ইসলাম ও ধর্ম অবমাননা
From Wikipedia, the free encyclopedia
ইসলামে ধর্ম অবমাননা বলতে আল্লাহ সম্বন্ধে অশুভ কথা বলা বা এ জাতীয় কাজকে বুঝায়,[2] তবে সাধারণ ইংরেজি শব্দের ব্যবহারের তুলনায় এর অর্থ আরও বিস্তৃত, যার মধ্যে শুধুমাত্র ইসলামের বৈশিষ্ট্যগুলিকে উপহাস করা বা অপমান করাই নয় বরং ধর্মের মৌলিক বিশ্বাসগুলির যে কোনোটিকে অস্বীকার করাও এর অন্তর্ভুক্ত।[3] উদাহরণস্বরূপ, কুরআন ঐশ্বরিকভাবে অবতীর্ণ তা অস্বীকার করা,[3] নবীদের যে কারো একজনের নবুওয়াত অস্বীকার করা,[4] কোনো ফেরেশতাকে অপমান করা, বা আল্লাহর অংশীদার বা পুত্র আছে বলে মানা, ইত্যাদি।[3]
যারা ধর্মাবমাননা করে, তাদেরকে কুরআন অভিসম্পাত দেয় এবং পরকালে তাদের লাঞ্চনার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে।[5] তদুপরী কুরআনের কোনো আয়াতে পার্থিব শাস্তির নির্দেশ আছে কিনা তা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে: কিছু মুষ্টিমেয় উদারবাদী মুসলিম বিশ্বাস করে যে, এ ব্যাপারে কোন পার্থিব শাস্তির বিধান নেই, অথচ বেশিরভাগ উলামাদের মতে এই ব্যাপারে কুরআনে আইন বর্ণনা করা হয়েছে।[6][7] একইভাবে শরিয়ার দ্বিতীয় উৎস হাদীস এর উপর ব্যাখ্যাজনিত বিতর্ক হয়েছে।[8][6] কেউ ব্যাখ্যা করেন যে, হাদিসে ধর্ম অবমাননার শাস্তির মধ্যে মৃত্যু অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। অন্যদের যুক্তিমতে, মৃত্যুদণ্ড শুধুমাত্র সেই ক্ষেত্রে প্রযোজ্য যেখানে অপরাধী রাষ্ট্রদ্রোহী অপরাধ করে, বিশেষ করে যুদ্ধের সময়।[9] বিচারশাস্ত্রের বিভিন্ন ঐতিহ্যগত মাযহাবসমূহে ধর্মাবমাননার ব্যাপারে বিভিন্ন ধরনের শাস্তি নির্ধারণ করা আছে, যা ধর্মনিন্দাকারীর প্রকৃতি তথা মুসলিম বা অমুসলিম, পুরুষ বা মহিলা ইত্যাদি সাপেক্ষে পরিবর্তিত হয়।[8]
আধুনিক মুসলিম বিশ্বে দেখা যায়, ধর্ম অবমাননা সংক্রান্ত আইন দেশভেদে পরিবর্তিত। কিছু দেশে শুধু জরিমানা, কোথাও কারাদণ্ড, কোথাও বেত্রাঘাত, কোথাও ফাঁসি বা শিরশ্ছেদের শাস্তি নির্ধারণ করা হয়েছে।[10] প্রাক-আধুনিক ইসলামী সমাজে ধর্মাবমাননার শাস্তি মৃত্যুদণ্ড অনেক বিরল ছিল।[11] আধুনিক যুগে কিছু রাষ্ট্র এবং মৌলবাদী গোষ্ঠী তাদের ধর্মীয় আস্থাপত্র পুড়িয়ে ফেলার অভিযোগে জরিমানা ধার্য করেছে এবং উদারপন্থী মুসলিম বুদ্ধিজীবী এবং ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের খাতে ব্যয় করে জনসমর্থন অর্জন করেছে।[12] কিছু মুসলিম সমাজে মত প্রকাশের স্বাধীনতার জন্য জোর দেওয়া হয়।[12] ইসলাম অবমাননার সমসাময়িক অভিযোগগুলি আন্তর্জাতিক বিতর্কের জন্ম দিয়েছে এবং সহিংসতা ও হত্যাকাণ্ডকে উস্কে দিয়েছে।