টেরাকোটা
পোড়ামাটির শিল্পকর্ম / From Wikipedia, the free encyclopedia
টেরাকোটা একটি লাতিন শব্দ: 'টেরা' অর্থ মাটি, আর 'কোটা' অর্থ পোড়ানো। মানুষের ব্যবহার্য পোড়ামাটির তৈরি সকল রকমের দ্রব্য টেরাকোটা নামে পরিচিত। আঠালো মাটির সঙ্গে খড়কুটো, তুষ প্রভৃতি মিশিয়ে কাদামাটি প্রস্তুত করা হয়। সেই মাটি থেকে মূর্তি, দৃশ্যাবলি তৈরি করে রোদে শুকিয়ে আগুনে পুড়িয়ে টেরাকোটা ভাস্কর্য তৈরি করা হয়। মানবসভ্যতার বিকাশকাল হতে পোড়ামাটির ভাস্কর্যের ব্যবহার পরিলক্ষিত হচ্ছে। সুমেরীয় সভ্যতা, ব্যাবীলনীয় সভ্যতা, মায়া সভ্যতায় এই শিল্পের প্রচলন ছিল। পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশে মৌর্য সাম্রাজ্য, গুপ্ত সাম্রাজ্য-এর বহু টেরাকোটার নিদর্শন পাওয়া গেছে। পশ্চিমবঙ্গের বাঁকুড়া জেলার বিষ্ণুপুর শহর টেরাকোটা শিল্পের জন্য বিখ্যাত।
ফলিত শিল্পকলা, কারুকলা, নির্মাণশিল্প এবং স্থাপত্যশিল্প– এ টেরাকোটা বলতে সাধারণত মাটির তৈরি ভাস্কর্য, এবং বিভিন্ন প্রায়োগিক কাজে ব্যবহৃত বাটি বা পাত্র (বিশেষত ফুলদানি), জল বা দূষিত জল নির্গমনের পাইপ, রুফিং টাইলস্ এবং স্থাপনা নির্মাণ –এ ব্যবহৃত সারফেস এমবেলিশমেন্ট প্রভৃতিকে বুঝায়। প্রায় সব পোড়ামাটির তৈরি স্বাভাবিক ব্রাউনিশ কমলা রংয়ের বস্তুকেও টেরাকোটা হিসেবে অভিহিত করা হয়। [1]
[2]প্রত্নতত্ত্ব এবং চারুকলার ইতিহাসবিদ্যা–য় প্রায়শ টেরাকোটা বলতে বুঝানো হয় কুমোর-এর চাকা দিয়ে তৈরি হয় নি এমন ক্ষুদ্র প্রস্তরমূর্তি বা ফিগারিন। বাটি বা মাটির পাত্র এবং অন্য বস্তু গুলো কী উপকরণে তৈরি বা আগুনে পোড়ানোর কৌশলের চেয়ে বরং একই উপকরণে কুমারের চাকার সাহায্যে প্রস্তুতকৃত হলে তাকে মৃৎশিল্প বলা হয়।[3] স্থাপনা নির্মাণ বা নির্মাণ শিল্প-এ যেসব অচকচকে বস্তু ব্যবহৃত হয় সেগুলোকে মূলত টেরাকোটা হিসেবে অভিহিত করা হয়।[4]
এবং যেগুলো বিশেষ ধরনের গ্লেইজ্ সেগুলোকে নির্দিষ্টভাবে ফেই্আন্স্ নামে অভিহিত করা হয়। গ্লেইজ্ আরকিটেকচারাল টেরাকোটা এবং এর আনগ্লেইজ রূপ কয়েক শতাব্দী পূর্ব হতে পূর্ব এশিয়ায় স্থাপনার বহির্দেশে ব্যবহৃত হত এবং উনিশ শতকে যা পাশ্চাত্যে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। আরকিটেকচারাল টেরাকোটা বলতে কারুকার্যখচিত সিরামিকের বস্তু যেমন: অ্যানটিফিক্স এবং রিভেটমেন্ট বলা হয়, যেগুলো স্থাপনার বহিরাবরণের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে ইউরোপের ধ্রুপদী স্থাপনায় এবং নিকটবর্তী প্রাচীনতম প্রাচ্য–এর মন্দির এবং বিভিন্ন স্থাপনার এর বহির্।[5]