Loading AI tools
মঙ্গল গ্রহের অনুসন্ধানের পরিদর্শন উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
মঙ্গল গ্রহে দূরনিয়ন্ত্রিত মহাকাশযান দ্বারা অনুসন্ধান চালানো হয়েছে। মূলত মঙ্গল গ্রহের ভূতত্ত্ব এবং বাসযোগ্যতার সম্ভাবনা খতিয়ে দেখতে বিংশ শতাব্দির শেষ দিকে পাঠানো নানা ক্ষুদ্রকার মহাকাশযান গ্রহটি সম্পর্কে ব্যাপক জ্ঞান আহরণে সক্ষম হয়েছে। [1][2] আন্তঃগ্রহীয় অভিযান পরিকল্পনা করা একটি জটিল কাজ এবং মঙ্গলে অনুসন্ধানী অভিযান বিশেষ করে প্রথম দিকের প্রচেষ্টাসমূহ উচ্চ মাত্রার ব্যর্থতার সম্মুখীন হয়েছে। মঙ্গল অভিযানের উদ্দেশ্যে প্রেরণ করা প্রায় ষাট শতাংশ মহাকাশযান ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়েছে এবং কিছু যান পর্ববেক্ষন শুরু করার আগেই ব্যর্থ হয়েছে। কিছু মহাকাশযান, যেমন জোড়া মার্স এক্সপ্লোরেশন রোভার, স্পিরিট ও অপর্চুনিটি, অভাবনীয় সাফল্য অর্জন করেছে, যেগুলো তাঁদের প্রস্তাবিত মেয়াদের অধিক সময় ধরে সচল থেকেছে। [3]
Year | Number of missions |
---|---|
১৯৯৭ | ২ |
১৯৯৮ | ১ |
১৯৯৯ | ১ |
২০০০ | ১ |
২০০১ | ২ |
২০০২ | ২ |
২০০৩ | ৩ |
২০০৪ | ৫ |
২০০৫ | ৫ |
২০০৬ | ৬ |
২০০৭ | ৫ |
২০০৮ | ৬ |
২০০৯ | ৫ |
২০১০ | ৫ |
২০১১ | ৪ |
২০১২ | ৫ |
২০১৩ | ৫ |
২০১৪ | ৭ |
২০১৫ | ৭ |
২০১৬ | ৮ |
২০১৭ | ৮ |
২০১৮ | ৯ |
২০১৯ | ৮ |
২০২০ | ৮ |
২০২১ | ১১ |
ডিসেম্বর ২০২২ সাল পর্যন্ত, মঙ্গলের মাটিতে তিনটি মহাকাশ রোভার সচল আছে। এই তিনটির মধ্যে দুটি, যুক্তরাষ্ট্রীয় মহাকাশ সংস্থা নাসা কর্তৃক পরিচালিত কিউরিওসিটি ও পারসিভিয়ারেন্স রোভার, এবং চুরুং রোভার, যেটি চায়না জাতীয় মহাকাশ কর্তৃপক্ষ (কাসা)'র থিয়েনওয়েন-১ অভিযানের অংশ। [4][5] সাতটি কৃত্রিম উপগ্রহ মঙ্গলে জরিপের কাজ করছে। এগুলো হলো, মার্স অডেসি, মার্স এক্সপ্রেস, মার্স রিকনেসেন্স অরবিটার, ম্যাভেন, ট্রেইস গ্যাস অরবিটার, হোপ মার্স মিশন এবং টিয়ানওয়েন-১ অরবিটার। এই যানগুলো মঙ্গল সম্পর্কে ব্যাপক পরিমাণ তথ্য সংগ্রহ করেছে। বিভিন্ন রকম নমুনা সংগ্রহ অভিযানের পরিকল্পনা চলছে, যেগুলোর উদ্দেশ্য হলো মঙ্গল থেকে নমুনা পৃথিবীতে নিয়ে আসা। যেমন, নাসা-ইএসএ মার্স স্যাম্পল রিটার্ন অভিযান যেটির উদ্দেশ্য হলো পার্সেভারেন্স রোভার কর্তৃক সংগৃহীত মঙ্গলের নমুনা পৃথিবীতে নিয়ে আসা।[6] সব মিলিয়ে মঙ্গলে বর্তমানে ১১ টি মহাকাশযান জরিপ কাজ পরিচালনা করছে। এই ১১টি মহাকাশযানের মধ্যে ইনজিনিউটি হেলিকপ্টারও অন্তর্ভুক্ত যেটি পারসেভারেন্সের জরিপ কাজ পরিচালনার উপযোগী জায়গা খুঁজে বেড়ায়।
মঙ্গলে সম্ভাব্য পরবর্তী অভিযানগুলো হলো:
দীর্ঘকাল ধরে মঙ্গল ছিল মানুষের আগ্রহের বিষয়। প্রথম দিকের টেলিস্কোপ পর্যবেক্ষণে মঙ্গলের ভূমিরূপে রঙের পরিবর্তন ধরা পড়েছিল যেটিকে মৌসুমি গাছপালা এবং দৃশ্যত সরল রৈখিক বৈশিষ্ট্যকে বুদ্ধিমান প্রাণীর অস্তিত্ব হিসেবে মনে করা হয়েছিল। আরও টেলিস্কোপিক পর্যবেক্ষণে মঙ্গলে দুটি উপগ্রহ ফোবস ও ডিমোস এবং মেরু অঞ্চলের বরফ আচ্ছাদিত পর্বত, যা বর্তমানে সৌরজগতের সর্বোচ্চ পর্বত অলিম্পাস মনস নামে পরিচিত, আবিষ্কৃত হয়। এই আবিষ্কারগুলো মঙ্গলের গবেষণা ও অনুসন্ধানে মানুষকে আরও আগ্রহী করে তোলে। মঙ্গল পৃথিবীর মতই পাথুরে গ্রহ। মঙ্গল ও পৃথিবী একই সময়ে সৃষ্টি হলেও মঙ্গলের ব্যাসার্ধ পৃথিবীর ব্যাসার্ধের অর্ধেক। মঙ্গলের বায়ুমন্ডল পৃথিবীর তুলনায় অনেক হালকা। মঙ্গলের ভূমি ঠান্ডা ও মরুভূমির মত। [8]
মঙ্গলের ভূমিকে চিহ্নিত করার একটি উপায় হলো, এর ভূমিকে ৩০ টি চতুর্ভুজে বিভক্ত করে ফেলা। যেখানে প্রতিটি চতুর্ভুজকে ওই চতুর্ভুজে অবস্থিত কোনো বিশেষ ভূমিরুপের নামে নামকরণ করা হয়। [9][10]
টেমপ্লেট:Mars Quads - By Name
মঙ্গল অভিযানের জন্য ন্যূনতম শক্তি খরচ করে উৎক্ষেপণের সুযোগ প্রায় দুই বছর ও দুই মাস পর পর পাওয়া যায় (নির্দিষ্টভাবে ৭৮০ দিন যা হলো পৃথিবীর সাপেক্ষে গ্রহের কক্ষীয় পর্যায়কাল)। [11] সর্বনিম্ন স্থানান্তর শক্তি সম্পন্ন উৎক্ষেপণ অবকাশ মোটামুটিভাবে ১৬ বছরের একটি চক্রে আবর্তিত হয়। [11] যেমন, ১৯৬৯ এবং ১৯৭১ সালের উৎক্ষেপণ অবকাশ ছিল সর্বনিম্ন শক্তি প্রয়োগে মঙ্গলে যাওয়ার সুযোগ, যেটি ১৯৭০-এর শেষভাগে সর্বোচ্চ ছিল এবং ১৯৮৬ ও ১৯৮৮ সালে আরেকটি সর্বনিম্ন সুযোগ তৈরি হয়েছিল। [11]
বছর | অবকাশ | মহাকাশযান (উৎক্ষেপিত বা পরিকল্পিত) |
---|---|---|
২০১৩ | নভেম্বর | ম্যাভেন, মার্স অরবিটার মিশন |
২০১৬ | মার্চ | এক্সোমার্স টিজিও |
২০১৮ | মে | ইনসাইট |
২০২০ | জুলাই-সেপ্টেম্বর | (১) মার্স হোপ অরবিটার, (২) থিয়েনওয়েন-১ অরবিটার, স্থাপনযোগ্য, দূরবর্তী ক্যামেরা, অবতরণ যন্ত্র এবং চুরুং রোভার, (৩) মঙ্গল ২০২০ পার্সিভিয়ারেন্স রোভার এবং ইনজেনুইটি হেলিকপ্টার |
২০২২ | আগস্ট-নভেম্বর | কোনো উৎক্ষেপণ হয়নি। |
২০২৪-২০২৫ | সেপ্টেম্বর-মে | (১) মঙ্গলযান ২ (২) এসকেইপ এন্ড প্লাজমা এক্সেলারেশন এন্ড ডাইনামিক এক্সপ্লোরার অভিযান (এসকাপেইড) |
দশক | |
---|---|
১৯৬০ এর দশক | ১৩ |
১৯৭০ এর দশক | ১১ |
১৯৮০ এর দশক | ২ |
১৯৯০ এর দশক | ৮ |
২০০০ এর দশক | ৮ |
২০১০ এর দশক | ৬ |
২০২০ এর দশক | ৩ |
১৯৬০ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন মঙ্গলে কিছু ছোট মহাকাশযান পাঠায়। এসবের মধ্যে ছিল প্রথম ফ্লাইবাই এবং কঠিন অবতরণ অভিযান (মার্স ১৯৬২বি)। [14] মঙ্গল গ্রহের প্রথম সফল ফ্লাইবাই ঘটেছিল ১৯৬৫ সালের ১৪ থেকে ১৫ জুলাই, নাসার মেরিনার ৪ এর মাধ্যমে। [15] ১৪ নভেম্বর ১৯৭১ সালে, মেরিনার ৯ মঙ্গল গ্রহকে প্রদক্ষিন করার মাধ্যমে পৃথিবীর বাইরে অন্য কোনো গ্রহকে প্রদক্ষিন করা প্রথম মহাকাশযান হয়ে ওঠে। [16] প্রযুক্তির উন্নতির মাধ্যমে মহাকাশযান হতে তথ্য প্রাপ্তির পরিমাণ নাটকীয়ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। [14]
মঙ্গলপৃষ্ঠের সংস্পর্শে আসা পৃথিবীর প্রথম মহাকাশযান হলো সোভিয়েত ইউনিয়নের মার্স ২ ও মার্স ৩ নামক দুটি মহাকাশযান। এই যান দুটি যথাক্রমে ২৭ নভেম্বর ও ২ ডিসেম্বর ১৯৭১ সালে মঙ্গলে অবতরণ করে। এদের মধ্যে মার্স ২ অবতরনের সময় ব্যর্থ হয় আর মার্স ৩ সফল অবতরনের প্রায় ২০ সেকেন্ড পর বন্ধ হয়ে যায়। [17] মার্স ৬ অবতরণের সময় ব্যর্থ হলেও ১৯৭৪ সালে বায়ুমণ্ডলের কিছু দূষিত তথ্য পৃথিবীতে পাঠাতে সক্ষম হয়। [18] ১৯৭৫ সালে নাসা ভাইকিং প্রোগ্রামের আওতায় মঙ্গলে দুটি অরবিটার প্রেরন করে। অরবিটার দুটিতে একটি করে ল্যান্ডার ছিল যেগুলো সফলভাবে মঙ্গলে অবতরণ করে। ভাইকিং ১ ছয় বছর ও ভাইকিং ২ তিন বছর সচল ছিল। এই ল্যান্ডার দুটি মঙ্গলের প্রথম রঙ্গিন প্যানোরামা ছবি পৃথিবীতে পাঠায়। [19]
১৯৮৮ সালে সোভিয়েত প্রোব ফোবোস ১ এবং ২ মঙ্গল গ্রহের দুটি চাঁদ, বিশেষ করে মঙ্গলের উপগ্রহ ফোবোসকে অধ্যয়ন করার জন্য পাঠানো হয়েছিল। ফোবোস ১ মঙ্গলে পৌঁছার আগেই যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। ফোবোস ২ মঙ্গলের ছবি তুলতে সফল হলেও দুটি ল্যান্ডার ছাড়ার সময় বিকল হয়। [20]
মহাকাশ অনুসন্ধানের লক্ষ্য হিসেবে মঙ্গল পরিভ্রমন অত্যন্ত কঠিন হিসেবে স্বীকৃত। ২০১৯ সাল পর্যন্ত গ্রহটিতে পরিচালিত ৫৫ টি অভিযানের মধ্যে মাত্র ২৫ টি বা ৪৫.৫% সম্পূর্ণরূপে সফল হতে পেরেছে, এরমধ্যে তিনটি আংশিক সফল এবং আংশিক ব্যর্থ হয়েছে৷[তথ্যসূত্র প্রয়োজন] ২০০১ সালের পর থেকে অবশ্য পরিচালিত ষোলটি অভিযানের মধ্যে বারোটি সফল হয়েছে এবং এর মধ্যে আটটি এখনও সক্রিয় আছে।
ফোবস ১ এবং ২ (১৯৮৮) এর পরে অকালে শেষ হওয়া অভিযানগুলির মধ্যে রয়েছে (আরো বিশদ বিবরণের জন্য অনুসন্ধানের অসুবিধা বিভাগ দেখুন):
১৯৯৩ সালে মার্স অবজারভার ব্যর্থ হওয়ার পর ১৯৯৭ সালে নাসা মার্স গ্লোবাল সার্ভেয়ার মঙ্গলের কক্ষপথে পৌঁছায়। এই অভিযানটি বেশ সফলতা অর্জন করে এবং ২০০১ সালের শুরুর দিকে মঙ্গলের প্রাথমিক ম্যাপিং সম্পন্ন করে। এই প্রোবটি ২০০৬ সালে প্রায় দশটি আভিযানিক বছর শেষে তৃতীয় প্রলম্বিত কর্মসূচি চলাকালীন সময়ে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। নাসার মার্স পাথফাইন্ডার, একটি রোবোটিক অনুসন্ধান যান সোজার্নার বহন করে, ১৯৯৭ সালের গ্রীষ্মে মঙ্গল গ্রহের অ্যারেস ভ্যালিসে অবতরণ করে, অনেক ছবি তুলে পৃথিবীতে পাঠায়। [21]
২০০১ সালে নাসার মার্স ওডিসি অরবিটার মঙ্গলের কক্ষপথে প্রবেশ করে। [22] ওডিসির গামা রে স্পেক্ট্রোমিটার মঙ্গলের রিগোলিথের উপরের কয়েক মিটারে হাইড্রোজেনের গুরুত্ববহ উপস্থিতি শনাক্ত করে। এই হাইড্রোজেনগুলো ধারণা করা হয় বরফ পানির বড় সংগ্রহে সংরক্ষিত আছে। [23]
ইউরোপীয় মহাকাশ সংস্থার মার্স এক্সপ্রেস অভিযান মঙ্গল পৌঁছায় ২০০৩ সালে। এই মহাকাশযানটি বিগল ২ নামে একটি ল্যান্ডার বহন করেছিল যেটিকে মঙ্গলে ছেড়ে দেওয়ার পর ২০০৪ সালে নিখোঁজ ঘোষণা করা হয়। ২০১৫ সালের জানুয়ারি মাসে নাসার মার্স রিকনেসেন্স অরবিটারের হাইরাইজ ক্যামেরা বিগল ২'কে মঙ্গল পৃষ্ঠে সনাক্ত করে। বিগল ২ সফলভাবে অবতরণ করতে পারলেও সঠিক সময়ে তাঁর এন্টেনা ও সৌর প্যানেলগুলো বিস্তৃত করতে পারেনি। [24][25] ২০০৪ এর শুরুর দিকে নাসার মার্স এক্সপ্রেস অভিযানের প্ল্যানেটারি ফুরিয়ার স্পেকট্রোমিটার দল মঙ্গলের বায়ুমন্ডলে মিথেনের অস্তিত্ব পায়, যেটিকে সম্ভাব্য জৈব স্বাক্ষর হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ইউরোপীয় মহাকাশ সংস্থা ২০০৬ সালের জুন মাসে মার্স এক্সপ্রেস কর্তৃক আবিষ্কৃত মঙ্গলের মেরুপ্রভার অস্তিত্বের ঘোষণা দেয়। [26]
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.