হিন্দু দর্শন
হিন্দু ধর্মে চিন্তার বিভিন্ন ব্যবস্থা / From Wikipedia, the free encyclopedia
হিন্দু দর্শন বলতে বোঝায় প্রাচীন ভারতে উদ্ভূত একগুচ্ছ দর্শনের একটি সমষ্টি। এটি ভারতীয় দর্শনসমূহের একটি অংশ যা প্রাচীন বেদকে জ্ঞানের প্রামাণ্য ও গুরুত্বপূর্ণ উৎস হিসাবে স্বীকার করা হয়। মূল ধারার হিন্দু দর্শনের মধ্যে ছয়টি দার্শনিক শাখা বিদ্যমান, যাকে একত্রে ষড়দর্শন বলা হয়। এগুলো হল: সাংখ্য, যোগ, ন্যায়, বৈশেষিক, মীমাংসা ও বেদান্ত।[1] ষড়দর্শন বেদের প্রামাণ্যতা স্বীকার করে বলে একে আস্তিক দর্শনও বলা হয়।[2][note 1] প্রাচীন ও মধ্যযুগীয় ভারতে আরও কয়েকটি দার্শনিক শাখার উদ্ভব ঘটেছিল যেগুলো বেদকে অস্বীকার করে কিছুটা একই ধরনের দার্শনিক ধারণা প্রচার করেছিল। এগুলো নাস্তিক দর্শন নামে পরিচিত।[1][2] ভারতীয় নাস্তিক দর্শনগুলো হল: বৌদ্ধধর্ম, জৈনধর্ম, চার্বাক, আজীবক এবং অন্যান্য।[4] তবে এগুলোকে হিন্দু দর্শনের অংশ বলে অনেকে মনে করেন না। হিন্দু দর্শন বলতে কেবল আস্তিক দর্শনকেই বুঝানো হয়।[5]
আস্তিক দর্শনের বিভিন্ন শাখাগুলোর মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক এবং আস্তিক ও নাস্তিক শাখাগুলোর মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক ও পার্থক্য নিয়ে গবেষকদের মধ্যে মতভেদ আছে। ১৮শ ও ১৯শ শতাব্দীর ভারততত্ত্ববিদ ও প্রাচ্যবিদদের রচনা থেকে এই মতভেদের সূচনা। মনে রাখতে হবে, এঁদের রচনার উৎস সেই যুগে প্রাপ্ত অল্প কিছু ভারতীয় সাহিত্য গ্রন্থ ও মধ্যযুগীয় ধর্মগ্রন্থ।[1] হিন্দু দর্শনের বিভিন্ন পরস্পর-সম্পর্কযুক্ত ধারাগুলো বৈচিত্র্যপূর্ণ। ইতিহাস, ধারণা, একই মূল ধর্মগ্রন্থ, একই তত্ত্ববিদ্যা ও মুক্তিতত্ত্ব ও বিশ্বতত্ত্বের মাধ্যমে এগুলো পরস্পরের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে।[6][7] বৌদ্ধ ও জৈনধর্মকে পৃথক দর্শন ও ধর্ম হিসেবে গণ্য করা হয়। তবে চার্বাক ইত্যাদি কয়েকটি নাস্তিক শাখাকে হিন্দু দর্শনের অন্তর্গত মনে করা হয়।[8][9][10]
ষড়দর্শনের একটি বা দুটি শাখার সঙ্গে সম্পর্ক-যুক্ত কয়েকটি আস্তিক্যবাদী উপশাখাও হিন্দু দর্শনের অন্তর্গত। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ন্যায়ের বাস্তববাদ, বৈশেষিকের প্রকৃতিবাদ, সাংখ্যের দ্বৈতবাদ, অদ্বৈত বেদান্তের অদ্বৈতবাদ ও মোক্ষলাভের জন্য আত্মজ্ঞানের প্রয়োজনীয়তার ধারণা, যোগের আত্ম-নিয়ন্ত্রণ এবং কৃচ্ছ্রসাধন ও আস্তিক্যবাদী ধারণার বিভিন্ন উপাদান উল্লেখযোগ্য।[11][12][13] এই ধরনের দর্শনগুলোর থেকে পাশুপত শৈবধর্ম, শৈবসিদ্ধান্ত, প্রত্যভিজ্ঞ ও বৈষ্ণবধর্মের উৎপত্তি।[11][12] কোনো কোনো উপশাখায় কয়েকটি বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের অনুরূপ তান্ত্রিক ধারণার অবতারণা করা হয়েছে।[14] এই সব উপশাখাগুলো পুরাণ ও আগমে পাওয়া যায়।[15][16][17]
হিন্দু দর্শনের প্রত্যেকটি শাখার বিস্তারিত জ্ঞানতত্ত্বীয় সাহিত্য পাওয়া যায়। এগুলোকে ‘প্রমাণ বলা হয়।[18][19] এছাড়া প্রত্যেকটি শাখার অধিবিদ্যা, মূল্যবিদ্যা ও অন্যান্য বিষয়ের উপর তাত্ত্বিক গ্রন্থও পাওয়া যায়।[20]