Loading AI tools
প্রাচীন সভ্যতা ও ঐতিহাসিক স্থান উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
সুমেরীয় সভ্যতা (মিশরীয় সাঙ্গার, বাইবেলে শিনার নামে পরিচিত, স্থানীয় উচ্চারণ কি-এন-গির) মেসোপটেমিয়ার দক্ষিণাংশের একটি প্রাচীন সভ্যতা। এর অবস্থান ছিল আধুনিক রাষ্ট্র ইরাক এর দক্ষিণ-পশ্চিমাংশে। সুমেরীয় সভ্যতার অস্তিত্ব ছিল খ্রিষ্টপূর্ব ৪৫০০ হতে খ্রিষ্টপূর্ব ১৯০০-এর মধ্যে। ব্যাবিলন সভ্যতার উত্থানের সাথে সাথে সুমেরীয় সভ্যতার পতন ঘটে। সুমেরীয় সভ্যতাকে পৃথিবীর প্রথম সংগঠিত সভ্যতা হিসাবে গণ্য করা হয়।
ভৌগলিক সীমা | মেসোপটেমিয়া, নিকট প্রাচ্য, মধ্যপ্রাচ্য |
---|---|
সময় | নব্যপ্রস্তর যুগের শেষভাগ, মধ্য ব্রোঞ্জ যুগ |
তারিখ | আনু. ৪৫০০ – আনু. ১৯০০ খ্রিস্টপূর্ব |
পূর্বসূরী | উবাইদ কাল |
উত্তরসূরী | আক্কাদীয় সাম্রাজ্য |
বর্তমানে ইরাকের টাইগ্রিস ও ইউফ্রেটিস (তৎকালীন দজলা ও ফোরাত) নদীর মধ্যবর্তী উর্বর স্থানে সুমেরীয় সভ্যতার গোড়াপত্তন ঘটে। পশ্চিম এশিয়ার নবোপলয়ী পর্যায় থেকে উত্তরণ ঘটিয়ে মেসোপটেমিয়া অঞ্চলে প্রথম যে সভ্যতা গড়ে উঠে তাই সুমেরীয় সভ্যতা।
দক্ষিণ মেসোপটেমিয়ার আদি অ-সেমেটিকবাসীরা সাধারণভাবে সুমেরিয়ান নামে পরিচিত।
নির্ভরযোগ্য প্রমাণের অভাবে সুমেরীয়দের আদি বাসস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত কিছু বলা যায় না। সুমেরীয়দের একটি দল ৪০০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দের দিকে উত্তর-পূর্বাঞ্চল বিশেষত এলামের পাহাড়ি অঞ্চল থেকে অগ্রসর হয়েছিল। মূলত উৎস ভূমিতে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় সুমেরীয়দের গোষ্ঠী উর্বর কৃষিজ ভূমির সন্ধানে অগ্রসর হয়ে মেসোপটেমিয়া অঞ্চলে চলে এসেছিল। সুমেরীয়দের নামানুসারে এ অংশটি সুমেরীয় (সুমের) নামে পরিচিত হয়। আবার অন্য একদল ঐতিহাসিক মনে করেন, এরা মধ্য এশিয়ার মালভূমি থেকে সমুদ্রপথে আগমন করেছে। ভারতীয় ঐতিহাসিকদের ধারণা এরা যাযাবর। পশু ও নিজেদের খাদ্য অন্বেষণে এরা মেসোপটেমিয়া অঞ্চলে চলে আসে। তবে তাদের আদি বাসস্থান যেখানেই না কেন তারা খুব একটা বাধার সম্মুখীন না হয়ে নিম্ন উপত্যকায় বসবাস শুরু করে। ইটনা নামক স্থানে প্রথম তারা বসতি গড়ে তোলেন। কোন কোন বিশেষজ্ঞের মতে,টেমপ্লেট:কারা এরা আধুনিক তুরস্কের আনাতোলিয়া নামক স্থান থেকে এসেছিল। সুমেরীয়দের মূল আবাস নিয়ে বিতর্ক আছে বলেই এটা নিয়ে অনেক রহস্যময় গল্প ও ব্যাখ্যা চালু আছে। ষড়যন্ত্র তত্ত্বানুসারে সুমেরীয় একটা জনপ্রিয় ধারণা।
জলঘড়ি ও চন্দ্রপঞ্জিকা আবিষ্কারে বিশেষ অবদান রয়েছে।
বস্তুত চাকার যানবাহনের ইতিহাসের সঙ্গে সুমেরীয় সভ্যতার খুব বেশি সম্পর্ক নেই। কারণ তখনও মানুষের মাঝে এমন ধারণা জন্মায়নি। কিন্তু সুমেরীয়রা যেসব যন্ত্রপাতি তৈরি করেছিলেন সেগুলোর মধ্যে দুই চাকার রথ ছিলো উল্লেখযোগ্য। আর এই তথ্যটি রিচার্ড ডব্লিউ বুলিটের লেখা ‘দ্য হুইল’ গ্রন্থে পাওয়া যায়। পরবর্তীতে গুডম্যানও এই ব্যাপারে বিস্তর গবেষণা করেন এবং রিচার্ডের উল্লেখিত তথ্যটির সত্যতা খুঁজে পান।
তাদের দুজনের দেয়া তথ্যমতে, সুমেরীয়রা গৃহপালিত পশুপাখি এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় আনা নেয়ার জন্য দুই চাকার রথ ব্যবহার করতেন। এছাড়াও তখনকার সময়ের সেনাবাহিনীও অস্ত্র বহনে এই রথ ব্যবহার করেছিলো। যদিও বাস্তবিক সেই রথের আকার কতটুক ছিলো সে সম্পর্কে ধারণা নেয়ার কোনো উপায় খুঁজে পাননি রিচার্ড এবং গুডম্যান। তবে ধারণা করা হয়, খ্রিস্টপূর্ব ৩০০০ সালের দিকে এই রথ সর্বপ্রথম তৈরি করা হয়েছিলো।
হাজার বছর ধরে কৃষিকাজের উন্নতি ও অগ্রগতি পরিচালিত হয়েছে লাঙ্গল দিয়েই। আর এই লাঙ্গল মেসোপটেমিয়ার সুমেরীয় সভ্যতার লোকেদের সৃষ্টি। আর এটি গবেষকরা প্রমাণ করতেও সক্ষম হয়েছেন। সুমেরীয় সভ্যতার লোকেরা নিজেদের উর্বর মেধাকে কাজে লাগিয়ে যতগুলো যন্ত্রপাতি আবিষ্কার করেছেন তার মধ্যে লাঙ্গল শ্রেষ্ঠ। তাইগ্রিস ও ইউফ্রেতিসের পানিকে কাজে লাগিয়ে তারা কৃষিকাজে ব্যবহার করত। পরবর্তীতে চাষাবাদের প্রয়োজনে তারা লাঙ্গলের নকশা প্রণয়ন করে। যদিও সুমেরীয়দের সময়েই লাঙ্গল বার বার নতুনত্ব পেয়েছিলো।
সেকালে ঐ অঞ্চলে ধাতু ছিলো খুবই দুর্লভ। যার কারণে লাঙ্গল তৈরিতে তারা পাথরের তীক্ষ্ণ ফলা ব্যবহার করত। আর সেটিকে কাঠের দন্ডের সঙ্গে শক্ত করে বেঁধে জমি চাষ করা হতো। লাঙ্গল আবিষ্কার করে সুমেরীয় সভ্যতার লোকেরা কৃষিখাতে বিপ্লব ঘটিয়েছিলো। নদীর পানি আর লাঙ্গলের চাষাবাদ মিলিয়ে খুব কম সময়ে তিনগুণ বেশি উৎপাদন করতে সক্ষম হন কৃষকরা। আর এই বিপ্লবের কারণে দুর্গম অঞ্চলে সুমেরীয়রা স্থায়ীভাবে দীর্ঘ সময় ধরে বসবাস শুরু করেন।
তর্কাতীতভাবে সুমেরীয়রাই ইতিহাসের প্রথম জাতি হিসেবে লেখালেখির প্রচলন শুরু করে। ধারণা করা হয়, খ্রিস্টপূর্ব ২৮০০ সালে যখন তারা পণ্য উৎপাদন, বিপণনে খুব ভালো উন্নতি সাধন করেছিলেন তখন সেগুলোর হিসেবে নিকেশ এবং ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে সংরক্ষণের অভাব বোধ করেন। আর সে সময়েই তারা লেখার প্রচলন করেন। লেখার প্রচলন ঘটিয়ে সুমেরীয়রা ক্রয়-বিক্রয়ের হিসেব সংরক্ষণ করতেন। তাদের আবিষ্কৃত প্রথম অক্ষরগুলো শুধুমাত্র পণ্য এবং সংখ্যা নির্দেশ করতো। পরবর্তীতে তারা বিভিন্ন বস্তুর নির্দেশক চিত্র অঙ্কনেরও প্রচলন ঘটায়। ফলশ্রুতিতে খুব অল্প সময়ের মধ্যে তারা পণ্যের নির্দেশক চিত্র, অক্ষর ও সংখ্যাগুলোকে একত্রিত করতে সক্ষম হয়। এতে করে ফুটে ওঠে কিছু পূর্ণাঙ্গ লেখনী।
লেখকরা লেখার জন্য কাদামাটি এবং তীক্ষ্ণ ধাতব দন্ড ব্যবহার করতেন। তারা দন্ডটি দিয়ে শব্দ লেখার পাশাপাশি চিত্রাঙ্কন করত। ভেজা কাদামাটির উপর শব্দ ও চিত্রাঙ্কন করার পর তারা সেগুলোকে প্রখর রোদে শুকিয়ে সংরক্ষণ করত। আর এই পদ্ধতিটি সুমেরীয়দের থেকে পুরো মধ্যপ্রাচ্যে ছড়িয়েছিলো। ঐতিহাসিকদের মতে, গোটা মধ্যপ্রাচ্যে প্রায় ২০০০ বছর পর্যন্ত এই পদ্ধতিতে লেখালেখির প্রচলন ছিলো। শুধু তা-ই নয়, সুমেরীয় সভ্যতার মানুষ কোনো এক সময় লেখালেখির এই পদ্ধতি ব্যবহার করে কবিতা ও সাহিত্য রচনা করেছিলেন।
পোশাকের অতীত ইতিহাস ঘাঁটলে মধ্যপ্রাচ্যের নাম বিশেষভাবে উঠে আসে। বস্তুত পৃথিবীর অন্যান্য অঞ্চলের মানুষদের সঙ্গে ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলের মানুষের পোশাক উৎপাদন প্রক্রিয়ার ব্যাপক পার্থক্য ছিলো এবং এখনো রয়েছে। ঐ অঞ্চলের লোকেরা আদিকাল থেকেই পশুপালন করতেন। তারা সে সকল পশুর লোমকে নানান কাজে ব্যবহার করত। যার মধ্যে পোশাক উৎপাদন ছিলো বহুল প্রচলিত একটি পদ্ধতি। আর সর্বপ্রথম এই পদ্ধতিটি প্রচলন ঘটায় সুমেরীয় সভ্যতার লোকেরা।
প্রত্নতত্ত্ববিদদের গবেষণায় সুমেরীয় সভ্যতার লোকেদের পোশাক তৈরির চমকপ্রদ কিছু তথ্য উঠে এসেছে। গবেষক গুডম্যানের মতে, তারাই সর্বপ্রথম আত্মীয়তার সম্পর্ক গড়ে তোলেন। যার ফলে তারা পোশাক তৈরির জন্য বড় সংগঠন প্রস্তুত করতে সক্ষম হন। মূলত পরিবার কেন্দ্রিক সেই সংগঠনের মাধ্যমে সুমেরীয়রা পোশাক তৈরিকে শিল্পে রূপান্তরিত করেছিলেন এবং পুরো মেসোপটেমিয়া অঞ্চলে ছড়িয়ে দিয়েছিলেন। তাদের পারিবারিক সেসব পোশাক কারখানার ধারণা থেকেই আজকের যুগের গার্মেন্টস শিল্পের উৎপত্তি হয়েছে বলে ধারণা করেন গবেষকরা।
সুমেরীয় সভ্যতার লোকেরা প্রথমদিকে বাসস্থানহীন হয়ে বসবাস করলেও কৃষি ও পোশাক তৈরির প্রক্রিয়া প্রচলন হওয়ার পর অনেকটা সভ্য হয়ে ওঠে। তারা একসময় নিজেদের বাসস্থান এবং উপাসনার জন্য মন্দিরও নির্মাণ করেছিল। মৃৎশিল্পে পারদর্শী সুমেরীয়রা মন্দির ও বাসস্থান নির্মাণ করত কাদামাটির তৈরি ইট দিয়ে। যদিও সুমেরীয় সভ্যতার লোকেরা সর্বপ্রথম অট্টালিকা তৈরি করেনি। তবে কাদামাটির তৈরি ইট তাদের সৃষ্টি বলেই ধারণা গবেষকদের।
বিভিন্ন সভ্যতার ইতিহাসে বাড়িঘর কিংবা উপাসনালয় তৈরিতে বেশিরভাগ সময়ে মার্বেল পাথর কিংবা সাধারণ পাথরের ব্যবহার ছিলো সর্বাধিক। কিন্তু সুমেরীয় সভ্যতার লোকেরা ইটের তৈরি বাড়িঘর এবং মন্দির নির্মাণ করেছিল। ফলশ্রুতিতে আস্তে আস্তে পুরো মধ্যপ্রাচ্যে ছড়িয়ে ছিটিয়ে বাস করতে পেরেছিল তারা। কিছুকাল আগে ইউফ্রেতিস নদীর তীরে অবস্থিত সিরিয়ার তেল তারিরি শহরে সুমেরীয়দের তৈরি ইটের স্থাপনা আবিষ্কার করেন প্রত্নতত্ত্ববিদরা। যার ফলে সহজে এই বিষয়ে একমত হওয়া যায় যে, সুমেরীয়দের আবিষ্কৃত ইটের মাধ্যমে সময়ের পরিক্রমায় বদলে গেছে স্থাপত্যকলার পুরো ইতিহাস।
মেসোপটেমিয়ার সুমেরীয় সভ্যতার লোকেরা গণিতবিদ্যায়ও পারদর্শী ছিল। গণনার কাজে তারা কয়েকটি চমৎকার পদ্ধতি আবিষ্কার করেছিল। যদিও বেশিরভাগ প্রাচীন সভ্যতার লোকেরা গণনার জন্য প্রাণীর হাড়ে দাগ কেটে রাখতেন। কিন্তু সুমেরীয়রাই সর্বপ্রথম ঐ পদ্ধতিকে আরো উন্নত রূপ প্রদান করেছিলেন। রবার্ট ই এবং ক্যারোলি ক্র্যাবসের বই ‘গ্রাউন্ডব্রেকিং সায়েন্টিফিক এক্সপেরিমেন্টস, ইনভেনশনস অ্যান্ড ডিসকভার অফ দ্য অ্যানসিয়েন্ট ওয়ার্ল্ডে’ সুমেরীয়দের গণিতবিদ্যার সুস্পষ্ট বর্ণনা রয়েছে। মূলত ৬০ ইউনিটের একটি সংখ্যা পদ্ধতিতে গণিত চর্চা করত সুমেরীয় সভ্যতার লোকেরা।
এই পদ্ধতিতে তারা পাশাপাশি এবং উম্বভাবে সংখ্যা লিখত। আর পুরো কাজটি সম্পন্ন হতো কাদামাটির উপর। প্রতিটি ইউনিটকে ভাগ করে পূর্ণাঙ্গ গণনার হিসেব প্রকাশ করত সে সময়ের গণিতবিদরা। লেখা শেষে সেগুলোকে রোদে শুকিয়ে সংরক্ষণ ও বাণিজ্যের কাজে ব্যবহার করত ব্যবসায়ীরা। তাদের এই গণিতবিদ্যা মানব সভ্যতার ক্রমবিকাশে নানাভাবে সহায়তা করেছিলো। যেমনভাবে তাদের সভ্যতার শুরু থেকে শেষ অবধি তাদের সৃষ্ট শিল্পগুলো আধুনিক যুগের বিশেষ ভিত্তি হিসেবে কাজ করছে এখনও। কয়েক হাজার বছর আগেকার সুমেরীয়দের গণিত চর্চার এমন অত্যাধুনিক পদ্ধতি দেখে বোঝাই যায় কতটা মেধাবী এবং উর্বর মস্তিষ্ক নিয়ে মরুর বুকে নিজেদের বিকাশ ঘটিয়েছিল তারা।
সুমেরীয় সাহিত্য মিশরীয়দের চেয়ে উন্নত ছিল।সুমেরীয়রাই প্রথম মহাকাব্য রচনা করেছিলেন।তাদের বিখ্যাত মহাকাব্যের নাম “গিলগামেশ”।
সুমেরীয়দের জীবনে ধর্ম একটি বিশেষ স্থান দখল করেছিল। তারা অনেক দেবতায় বিশ্বাসী ছিল। তাদের সূর্য দেবতা ছিল “শামাশ”।
সুমেরীয়দের কাছে আইন বলতেছিল তারা সবাই একত্রে বসবাস করবে এবং তাদের কাছে জমি জায়গা ছিলনা তারা এক ধরনের যাযাবর ছিল বলে সেরকম তাদের মধ্যে কোন ঝগড়া লাগত না এবং কোন ধরনের অসুবিধা হলে তাদের একজন দলনেতা ছিল তার কাছে গিয়ে বলতো এবং সেই দলের নেতা বা রাজা তাদের বিচার করত তবে যেকোনো একজনকে বলি দিতে হতো।
পৃথিবীর প্রথম আইন—উর–নাম্মু কোড।
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.