিমিটার দীর্ঘ, তথাপি কিছু প্রজাতির মাছি, যেমন হাওয়াই অঞ্চলের প্রজাতিগুলো, হাউজফ্লাই বা ঘরের মাছি থেকেও বড় আকারের হয়।
পুরো পৃথিবীজুড়েই ড্রসোফিলার আবাস, তবে ক্রান্তীয় অঞ্চলগুলোতে এসব প্রজাতির সংখ্যা বেশি। এদেরকে মরুভূমি, ক্রান্তীয় বৃষ্টি অরণ্য, শহর, জলাভূমি, এবং আলপাইন অঞ্চগুলোতে দেখতে পাওয়া যায়। উত্তুরে কিছু প্রজাতিতে হাইবারনেশন বা শীতনিদ্রা পরিলক্ষিত হয়। অধিকাংশ প্রজাতি ফল, বাকল, স্লাইম ফ্লাক্স, ফুল, ও মাশরুমসহ নানান ধরনের ক্ষীয়মাণ উদ্ভিদ এবং ছত্রাকজনিত বস্তুতে প্রজনন সম্পন্ন করে। ড্রসোফিলা সুজুকি (D. suzukii) নামের প্রজাতিটি টাটকা ফল খেয়ে ফেলে তাই এটিকে বালাই হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।[2] অল্প কিছু প্রজাতি পরজীবী ও শিকারীতে পরিবর্তীত হয়েছে। অনেকগুলো প্রজাতিকে গাঁজন দেয়া কলা বা মাশরুমের ফাঁদ দিয়ে আকর্ষণ করা যায়, কিন্তু অন্যগুলোকে এরকম ফাঁদ ব্যবহার করে আটকানো যায় না। পুরুষ ড্রসোফিলা প্রজননের জন্য উপযুক্ত মাধ্যমে একত্রিত হয়ে স্ত্রী ড্রসোফিলার সাথে মিলিত হবার জন্য প্রতিযোগীতায় লিপ্ত হয়, অথবা “লেক” গঠন করে যা পূর্বরাগের জন্য প্রজনন অঞ্চল থেকে পৃথক একটি অঞ্চল।
কয়েক ধরনের ড্রসোফিলা প্রজাতি, যেমন ড্রসোফিলা মেলানোগেস্টার, ড্রসোফিলা ইমিগ্রান্স (D. immigrans), এবং ড্রসোফিলা সিমুলান্স (D. simulans), মানুষের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কযুক্ত থাকার কারণে গৃহপালিত প্রজাতি বলে পরিচিত হয়।[3][4][5]) ফল পরিবহনের মতো মানবসুলভ কার্যাবলির কারণে ড্রসোফিলার অনেক প্রজাতি পৃথিবীর আনাচে কানাচে ছড়িয়ে পড়েছে।
পৃথিবীতে অধীত যেকোন জীবসত্ত্বার মাঝে এই গণের পুরুষদের শুক্রাণু কোষ সবচাইতে দীর্ঘ; যেমন ড্রসোফিলা বাইফারকা (D. bifurca) নামের প্রজাতির পুরুষদের প্রায় ৫৮ মিলিমিটার (২.৩ ইঞ্চি) দীর্ঘ শুক্রাণু রয়েছে।[6] এসব শুক্রাণু কোষ মূলত লেজ, যা স্ত্রীদের কাছে পাকানো কুণ্ডলীর মতো নিষ্কৃত করা হয়। ড্রসোফিলা বাইফারকা ছাড়াও ড্রসোফিলা গনের অন্যন্য সদস্যরাও অপেক্ষাকৃত বৃহৎ আকৃতির শুক্রাণু কোষ তৈরী করে।[7] ড্রসোফিলা মেলানোগেস্টারের শুক্রাণু কোষ মোটামুটি ১.৮ মিলিমিটার দীর্ঘ হবার পরও এটি মানুষের শুক্রাণু কোষের চাইতে ৩৫ গুণ লম্বা। ড্রসোফিলা মেলানোগেস্টার প্রজাতিদলের বেশ কয়েকটি প্রজাতির মধ্যে ট্রমাটিক ইনসেমিনেসনের মাধ্যমে মিলন সংঘটিত হয়।[8]
ড্রসোফিলা খুব দ্রুত প্রজননে সক্ষম, যদিও এদের প্রজনন ক্ষমতার মাঝে বেশ তারতম্য দেখা যায়। এক জোড়া ড্রসোফিলা মাছি এক সপ্তাহের ভেতর কয়েক শ’ সন্তানের জন্ম দিতে পারে যারা আবার এক সপ্তাহের ভেতরেই প্রজননে সক্ষম হয়ে উঠে। যদিও বিকাশের মেয়াদের ক্ষেত্রে প্রজাতিগুলোর মধ্যে তারতম্য দেখা যায় যা মূলত ৭ থেকে ৬০ দিনের হয়ে থাকে। ড্রসোফিলার বৃদ্ধি নির্ভর করে নানান পরিবেশগত উপাদানের উপর যেমন তাপমাত্রা, বংশবৃদ্ধির স্থান, এবং ঘনত্ব বা গাদাগাদি। জৈবিক ঘড়ির উপর ভিত্তি করে ডিম পাড়া সম্পন্ন হয় বলে ড্রসোফিলা মেলানোগ্যাস্টার তার পরিবেশ চক্রের সাথে উপযোজন করে নেয় যা তাকে বেচে থাকতে বিশেষভাবে সহায়তা করে।[9] .ড্রসোফিলা[10]
প্রাকৃতিক বাসস্থানের বাইরে সহজে উৎপাদনযোগ্যতা, সংক্ষিপ্ত প্রজন্মকাল এবং দ্রুত মিউটেশনযোগ্যতা থাকার কারণে ড্রসোফিলা মেলানোগ্যাস্টার গবেষণার জন্য অতি জনপ্রিয় একটি প্রাণী। ১৯০৬ সালে থমাস হান্ট মর্গান ড্রসোফিলা মেলানোগ্যাস্টার নিয়ে কাজ শুরু করেন এবং ১৯১০ সালে বিজ্ঞানী মহলে প্রকাশ করেন সাদাচোখা মিউট্যান্ট মাছির উপর তাঁর গবেষণালব্ধ ফলাফল। সেই সময় তিনি বংশগতির উপর কাজ করার জন্য এমন একটি প্রতিমান জীব খুঁজছিলেন যেটি যথেচ্ছভাবে জেনেটিক মিউটেশন অর্জন করবে এবং পরিণত অবস্থায় এর ফলাফল বাহ্যিক পরিবর্তনরূপে সুস্পষ্টভাবে প্রকাশ করবে। বংশগতিতে জিনের বাহক হিসেবে ক্রোমোজমের ভূমিকা ব্যাখ্যা করে তিনি ১৯৩৩ সালে চিকিৎসাবিজ্ঞানের উপর নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। ড্রসোফিলার উপর ব্যাপক কাজই তাঁকে এই বিরল সম্মান বয়ে এনে দেয়। মেলানোগ্যাস্টার ছাড়াও অন্যান্য ড্রসোফিলা প্রজাতি জীনতত্ত্ব আর এমব্রায়োজেনেসিসের মতো শাখাগুলোতে ব্যাপকহারে ব্যবহৃত হয়।
ড্রসোফিলা, রাবার ফ্লাইয়ের মতো অনেক ধরনের সাধারণ শিকারী প্রাণীর শিকার। এর শূককীট অন্যান্য মাছির শূককীট, স্টাফিলিনিড গুবরে পোকা, এবং পিঁপড়ার খাবার।
| ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
প্যারাফাইলেটিক হিসেবে সংজ্ঞায়িত ড্রসোফিলা গণটিতে এখন পর্যন্ত প্রায় ১৪৫০ টি প্রজাতির বর্ণনা দেয়া হলেও,[1][11] এতে হাজার হাজার প্রজাতি রয়েছে বলে ধারণা করা করা হয়।[12] প্রজাতিগুলোর অধিকাংশই দুইটি উপগণের অন্তর্ভুক্তঃ ড্রসোফিলা (প্রায় ১১০০ টি প্রজাতি) এবং সফোফোরা (প্রায় ৩৩০ টি প্রজাতি)। ড্রসোফিলার হাওয়াই অঞ্চলের প্রজাতিগুলো (প্রায় ৫০০ প্রজাতি বিদ্যমান যাদের মধ্যে ৩৮০ টির বর্ণনা সম্পন্ন হয়েছে) কখনো কখনো আলাদা ইডিয়োমিয়া নামের গণ অথবা উপগণ হিসেবে চিহ্নিত করা হলেও এটি সর্বজনবিদিত নয়।[1][13] স্ক্যাপটোমাইজা গণ-এর অধীনে রয়েছে প্রায় ২৫০ টি প্রজাতি যারা হাওয়াই অঞ্চলের ড্রসোফিলা থেকে বিবর্তিত হয়েছে এবং পরবর্তীতে অন্যান্য মহাদেশে ছড়িয়ে পড়েছে।
ড্রসোফিলা গণ থেকে নিম্নোক্ত গণগুলো বিবর্তিত হয়েছে, যা জাতিজনিক গবেষণার ফলাফল থেকে প্রমাণিত হয়ঃ [14][15]
ড্রসোফিলা থেকে বিবর্তিত বেশ কয়েকটি উপগণ এবং গণের নাম মূলত ড্রসোফিলার নানান প্রজাতির নামকে এদিক-ওদিক করে দিয়ে গঠন করা হয়েছে, উদাহরণস্বরূপ, ডরসিলোফা, লর্ডিফোসা, সিফলোডোরা, ফ্লোরিডোসা, সিলোডোরা, ইত্যাদি।
প্রতিমান জীব হিসেবে ড্রসোফিলাকে জীববিজ্ঞানের অনেক শাখায়, যেমন জীনতত্ত্ব (জনগোষ্ঠী জীনতত্ত্বসহ), কোষ-জীববিজ্ঞান, প্রাণরসায়ন, বিকাশমূলক জীববিজ্ঞান, ইত্যাদি, গবেষণার নিমিত্তে ব্যবহার করা হয়। এ কারণে, ড্রসোফিলার জিনোম বিন্যাস করার নিমিত্তে ব্যাপক প্রচেষ্টা চালানো হয়েছে। নিম্নোক্ত প্রজাতিগুলোর সম্পূর্ণ জিনোমের বিন্যাস ইতোমধ্যে বের করা হয়ে গেছেঃ[16]
জিনোমের বিবর্তনীয় তুলনা ছাড়াও, জিনোম বিন্যাসের তথ্য নানান কাজে ব্যবহৃত হয়েছে। ড্রসোফিলা সিমুল্যন্স ও ড্রসোফিলা সেকেলিয়া হলো ভগিনী প্রজাতি বা সিস্টার স্পেসিজ যারা নিজেদের মধ্যে মিলনের ফলে প্রজননে সক্ষম সন্তানের জন্ম দিতে পারে, অন্যদিকে ড্রসোফিলা মেলানোগ্যাস্টার ও ড্রসোফিলা সিমুল্যান্স নিজেদের মধ্যে প্রজননে অক্ষম সঙ্কর জীবের জন্ম দেয়। ড্রসোফিলার জিনোম প্রায়ই দূর-সম্পর্কের প্রজাতির, যেমন মৌমাছি অথবা মশা, জিনোমের সাথে তুলনা করা হয়।
মড-এনকোড নামের একটি সংঘ বর্তমানে আরো আটটি ড্রসোফিলা প্রজাতির জিনোম বিন্যাস করছে।[17] এছাড়া, আই-ফাইভ-কে নামের আরেকটি সংঘ এর চাইতেও অধিক প্রজাতির জিনোম বিন্যাসে হাত দিয়েছে।[18]
জিনোম বিন্যাসের এসব তথ্য ফ্লাইবেস নামক একটি জৈব তথ্যবিজ্ঞান ডাটাবেসে সংরক্ষিত রয়েছে।
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.