দর্পন বা আয়না হল এমন একটি মসৃণ তল যেখানে আলোর প্রতিফলনের নিয়মানুযায়ী নিয়মিত প্রতিফলন ঘটে।[1] সাধারণত কাচে একপাশে ধাতুর প্রলেপ দিয়ে দর্পণ তৈরি করা হয়ে থাকে কারণ কাচ একটি স্বচ্ছ এবং অনমনীয় বস্তু। কাচের যেদিকে সিলভারিং (কাচে ধাতুর প্রলেপ লাগানোর পদ্ধতি) করা থাকে তার বিপরীত পৃষ্ঠকে দর্পণের পৃষ্ঠ বা প্রতিফলক পৃষ্ঠও বলা হয়। যে পরিমাণ আলো দর্পণের প্রতিফলক পৃষ্ঠে আপতিত হয় তার বেশ কিছুটা উক্ত তল কর্তৃক শোষিত হয় এবং বাকিটা প্রতিফলিত হয়। যদিও একপাশে সিলভারিং করা কাচ দর্পণ হিসেবে সর্বোৎকৃষ্ট, ভালোভাবে পালিশ করা যেকোন বস্তুর পৃষ্ঠই দর্পণের ন্যায় আচরণ করতে পারে।[2]

Thumb
একটি সমতল দর্পণ যেখানে একটি টবের বিম্ব দেখা যাচ্ছে।

আয়না আবিষ্কারের ইতিহাস সুপ্রাচীন। তবে আধুনিক সময়ে ব্যবহৃত রৌপ্য আর কাচের সংমিশ্রণে তৈরি আয়না ১৮৩৫ সালে আবিষ্কার করেন জার্মান রসায়নবিদ জাস্টাস ফন লিবিগ।[3]

আবিষ্কারের ইতিহাস

মানুষ দৈনন্দিন কাজেই আয়না ব্যবহার করে থাকে। এরূ উদ্ভাবনের ইতিহাস অবশ্য সুপ্রাচীন। প্রায় আট হাজার বছর আগেই আয়নার ব্যবহার শুরু হয়। জায় এনোশ নামের এক গবেষক তাঁর জার্নালে তুলে ধরেছেন, প্রায় আট হাজার বছর আগে বর্তমান তুরস্কে অবসিডিয়ান নামে একধরনের অগ্নিশিলাকে ঘষামাজা করে আয়নাসদৃশ বস্তু প্রস্তুত করা হতো। পরবর্তী সময়ে মেসোপটেমীয় ও মিসরীয় সভ্যতার অধিবাসীদের মধ্যেও খ্রিষ্টপূর্ব চার হাজার থেকে তিন হাজার বছরের দিকে তামার তৈরি একধরনের আয়নার ব্যবহার হতো বলে নিশ্চিত হওয়া যায়। আজ থেকে প্রায় দুই হাজার বছর আগে রোমান লেখক প্লিনি দ্য এল্ডারের লেখা একটি এনসাইক্লোপিডিয়াতে কাচের তৈরি আয়নার কথা বলা আছে। অবশ্য আধুনিক সময়ে ব্যবহৃত রৌপ্য আর কাচের সংমিশ্রণে তৈরি আয়না আবিষ্কার করেন জার্মান রসায়নবিদ জাস্টাস ফন লিবিগ। সেটা ১৮৩৫ সালের কথা। ধাতব রুপাকে ব্যবহার করে আয়না তৈরির যে প্রক্রিয়া তিনি উদ্ভাবন করেন, তার ওপর ভিত্তি করেই পরে অন্যান্য ধাতু যেমন পারদ, অ্যালুমিনিয়াম প্রভৃতির মিশ্রণে আয়না তৈরি হতে থাকে।[4]

প্রকারভেদ

Thumb
একটি উত্তল দর্পণের চিত্র। এধরনের দর্পণগুলো সাধারণত মোটর সাইকেলে ব্যবহৃত হয় এবং যা চালকে এক পাশ থেকে দেখতে সাহায্য করে।

দর্পণ প্রধানত দু প্রকারের হয়ে থাকেঃ

১.সমতল দর্পণ:

যখন কোন সমতল পৃষ্ঠ মসৃণ হয় এবং তাতে আলোর নিয়মিত প্রতিফলন ঘটে, তাকে সমতল দর্পণ (Plane mirror) বলে।[1] যেমন: নিজের চেহারা দেখার জন্য যে আয়না ব্যবহার করা হয়, তা একটি সমতল দর্পণ।

২.গোলীয় দর্পণ:

কোন গোলকের অংশবিশেষে যে মসৃণ গোলীয়পৃষ্ঠে আলোর নিয়মিত প্রতিফলন ঘটে তাকে গোলীয় দর্পণ (Spherical/Curved mirror) বলে।[1] গোলীয় দর্পণকে আবার দুই ভাগে ভাগ করা যায়, যথা: উত্তল দর্পণ ও অবতল দর্পণ।

উত্তল দর্পণ

যদি কোন গোলকের উত্তল পৃষ্ঠ প্রতিফলকের ন্যায় আচরণ করে তবে তাকে উত্তল দর্পণ বলে। অর্থাৎ গোলকীয় দর্পণের বাইরের উত্তলপৃষ্ঠটি উত্তল দর্পণ হিসেবে কাজ করে।একে অপসারী দর্পণ বলে ।

অবতল দর্পণ

যদি কোন গোলকের অবতল পৃষ্ঠ প্রতিফলকের ন্যায় আচরণ করে তবে তাকে অবতল দর্পণ বলে। অর্থাৎ গোলকীয় দর্পণের ভিতরের অবতলপৃষ্ঠটি অবতল দর্পণ হিসেবে কাজ করে।

বিম্ব বা প্রতিবিম্ব

কোন নির্দিষ্ট বিন্দু থেকে নির্গত আলোক রশ্মি বা রশ্মিগুচ্ছ প্রতিফলিত বা প্রতিসরিত হয়ে যদি দ্বিতীয় কোন বিন্দুতে মিলিত হয় কিংবা দ্বিতীয় কোনো বিন্দু থেকে অপসৃত হচ্ছে বলে মনে হয় তবে ঐ দ্বিতীয় বিন্দুকে প্রথম বিন্দুর বিম্ব বলে। 

উদাহরণস্বরূপ- আমরা যখন কোন সমতল দর্পণ যেমন আয়নার সামনে কোন বস্তুকে রাখি তখন আমরা আয়নায় ঐ বস্তুটির প্রতিচ্ছবি দেখতে পাই। আমাদের কাছে মনে হয় যেন বস্তুটি আয়নার পিছনে আছে কিন্তু প্রকৃতপক্ষে বস্তুটি আয়নার সামনেই থাকে একেই বলে আয়নার জন্য নতুন অবস্থানে আমরা বস্তুটির যে প্রতিচ্ছবি দেখতে পাই তা-ই বস্তুর বিম্ব। সমতল দর্পণে গঠিত বিম্ব সর্বদা আলোক উত্সের সমান হয়, উত্তল দর্পণে বিম্ব সর্বদা আলোক উৎসের চেয়ে ছোট হয় কিন্তু অবতল দর্পণের ক্ষেত্রে উৎসের ফোকাস তথা দর্পনের থেকে লম্ব দূরত্বের উপর নির্ভর করে বিম্বের আকার ছোট, বড় বা সমান হতে পারে।

বিম্ব দুই প্রকার;

  • বাস্তব বিম্ব ও
  • অবাস্তব বিম্ব

তথ্যসূত্র

বহিঃসংযোগ

Wikiwand in your browser!

Seamless Wikipedia browsing. On steroids.

Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.

Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.