আব্দুর রহমান আওজাঈ
From Wikipedia, the free encyclopedia
আবু আমর আবদুর রহমান বিন আমর আওজাঈ (আরবি: أبو عمرو عبد الرحمن بن عمر الأوزاعي) ছিলেন একজন ফকীহ, মুহাদ্দিস, তাবেয়ী ও তৎকালীন শাম অঞ্চলের একজন ইমাম। এছাড়াও আওজাঈ বৈরুত, মরক্কো ও আন্দালুসিয়ার ইমাম হিসেবে পরিচিত। তিনি সাধারণত ইমাম আওজাঈ/হাফেজ আওজাঈ নামে পরিচিত হন। আধুনিক যুগে তার উপাধিতে যোগ করা হয়, লেবাননে সহাবস্থানের ইমাম, যা শামের খ্রিস্টান ও ইহুদিদের সাথে আওজাঈ'র সহনশীল সহাবস্থানের প্রতিনিধিত্ব করে।[1]
শাম, মরক্কো ও আন্দালুসের ইমাম আব্দুর রহমান আল আওজাঈ | |
---|---|
أبو عمرو عبد الرحمن بن عمر الأوزاعي | |
ব্যক্তিগত তথ্য | |
জন্ম | ৮৮ হি./ ৭০৭ খ্রি., |
মৃত্যু | ১৫৭ হি./ ৭৭৪ খ্রি., |
ধর্ম | ইসলাম (সুন্নি ইসলাম) |
অঞ্চল | শাম |
ব্যবহারশাস্ত্র | নিজে (আওজাঈ) মাজাবের প্রবর্তক |
ধর্মীয় মতবিশ্বাস | আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামায়াহ |
আন্দোলন | আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামায়াহ |
যে জন্য পরিচিত | হাদিসশাস্ত্রে অবদানের জন্যে |
কাজ | হাদিস ও উলুমে হাদিস চর্চা |
ইমাম আওজাঈ সম্ভবত বালাবেকে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর যৌবনকাল তিনি বেকা উপত্যকার কারক গ্রামে একজন দরিদ্র এতিম হিসাবে কাটান। পরে তিনি তার মায়ের সাথে বৈরুতে আসেন। এর আগে তিনি নিজের পরিবারের সাথে দামেস্কে থাকতেন এবং তিনি হামা, আলেপ্পো ও কিন্নাসরিনসহ প্রভৃতি স্থানে গিয়েছিলেন। তাঁকে আওজাঈ নাম দেওয়া হয় আল-আওজা গ্রামের দিকে সম্পৃক্ত করে। ইতিহাসবিদেরা ইমাম আওজাইর পিতা সম্পর্কে ইমাম নিজেই যা উল্লেখ করেছেন, তাই করেছেন। এছাড়া বা তাঁর মা বা তাঁর মামাদের সম্পর্কে কিছুই উল্লেখ করেননি। তবে তারা ইঙ্গিত করেছেন যে তাঁর এক চাচা ছিল। তিনি একাধিক বিয়ে করেছিলেন এবং তার তিনটি মেয়ে ও একটি ছেলে ছিল এবং তার কন্যাদের থেকে তার দু'জন নাতি-নাতনি ছিল । [2]
আওজাঈ দুইটি গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক যুগে বসবাস করেন। তিনি উমাইয়া রাজবংশের সমাপ্তি ও আব্বাসী রাজবংশের প্রতিষ্ঠার সাক্ষী ছিলেন। তিনি কয়েকজন খলিফার সমসাময়িক ছিলেন: ওয়ালিদ বিন আব্দুল মালিক, সুলাইমান ইবনে আবদুল মালিক, উমর বিন আব্দুল আজিজ, ইয়াযিদ বিন আব্দুল মালিক, হিশাম বিন আব্দুল মালিক, ওয়ালিদ বিন ইয়াজিদ, তৃতীয় ইয়াজিদ, ইব্রাহিম বিন আল-ওয়ালিদ, মারওয়ান বিন মুহাম্মদ, আবু আল-আব্বাস আল-সাফাহ এবং আবু জাফর আল-মানসুর। আওযাঈ যে যুগে জীবনযাপন করতেন তা ছিল জ্ঞানী, পণ্ডিত, ফকিহ, কারী, হাদীস বিশারদদের যুগ। সে সময়ের বিশিষ্ট পণ্ডিতদের মধ্যে ছিলেন: মালিক বিন আনাস, জাফর সাদিক, সুফিয়ান আস- সাওরি, হাসান বসরি, মুহাম্মদ বিন সিরিন, আবু হানিফা আল-নু'মান, লায়িস বিন সাদ ও অন্যান্যরা।
ইমাম আওজাঈ ছিলেন তাদের মধ্যে একজন, যারা বৈজ্ঞানিক ও আইনশাস্ত্রে সাহসিকতার সাথে সময়ের পণ্ডিতদের সাথে নিজেকে তুলনা করার যোগ্য ছিলেন। তিনি ফতোয়া দেওয়া শুরু করেন, যখন তার বয়স ১৩ বছর ছিল। আওজাঈ "জ্ঞান অন্বেষণের যাত্রায়" দৃঢ় বিশ্বাসী ছিলেন, তাই তিনি শামের ইয়ামামা, বসরাসহ, মদিনা ও জেরুজালেমে ভ্রমণ করেন। এছাড়াও তিনি একাধিকবার হজও করেছেন। তাই তিনি উল্লেখযোগ্য উপায়ে ধর্মীয় ও আইন বিজ্ঞানে প্রবেশ করেছেন।
বিচার বিভাগের ক্ষেত্রে আওজাই উমাইয়া ও আব্বাসী যুগে বিচার বিভাগের অবস্থান প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। ইয়াজিদ বিন ওয়ালিদ যখন দায়িত্ব গ্রহণ করেন, তখন তিনি একটি কাউন্সিলে বসেন। তখন তিনি এ অযুহাত দিয়ে সরে আসেন যে, যে বিচার বিভাগ একটি বিশাল ইসলামি দায়িত্ব; তাই যেকেউ এর দায়ভার বহন করতে পারে না। [3]
আওজাঈ ছিলেন সেই মহান ইমামদের একজন, যিনি ইসলাম ও নবীর সুন্নাহকে রক্ষা করেছিলেন; বিশেষত তৎকালীন ক্রমবর্ধমান ধর্মবিরোধীতা, বিতর্ক, কুরআন ও সুন্নাহ থেকে বিচ্যুতির সময়কালে [4] তিনি জিহাদের প্রতিও আগ্রহী ছিলেন। তার মতবাদ লেবাননসহ গোটা শাম জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। এমনকি মরক্কো ও আন্দালুস অঞ্চলেও ছড়িয়ে যায়, যা ছিল সুন্নি ইসলামের পঞ্চম মাজহাব। কিন্তু তার মতবাদটি টেকেনি; কারণ ছাত্ররা তা সংরক্ষণ করতে সক্ষম হয়নি। এটি শামে হানাফি ও শাফিঈ চিন্তাধারা এবং মরক্কো ও আন্দালুসে মালিকি মাযহাবের দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয়েছিল। আওজাই ১৫৭ হিজরিতে বৈরুতে মৃত্যুবরণ করেন এবং তার জানাজা অনেক বড় ছিল। বলা হয়, এতে অংশ নেওয়া খ্রিস্টান ও ইহুদিরা অংশগ্রহণকারী মুসলিমদের তুলনায় বেশি ছিল এবং তাদের মধ্যে অনেকেই সেদিন ইসলাম গ্রহণ করেছিল। আওজাইকে বৈরুতের দক্ষিণে হান্তুস গ্রামে সমাহিত করা হয়েছিল এবং তার কবরের পাশে ইমাম আওজাঈ মসজিদ নামে একটি মসজিদ নির্মান করা হয়েছিল। কয়েক বছর পর গ্রামের নাম পরিবর্তন করা হয়। সেটি "আল-আওজাই" নামে পরিচিতি লাভ করে এবং সময়ের সাথে সাথে এটি বৃহত্তর বৈরুতের অংশ গঠন করে।
ইমাম আওজাঈর কৃতিত্ব ও বৈরুতে তাঁর প্রতীকবাদের প্রশংসার জন্য তাঁর নামে শহরে ইসলামিক স্টাডিজের একটি কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়, যা ইমাম আল-আওজাঈ কলেজ ফর ইসলামিক স্টাডিজ নামে পরিচিত। ২০০৯ সালে মন্ত্রীপরিষদ কর্তৃক অনুমোদনের পর লেবাননের যোগাযোগমন্ত্রণালয় ইমাম আওজাঈয়ের নামে একটি স্মারক ডাকটিকিট জারি করে। বৈরুতের বাণিজ্যিক কেন্দ্রে আল-তাওয়লাহ, যা ইমাম আওজাই স্কোয়ারে অবস্থিত, এটি তার যুগ থেকে আজও অবধি একই স্কোয়ারে বিদ্যমান রয়েছে। [5]