সৌরজগতের জন্ম ও বিবর্তন
From Wikipedia, the free encyclopedia
সৌরজগতের উদ্ভব ও বিবর্তন সূচিত হয়েছিল প্রায় ৪৫৭ কোটি বছর আগে এক দৈত্যাকার আণবিক বেঘের একটি ক্ষুদ্র অংশের মহাকর্ষীয় পতনের মাধ্যমে।[1] উক্ত পতনশীল ভরের অধিকাংশই কেন্দ্রস্থলে সঞ্চিত হয়ে সূর্যের উদ্ভব ঘটায় এবং অবশিষ্ট ভর চ্যাপ্টা আকার ধারণ করে একটি আদিগ্রহীয় চাকতি গঠন করে। এই চাকতি থেকেই গ্রহ, উপগ্রহ, গ্রহাণু ও অন্যান্য ক্ষুদ্র সৌরজাগতিক বস্তুর উদ্ভব ঘটে।
নীহারিকা অনুকল্প নামে পরিচিত এই তত্ত্বটি অষ্টাদশ শতাব্দীতে ইমানুয়েল সুইডেনবার্গ, ইমানুয়েল কান্ট ও পিয়ের সিমোঁ লাপ্লাস কর্তৃক প্রথম প্রতিষ্ঠা লাভ করেছিল। পরবর্তীকালে জ্যোতির্বিজ্ঞান, রসায়ন, ভূতত্ত্ব, পদার্থবিদ্যা ও গ্রহবিজ্ঞানের মতো বিজ্ঞানের নানা শাখা এই তত্ত্বটির সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে। ১৯৫০-এর দশকে মহাকাশযুগের সূচনা এবং ১৯৯০-এর দশকে বহির্গ্রহের আবিষ্কারের পর তত্ত্বটির যথার্থতা যেমন প্রতিযোগিতার পড়ে, তেমনই আবার নতুন পর্যবেক্ষণের ভিত্তিতে এই তত্ত্বে বিভিন্ন সংশোধনীও আনা হয়।
আদি উদ্ভবের পর থেকে সৌরজগৎ উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বিবর্তিত হয়েছে। গ্রহগুলিকে বেষ্টন করে প্রদক্ষিণকারী গ্যাস ও ধুলোর থেকে অনেক উপগ্রহের উদ্ভব ঘটেছে; আবার এও মনে করা হয় যে অন্য উপগ্রহগুলি স্বাধীনভাবে উদ্ভূত হওয়ার পর সংশ্লিষ্ট গ্রহের মাধ্যাকর্ষণে বাঁধা পড়েছে। অন্যদিকে পৃথিবীর চাঁদের মতো কোনও কোনও উপগ্রহ সম্ভবত কোনও প্রচণ্ড সংঘর্ষের ফলশ্রুতি। মহাজাগতিক বস্তুগুলির মধ্যে এই জাতীয় সংঘর্ষের ঘটনা বর্তমান যুগেও অব্যাহত রয়েছে। এই সব সংঘর্ষই সৌরজগতের বিবর্তনে কেন্দ্রীয় ভূমিকা পালন করে এসেছে। গ্রহগুলির অবস্থান পরিবর্তনের কারণ সম্ভবত অভিকর্ষীয় মিথষ্ক্রিয়া।[2] এই ধরনের গ্রহীয় অভিপ্রয়াণকে এখন সৌরজগতের আদি বিবর্তনের অধিকাংশের জন্য দায়ী মনে করা হয়।
মোটামুটি ৫০০ কোটি বছরের মধ্যে সূর্য শীতল হয়ে পড়বে এবং তার বর্তমান ব্যাসরেখা বহির্ভাগে বহুগুণ প্রসারিত হয়ে নক্ষত্রটি একটি লোহিত দানবে পরিণত হবে। তারপর সূর্য তার বহিঃস্তরগুলি একটি গ্রহীয় নীহারিকার আকারে পরিত্যাগ করবে এবং পিছনে পড়ে থাকবে শুধু শ্বেত বামন নামে পরিচিত একটি নাক্ষত্রিক অবশেষ। সুদূর ভবিষ্যতে পরিক্রমণশীল নক্ষত্রগুলির মাধ্যাকর্ষণের ফলে সূর্যের সঙ্গে থাকা গ্রহগুলির সংখ্যা হ্রাস পাবে। কোনও কোনোও গ্রহ ধ্বংসপ্রাপ্ত হবে; অন্যগুলি উৎক্ষিপ্ত হবে আন্তঃনাক্ষত্রিক মহাকাশে। শেষ পর্যন্ত কয়েকশো কোটি বছর পরে সম্ভবত সূর্য একাই পড়ে থাকবে; তার চারিদিকে প্রদক্ষিণরত মূল বস্তুগুলির একটিরও সম্ভবত কোনও অস্তিত্ব থাকবে না।[3]