Loading AI tools
উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
শ্বেতবিবর (White Hole) হল কৃষ্ণ বিবরের বিপরীত ঘটনা। কৃষ্ণ বিবর সবকিছু নিজের মধ্যে শোষণ করে নেয়, আর শ্বেত বিবর সবকিছু বাইরে বের করে দেয়। এজন্য এটি খুব উজ্জ্বল। সময়কে বিপরীত দিকে চালালে কৃষ্ণ বিবরকে শ্বেত বিবর বলে মনে হবে। এই প্রক্রিয়াটিকে "টাইম রিভার্সাল অফ ব্ল্যাক হোল" বলা হয়। একে একট উপপ্রমেয়মূলক তারা (Hypothetical star) হিসেবে আখ্যায়িত করা যেতে পারে। কৃষ্ণ বিবরের মত শ্বেত বিবরেরও ভর, চার্জ, কৌনিক ভরবেগ আছে।
হোয়াইট হোল এমন একটি বস্তু যা পদার্থবিজ্ঞানের কিছু তত্ত্বে দেখা যায়। কেউই এটা এখনো দেখেনি। যখন একটি ব্লাক হোল নিষ্পন্ন হয় তখন সব কিছু এর মধ্যে এসে পতিত হয়। আর যেসব বস্তু ব্ল্যাক হোলে পতিত হয় সেগুলোকে কোনো একখানে যেতে হয়। হোয়াইট হোলের ধারণা এভাবেই আসে। যে বস্তুগুলো ব্লাক হোলে পতিত হয় সেগুলো কোথায় যায়? হয় সেগুলো আমাদের মহাবিশ্বে নাহয় অন্য কোনোভাবে অন্য কোনো মহাবিশ্বে। তবে অন্য মাহাবিশ্বে গেলে শক্তির সংরক্ষণশীলতার নীতির বিঘ্ন ঘটবে, যেমন আমাদের মহাবিশ্বের মোট শক্তির পরিমাণ নির্দিষ্ট, তাহলে বস্তুর মধ্যে সংরক্ষিত শক্তি অন্য মহাবিশ্বের গেলে ঐ মহাবিশ্বের মোট শক্তির পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে এবং আমাদের মহাবিশ্বের মোট শক্তির পরিমাণ কমে যাবে, যা শক্তি সংরক্ষণশীলতার নীতির বিঘ্ন ঘটায়, পক্ষান্তরে বিজ্ঞানী ডাল্টনের পরমাণু মতবাদে বলা হয়েছে পরমাণু সৃষ্টি করা বা ধ্বংস করা যাবে না যেহেতু বস্তুর মধ্যে পরমাণু বিদ্যমান সেহেতু বস্তু অন্য মহাবিশ্বে গিয়ে পরমাণুর সংখ্যা বৃদ্ধি করতে পারবে না, কিন্তু তার সম্ভাবনা একেবারেই কম। কারণ অন্য মহাবিশ্বে যাওয়ার পক্ষে কোনো যুক্তিই নেই। তাই ধারণা করা হয় বস্তুগুলো বের হতে হলে এমন মাধ্যম দরকার যা সবকিছু বের করে দেয়। আর এই ধারণা থেকেই জন্ম নেয় হোয়াইট হোলের। বিজ্ঞানীদের ধারণা যতটুকু পজেটিভ গ্রাভিটির চাপে ব্লাক হোল সংকুচিত হয়ে যাচ্ছে এবং সব কিছুকে নিজের করে নিচ্ছে ঠিক তেমনি করে হোয়াইট হোল নেগেটিভ গ্রাভিটির চাপে হোয়াইট হোল সবকিছু বের করে দিচ্ছে। বিজ্ঞানীরা মনে করছেন ব্লাক হোলের কোয়াসার গুলো হতে পারে হোয়াইট হোল। সব কিছু যেহেতু বের করে দেয় তাই একে সাদা দেখা যায়।
এই শ্বেত বিবরের উত্তপত্তি এক বিজ্ঞানীর বাস্তব একটি তথ্যের মাধ্যমে হয়েছে। সেই তথ্যটি হলো: এই মহাবিশ্বের সকল বস্তুরই বিপরীত কিছু না কিছু থাকবে। যার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় ব্ল্যাকহোলের বিপরীতে হোয়াইট হোল রয়েছে। ব্ল্যাকহোলের নিজের দিকে সকল কিছুকে আকর্ষণ আর হোয়াইট হোল নিজের থেকে বিকর্ষণ করে
হোয়াইট হোল হলো মহাবিশ্বের একটি তাত্ত্বিক অংশ। চিন্তা করা হয় এটি ব্ল্যাক হোলের সম্পূর্ণ বিপরীত বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন। ব্ল্যাক হোলে থেকে যেমন কোনো কিছু পালাতে পারেনা তেমনিভাবে হোয়াইট হোল সবকিছু উদ্গিরণ করে দেয় এবং কোনো কিছুই এমনকি শক্তিও এর কাছে যেতে পারেনা। হোয়াইট হোল সাধারণ আপেক্ষিক তত্ত্বের সূত্রগুলোর একটি সম্ভাব্য সমাধান। এই তত্ত্বানুসারে যদি মহাবিশ্বে ব্ল্যাক হোলের অস্তিত্ব থাকে তাহলে হোয়াইট হোলও থাকা উচিত। এখন আমাদের কাছে কেবল মনে হয় হোয়াইট হোল হলো কেবল মাত্র গাণিতিক সম্ভাবনা। কিন্তু নতুন গবেষণা বলছে যদি “লুপ কোয়ান্টাম গ্র্যাভিটি”- তত্ত্বটি যদি সত্যি হয় তাহলে হোয়াইট হোলের অস্তিত্বও সত্যি হতে পারে- এমনকি আমরা হোয়াইট হোল দেখতেও পারি (সম্ভাবনা আছে)। ক্যালিফোর্নিয়া ইন্সটিটিউট অব টেকনোলজি’র পদার্থবিজ্ঞানী সিন ক্যারল হোয়াইট হোলকে এভাবে সংজ্ঞায়িত করেছেনঃ ব্লাক হোল হলো এমন একটি জায়গা যেখানে কেউ একবার গেলে আর ফিরে আসতে পারবে না; হোয়াইট হোল হলো এমন একটি জায়গা যেখান থেকে কেউ একবার বের হলে আর সেখানে ফিরে যেতে পারেনা। পক্ষান্তরে এদের গণিতিক এবং জ্যামিতিক ব্যাখ্যা সম্পূর্ণ একই রকম। এদের কিছু অনন্য বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যেমনঃ সিঙ্গুলারিটি, যেখানে একটি বিন্দুতে প্রচুর ভর একত্রিত হয়, ঘটনা দিগন্ত এবং অদৃশ্য “না ফেরার বিন্দু (point of no return)” যা ১৯১৬ সালে জার্মান পদার্থবিজ্ঞান কার্ল সোয়ার্জচাইল্ড সর্বপ্রথম গাণিতিকভাবে ব্যাখ্যা করেন। ব্লাক হোলের ক্ষেত্রে ঘটনা দিগন্ত (Event Horizon) দিয়ে কেবল কোনো কিছু প্রবেশ করে কিন্তু হোয়াইট হোলের ক্ষেত্রে ঘটনা দিগন্ত দিয়ে সবকিছু বের হয়ে যায়। আইন্সটাইনের সাধারণ আপেক্ষিক তত্ত্বানুসারে, ব্লাক হোলের ঘূর্ণন সিঙ্গুলারিটিকে বলয়ের মতো চর্চিত করে দেয়, এ মত অনুসারে ব্লাক হোলের বলয়ের মধ্য দিয়ে কোনো কিছু চূর্ণিত না হয়ে চলে যেতে পারে। সাধারণ আপেক্ষিক তত্ত্বের সমীকরণ অনুসারে কিছু যদি এরকম একটি ব্লাক হোলে পড়ে তাহলে সে স্থান-কালের একটি পথে প্রবেশ করবে যাকে আমরা ওয়ার্ম হোল বা কীট বিবর হিসেবে চিনি এবং একটি হোয়াইট হোল দিয়ে সে বেরিয়ে যাবে। হোয়াইট হোল ঐ বস্তুর অংশগুলোকে মহাবিশ্বের বিভিন্ন স্থানে নিক্ষেপ করবে এমনকি বিভিন্ন সময়েও নিক্ষেপ করতে পারে (যার কারণে কিছু অংশ পাওয়া যেতে পারে এবং কিছু আবার হাওয়া হয়ে যেতে পারে :D ) । তবে এই সম্পর্কে গাণিতিক প্রমাণ থাকলেও এটি বাস্তবিক নয় বলে ধারণা করেন কলরাডো বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যোতির্পদার্থবিজ্ঞানী এন্ড্রু হ্যামিল্টন। প্রকৃতপক্ষে, হ্যামিল্টন সহ পূর্বের কিছু গবেষণা বলে, কোনো কিছু ঘুর্ণনশীল ব্ল্যাক হোলে পতিত হলে মূলত,ওয়ার্মহোলের সাথে যুক্ত হয়,যা হোয়াইট হোলের সাথে যুক্ত হওয়ার পথ সৃষ্টি প্রতিরোধ করে। কিন্তু বলা হয়ে থাকে, হোয়াইট হোলের শেষপ্রান্তে আলো আছে। ব্লাক হোলের সিঙ্গুলারিটিতে সাধারণ আপেক্ষিক তত্ত্ব ভেঙে পড়ে যার সাহায্যে হ্যামিল্টন ভবিষ্যদবাণী করেছিলেন। মিশিগান স্টেট ইউনিভার্সিটির পদার্থবিজ্ঞানী স্টিফেন সু বলেন, “শক্তির ঘনত্ব এবং বক্রতা সেখানে এত বেশি যে, চিরায়ত গ্র্যাভিটি দিয়ে ব্যাখ্যা করা যায়না সেখানে কী ঘটছে।” তিনি আরো বলেন, “ হতে পারে গ্র্যাভিটির আরো কোনো নতুন মডেলই পারে এই অস্থায়ী অপারগতা দূর করতে এবং হোয়াইট হোলের ব্যাখ্যা প্রদান করতে।” প্রকৃতপক্ষে, একটি সমন্বিত তত্ত্ব যা গ্র্যাভিটি এবং কোয়ান্টাম মেকানিক্সকে একিভূত করে, হলো সমসাময়িক পদার্থবিজ্ঞানের এক রকম হলি গ্রেইল (অত্যন্ত রহস্যময়)। এরকম একটি তত্ত্ব, লুপ কোয়ান্টাম গ্র্যাভিটি, ব্যবহার করে ফ্রান্সের এক্সি-মারশেইল বিশ্ববিদ্যালয়ের তাত্ত্বিক হ্যাল হ্যাগার্ড এবং ক্যারল রোভেলি দেখিয়েছেন যে ব্ল্যাক হোল কোয়ান্টাম প্রসেসের মধ্য দিয়ে হোয়াইট হোলে রূপান্তরিত হতে পারে। ২০১৪ সালের জুলাই মাসে তারা অনলাইনে তাদের এই তত্ত্ব প্রকাশ করেছে। লুপ কোয়ান্টাম গ্র্যাভিটি বলে স্থান-কাল লুপের মত মৌলিক ব্লক দ্বারা গঠিত। হ্যাগার্ড এবং রভেলি এর মতে লুপগুলোর সসীম আকারের কারণে কোনো মৃত তারকা একটি বিন্দুতে চুপসে পড়ে যেখানে ঘনত্ব থাকে অসীম এবং এই সংকুচিত বস্তুটি হোয়াইট হোলে পরিণত হয়। এই প্রক্রিয়াটি ঘটতে সময় লাগে প্রায় এক সেকেন্ডের কয়েক সহস্রাংশ, কিন্তু সংশ্লিষ্ট তীব্র গ্র্যাভিটিকে ধন্যবাদ, আপেক্ষিকতার প্রভাবে এই প্রক্রিয়ার সময়কাল অনেক বেশি মনে হয়, অনেক দূর থেকে কোনো ব্যক্তি যদি এই পরিবর্তন লক্ষ্য করে তাহলে সে দেখবে এতে সময় অনেক বেশি লাগছে। অর্থাৎ, এই শিশু মহাবিশ্বে জন্ম নেওয়া অণুমাত্র ব্লাক হোলগুলো হোয়াইট হোলে পরিণত হতে পারত (নেচার এর রিপোর্ট অনুসারে)।
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.