উপন্যাস
বর্ণনামূলক পাঠ্য, সাধারণত একটি উল্লেখযোগ্য দৈর্ঘ্যের এবং একটি কাল্পনিক এবং ক্রমিক গল্প বর্ণনা / From Wikipedia, the free encyclopedia
উপন্যাস হলো আখ্যানমূলক কল্পকাহিনি বা উপাখ্যানের তুলনামূলকভাবে বর্ধিত একটি রচনা যেখানে লেখক তাঁর জীবনদর্শনকে বাস্তব জীবনের অভিজ্ঞতার উপর ভিত্তি করে চিত্রায়ন করেন, যা সাধারণত গদ্যে লেখা হয় এবং একটি বই হিসাবে প্রকাশিত হয়।[1]:২[2][3][4][5] উপন্যাস একটি সংস্কৃত শব্দ যার অর্থ "সুবিন্যস্ত", এর ব্যুৎপত্তিগত বিশ্লেষণ হচ্ছে উপ+নি+অস্+অ, যেখানে উপ- ("বিশেষ" অর্থে) উপসর্গের সঙ্গে ন্যাস ("বিন্যাস") শব্দটি যুক্ত হয়েছে। কানাডীয় গবেষক মার্গারেট ডুডির মতে, উপন্যাসের "প্রায় দুই হাজার বছরের একটি চলমান ও বিস্তৃত ইতিহাস" রয়েছে, যার উৎপত্তি প্রাচীন গ্রিক ও রোমান উপন্যাস, মধ্যযুগীয় ইউরোপীয় প্রেমময় বীরগাথা এবং ইতালীয় রেনেসাঁ যুগের উপন্যাসিকার ঐতিহ্য থেকে;[6] কাজেই উপন্যাস আধুনিক কালের সাহিত্যকর্ম হওয়ার ধারণাটি সম্পূর্ণ সঠিক নয়। কবিতা, নাটক ও ছোটগল্পের ন্যায় উপন্যাস সাহিত্যের একটি বিশেষ শাখা। একজন ঔপন্যাসিক উপন্যাস রচনা করে থাকেন।[7]
উপন্যাস লেখার কোনো স্বীকৃত নির্দিষ্ট নিয়ম বা কাঠামো নেই। তবে সচরাচর এগুলো ছোটগল্পের তুলনায় বৃহদাকার হয়ে থাকে। অধিকন্তু উপন্যাসের আখ্যানভাগ ও চরিত্রের বিস্তার লক্ষিত হয়। উপন্যাসে পরিবেশ, বর্ণনা, রূপরেখা, চরিত্র, সংলাপ ইত্যাদির মাধ্যমে মানুষের জীবনের কাহিনিকে ফুটিয়ে তুলে তার মধ্যে বাস্তব জীবনের কোনো অর্থ বা ভাষ্য প্রকাশ করা হয়, যা পাঠকের কাছে বাস্তব বলে প্রতীয়মান হয়। নাটক, রাজাবলি (ধারাবিবরণী), কাব্য ইত্যাদি থেকে উপাদান গ্রহণ করে উপন্যাস রচনারও প্রথা রয়েছে।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
১১ শতকের প্রথমদিকে মুরাসাকি শিকিবু রচিত গেঞ্জির উপাখ্যান নামক জাপানি পাঠ্যটিকে কখনো কখনো বিশ্বের প্রথম উপন্যাস হিসেবে উল্লেখ করা হয়, কারণ আখ্যানের মাধ্যমে অন্তরঙ্গতার অভিজ্ঞতার প্রথমদিকের ব্যবহারের জন্য। এটি নিয়ে যথেষ্ট বিতর্ক রয়েছে, যদিও এর আগে অবশ্যই দীর্ঘ কাল্পনিক গদ্য রচিত হয়েছিল। চীনে মুদ্রিত বইয়ের বিস্তারের ফলে মিং রাজবংশ (১৩৬৪-১৬৪৪) ও ছিং রাজবংশের (১৬১৬-১৯১১) যুগে শাস্ত্রীয় চীনা উপন্যাসের আবির্ভাব ঘটে। ইউরোপে উপন্যাস রচনার একটি প্রাথমিক উদাহরণ হলো মুসলিম স্পেনের সুফি লেখক ইবনে তুফায়েল রচিত হাই ইবনে ইয়াকযান।[8] পরবর্তীতে মুদ্রণযন্ত্র আবিষ্কারের পর উপন্যাস রচনার ক্ষেত্রে আরও উন্নয়ন ঘটে। কালজয়ী উপন্যাস ডন কিহোতে (যার প্রথম খণ্ডটি ১৬০৫ সালে প্রকাশিত)-এর লেখক মিগেল দে সের্ভান্তেসকে প্রায়শই আধুনিক যুগের প্রথম ইউরোপীয় ঔপন্যাসিক হিসাবে উল্লেখ করা হয়।[9] সাহিত্যিক ইতিহাসবিদ ইয়ান ওয়াট দ্য রাইজ অফ দ্য নভেল (১৯৫৭) গ্রন্থে যুক্তি দিয়েছিলেন যে আধুনিক উপন্যাসের জন্ম ১৮ শতকের প্রথম দিকে। অষ্টাদশ শতাব্দীর ইংল্যান্ডে প্রথম আধুনিক উপন্যাস রচিত হয়।[7] ঊনবিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝিভাগে বাংলা ভাষায় প্রথম উপন্যাসের প্রবর্তন হয়। প্রথম বাংলা উপন্যাস নিয়ে যথেষ্ট বিতর্ক রয়েছে। ভবানীচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় রচিত নববাবুবিলাস (১৮২৫),[10]:৩৭৪-৩৭৫ হানা ক্যাথেরিন মুলেন্স রচিত ফুলমণি ও করুণার বিবরণ (১৮৫২),[10]:৪২৩[11][1]:৩ প্যারীচাঁদ মিত্র রচিত আলালের ঘরের দুলাল (১৮৫৮)[10][1]:৩ ইত্যাদি রচনাকে বাংলা সাহিত্যের প্রথম উপন্যাস হিসেবে প্রথম বাংলা উপন্যাস হিসেবে মনে করা হলেও, অধিকাংশ গবেষক বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় রচিত দুর্গেশনন্দিনী (১৮৬৫)-কে বাংলা সাহিত্যের প্রথম সার্থক উপন্যাস হিসেবে বিবেচনা করা হয়।[1]:৩-৪[12]:৫
সাম্প্রতিক প্রযুক্তিগত উন্নয়নের ফলে অনেক উপন্যাস নন-প্রিন্ট মিডিয়াতেও প্রকাশিত হচ্ছে: এর মধ্যে রয়েছে অডিও বই, ওয়েব উপন্যাস ও ই-বই। আরেক ধরনের অপ্রচলিত কল্পকাহিনি বিন্যাস হলো গ্রাফিক উপন্যাস। যদিও কমিক বইয়ের মতো কল্পকাহিনির এই রচনাসমূহের উৎপত্তি ১৯ শতকে, এগুলো সাম্প্রতিক সময়ে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।