সরাসরি ধারাবাহিক সম্প্রচার
From Wikipedia, the free encyclopedia
সরাসরি ধারাবাহিক সম্প্রচার বলতে আন্তর্জালে (ইন্টারনেটে) বাস্তব বিশ্বের কোনও ঘটনার শ্রাব্য (অডিও) ও চলমান দৃশ্য-সম্বলিত (ভিডিও) বিষয়বস্তুর এমনভাবে ধারাবাহিক সম্প্রচার করার প্রক্রিয়াটিকে বোঝায়, যে প্রক্রিয়াতে ঐ বিষয়বস্তুটি যে সময়ে কোনও যোগাযোগ যন্ত্রে ধারণ করা হয়, ঠিক সেই সময়েই যন্ত্রটি থেকে সেটিকে তাৎক্ষণিকভাবে সরাসরি আন্তর্জালের মাধ্যমে সম্প্রচার করা হয়।[1][2] সরাসরি ধারাবাহিক সম্প্রচার করার জন্য আন্তর্জালের সাথে সার্বক্ষণিক সংযুক্ত একটি যোগাযোগ যন্ত্র যেমন বুদ্ধিমান মুঠোফোন (স্মার্টফোন) বা ট্যাবলেট থাকতে হয় ও আন্তর্জালে অবস্থিত একটি সম্প্রচার মঞ্চের (প্ল্যাটফর্ম) গ্রাহক হতে হয়। সম্প্রচারকারী তার যোগাযোগ যন্ত্রের অবস্থিত ঐ সম্প্রচারমঞ্চের একটি গ্রাহক অ্যাপ্লিকেশনের মাধ্যমে মঞ্চটিতে ধারাবাহিকভাবে শ্রাব্য ও চলমান দৃশ্য-সম্বলিত বিষয়বস্তুগুলি প্রেরণ করতে থাকেন এবং ঐ সম্প্রচার মঞ্চটিতে অবস্থিত একটি সম্প্রচার কেন্দ্র (চ্যানেল) থেকে সেই বিষয়বস্তুটি সম্প্রচার হতে থাকে। এ অবস্থায় আন্তর্জালের অন্যান্য ব্যবহারকারীরা ঐ সম্প্রচারমঞ্চে গিয়ে বিষয়বস্তুটি তাৎক্ষণিকভাবে দেখতে ও শুনতে পারেন। এই ঘটনাটিকে ইংরেজিতে "লাইভস্ট্রিমিং" (Livestreaming) বলে।
আন্তর্জালে সরাসরি ধারাবাহিক সম্প্রচারের মাধ্যমে ব্যবহারকারীরা (বিশেষত কিশোর-কিশোরী ও তরুণ-তরুণীরা) আর অন্য স্রষ্টাদের সৃষ্ট বিষয়বস্তুর নিষ্ক্রিয় দর্শক হিসেবে ভূমিকা পালন করে না, বরং তারা তাদের নিজস্ব সৃষ্ট বিষয়বস্তু নিজেই উপস্থাপন করার সুযোগ পায়। যেহেতু তাৎক্ষণিকভাবে সম্প্রচার করা হয়, তাই সেখানে সম্পাদনার কোনও সুযোগ থাকে না, ফলে বিষয়বস্তুটি অনেক বেশি "আসল" বলে মনে হয়। বেশিরভাগ মঞ্চেই সাধারণত বিষয়বস্তু সম্প্রচারের সময় শ্রোতা-দর্শকদের সরাসরি তাৎক্ষণিক আবেগিক প্রতিক্রিয়া (আবেগী অণুচিত্র তথা ইমোজি কিংবা আবেগী পাঠ্য তথা ইমোটের মাধ্যমে) ও সাধারণ পাঠ্য মন্তব্য প্রকাশের সুযোগ থাকে। সরাসরি ধারাবাহিক সম্প্রচারের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হল বার্তাভিত্তিক আলাপকক্ষের (চ্যাটরুম) মাধ্যমে ব্যবহারকারীদের মধ্যে আন্তঃক্রিয়া সম্পাদনের সুযোগ প্রদান। এছাড়া প্রায়শই সম্প্রচারমঞ্চগুলিতে দর্শক ও সম্প্রচারকারী ব্যক্তির মধ্যে বার্তাভিত্তিক আলাপ (চ্যাট) করার সুযোগ থাকে।
প্রথমের ইউনাও, লাইভমি ও পেরিস্কোপের মত সম্প্রচারমঞ্চগুলি এই সেবাটি প্রদান করত। বর্তমানে ঐতিহ্যবাহী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম মঞ্চগুলি যেমন ইউটিউব, ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রামও এই সেবা সরবরাহ করছে। সরাসরি ধারাবাহিক সম্প্রচার সেবাগুলি বহু বিভিন্ন ধরনের বিষয়ে করা হতে পারে, যার মধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে শুরু করে ভিডিও খেলা ও পেশাদার ক্রীড়াও অন্তর্ভুক্ত। ফেসবুক লাইভ, পেরিস্কোপ, কুয়াইশৌ, টিকটক (চীনে তৌইন নামে পরিচিত), ভারতের বিলিবিলি, ১৭ (সেভেন্টিন), ইত্যাদি অ্যাপ্লিকেশন মঞ্চগুলিতে পূর্বনির্ধারিত প্রচারণামূলক ও বিখ্যাত ব্যক্তিদের নিয়ে করা অনুষ্ঠানের পাশাপাশি ব্যবহারকারীদের নিজেদের মধ্যে সরাসরি ধারাবাহিক সম্প্রচারের (যেমন ভিডিও-দূরালাপন) সুবিধা থাকে। টুইচ জাতীয় ওয়েবসাইটগুলি ভিডিও খেলায় অংশগ্রহণকারী মানুষদের দেখার জন্য একটি জনপ্রিয় স্থান হয়ে উঠেছে।
সরাসরি ধারাবাহিক সম্প্রচারের সাথে সম্পর্কিত সমস্যাগুলির মধ্যে একটি হল এগুলির বিষয়বস্তু সংযত বা দমন করা সম্ভব নয়, ফলে এগুলিতে যখন কোনও ক্ষতিকর বা অপব্যবহারমূলক আচরণ সরাসরি সম্প্রচার করা হয়, তখন ঐসব আপত্তিকর বা অশোভব বিষয়বস্তু থেকে দর্শকদের (বিশেষ করে কোমলমতি শিশুদের) রক্ষা করা সম্ভব হয় না। সম্প্রচারকারী বাস্তব জীবনে মানুষের মুখোমুখি হয়ে যেসব কাজ করার সাহস পেত না, ক্যামেরার পেছনে থেকে সে নিরাপদে সেগুলি করতে পারে। এছাড়া যেহেতু সরাসরি ধারাবাহিক সম্প্রচার অনেক সময় তাৎক্ষণিক আবেগের তাড়নায় ঘটতে পারে, যাতে ব্যক্তিগত গোপনীয় বিষয়বস্তু সম্প্রচার করে দেয়ার জন্য পরবর্তীতে সম্প্রচারকারী অনুশোচনায় ভুগতে পারে। দীর্ঘমেয়াদে বারংবার দর্শকদের নেতিবাচক মন্তব্য পড়ে সম্প্রচারকারীর আত্মবিশ্বাস কমে যেতে পারে।
করোনাভাইরাস রোগ ২০১৯-এর (কোভিড-১৯) বৈশ্বিক মহামারীর কারণে ২০২০ সাল থেকে আন্তর্জালে সরাসরি ধারাবাহিক সম্প্রচারের ঘটনাটির ব্যাপক প্রসার ঘটে। অন্তরণ, সঙ্গনিরোধ, অবরুদ্ধকরণ বা সান্ধ্য আইনের কারণে বহু মানুষ বিদ্যালয় বা কার্যালয়ে যেতে না পেরে দীর্ঘ সময় নিজগৃহে অবস্থান করতে বাধ্য হয়, ফলে তাদের মধ্যে এই সেবাটি ব্যবহার করার প্রবণতা বহুগুণ বৃদ্ধি পায়।