Loading AI tools
ঢাকার মোহাম্মদপুর থানার রায়েরবাজার এলাকায় অবস্থিত স্মৃতিসৌধ উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ ১৯৭১ সালের ১৪ই ডিসেম্বর বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে নিহত বুদ্ধিজীবীদের স্মরণে নির্মিত একটি স্মৃতিসৌধ। এই স্মৃতিসৌধটি ঢাকার মোহাম্মদপুর থানা এলাকায় অবস্থিত।[1] স্মৃতিসৌধটির নকশা করেছেন স্থপতি ফরিদ ইউ আহমেদ ও জামি আল শাফি।[2][3][4] মুক্তিযুদ্ধে শহীদ সন্তানদের সংগঠন প্রজন্ম ৭১-এর সহায়তায় রায়েরবাজারে স্মরণ তৈরির প্রাথমিক প্রস্তাবনা আনা হয়েছিল, যারা ১৯৯১ সালে এর একটি অস্থায়ী ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করে। ১৯৯৩ সালে বাংলাদেশ সরকার হত্যাকান্ড সংঘটিত হওয়ার স্থানে এই স্মৃতিসৌধটি নির্মাণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।
শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ | |
---|---|
সাধারণ তথ্য | |
অবস্থা | সম্পন্ন |
ধরন | প্রকাশ্য স্মৃতিসৌধ |
অবস্থান | ঢাকা, বাংলাদেশ |
ঠিকানা | রায়েরবাজার, মোহাম্মদপুর থানা |
নির্মাণকাজের আরম্ভ | ১৯৯৬ |
নির্মাণকাজের সমাপ্তি | ১৯৯৯ |
উচ্চতা | |
ছাদ পর্যন্ত | ৫৮ ফুট (১৮ মি) |
নকশা এবং নির্মাণ | |
স্থপতি | ফরিদ উদ্দিন আহমেদ মোঃ জামে-আল-শফি |
১৯৭১ সালের বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের পুরো সময়টাতেই, পাকিস্তানি সৈন্যরা এবং তাদের স্থানীয় দোসররা, এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল কথিত ইসলামী সেনাদল গ্রুপ আল-বদর ও আল-শামস বাহিনী শিক্ষক, ডাক্তার, প্রকৌশলী, কবি ও লেখকদের ক্রমে হত্যা করে। ভারতীয় সেনাবাহিনী এবং মুক্তিবাহিনী যৌথ দলের কাছে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর আত্মসমর্পণের মাত্র দুই দিন আগে, ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর সর্বোচ্চ সংখ্যক হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়।
১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর রাতে অধ্যাপক, সাংবাদিক, ডাক্তার, শিল্পী, প্রকৌশলী, লেখকসহ পূর্ব পাকিস্তানের ২০০ জন বুদ্ধিজীবীদের ঢাকায় একত্রিত করা হয়েছিল। মিরপুর, মোহাম্মদপুর, নাখালপাড়া, রাজারবাগ এবং শহরের বিভিন্ন স্থানের নির্যাতন সেলে চোখ বেঁধে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে তাদের রায়েরবাজার এবং মিরপুরের মধ্যে সার্বজনীনভাবে মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হয়। নিহত বুদ্ধিজীবীদের স্মরণে ১৪ই ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস হিসেবে বাংলাদেশে শোক প্রকাশ করা হয়।
এমনকি ১৬ ডিসেম্বর যুদ্ধের আনুষ্ঠানিক সমাপ্তির পরেও, সশস্ত্র পাকিস্তানী সৈন্য এবং তাদের সহযোগীরা শত্রুতামূলকভাবে গুলি চালিয়েছে বলে খবর পাওয়া যায়। এই ধরনের ঘটনায়, ১৯৭২ সালের ৩০ জানুয়ারি উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্র নির্মাতা জহির রায়হান মিরপুরের সশস্ত্র বিহারীদের হাতে নিহত হন বলে অভিযোগ আছে।
নিহত বুদ্ধিজীবীদের সংখ্যা আনুমানিক নিম্নরূপ: শিক্ষাবিদ ৯৯১, সাংবাদিক ১৩, চিকিৎসক ৪৯, আইনজীবী ৪২, অন্যান্য (সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, শিল্পী এবং প্রকৌশলী) ১৬ জন।[5]
মার্চ ২৫ থেকে ১৬ ডিসেম্বর-এর মধ্যে দেশের বিভিন্ন অংশে যে সকল বুদ্ধিজীবী নিহত হয়েছে তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য, গোবিন্দ চন্দ্র দেব (ঢাকা বিশ্বিবিদ্যালয়ের অধ্যাপক, দার্শনিক), মুনীর চৌধুরী (ঢাকা বিশ্বিবিদ্যালয়ের অধ্যাপক, সাহিত্যিক, নাট্যকার), মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী (সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক), আনোয়ার পাশা (সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক), ডঃ মোহাম্মদ ফজলে রাব্বী (হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ), ডাঃ আলীম চৌধুরী (চক্ষুরোগের), শহীদুল্লাহ কায়সার (সাংবাদিক), নিজামউদ্দিন আহমেদ (রিপোর্টার), সেলিনা পারভীন (সাংবাদিক), আলতাফ মাহমুদ (গীতিকার ও সুরকার), ডঃ হাবিবুর রহমান (গণিত অধ্যাপক, রাশিয়া), সুখরঞ্জন সমাদ্দার (সংস্কৃত অধ্যাপক, রাশিয়া), মীর আব্দুল কলিম (মনোবিজ্ঞানের অধ্যাপক, রাবি), ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত (রাজনীতিবিদ), রনাদা প্রসাদ সাহা (মানবপ্রেমিক), লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোয়াজ্জেম হোসেন (প্রাক্তন সৈনিক), মামুন মাহমুদ (পুলিশ অফিসার ) এবং আরও অনেকে। [6]
১৯৯৩ সালে বাংলাদেশ সরকার এই বর্বরোচিত ঘটনার জায়গাগুলোতে একটি স্মৃতিসৌধ নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয়।গৃহায়ন ও গনপূর্ত বিভাগের মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ স্থপতি ইনস্টিটিউটের যৌথ উদ্যোগে “বধ্যভূমি স্মৃতিসৌধ” নকশা জন্য একটি জাতীয় স্থাপত্য প্রতিযোগিতার আয়োজন করে। ২২টি দাখিলকৃত প্রস্তাবনার মধ্যে স্থপতি ফরিদ উদ্দিন আহমেদ ও স্থপতি মোঃ জামী-আল-সাফী র প্রস্তাবিত নকশা নির্ণায়ক-সভা কর্তৃক নির্বাচিত হয়। গণপূর্ত বিভাগ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করেছিল এবং এর সমাপ্তিতে প্রায় তিন বছর(১৯৯৬ থেকে ১৯৯৯) লেগেছিল। ১৫.২৪মি গুনন ১৫.২৪মি বর্গক্ষেত্রের একটি গ্রিড সমগ্র ৩.৫১ একর এলাকাটিকে বিভক্ত করেছে। প্রধান প্ল্যাটফর্মটি রাস্তায় উপরে ২.৪৪মি পর্যন্ত উত্থাপিত হয়েছে।
স্মৃতিসৌধের যেখানে মৃতদেহ খুঁজে পাওয়া যায় সেখানে রায়েরবাজারের মূল ইটভাটা ১৭.৬৮মি পুরু, ০.৯১মি উচু এবং ১১৫.৮২মি দীর্ঘ বাঁকা ইটের প্রাচীর। প্রাচীর নিজেই দুঃখ ও দুঃখের গভীরতা প্রদর্শক, যার দুই প্রান্তই নষ্ট হয়ে গেছে। দেয়ালের দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে ৬.১০মি গুনন ৬.১০মি বর্গাকার জানালা দিয়ে দর্শকরা আকাশ দেখতে পারে, এছাড়াও প্রকাণ্ড প্রাচীরের স্কেল নিচের দিকে গেছে। বাঁকা প্রাচীরের সামনে পানির মধ্যে অবস্থিত একটি কালো গ্রানাইট স্তম্ভ যা বিষাদের প্রতিনিধিত্ব করে। [7] সম্পূর্ণ স্থাপত্যটি তৈরি করা হয়েছে লাল ইট দিয়ে, যা নির্যাতনের পর শহীদ বুদ্ধিজীবীদের শরীর থেকে ঝরে পড়া রক্তের চিহ্ন বহন করে।[8]
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.