চৈতন্য মহাপ্রভু
ভারতীয় হিন্দু সন্ন্যাসী ও ধর্মগুরু / From Wikipedia, the free encyclopedia
চৈতন্য মহাপ্রভু (১৪৮৬ খ্রিঃ – ১৫৩৩ খ্রিঃ) ছিলেন ভারতবর্ষে আবির্ভূত এক বহু লোকপ্রিয় বৈষ্ণব সন্ন্যাসী ও ধর্মগুরু মহাপুরুষ এবং ষোড়শ শতাব্দীর বিশিষ্ট সমাজ সংস্কারক। তিনি গৌড়বঙ্গের নদিয়া অন্তর্গত নবদ্বীপে (অধুনা পশ্চিমবঙ্গের নদিয়া জেলা) হিন্দু ব্রাহ্মণ পণ্ডিত শ্রীজগন্নাথমিশ্র ও শ্রীমতী শচীদেবীর গৃহে জন্মগ্রহণ করেছিলেন।[2] শ্রী চৈতন্য দেবের পৈতৃক নিবাস বর্তমান বাংলাদেশের সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলার ঢাকাদক্ষিণ ইউনিয়নের দত্তরাইল গ্রামে অবস্থিত।[3]তাঁকে শ্রীরাধাকৃষ্ণের যুুুগল প্রেমাবতার বলা হয়।[4] শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য ছিলেন শ্রীমদ্ভাগবত পুরাণ ও শ্রীমদ্ভগবদ্গীতায় উল্লিখিত দর্শনের ভিত্তিতে ভক্তিযোগ ভাগবত দর্শনের বিশিষ্ট প্রবক্তা ও প্রচারক।[5] তিনি বিশেষত পরম সত্ত্বা রাধা ও কৃষ্ণের উপাসনা প্রচার করেন। জাতিবর্ণ নির্বিশেষে ব্রাহ্মণ থেকে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী পর্যন্ত শ্রীহরি নাম, ভক্তি ও হরেকৃষ্ণ মহামন্ত্র বিতরণ করেন যা শ্রীকলিসন্তরন উপনিষদে ও শ্রীপদ্মপুরাণের হরপার্বতী সংবাদে উল্লেখিত রয়েছে। হরেকৃষ্ণ মহামন্ত্রকে এই কলিযুগে জড়জগৎ থেকে মুক্তি পেয়ে পারমার্থিক ধামে যাবার একমাত্র পন্থা হিসেবে গন্য করা হয়।
শ্রীমহাপ্রভু চৈতন্যদেব | |
---|---|
ব্যক্তিগত তথ্য | |
জন্ম | গৌরাঙ্গ চন্দ্র দেব, বিশ্বম্ভর মিশ্র |
মৃত্যু | ১৪ জুন ১৫৩৩(1533-06-14) (বয়স ৪৭) |
ধর্ম | সনাতন |
দাম্পত্য সঙ্গী | লক্ষ্মীপ্রিয়া দেবী (১ম স্ত্রী) বিষ্ণুপ্রিয়া দেবী(২য় স্ত্রী) |
যে জন্য পরিচিত | গৌড়ীয় বৈষ্ণবধর্ম, কীর্তন |
এর প্রতিষ্ঠাতা | গৌড়ীয় বৈষ্ণবধর্ম অচিন্ত্য ভেদ অভেদ |
দর্শন | অচিন্ত্য অদ্বৈতাদ্বৈত (ভেদাভেদ) বেদান্ত দর্শন, শ্রীব্রহ্মসূত্র-গোবিন্দভাষ্যম্, ভক্তিযোগ গৌড়ীয় ভাগবত(বৈষ্ণব) মত |
ঊর্ধ্বতন পদ | |
গুরু | স্বামী ঈশ্বরপুরী (মন্ত্র প্রদাতা গুরু) স্বামী কেশব ভারতী (সন্ন্যাস দীক্ষা গুরু) |
শিষ্য | |
সাহিত্যকর্ম | শিক্ষাষ্টক |
হরের্নাম, হরের্নাম, হরের্নামৈব কেবলম্।
কলৌঃ নাস্ত্যেব নাস্ত্যেব নাস্ত্যেব গতিরন্যথা।।
সংস্কৃত ভাষায় শিক্ষাষ্টক নামক প্রসিদ্ধ স্তোত্রটিও তারই রচনা।ভাগবত পুরাণের শেষের দিকের শ্লোকগুলোতে রাধারাণীর ভাবকান্তি সংবলিত শ্রীকৃষ্ণের চৈতন্যরূপে প্রেমাবতার গ্রহণের কথা বর্ণিত হয়েছে। শ্রীভবিষ্যপুরাণেও শ্রীকৃষ্ণচৈতন্যেরদেবের বিশেষ উল্লেখ আছে [8] তাঁহার জন্মতিথি প্রতিবছর দোলযাত্রা দিনে বাঙ্গালী দের বহু ঘরে এবং ভারতের সম্পূর্ণ গৌড়ীয় ভাগবত মত অনুসরণকারী দের বাড়ি ও মন্দিরে গৌরপূর্ণিমা রূপে উদ্যাপন করা হয়।
চৈতন্য মহাপ্রভুর পূর্বাশ্রমে নামকরণ 'শ্রীশ্রী বিশ্বম্ভর মিশ্র' করা হয়েছিল। তার গাত্রবর্ণ গৌর ও স্বর্ণালি আভাযুক্ত ছিল বলে তাঁকে 'গৌরাঙ্গ' বা 'গৌরচন্দ্র' নামে অভিহিত করা হত;[9] অন্যদিকে, নিম্ব বৃক্ষের নিচে জন্ম বলে তার মাতা তাঁকে 'নিমাই' বলে ডাকতেন তাই নবদ্বীপ বাসিও নিমাই পণ্ডিত বলে তাঁকে অভিহিত করতেন।[10] ষোড়শ শতাব্দীতে চৈতন্য মহাপ্রভুর জীবনী সাহিত্য বঙ্গীয় সন্তজীবনী ধারায় এক নতুন যুগের সূচনা ঘটিয়েছিল। সে যুগে একাধিক কবি চৈতন্য মহাপ্রভুর জীবনী অবলম্বনে কাব্য রচনা করে গিয়েছেন। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল: শ্রীকৃষ্ণদাস কবিরাজ গোস্বামীর:- শ্রীশ্রীচৈতন্যচরিতামৃত(সবথেকে পুরনো এবং প্রমাণিত শ্রীচৈতন্যদেবের জীবনচরিত্রাবলী), শ্রীবৃন্দাবন দাস ঠাকুরের:- শ্রীমদ্ চৈতন্য ভাগবত,[11] এবং শ্রীলোচন দাস ঠাকুরের:- শ্রীশ্রীচৈতন্যমঙ্গল।[12]