ঊর্ধ্বপাতন
পদার্থের সরাসরি কঠিন থেকে বায়বীয় দশায় রূপান্তর / From Wikipedia, the free encyclopedia
ঊর্ধ্বপাতন বলতে তরল অবস্থায় প্রবেশ না করেই পদার্থের কঠিন থেকে সরাসরি গ্যাসীয় বায়বীয় দশায় রূপান্তরকে বোঝায়।[1][2] কর্পুর, গন্ধক, আয়োডিন, ন্যাপথালিন, নিশাদল বা অ্যামোনিয়াম ক্লোরাইড, কার্বন ডাই-অক্সাইড, আর্সেনিক, বেনজোয়িক এসিড, ইত্যাদি পদার্থ এইরূপ বৈশিষ্ট্য প্রদর্শন করে।
ঊর্ধ্বপাতন একটি তাপহারী প্রক্রিয়া যা দশা লেখচিত্রে কোনও পদার্থের ত্রৈধ বিন্দুর নিচের তাপমাত্রা ও চাপে সংঘটিত হয়, যা পদার্থের তরল অবস্থায় থাকতে সর্বনিম্ন চাপের অনুরূপ। এর বিপরীত প্রক্রিয়াটি হলো অবক্ষেপণ, যেখানে একটি পদার্থ গ্যাসীয় বা বায়বীয় দশা থেকে সরাসরি কঠিন দশায় চলে আসে।[3] কঠিন-থেকে-গ্যাসে রূপান্তর (ঊর্ধ্বপাতন) এবং তারপরে গ্যাস-থেকে-কঠিন রূপান্তর (অবক্ষেপণ) বর্ণনা করার জন্যও ঊর্ধ্বপাতনকে ঘনীভূত শব্দ হিসাবে ব্যবহার করা হয়।[4] তরল থেকে গ্যাসে দশান্তরকে বাষ্পীভবন হিসাবে বর্ণনা করা হয় যদি এটি তরলের স্ফুটনাঙ্কের নিচে ঘটে এবং স্ফুটন হিসাবে বর্ণনা করা হয় যদি এটি স্ফুটনাঙ্কে ঘটে। তবে কঠিন-থেকে-গ্যাস দশান্তরের মধ্যে এমন কোনও পার্থক্য নেই যা সর্বদাই ঊর্ধ্বপাতন হিসাবে বর্ণিত।
সাধারণ চাপে, বেশিরভাগ রাসায়নিক যৌগ এবং মৌলগুলি বিভিন্ন তাপমাত্রায় তিনটি পৃথক দশার অধিকারী হয়। এই ক্ষেত্রে, কঠিন থেকে বায়বীয় অবস্থায় পরিবর্তনের জন্য একটি অন্তর্বর্তী তরল দশার প্রয়োজন হয়। যে চাপটি উল্লেখ করা হয় তা হ'ল পদার্থের আংশিক চাপ, পুরো ব্যাবস্থার মোট (অর্থাৎ বায়ুমণ্ডলীয়) চাপ নয়। সুতরাং, নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় সকল কঠিন পদার্থ যাদের একটি লক্ষ্যনীয় বাষ্প চাপ রয়েছে (উদাঃ বরফ ০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডের নিচে) তারা উর্ধপাতীত হয়। কার্বন এবং আর্সেনিকের মতো কিছু পদার্থের জন্য তরল থেকে বাষ্পীভবনের চেয়ে ঊর্ধ্বপাতন অনেক সহজ, কারণ তাদের ত্রৈধ বিন্দুর চাপ খুব বেশি, এবং তরল হিসাবে এগুলি পাওয়া করা কঠিন।
ঊর্ধ্বপাতন শব্দটি দশার ভৌত পরিবর্তনকে বোঝায় এবং রাসায়নিক বিক্রিয়ায় একটি কঠিনের গ্যাসে রূপান্তর বর্ণনা করতে ব্যবহৃত হয় না। উদাহরণস্বরূপ, হাইড্রোজেন ক্লোরাইড এবং অ্যামোনিয়াতে কঠিন অ্যামোনিয়াম ক্লোরাইড গরম করে পৃথকীকরণ ঊর্ধ্বপাতন নয় বরং একটি রাসায়নিক বিক্রিয়া। একইভাবে প্যারাফিন মোমযুক্ত মোমবাতির কার্বন ডাই অক্সাইড এবং জলীয় বাষ্পে দহন ঊর্ধ্বপাতন নয়, বরং অক্সিজেনের সাথে রাসায়নিক বিক্রিয়া।
ঊর্ধ্বপাতন তাপের শোষণের ফলে ঘটে যা কিছু অণুকে তাদের পার্শ্ববর্তী অণুগুলির আন্ত-আণবিক বল কাটিয়ে বাষ্পে পরিণত হওয়ার জন্য পর্যাপ্ত শক্তি সরবরাহ করে। যেহেতু প্রক্রিয়াটির জন্য অতিরিক্ত শক্তি প্রয়োজন তাই এটি একটি তাপশোষী পরিবর্তন। ঊর্ধ্বপাতনের এনথালপিকে (যাকে ঊর্ধ্বপাতনের তাপও বলা হয়) ফিউশনের এনথালপি এবং বাষ্পীভবনের এনথালপি যোগ করে গণনা করা যেতে পারে।