জোরপূর্বক বিবাহ
From Wikipedia, the free encyclopedia
জোরপূর্বক বিবাহ হল কোন ব্যক্তিকে তার ইচ্ছার বা সম্মতির বিরুদ্ধে বিবাহ দেয়া। জোরপূর্বক বিবাহ আয়োজিত বিবাহ থেকে আলাদা, কারণ আয়োজিত বিবাহের ক্ষেত্রে ছেলে-মেয়ে উভয়েই তাদের পিতামাতা বা অন্য ব্যক্তি (যেমন ঘটক) কর্তৃক পছন্দকৃত পাত্রপাত্রীর সাথে বিবাহের ক্ষেত্রে সম্মতি প্রদান করে। জোরপূর্বক বিবাহের ক্ষেত্রে প্রায়ই জোর-জবরদস্তি, শারীরিক বা মানসিক নিগ্রহের মাধ্যমে, বিবাহ করতে বাধ্য করা হয়।[1] সারা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এবং সংস্কৃতিতে বিশেষ করে দক্ষিণ এশিয়া এবং আফ্রিকায় এখনো জোরপূর্বক বিবাহ প্রচলিত আছে। কিছু পণ্ডিতেরা "জোরপূর্বক বিবাহ" শব্দটি ব্যবহার করার বিপক্ষে। কারণ শব্দটির মাঝে সম্মতিজ্ঞাপক বৈধ বিবাহের শব্দসমূহ (যেমন স্বামী/স্ত্রী) জড়িত অথচ যার অভিজ্ঞতা সম্পূর্ণ বিপরীত।[2][পৃষ্ঠা নম্বর প্রয়োজন] অবশ্য কিছু বিকল্প শব্দও আছে, যেমন, জোরপূর্বক দাম্পত্য সম্পর্ক এবং দাম্পত্য দাসত্ব।[3][4]
জাতিসংঘ জোরপূর্বক বিবাহকে মানবাধিকারের লঙ্ঘন হিসেবে বিবেচনা করে। কারণ এটি ব্যক্তি স্বাধীনতা এবং ব্যক্তি স্বাতন্ত্র্যের পরিপন্থী। সার্বজনীন মানবাধিকার ঘোষণাপত্রে কোন নারী কর্তৃক তার জীবনসঙ্গী নির্বাচন ও স্বাধীনভাবে বিবাহ করার অধিকার তার জীবন ও আত্মসম্মানের ভিত্তি এবং মানুষ হিসেবে সমতার প্রকাশ হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে।[5] রোমান ক্যাথলিক চার্চ জোরপূর্বক বিবাহ রদ করা উচিত বলে মনে করে, কারণ বিবাহ তখনই বৈধ হয় যখন নারী-পুরুষ দুপক্ষই স্বাধীনভাবে তাদের সম্মতি প্রদান করে। দাসত্ব বিলোপের জন্য আহুত সম্পূরক সম্মেলনেও সেই বিবাহকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে যেখানে পিতামাতার, পরিবারের এবং অন্যান্যদের[6] ইচ্ছার ব্যতিরেকে কোন মেয়ের তার নিজের বিয়ের ক্ষেত্রে না-বলার অধিকার নেই এবং এটা প্রতিরোধ করার জন্যই বিবাহের ক্ষেত্রে নুন্যতম বয়স নির্ধারণ করা দরকার।[7][8]
১৯৬৯ সালে সিয়েরা লিওনের আপিল বিভাগের বিশেষ আদালত যুদ্ধের সময় জোরপূর্বক বিবাহের জন্য নারীদের অপহরণ এবং আটকে রাখাকে একটি নতুন মানবতাবিরোধী অপরাধ হিসেবে অভিহিত করে।[9][10] সিয়েরা লিওনের বিশেষ আদালতের বিচারিক চেম্বার চার্লস টেইলরের সিদ্ধান্তে 'জোরপূর্বক বিবাহ' শব্দটি বাদ দিয়ে এটিকে বরং যুদ্ধের সময় 'দাম্পত্য দাসত্ব' হিসেবে বর্ণনা করার কথা বলে (২০১২)।[11]
২০১৩ সালে জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশনে শিশু, অপ্রাপ্ত বয়স্ক এবং জোরপূর্বক বিবাহের বিরুদ্ধে প্রথম সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এই সিদ্ধান্তে শিশু, অপ্রাপ্ত বয়স্ক এবং জোরপূর্বক বিবাহ মানবাধিকারের লঙ্ঘন হিসেবে চিহ্নিত করা হয় যেহেতু এর ফলে একজন ব্যক্তির যেকোন প্রকার বলপ্রয়োগের বাইরে মুক্তভাবে বেঁচে থাকার অধিকার ক্ষুণ্ণ হয় এবং এর ফলে সে বিভিন্ন মানবাধিকার যেমন, শিক্ষার অধিকার, স্বাস্থ্যের অধিকার বিশেষ করে যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য থেকে বঞ্চিত হয়। এই সিদ্ধান্তে আরও বলা হয় যে, ২০১৫-পরবর্তী উন্নয়ন সূচীর আলোচনায় শিশু, অপ্রাপ্ত বয়স্ক এবং জোরপূর্বক বিবাহ বিলোপের বিষয়টি স্থান পাবে।[12][13][14]
বাল্য বিবাহ, অপ্রাপ্ত বয়স্ক এবং জোরপূর্বক বিবাহ অথবা নারীর যৌন অঙ্গচ্ছেদ প্রতিরোধের জন্য ব্যাপকভিত্তিক এবং সমন্বিত যৌন শিক্ষার কোন বিকল্প নেই।[15]