পাংখোয়া বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত ১৩টি অদিবাসী জনগোষ্ঠীর মধ্যে পাংখোয়া অন্যতম। পার্বত্য রাঙামাটি জেলার সাজেক উপত্যকা থেকে বান্দরবানের রুমা পর্যন্ত এবং পাশ্ববর্তী ভারতের মিজোরাম রাজ্য সংলগ্ন সীমান্ত এলাকায় পাংখোয়া জাতির বসবাস রয়েছে।পাংখোয়া বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত ১৩টি অদিবাসী জনগোষ্ঠীর মধ্যে পাংখোয়া অন্যতম। পার্বত্য রাঙামাটি জেলার সাজেক উপত্যকা থেকে বান্দরবানের রুমা পর্যন্ত এবং পাশ্ববর্তী ভারতের মিজোরাম রাজ্য সংলগ্ন সীমান্ত এলাকায় পাংখোয়া জাতির বসবাস রয়েছে।পাংখোয়া জনগোষ্ঠী নিজেদের ধর্মবিশ্বাসে বৌদ্ধ বলে দাবি করে থাকে। তবে একাধিক আদিবাসী জনগোষ্ঠীর মতো প্রকৃতি উপাসনাও পাংখোয়া সমাজে প্রচলিত। তাদের সৃষ্টিকর্তার নাম ‘পত্যেন’, যেমন লুসেইদের ‘পুথিয়ান’। বিশ্বসৃষ্টি সম্পর্কে তাদের সমাজে অনেক পৌরাণিক গল্পকাহিনী প্রচলিত আছে। সৃষ্টিকর্তা ‘পত্যেন’-এর পরই তাদের প্রধান উপাস্য দেবতার নাম ‘খোজিং’। অরণ্যের কর্তা এই দেবতা জুমচাষের ভালমন্দও নিয়ন্ত্রণ করেন বলে এর উদ্দেশেই অধিকাংশ পূজাপার্বণ, ব্রত-অনুষ্ঠান পালন করা হয়। বাঘ খোজিং দেবতার পোষা প্রাণি ছিল বলে পাংখোয়াদের চোখে বাঘের স্থান উঁচুতে। খোজিং-এর সন্তুষ্টি বিধানের জন্য বৈশাখের শুরুতে নৃত্যানুষ্ঠানের রীতি প্রচলিত রয়েছে। পাংখোয়াদের বিশ্বাস, গভীর অরণ্যে খোজিং দেবতার অবস্থান। মূল খোজিং পূজা শ্রাবণ মাসে অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। এই পূজা পাংখোয়া সমাজে সবচেয়ে বড় উৎসব হিসেবে বিবেচিত হয়।

দ্রুত তথ্য মোট জনসংখ্যা, উল্লেখযোগ্য জনসংখ্যার অঞ্চল ...
পাংখো
মোট জনসংখ্যা
৩,২২৭ (বাংলাদেশে)
আদমশুমারি ও গৃহগণনা-১৯৯১ অনুসারে
উল্লেখযোগ্য জনসংখ্যার অঞ্চল
প্রধান অংশ বাংলাদেশে ও বাকি অংশ ভারতে

বাংলাদেশে চট্টগ্রামের পার্বত্য জেলা রাঙ্গামাটিতে

ভারতে মিজোরামে
ভাষা
পাংখো ভাষা
ধর্ম
বৌদ্ধ ধর্ম
বন্ধ

পাহাড়ে জুমচাষ এবং অরণ্যে শিকার এই দুইয়ের উপর এদের জীবন নির্ভরশীল। জুমচাষের পদ্ধতি এদের মধ্যে এখনও ব্যাপকভাবে প্রচলিত। ধান এবং অন্যান্য শস্য ফলানো পাংখোয়াদের কৃষিকাজের মূল উদ্দেশ্য। তবে তারা জঙ্গল থেকে গাছ কেটে কাঠ আহরণের কাজও করে থাকে। এসব কাজে নারী সমানভাবে পুরুষের সঙ্গে অংশ নেয়। হাট-বাজার মূলত মেয়েরাই করে থাকে। প্রাচীনকাল থেকেই পাংখোয়া নারীরা কোমর-তাঁতের মাধ্যমে নিজেদের প্রয়োজনীয় বস্ত্র বুনে আসছেন। পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে পাড়া ও প্রতিবেশীদের কাছে বিক্রি করে কিংবা বিনিময় প্রথার বাইরে সংসারের প্রয়োজনীয় সামগ্রী সংগ্রহ করেন।

পাংখোয়াদের বাঁশ ও বেত শিল্প সর্বজন সমাদৃত। বাঁশ ও বেতের তৈরি এসব সামগ্রীতে তাদের শৈল্পিক নৈপূণ্য ফুটে উঠে।

পাংখোয়া সমাজে পিতাই পরিবারের প্রধান। পিতার মৃত্যুর পর পুত্রসন্তানরা পারিবারিক বিষয়-আশয়ের উত্তরাধিকারী হয়ে থাকে। পাংখোয়া জনগোষ্ঠী দুটো গোত্রে বিভক্ত পাংখোয়া ও ভানজাঙ। গোত্রান্তরে বিয়েতে কোন বাধা নেই। পরিণত বয়সে পিতামাতার মতামত অনুযায়ী ছেলে ও মেয়ের বিয়ে অনুষ্ঠিত হয়। পাংখোয়াদের মধ্যে বাল্যবিবাহের প্রচলন নেই। এদের সমাজে বিবাহ বিচ্ছেদ ও বিধবা বিবাহের প্রচলন রয়েছে।

পাংখোয়াদের নিজস্ব ভাষা রয়েছে, তবে তা মৌখিক ভাষা। এদের ভাষার কোন লিখিত রূপ নেই। তা সত্ত্বেও ঐ ভাষায় গানের অভাব নেই, বিশেষ করে প্রেমের গান। অলিখিত রূপ নিয়েই এদের লোকসঙ্গীত যথেষ্ট সমৃদ্ধ।

ধর্মীয় বিশ্বাস, সামাজিক আচার-অনুষ্ঠান ও পূজাপার্বণ নিয়ে পাংখোয়াদের নিজস্ব সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে। নাচ ও গান তাদের সংস্কৃতিকে পুষ্ট করেছে। বাঁশনৃত্য, পুষ্পনৃত্য এবং আরও কিছু বিশেষ নৃত্যগীতে তারা অভ্যস্ত।

পাংখো বা পাংখোয়া হল বাংলাদেশ ও ভারতে বসবাসকারী ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠী। বাংলাদেশে চট্টগ্রামের পার্বত্য জেলা রাঙ্গামাটিতে এবং ভারতে মিজোরামে এরা বসবাস করে। আদমশুমারি ও গৃহগণনা-১৯৯১ অনুসারে বাংলাদেশে পাংখো জনগোষ্ঠীর সংখ্যা ৩,২২৭ জন। আদমশুমারি ও গৃহগণনা-১৯৮১ অনুসারে এই সংখ্যা ছিল ২,৪৪০ জন।[1]

তথ্যসূত্র

বহিঃসংযোগ

Wikiwand in your browser!

Seamless Wikipedia browsing. On steroids.

Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.

Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.