বঙ্গ ভারতীয় উপমহাদেশের গাঙ্গেয় ব-দ্বীপ সীমার মধ্যে একটি প্রাচীন রাজ্য ও ভূ-রাজনৈতিক বিভাগ ছিল। রাজ্যটি বাংলা অঞ্চলের অন্যতম নামের একটি। বর্তমান পশ্চিমবঙ্গের (ভারত) দক্ষিণাংশ ও দক্ষিণ-পশ্চিম বাংলাদেশের দক্ষিণাংশ সহ মূল অঞ্চলটি দক্ষিণবঙ্গে অবস্থিত ছিল। প্রাচীন ভারতের মহাকাব্য ও গল্পে এবং শ্রীলঙ্কার ইতিহাসে বঙ্গের উল্লেখ বিশেষভাবে দেখা যায়।
বঙ্গ | |||||||||||
---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|
আনু. ১১০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ–আনু. ৩৪০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ | |||||||||||
পরবর্তী বৈদিক যুগে বঙ্গ ও অন্যান্য রাজ্যগুলি, আনু. ১১০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ | |||||||||||
প্রাচীন ভারতে বঙ্গ ও পূর্বকালীন প্রতিবেশী | |||||||||||
রাজধানী | সম্ভবত কোটালীপাড়া (অধুনা গোপালগঞ্জ ) | ||||||||||
প্রচলিত ভাষা | বৈদিক সংস্কৃত | ||||||||||
ধর্ম | ঐতিহাসিক বৈদিক ধর্ম | ||||||||||
সরকার | রাজতন্ত্র | ||||||||||
রাজা (রাজা বা প্রধান) | |||||||||||
• আনু. খ্রিস্টপূর্ব দশম শতাব্দী | সমুদ্রসেন | ||||||||||
• আনু. খ্রিস্টপূর্ব নবম শতাব্দী | Chadrasena | ||||||||||
ঐতিহাসিক যুগ | লোহার যুগ | ||||||||||
• প্রতিষ্ঠা | আনু. ১১০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ | ||||||||||
• বিলুপ্ত | আনু. ৩৪০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ | ||||||||||
| |||||||||||
বর্তমানে যার অংশ | বাংলাদেশ ও ভারত |
বঙ্গ সম্ভবত গঙ্গারিডাই সাম্রাজ্যের কেন্দ্র ছিল, যা অসংখ্য গ্রিক-রোমান লেখক দ্বারা উল্লেখ করা হয়েছে। প্রাচীন বঙ্গ রাজ্যের সঠিক রাজধানী শনাক্ত করা যায়নি। গুপ্ত সাম্রাজ্যের শাসনের পর, প্রাচীন বাংলা গৌড় ও বঙ্গ নামক দুটি স্বাধীন রাজ্যে বিভক্ত হয়েছিল। প্রত্নতাত্ত্বিকরা মনে করেন, বর্তমান বাংলাদেশের কোটালীপাড়া স্বাধীন বঙ্গ রাজ্যের রাজধানী ছিল।
ভারতীয় ও গ্রিক-রোমান লেখকগণ এই অঞ্চলের যুদ্ধা হাতির কথা উল্লেখ করেছেন। ভারতীয় ইতিহাসে, বঙ্গ তার শক্তিশালী নৌবাহিনীর জন্য উল্লেখযোগ্য। হিন্দু মহাকাব্য মহাভারতে বঙ্গের অসংখ্য উল্লেখ রয়েছে, যা ভারতের দুটি প্রধান সংস্কৃত মহাকাব্যের একটি। অন্য মহাকাব্য, রামায়ণ, রাজ্যটিকে অযোধ্যার মিত্র রাজ্য হিসাবে উল্লেখ করেছে।
মহাভারতে উল্লেখ
মহাভারতে (৬।৯) অঙ্গ, বঙ্গ ও কলিঙ্গ রাজ্য তিনটাকে ভারতবর্ষ বা প্রাচীন ভারতের নিকটবর্তী রাজ্য হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। ১২ বছর তীর্থভ্রমণে বেরিয়ে অর্জুন বঙ্গ ও কলিঙ্গের সকল পবিত্র স্থানে এসেছিলেন।[1]
পূর্বাঞ্চলের অঙ্গ, বঙ্গ, কলিঙ্গ, পুণ্ড্র ও সুহ্ম - এই পাঁচটি রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন একই বংশের সন্তান। এঁরা ছিলেন গিরিব্রজ শহরের কাছে অবস্থিত মগধ রাজ্যের অধিবাসী গৌতম দীর্ঘতম ঋষির ঔরসজাত এবং বলি রাজার দত্তক পুত্র।[2]
ভীমের বঙ্গ অভিযান
কর্ণের অঙ্গ রাজ্য জয় করার পর ভীম পার্বত্য অঞ্চলের এক শক্তিশালী রাজাকে পরাস্ত করেন। এরপর মদগিরির রাজাকে পরাস্ত করার পর পাণ্ডবগণ পুণ্ড্র অঞ্চলের রাজা বাসুদেব ও কৌশিক-মচ্ছের রাজা মহৌজকে পরাজিত করেন। তারপর তাঁরা বঙ্গ রাজ্য আক্রমণ করেন। সমুদ্রসেন ও তাম্রলিপ্তের রাজা চন্দ্রসেনকে পরাজিত করে তাঁরা সুহ্ম রাজ্যের কৈবর্ত রাজাকেও পরাজিত করেন। এরপর তাঁরা সমুদ্রতীরবর্তী অঞ্চলের রাজাদের পরাজিত করেন। এরপর তাঁরা লৌহিত্য রাজ্যের দিকে অগ্রসর হন। (২।২৯)
অন্যান্য বঙ্গ অভিযান
ভার্গব রাম কাশ্মীর, দারদ, কুন্তি, ক্ষুদ্রক, মালব, অঙ্গ, বঙ্গ, কলিঙ্গ, বিদেহ, তাম্রলিপ্ত, রক্ষোবাহ, বিতাহোত্র, ত্রিগার্ত ও মার্তিকাবত রাজ্য জয় করেছিলেন। (৭।৬৮) কর্ণ অঙ্গ, বঙ্গ, কলিঙ্গ, মণ্ডিকা, মগধ ও করকখণ্ডের অংশবিশেষ জয় করেন। (৩।২৫২)
অঙ্গ, বঙ্গ, কলিঙ্গ, মগধ, কাশী, কোশল, বৎস, গর্গ্য, করুষ ও পৌণ্ড্র রাজ্যগুলিকে বাসুদেব কৃষ্ণ জয় করেছিলেন। (৭।১১)
অর্জুন কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের পর অশ্বমেধ যজ্ঞের সময় বঙ্গ, পুণ্ড্র ও কোশল রাজ্যগুলিকে জয় করেন। (১৪।৮২)
যুধিষ্ঠিরের করদ রাজ্য
অঙ্গ, বঙ্গ ও পুণ্ড্র রাজ্যের রাজারা যুধিষ্ঠিরের রাজসভায় উপস্থিত থাকতেন বলে উল্লেখ পাওয়া যায়। (২।৪) বঙ্গ, অঙ্গ, পুণ্ড্র, ওড্র, চোল, দ্রাবিড়, অন্ধ্র রাজ্য যুধিষ্ঠিরকে কর দিত বলে উল্লিখিত হয়। (৩।৫১) অঙ্গ, বঙ্গ, পুণ্ড্র, সনবত্য ও গয়া - এই সদ্বংশজাত ক্ষত্রিয় রাজারা নিয়মিত যুদ্ধবিদ্যার চর্চা করতেন। বঙ্গ, কলিঙ্গ, মগধ, তাম্রলিপ্ত, সুপুণ্ড্রক, দৌবলিক, সাগরক, পাত্রোনা, সৈসব ও কর্ণপ্রবর্ণকরা দলে দলে যুধিষ্ঠিরের রাজদ্বারে দাঁড়িয়ে থাকতেন। (২। ৫১)।
কুরুক্ষেত্র যুদ্ধে বঙ্গ
বঙ্গ সেনাবাহিনী যুদ্ধহস্তী পরিচালনায় দক্ষ ছিল। কলিঙ্গ রাজ্যের সঙ্গে তাঁরাও কুরুক্ষেত্র যুদ্ধে কৌরবদের পক্ষ নেয়। (8।১৭) কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের সময় বঙ্গের রাজা ছিলেন ভগদত্ত। (৬।৯৩)
বঙ্গের রাজাগণ
মহাভারতের দ্বিতীয় পর্বে (শ্লোক পর্বাধ্যায় ২৯) সমুদ্র সেন ও চন্দ্র সেন নামে দুই রাজার নাম উল্লেখ করা হয়েছে। যদিও তাঁরা বঙ্গের রাজা ছিলেন কিনা তা স্পষ্ট নয়। এই পর্বেই ৪৩ পর্বাধ্যায়ে কর্ণকে অঙ্গ ও বঙ্গের রাজা বলে উল্লেখ করা হয়েছে। কৃষ্ণের শত্রু পুণ্ড্রক বাসুদেবকে (জরাসন্ধের বন্ধু) বঙ্গ, পুণ্ড্র ও কিরাতদের রাজা বলে উল্লেখ করা হয়েছে। (২।১৪) অষ্টম পর্বে ভগদত্তকে বঙ্গের রাজা বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
সম্ভবত এই রাজারা বঙ্গ রাজ্য জয় করেছিলেন। মহাভারতের অন্যান্য অংশে এঁদের পার্শ্ববর্তী রাজ্যগুলির রাজা বলে উল্লেখ করা হয়েছে। ভগদত্ত ছিলেন বঙ্গের উত্তর দিকে অবস্থিত প্রাগজ্যোতিষ রাজ্যের রাজা। পুণ্ড্রক বাসুদেব ও কর্ণ ছিলেন বঙ্গের পূর্ব দিকে অবস্থিত পুণ্ড্র ও অঙ্গ রাজ্যের রাজা।
অন্যান্য উল্লেখ
মহাভারতের অন্য জায়গায় আছে বঙ্গ ও কলিঙ্গ রাজ্যের রাজারা পুণ্ড্রের পুণ্ড্রক বাসুদেবের সঙ্গে দ্রৌপদীর স্বয়ম্বর সভায় উপস্থিত ছিলেন।[3]
আরও দেখুন
- বাংলাদেশ
- প্রাচীন ভারতের রাজ্যসমূহ
- বঙ্গ
- পশ্চিমবঙ্গ
পাদটীকা
Wikiwand in your browser!
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.