Loading AI tools
উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
ইনক্রেটিন (ইংরেজি: Incretin) বলতে কয়েকটি বিপাকীয় হরমোনকে বুঝায় যারা রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা কমাতে ভূমিকা পালন করে। ইনক্রেটিনের কাজের পদ্ধতি হলো এরা খাওয়ার পর রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বেড়ে যাওয়ার পূর্বেই অগ্ন্যাশয় এর বিটা কোষ থেকে ইনসুলিন নিঃসরণ বাড়িয়ে দেয়। এরা পাকস্থলী থেকে খাবার নির্গমন গতি কমিয়ে দেয় ফলে বিভিন্ন পুষ্টিকণা শোষণ হার কমে যায় এবং খাদ্যগ্রহণ হারও কমে যায়। এরা আলফা কোষ থেকে গ্লুকাগন নিঃসরণ কমায়।
কয়েক দশকের পর্যবেক্ষণের পর বিজ্ঞানীরা বুঝতে পেরেছিলেন যে, শিরায় ইনজেকশনের মাধ্যমে গ্লুকোজ দিলে যতটুকু ইনসুলিন নিঃসরণ হয় গ্লুকোজ মুখে খাওয়ালে তার চেয়ে বহুগুণ বেশি ইনসুলিন নিঃসরণ হয়। এতে তাদের ধারণা হলো খাবার খাওয়ার পর অন্ত্র থেকে নিশ্চয় এমন একটি সংকেত তৈরি হয় যা ইনসুলিন নিঃসরণ বৃদ্ধি করে। গবেষণার পর বিজ্ঞানীরা নিশ্চিত হলেন গ্লুকাগন লাইক পেপটাইড-১ (GLP-1) ও গ্যাস্ট্রিক ইনহিবিটরি পেপটাইড(GIP) হলো সেই বস্তু যারা ইনসুলিন নিঃসরণ করে। এদের নাম দেয়া হলো ইনক্রেটিন এবং ইনসুলিন নিঃসরণে এদের প্রভাবকে বলে ইনক্রেটিন ইফেক্ট। এছাড়া বিজ্ঞানীদের পর্যবেক্ষণে আরো দেখা গেছে যে টাইপ-২ ডায়াবেটিস রোগীদের খাবার খাওয়ার পরে ইনসুলিন নিঃসরণ অনেক কম হয়। এর প্রেক্ষিতে তারা ধারণা করেন ডায়াবেটিস রোগীদের হয় ইনক্রেটিন হরমোন ক্ষরণ কমে যায় নতুবা এদের কার্যক্ষমতা কমে যায়। [1] আমাদের শরীরের ভিতরেই ডাইপেপ্টাইডিল পেপটাইডেজ-৪ (DPP-4) নামক একটি এনজাইম আছে যার প্রভাবে GLP-1 ও GIP উভয়ই খুব দ্রুত নিষ্ক্রিয় হয়ে যায়। GLP-1 ও GIP উভয়ই গ্লুকাগন পেপটাইড সুপারফ্যামিলির সদস্য। [2][3]
"অনেক ফ্যাক্টর ইনসুলিন নিঃসরণকে উদ্দীপ্ত করে তার মধ্যে রক্তের গ্লুকোজ অন্যতম; ইনক্রেটিনসমূহ বিশেষত GIP ও GLP-1 যারা যথাক্রমে অন্ত্রের K ও L কোষ থেকে নিঃসৃত হয় তারাও এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখে।", (Rang and Dale's Pharmacology (2015)).
GLP-1 তৈরি হয় ক্ষুদ্রান্ত্র(আইলিয়াম) ও ঊর্ধ্বমুখী কোলনে(এসকল জায়গাতে L কোষ বেশি থাকে) এবং খাদ্যের সংস্পর্শ পেলে নিঃসৃত হয়। কার্বোহাইড্রেট ও স্নেহ সমৃদ্ধ খাবার এদের প্রধান উদ্দীপক তবে ফ্যাটি এসিড, অ্যামাইনো এসিড, তন্তুযুক্ত খাবার এগুলোও GLP-1 নিঃসরণে উদ্দীপনা দেয়। এদের ইনসুলিন নিঃসরণ পদ্ধতি অনেকটা গ্লুকোজ নির্ভর অর্থাৎ রক্তপ্রবাহে গ্লুকোজ বৃদ্ধি পেলে কেবল তখনি এরা ইনসুলিন নিঃসরণ করতে অগ্ন্যাশয়কে উদ্দীপনা দিবে। GLP-1 ক্ষরণ দুটি ফেজে হবে; প্রথমত খাবার খাওয়ার ৫-১৫ মিনিটের মধ্যে এবং দ্বিতীয়বার ৩০-৬০ মিনিটের মধ্যে। [4] এটি গ্লুকাগণ নিঃসরণ কমায়। এছাড়াও GLP-1 এর আরো অনেক উপকারী প্রভাব রয়েছে যেমন: এটি পাকস্থলীর খাবার নির্গমন গতি কমিয়ে দেয় এর ফলে কার্বোহাইড্রেট শোষণ হার অনেক ধীর হয়ে যায় ফলশ্রুতিতে খাবার পর রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বৃদ্ধির হারও ধীর হয়ে যায়, এটা ক্ষুধাকে দমিয়ে রাখে এবং গ্যাস্ট্রিক এসিড ক্ষরণ কমায়। প্রাণীর উপর গবেষণা করে দেখা গেছে এটা অগ্ন্যাশয়ের বিটা কোষ কে পুনরুৎপাদিত হতে সাহায্য করে, অ্যাপোপটোসিস (কোষের আত্মহত্যার পদ্ধতি) হতে বাধা দেয় ফলে বিদ্যমান বিটা কোষগুলো বেঁচে থাকতে পারে। অপরদিকে GIP ক্ষুদ্রান্ত্রের উপরের দিকে(ডিওডেনাম ও জেজুনামে K কোষ থেকে, K কোষ সবচেয়ে বেশি থাকে ডিওডেনাম ও জেজুনামে, অল্প পরিমাণে থাকে আইলিয়ামে) তৈরি হয় এবং গ্লুকোজের সংস্পর্শে আসা মাত্রই ইনসুলিন নিঃসরণ কে ত্বরান্বিত করে। GLP-1 এর মত GIP বিটা কোষের বেঁচে থাকা ও এর সংখ্যা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।[5]
টাইপ-২ ডায়াবেটিস রোগীদের রক্তে GIP এর ঘনত্ব স্বাভাবিক থাকে অথবা কিছুটা বেড়ে যায় কিন্তু এদের ইনসুলিন নিঃসরণ ক্ষমতা লোপ পায়। অপরদিকে, GLP-1 ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রেও ইনসুলিন ক্ষরণ করতে পারে; এই তথ্যের উপর ভিত্তি করে ডায়াবেটিসের চিকিৎসার জন্য GLP-1 এনালগ তৈরির চেষ্টা করা হয়। কিছু দীর্ঘস্থায়ী GLP-1 এনালগ উদ্ভাবন করা হয়েছে যারা ইনসুলিন নিঃসরণ করে যেমন এক্সেনাটাইড, লিরাগ্লুটাইড, অ্যালবিগ্লুটাইড, ডুলাগ্লুটাইড, লিক্সিসেনাটাইড এগুলো ব্যবহারের জন্য অনুমোদিত হয়েছে। এদেরকে GLP-1 রিসেপ্টর অ্যাগনিস্ট বা ইনক্রেটিন মিমেটিক বলে। এর অন্যতম অসুবিধা হলো এটি অবশ্যই ত্বকের নিচে ইনজেকশনের মাধ্যমে দিতে হবে। DPP-4 ইনহিবিটর যেমন সিটাগ্লিপটিন, ভিল্ডাগ্লিপ্টিন, লিনাগ্লিপ্টিন প্রভৃতি ডায়াবেটিসের চিকিৎসায় ব্যবহার হয়। এগুলো ট্যাবলেট হিসেবে মুখে সেবনীয়। উল্লেখ্য DPP-4 এনজাইম GLP-1 and GIP কে নিষ্ক্রিয় করে। উক্ত ওষুধসমুহ DPP-4 এনজাইম কে নিবৃত করে রাখবে ফলে ইনক্রেটিন দীর্ঘসময় কাজ করতে পারবে। [6]
১৯০২ সালে Bayliss ও Starling প্রস্তাব করেন যে অন্ত্রীয় মিউকোসাতে একটি হরমোন আছে যা অগ্ন্যাশয়ের বহিঃক্ষরা গ্রন্থির ক্ষরণ বাড়ায়। তারা এর নাম দিয়েছিলেন সিক্রেটিন। [7]
যাহোক এই অন্ত্রীয় মিউকোসার নির্যাস টাইপ-১ ডায়াবেটিস রোগীদের খাইয়ে কোন ফল পাওয়া যায়নি। ১৯৩২ সালে La Barre ক্ষুদ্রান্ত্রের মিউকোসা থেকে নির্যাসিত একটি হরমোনের নাম ইনক্রেটিন রাখার প্রস্তাব করেন যা রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা কমিয়েছিল। তিনি এটাকে ডায়াবেটিসের চিকিৎসায় ব্যবহারের প্রস্তাব করেন। তবে ১৯৩৯-১৯৪০ সালে Leow et al. তাদের গবেষণার উপর ভিত্তি করে ইনক্রেটিনের উপস্থিতির ব্যাপারে সন্দেহ পোষণ করেন। এরপরে প্রায় ৩০ বছর এ বিষয়ে আর গবেষণা হয়নি।
১৯৭০ সালে অন্ত্রীয় মিউকোসা থেকে GIP পৃথক করে সিকোয়েন্স করা হয়(JC Brown)। ১৯৭৩ সালে Brown and Dupre গবেষণা করে দেখেন যে GIP ইনসুলিন নিঃসরণ উদ্দীপিত করে তখন এর নাম রাখা হয় গ্লুকোজ ডিপেন্ডেন্ট ইনসুলিনোট্রপিক পেপটাইড যার পূর্বের নাম ছিল গ্যাস্ট্রিক ইনহিবিটরি পেপটাইড। যাহোক প্রাথমিক গবেষণা ডায়াবেটিসের চিকিৎসায় এর উপযোগিতা প্রতিষ্ঠা করতে ব্যর্থ হয়। ১৯৮৩ সালে G. Bell, et al. মানব প্রোগ্লুকাগন জিন ক্লোন করতে সক্ষম হয়েছিলেন এবং পরবর্তীতে এর সিকোয়েন্স বের করা হয়। যাহোক ইনসুলিনের উপর সমগ্র GLP-1 অণুর কোন প্রভাব নেই শুধু এর একটি নির্দিষ্ট সিকোয়েন্স GLP-1 (7-36) অ্যামাইড ইনসুলিন নিঃসরণ করে। এটি খুব দ্রুত DPP-4 এর মাধ্যমে নিষ্ক্রিয় হয়ে GLP-1 (9-36) পরিণত হয় যার প্লাজমা অর্ধায়ু মাত্র ১-২ মিনিট। GIP অণুও খুব দ্রুত DPP-4 এর মাধ্যমে GIP (3-42) তে পরিণত হয়ে নিষ্ক্রিয় হয়। [8]
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.