ইসলাম
কুরআন, হাদিস দ্বারা পরিচালিত একেশ্বরবাদী ধর্ম ও জীবনপদ্ধতি / From Wikipedia, the free encyclopedia
ইসলাম (আরবি: ۘالِإسْلَام, আল-ইসলাম [ʔɪsˈlæːm] (শুনুনⓘ)) একটি একেশ্বরবাদী এবং ইব্রাহিমীয় ধর্মবিশ্বাস যার মূল শিক্ষা হলো এক আল্লাহ ছাড়া আর কোন স্রষ্টা নেই এবং মুহাম্মাদ (ﷺ) হলেন আল্লাহর প্রেরিত সর্বশেষ নবী ও রাসূল।[4][5][6] এটি বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম এবং সবচেয়ে দ্রুত বর্ধনশীল ধর্ম,[7][8] যার অনুসারী এবং স্বীকৃতিদানকারীর সংখ্যা প্রায় ২০০কোটি[9][10] যা বিশ্বের মোট জনসংখ্যার প্রায় ২৪.৪%।[11][12] ইসলাম ধর্মের অনুসারী এবং স্বীকৃতিদানকারীরা মুসলিম এবং মুসলমান নামে পরিচিত।[13][14][15] মুসলমানরা বিশ্বের ৫০ এর অধিক দেশে সংখ্যাগরিষ্ঠ জনসমষ্টি গঠন করেছে।[7] ইসলামের মৌলিক শিক্ষা হলো আল্লাহ দয়ালু, করুনাময়, এক ও অদ্বিতীয় এবং একমাত্র ইবাদতযোগ্য প্রভু।[16]
ইসলাম | |
---|---|
الاسلام আল ’ইসলা-ম | |
ধরন | সার্বজনীন ও বিশ্বজনীন ধর্ম |
প্রকারভেদ | ইব্রাহিমীয় |
ধর্মগ্রন্থ | কুরআন |
ধর্মতত্ত্ব | একেশ্বরবাদ |
ভাষা | মূল ভাষা: ধ্রুপদি আরবি অন্যান্য ভাষা: বিশ্বের সমস্ত ভাষা[1] |
অঞ্চল | সমগ্র বিশ্ব[2] |
প্রবর্তক | মুহাম্মাদ[3] |
উৎপত্তি | খ্রিষ্টীয় ৭ম শতাব্দী মক্কার নিকটে জাবালে নুর পর্বত, হেজাজ, আরব |
অনুসারীর সংখ্যা | আনু. ২০০ কোটি (উম্মাহর অংশ, মুসলিম নামে অভিহিত) |
মানবজাতিকে পথ প্রদর্শনের জন্য তিনি যুগে-যুগে অনেক নবী-রাসূল, আসমানী কিতাব এবং নিদর্শন পাঠিয়েছেন।[17] ইসলাম ধর্মের প্রধান ধর্মগ্রন্থ হলো পবিত্র আল-কুরআন, যা স্বয়ং আল্লাহর বাণী; আর সর্বশেষ নবী মুহাম্মাদ (২৯ আগস্ট ৫৭০- ৮ জুন ৬৩২) এর কথা, কাজ ও মৌনসম্মতিকে সুন্নাহ বলা হয় যা হাদিস নামে লিপিবদ্ধ রয়েছে। তবে সমস্ত সুন্নাহই হাদিস, কিন্তু সমস্ত হাদিস সুন্নাহ নয়।
ইসলামী ধর্মগ্রন্থানুযায়ী, এটি আল্লাহর নিকট একমাত্র গ্রহণযোগ্য পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা। ইসলাম সর্বজনীন ধর্ম। ইসলাম শুধুমাত্র মক্কা-মদিনা বা আরব দেশ ও জাতির জন্য নয় বরং ইসলাম বিশ্বের সকল বর্ণ, গোত্র, জাতি এবং ধনী-গরিব, সাদা-কালো ও আরব-অনারব সকল মানুষের জন্যই প্রেরিত ও একমাত্র মনোনীত ধর্ম।
ইসলামী ধর্মমত অনুযায়ী, যুগে যুগে আদম, ইব্রাহিম, মুসা, ইসা সহ সকল রাসূলগণের উপর যেসব আসমানী কিতাব অবতীর্ণ হয়েছিল, মূল আরবি ভাষার কুরআন হলো তারই সর্বশেষ, পূর্ণাঙ্গ, অপরিবর্তিত ও চূড়ান্ত সংস্করণ।[18][19][20][21] ৬৩২ খ্রিস্টাব্দে বিদায় হজ্বের দিন এই জীবন ব্যবস্থাটি পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে স্বয়ং স্রষ্টার কাছ থেকে।
অন্যান্য ইব্রাহিমীয় ধর্মের মতো ইসলামও শেষবিচারের শিক্ষা দেয় যেখানে সৎকর্মশীলরা পুরস্কারস্বরূপ জান্নাত পাবে আর পাপীরা জাহান্নামের শাস্তি পাবে।[22][23] ধর্মীয় কর্মকাণ্ডের মধ্যে অন্যতম হলো ইসলামের পঞ্চস্তম্ভ, যা পালন করা প্রত্যেক মুসলিমের জন্য অত্যাবশকীয় কর্তব্য। তাদেরকে ইসলামি আইন বা শরিয়াহ্ মেনে চলতে হয়, যা প্রকৃতপক্ষে সমাজ ও জীবনের সকল ক্ষেত্র ও যাবতীয় কার্যকলাপকে নির্ধারণ করে দেয়। ব্যাংক খাত থেকে দান-ছদকাহ্, নারী থেকে পরিবেশ সবই এর অন্তর্গত।[24][25][26] মক্কা, মদিনা ও জেরুজালেম ইসলামে সবচেয়ে সম্মানিত ও পবিত্রতম তিন শহর।[27]
ইসলাম ধর্মের বিশ্বাস অনুযায়ী ইসলাম শুধুমাত্র কোন নতুন ধর্মই নয়, বরং সৃষ্টির শুরু থেকেই ইসলামের উৎপত্তি। আদম ছিলেন এই পৃথিবীর প্রথম মানব এবং মানবজাতির মধ্যে ইসলামের প্রথম নবি। আর সর্বশেষ ও চূড়ান্ত নবি হলেন মুহাম্মাদ, যিনি সমগ্র সৃষ্টি জগতের জন্য সর্বেশষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ চূড়ান্ত নবী ও রাসুল হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন স্রষ্টার পক্ষ থেকে।[28][29][30]
ইতিহাসগতভাবে এর উৎপত্তি ধরা হয় ৭ম শতকের শুরুর দিকে মক্কায় নবী মুহাম্মাদের নবুয়াতের পরবর্তী সময় থেকে।[31] ৮ম শতক নাগাদ উমাইয়া খিলাফত পশ্চিমে ইবেরিয়া (স্পেন) থেকে পূর্বে সিন্ধু নদ পর্যন্ত বিরাট অঞ্চল জুড়ে সম্প্রসারিত হয়। ৮ম থেকে ১৩ শতককে ঐতিহ্যগতভাবে ইসলামি স্বর্ণযুগ বলা হয়।
ঐতিহাসিকভাবে আব্বাসীয় খিলাফতের আমলে মুসলিম বিশ্ব বৈজ্ঞানিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক দিক থেকে উন্নতির শীর্ষে ছিল।[32][33][34] ইসলামের প্রসার ঘটেছে মূলত ধর্মপ্রচার এবং রাজ্যজয়ের মাধ্যমে। রাজ্যজয়গুলো ঘটেছিল আলাদা আলাদা সম্রাজ্যের দ্বারা যেমন উসমানীয় সম্রাজ্য, আর ধর্মান্তরিতকরণ ঘটেছিল ইসলামি ধর্মপ্রচার কার্যক্রমের[35] সাথে এবং নতুন নতুন রাজ্যজয়ের প্রভাবে।
মুসলিমরা দুইটি প্রধান সম্প্রদায়ের অন্তর্গত, সুন্নি (৮০-৯০%) এবং শিয়া (১০-২০%)।[36] মূলত যারা শিয়া নয় তাদের সবাইকেই সুন্নি (মুসলিম) হিসেবে গণনা করা হয়। সুন্নি ইসলাম মূলত অনেকগুলো ইসলামী মতাদর্শের সমষ্টি। এছাড়াও কিছু মুসলিম নিজেদেরকে শিয়া সুন্নি কোনো দলেই ফেলেন না, তারা ইসলাম ধর্মের মধ্যে বিভাজনে বিশ্বাসী না। তারা কুরআন এবং হাদিসকে মূল ধরে এগুলোর আলোকে (ইজমা ও কিয়াস) ইসলাম পালন করে এবং নিজেকে বিশুদ্ধ মুসলিম হিসেবে গড়ার চেষ্টা করে। তবে কুরআন এবং হাদিসের স্পষ্ট নির্দেশনার ক্ষেত্রে ইজমা এবং কিয়াস গ্রহণযোগ্য নয় বলে তারা বিশ্বাস করে। আর তারা মনে করে সকল মুসলিমের উচিত ঐক্যবদ্ধ হয়ে নিজেদের দ্বীন (মাযহাব) হিসেবে ইসলামকে স্বীকার করা এবং নিজেদেরকে মুসলিম হিসেবে পরিচয় দেওয়া।
সর্ববৃহৎ মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ ইন্দোনেশিয়া, বিশ্বের সমগ্র মুসলিম জনসংখ্যার ১৩%-ই এখানে বাস করে।[37] বিশ্বের সমগ্র মুসলিম জনসংখ্যার ৩১%-ই বাস করেন দক্ষিণ এশিয়ায়,[38] মুসলিম জনগোষ্ঠীর বড় অংশটাই এই অঞ্চলে বসবাস করে।[39] মধ্যপ্রাচ্য-উত্তর আফ্রিকা অঞ্চলে বাস করেন ২০%[40] এবং এটি এ অঞ্চলের অন্যতম প্রধান ধর্ম।[41] ১৫% বাস করেন সাহারা-নিম্ন আফ্রিকাতে।[42] এছাড়াও উল্লেখযোগ্য পরিমাণ মুসলিম সম্প্রদায় দেখা যায় আমেরিকা, ককেসাস, মধ্য এশিয়া, চীন, ইউরোপ, ইন্দোচীন, ফিলিপাইন, অস্ট্রেলিয়া ও রাশিয়াতে।[8][43] ইসলাম ধর্মের অনুসারীরা আমেরিকা, চীন এবং ইউরোপেও বসবাস করেন।[44][45] অন্যান্য ধর্মের তুলনায় ধর্মান্তর ও উচ্চ জন্মহারের কারণে ইসলাম বিশ্বের দ্রুততম বর্ধনশীল ধর্মীয় গোষ্ঠী। বর্তমান ধারা অব্যাহত থাকলে, ২১শতাব্দীর শেষের দিকে ইসলাম খ্রিস্টধর্মকে ছাড়িয়ে বিশ্বের বৃহত্তম ধর্মে পরিণত হতে পারে।[46]