সিন্ট্যাকটিক স্ট্রাকচারস
From Wikipedia, the free encyclopedia
সিনট্যাক্টিক স্ট্রাকচার্স (মূল ইংরেজি নাম Syntactic Structures) ভাষাবিজ্ঞানের একটি গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থ, যার লেখক মার্কিন ভাষাবিজ্ঞানী নোম চম্স্কি।[5] বইটি ১৯৫৭ সালে সর্বপ্রথম প্রকাশিত হয়। বইটিতে প্রথমবারের মত রূপান্তরমূলক উৎপাদনশীল ব্যাকরণ নামক ধারণাটিকে উপস্থাপন করা হয়। বাক্যতাত্ত্বিক (অর্থাৎ বাক্যের কাঠামো সংক্রান্ত) গবেষণার ক্ষেত্রে চম্স্কি-প্রস্তাবিত এই পন্থাটি ছিল সম্পূর্ণ বিধিসম্মত (অর্থাৎ বিভিন্ন চিহ্ন, সূত্র ও তাদের নিপূণ ব্যবহারভিত্তিক)। এই পদ্ধতিটির ভিত্তিতে রয়েছে কিছু পদগুচ্ছ কাঠামো সূত্র। [টীকা 2] এই সূত্রগুলি একটি বাক্যকে একাধিক ক্ষুদ্রতর অংশে ভাগ করে ফেলে। চম্স্কি এরপর এই সূত্রগুলিকে এক নতুন ধরনের সূত্রের সাথে সংযুক্ত করেন, যাদের নাম “রূপান্তর”। এই পদ্ধতিটি বিভিন্ন ধরনের বাক্যিক সংগঠন বা কাঠামো উৎপাদন করতে পারে। [6] চম্স্কির লক্ষ্য হল এই সীমিত সংখ্যক সূত্রের গুচ্ছ ব্যবহার করে যেকোন প্রদত্ত মানবভাষার সমস্ত এবং কেবলমাত্র ব্যাকরণশুদ্ধ বাক্যগুলি “উৎপাদন” করা।[7][টীকা 3][8]
লেখক | নোম চম্স্কি |
---|---|
ভাষা | ইংরেজি |
বিষয় | স্বাভাবিক ভাষার বাক্যতত্ত্ব |
প্রকাশক | মুটোঁ ডে গ্রয়টার |
প্রকাশনার তারিখ | ফেব্রুয়ারি ১৯৫৭ |
পৃষ্ঠাসংখ্যা | 117 |
পূর্ববর্তী বই | দ্য লজিকাল স্ট্রাকচার অফ লিঙ্গুইস্টিক থিওরি (অপ্রকাশিত মাইমোগ্রাফ বা মাইক্রোফিল্ম সংস্করণ) |
পরবর্তী বই | অ্যাসপেক্ট্স অফ দ্য থিওরি অফ সিনট্যাক্স |
সিনট্যাক্টিক স্ট্রাকচার্স ছিল চম্স্কির প্রথম গ্রন্থ। এই একক রচনাটি আকারে ছোট, এর পৃষ্ঠাসংখ্যা একশ’র খানিকটা বেশি। চম্স্কি বইটি ভাষাবিজ্ঞানের বিশেষজ্ঞদের জন্য রচনা করেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস ইন্সটিটিউট অফ টেকনলজি বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের একটি কোর্সে পড়ানোর জন্য তিনি যে পাঠগুলি তৈরি করেন, সেগুলির উপর ভিত্তি করেই তিনি বইটি লেখেন।[টীকা 4] বইটিতে লেখা একটি বহুচর্চিত উক্তি হল “কালার্লেস গ্রিন আইডিয়াজ স্লিপ ফিউরিয়াসলি” (Colorless green ideas sleep furiously) অর্থাৎ “বর্ণহীন সবুজ ধারণাগুলি প্রচন্ড রেগে ঘুমায়”।[9] এই ইংরেজি বাক্যটির কোন পরিষ্কার অর্থ নেই। কিন্তু কেবল ব্যাকরণের দৃষ্টিকোণ থেকে একজন মাতৃভাষী ইংরেজি বক্তার কাছে এটিকে একটি শুদ্ধ বাক্য বলে মনে হয়। চম্স্কির কাছে তাই বাক্যতত্ত্বের গবেষণা শব্দার্থতত্ত্বের গবেষণা থেকে স্বাধীন একটি বিষয়।[10][টীকা 5]
চম্স্কি যখন সিনট্যাক্টিক স্ট্রাকচার্স লেখেন, তখনও তিনি শিক্ষায়তনিক অঙ্গনে তেমন পরিচিত হয়ে ওঠেননি।[টীকা 6] মুটোঁ নামেক একটি ক্ষুদ্র ওলন্দাজ প্রকাশনা সংস্থা বইটি বাজারে বের করে।[টীকা 7] তা সত্ত্বেও এই সূক্ষ্ম, জটিল ও গভীর বিষয়বস্তুসমৃদ্ধ বইটি শুরুতে ব্যাপক সমাদর পায়। এমনকি তৎকালীন ভাষা বিষয়ক গবেষণার ঐতিহ্যে বইটিকে একটি অন্যতম সংযোজন হিসেবে স্বাগত জানানো হয়।[11] [টীকা 8] কিন্তু শীঘ্রই বইটির সাহসী নতুন ধারণাগুলির জন্য প্রতিষ্ঠিত ও বয়স্ক ভাষাবিজ্ঞানীরা এর নেতিবাচক সমালোচনা করতে শুরু করেন।[টীকা 9] তাদের বিপরীতে তরুণ নবীন ভাষাবিজ্ঞানীরা চম্স্কির গবেষণাপদ্ধতিকে উৎসাহের সাথে গ্রহণ করেন।[টীকা 10] ফলে বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয় ভাগে এসে ভাষাবিজ্ঞান শাস্ত্রের মোড় ঘুরে যায়। এরপর থেকে বাক্যতত্ত্বকে কেন্দ্রে রেখে ভাষার বিধিসম্মত তত্ত্ব নির্মাণের কাজ অনেক স্বাভাবিক একটি কাজে পরিণত হয়। ভাষা গবেষণার এই ধারাতে ভাষিক বক্তার আচরণের পরিবর্তে বক্তার মনের মাঝে ভাষার অবস্থানকে অনেক বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।[টীকা 11]
সিনট্যাক্টিক স্ট্রাকচার্স ভাষাবিজ্ঞানের বাইরে জ্ঞানের বেশ কিছু ক্ষেত্রে প্রভাব বিস্তার করেছে। বিশেষ করে দর্শন, মনোবিজ্ঞান এবং বোধনবিজ্ঞানসমূহের উপর বইটি গভীর প্রভাব ফেলে। এছাড়া কম্পিউটার বিজ্ঞান ও স্নায়ুবিজ্ঞানের উপরও বইটিতে বর্ণিত তত্ত্ব প্রভাব ফেলতে সক্ষম হয়।[টীকা 11] কোনও কোনও বিশেষজ্ঞ চম্স্কির তত্ত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তাদের মতে ভাষাকে একটি আদর্শ সংশ্রয় বা ব্যবস্থা হিসেবে বর্ণনা করাটা ভুল। অন্যান্য বিশেষজ্ঞরা মনে করেন চমস্কির তত্ত্বে উপাত্ত সংগ্রহ ও পরীক্ষা-নিরীক্ষাকে যথেষ্ট মূল্য দেওয়া হয়নি।[টীকা 12] এ সত্ত্বেও ২১শ শতকের শুরুতে এসে ভাষাবিজ্ঞানী ও অন্যান্য পর্যালোচকেরা উভয়েই বইটির প্রশংসা করেন। তারা বইটিকে বিংশ শতাব্দীর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ গবেষণাগ্রন্থ হিসেবে স্বীকৃতি দেন।[4][টীকা 13][12]