Loading AI tools
উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
একীভূতকরণের দলিলটি হল একটি আইনি দলিল বা চুক্তিপত্র যা ২৬ অক্টোবর ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ ভারতের দেশীয় রাজ্য জম্মু ও কাশ্মীরের মহারাজা হরি সিং কর্তৃক নির্বাহ করা হয়।[1][2]ভারতীয় স্বাধীনতা অধিনিয়ম ১৯৪৭ এর অনুবিধির অধীনে এই দলিল স্বাক্ষরের বিনিময়ে হরি সিং ভারত অধিরাজ্যে তাঁর রাজ্যের অন্তর্ভুক্তিতে সম্মত হন।[3][4]
ভারতীয় ইউনিয়নে জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্যের একীভূতকরণের দলিল | |
---|---|
ধরণ | একীভূতকরণের চুক্তি |
স্বাক্ষর | ২৬ অক্টোবর ১৯৪৭ |
স্থান | শ্রীনগর/দিল্লী |
কার্যকর | ২৭ অক্টোবর ১৯৪৭ |
কার্যকর | ২৭ অক্টোবর ১৯৪৭ |
শর্ত | ভারতের গভর্নর জেনারেলের অনুমোদনের পর কার্যকর |
অবসান | চিরস্থায়ী বৈধতা (তবে জম্মু ও কাশ্মীর পুনর্গঠন আইন, ২০১৯ পাসের মাধ্যমে ভারত সরকার কর্তৃক চুক্তির অধিকাংশ ধারার অবসান) |
স্বাক্ষরকারী | মহারাজা হরি সিং লর্ড লুই মাউন্টব্যাটেন |
অংশগ্রহণকারী | জম্মু ও কাশ্মীর (দেশীয় রাজ্য) ভারত অধিরাজ্য |
আমানতকারী | ভারত |
ভাষা | ইংরেজি |
১৯৪৭ সালের ২৭ অক্টোবর মহারাজা হরি সিংকে পাঠানো এক চিঠিতে ভারতের তৎকালীন গভর্নর জেনারেল লুই মাউন্টব্যাটেন এই দলিল অনুমোদন করেন এবং মন্তব্য করেন, "আমার সরকারের ইচ্ছা হলো যত দ্রুত সম্ভব জম্মু ও কাশ্মীরের আইন-শৃঙ্খলার পুনঃপ্রতিষ্ঠা হোক এবং তার মাটি আগ্রাসনকারীদের হাত থেকে মুক্ত হোক৷ রাজ্যের একীভূতকরণের বিষয়টি সেখানকার জনগণের মত যাচাই করে চূড়ান্ত হবে। "[5] মাউন্টব্যাটেনের মন্তব্য এবং কাশ্মীরের ভবিষ্যৎ মর্যাদা নির্ধারণে ভারত সরকারের দেওয়া গণভোটের প্রস্তাব - এই বিষয়গুলো জম্মু-কাশ্মীরের একীভূতকরণের বৈধতার প্রশ্নে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে স্থায়ী দ্বন্দ্ব তৈরি করে।[6][7] ভারত দাবি করে থাকে এই একীভূতকরণ সম্পূর্ণ শর্তহীন ও চূড়ান্ত, যেখানে পাকিস্তান এই একীভূতকরণকে প্রতারণাপূর্ণ মনে করে। কাশ্মীরের বিতর্কিত একত্রীকরণের ফলে সৃষ্টি হয় কাশ্মীর সমস্যা, যা দেশভাগের সুদূরপ্রসারী ও তিক্ততম ফলাফল এবং দক্ষিণ এশিয়ার প্রধান ভূরাজনৈতিক সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত। কাশ্মীর নিয়ে এশিয়ার পারমাণবিক অস্ত্রধারী তিনটি দেশ- ভারত, পাকিস্তান ও চীনের মধ্যে বিবাদ এবং নানামুখী বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলনের ফলে এই ভূখণ্ড পৃথিবীর অন্যতম প্রধান ভূরাজনৈতিক জটিলতা ও সামরিক সংঘাতের কেন্দ্র। [8]
ভারতের সাথে কাশ্মীরের রাজনৈতিক একত্রীকরণ প্রতিবছর ২৬ অক্টোবর Accession Day বা অন্তর্ভুক্তি দিবস হিসেবে উদযাপিত হয়।[9]
ব্রিটিশ ভারতে ৫৬৫ টি দেশীয় রাজ্য ছিল, যার মধ্যে দ্বিতীয় বৃহত্তম ছিল জম্মু ও কাশ্মীর। ১৯২৫ সালে হরি সিং কাশ্মীরের রাজা হন। ১৯৪৭ সালে ভারতের স্বাধীনতা লাভ পর্যন্ত তিনিই ছিলেন কাশ্মীরের শাসক।
১৯৪৭ সালে যে ভারত স্বাধীনতা আইনের ফলে ভারত ও পাকিস্তানের জন্ম হয়, সেই আইনের অন্যতম ধারা ছিল ভারতের দেশীয় রাজ্যগুলো ভারত বা পাকিস্তানে যোগ দিতে পারবেন, অথবা তারা স্বাধীনতা বজায় রাখতে পারবে। তবে গভর্নর জেনাটেল লর্ড মাউন্টব্যাটেন ৫৬৫টি দেশীয় রাজ্যকে উপদেশ দিয়েছিলেন ক্ষমতা হস্তান্তরের পূর্বে তারা যেন হিন্দুস্থান বা পাকিস্তান কোনো একটি ডমিনিয়নে যোগ দেয়। যোগ দেয়ার ব্যাপারে শাসনকর্তা জনগণের মনোভাব, উভয় ডোমিনিয়নের সঙ্গে তাদের আঞ্চলিক নৈকট্য ইত্যাদির দিক গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করবে।
তখন কাশ্মিরের জনসংখ্যার প্রায় ৮০ ভাগ মুসলমান। কিন্তু রাজা ছিল ডোগরা বংশীয় হিন্দু। জনসংখ্যার অধিকাংশ মুসলমান এবং পাকিস্তানের সংলগ্ন রাজ্য এই কারণে কায়েদে আযম মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ আশা করেছিলেন যে, কাশ্মির শেষ পর্যন্ত পাকিস্তানে যোগ দিবে।
কিন্তু কাশ্মীরের অত্যাচারী রাজা হরি সিং ভারত-পাকিস্তান কোথাও যোগ না দিয়ে কাশ্মিরের উপর তার আধিপত্য কোনভাবে বজায় রাখা যায় কিনা সেই চেষ্টাই করে যাচ্ছিলেন। মাউন্টব্যাটেন তাকে ভারতে যোগ দেয়ার জন্য চাপ দিচ্ছিলেন কিন্তু রাজা নানাভাবে সেই চাপ এড়িয়ে যাচ্ছিলেন। জিন্নাহ সাহেবও গোপনে দূত পাঠিয়ে তাকে পাকিস্তানে যোগ দেয়ার আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন কিন্তু রাজা সে আমন্ত্রণে তেমন সাড়া দেননি।
এই অবস্থায় আগস্টের শেষ দিকে কাশ্মিরের উত্তরাঞ্চলের পুঞ্চ জেলার মুসলমান অধিবাসীরা বিদ্রোহ করে স্বাধীনতা ঘোষণা করল। এই এলাকাটি পাকিস্তানের অত্যন্ত সংলগ্ন। রাজা হরি সিং বিদ্রোহ দমনের জন্য সৈন্য পাঠালেন এবং জম্মু এলাকার বিদ্রোহী জনগণকে বিতাড়িত করার আদেশ দিলেন তার সৈন্যদলকে। মুসলমানদের উপর নেমে এল অমানুষিক নির্যাতন। ব্যাপক গণহত্যা ও বিতাড়নের ফলে মুসলমান অধ্যুষিত জম্মু অঞ্চলকে হিন্দু প্রধান অঞ্চলে পরিণত করা হয়।
১৯৪৭ সালের ২২ অক্টোবর পাকিস্তান-সমর্থিত পশ্চিমাঞ্চলীয় জেলার বিদ্রোহী নাগরিক এবং পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশের পশতুন উপজাতিরা কাশ্মীর রাজ্য আক্রমণ করে। ২৫ অক্টোবর তারা বারমুলা দখল করে। সেখান থেকে গ্রীষ্মকালীন রাজধানী শ্রীনগরের দূরত্ব মাত্র ৩৫ কিলোমিটার। কিন্তু তারা রাজধানী ও তার অরক্ষিত বিমান ঘাঁটি কবজায় আনার কোনো চিন্তা না করে বারমুলায় লুটপাট করেই দুদিন কাটিয়ে দেয়।
উপজাতীয়দের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করলেও কাশ্মীরের রাজকীয় বাহিনী উপজাতীয়দের কাছে পরাজিত হচ্ছিল। রাজা হরি সিং সপরিবারে শ্রীনগর ত্যাগ করেন এবং ভারত সরকারের কাছে সহায়তা চাইলেন। জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্যের ভারতে অন্তর্ভুক্ত হওয়া ছাড়া মাউন্টব্যাটেন ও জওহরলাল নেহেরু রাজাকে কোন ধরনের সাহায্য করতে অস্বীকৃতি জানান। বাধ্য হয়ে ১৯৪৭ সালের ২৬ অক্টোবর হরি সিং কাশ্মীরের ভারতভুক্তির চুক্তিতে সই করেন। এই চুক্তিটিই হল একীভূতকরণের দলিল। ২৭ অক্টোবর তা ভারতের গভর্নর-জেনারেল কর্তৃক অনুমোদিত হয়। এরপর ভারত আকাশপথে শ্রীনগরে সৈন্য পাঠাতে থাকে। [6][10]
১৯৪৭ সালের ২৬ অক্টোবর মহারাজা হরি সিং কর্তৃক নিষ্পন্ন এবং ২৭ অক্টোবর ভারতের গভর্নর জেনারেল লর্ড মাউন্টব্যাটেন, বার্মার প্রথম আর্ল মাউন্টব্যাটেন দ্বারা গৃহীত জম্মু ও কাশ্মীরের একীভূতকরণের পূর্ণ দলিলটি নিম্নরূপ (এর তৃতীয় দফায় উল্লেখিত তফসিল ব্যতীত): [11]
“ | যেহেতু ভারতীয় স্বাধীনতা অধিনিয়ম ১৯৪৭ অনুসারে ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের আগস্টের ১৫ তম দিন হতে ভারত নামে একটি স্বাধীন অধিরাজ্য প্রতিষ্ঠিত হবে; এবং অধিকারপ্রাপ্ত বিশেষ ক্ষেত্রে গভর্নর জেনারেল কর্তৃক কোন সংযোজন, বিয়োজন, অভিযোজন ও পরিবর্তনসহ ভারত শাসন আইন ১৯৩৫ ভারতীয় অধিরাজ্যের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে।
এবং যেহেতু ভারত শাসন আইন ১৯৩৫ অধিকার প্রদান করে যে, কোন ভারতীয় রাজ্য তার শাসক দ্বারা একটি একীভূতকরণের দলিল সম্পাদনের মাধ্যমে ভারতীয় অধিরাজ্যে অঙ্গীভূত হতে পারবে। এখন, অতএব, আমি শ্রীমান ইন্দ্র মহেন্দ্র রাজরাজেশ্বর মহারাজাধিরাজ শ্রী হরি সিংজি, জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্যের অধিপতি, আমার উল্লেখিত রাজ্যের মধ্যে ও উপরে আপন সার্বভৌমত্বের ক্ষমতায় এতদ্বারা এই একীভূতকরণের দলিল সম্পাদন করছি; এবং [12]
উনিশশো সাতচল্লিশ সালের অক্টোবরের ২৬ তম দিবসে আমার হাতে ন্যস্ত। হরি সিং মহারাজাধিরাজ আমি এতদ্বারা এই একীভূতকরণের দলিল অনুমোদন করছি, উনিশশো সাতচল্লিশ সালের অক্টোবরের ২৭ তম দিবসে। (মাউন্টব্যাটেন অব বার্মা, ভারতের গভর্নর জেনারেল) |
” |
কয়েকজন পণ্ডিত মহারাজা কর্তৃক একীভূতকরণের দলিল স্বাক্ষরের দাপ্তরিক তারিখ নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তাঁরা মনে করেন, এটি ২৬ অক্টোবর নয়, বরং ২৭ অক্টোবর স্বাক্ষরিত হয়েছিল। যাইহোক, ২৭ অক্টোবর গভর্নর জেনারেল এই একীভূতকরণ অনুমোদন দেন, এবং সেইদিনই ভারতীয় সৈন্য কাশ্মীরে এয়ারলিফট করে, তাই এই তারিখকে সাধারণত গ্রহণযোগ্য মনে করা হয়। [13][14] আবার ভারতীয় ভাষ্যকার প্রেম শঙ্কর ঝার মতে মহারাজা ২৫ অক্টোবর জম্মুর উদ্দেশ্য শ্রীনগর ত্যাগের ঠিক আগে দলিলটি স্বাক্ষর করেন। [15]
পাকিস্তান ভারতে কাশ্মীরের অন্তর্ভুক্তি কখনোই মেনে নেয়নি। দলিল স্বাক্ষরের পরপরই কাশ্মীর সমস্যাকে কেন্দ্র করে ভারত ও পাকিস্তানের নিয়মিত বাহিনী সরাসরি যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে। এটা ইতিহাসে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ ১৯৪৭-৪৮ বা প্রথম পাক-ভারত যুদ্ধ বা প্রথম কাশ্মীর যুদ্ধ নামে পরিচিত। ২১ অক্টোবর ১৯৪৭ থেকে এই যুদ্ধের সূচনা গণ্য করা হয় এবং পরবর্তীতে ৩১ ডিসেম্বর জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতি হয়।
এই যুদ্ধের ফলে অখণ্ড জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্যের অবসান ঘটে। পাকিস্তান কাশ্মীরের এক-তৃতীয়াংশ নিয়ন্ত্রণে নেয় এবং বাকি অংশের নিয়ন্ত্রণ নেয় ভারত। লাইন অফ কন্ট্রোল (LOC) জম্মু ও কাশ্মীরকে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে বিভক্ত করে এবং এই লাইনই তাদের মধ্যে আন্তর্জাতিক সীমানা হিসেবে বিবেচিত হয়। ভারত জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্যের (১,০১,৩৮৭ বর্গ কি.মি.) নিয়ন্ত্রণ লাভ করে, এবং পাকিস্তান আজাদ কাশ্মীর (১৩,৩৯৭ বর্গ কি.মি.) ও গিলগিট-বালতিস্তান (৭২,৪৯৫ বর্গ কি.মি.) অঞ্চলদ্বয়ের ওপর নিয়ন্ত্রণ লাভ করে। এই নিয়ন্ত্রণ এখনো বজায় আছে। কাশ্মীর নিয়ে এই দুই দেশ ১৯৬৫ ও ১৯৯৯ সালেও যুদ্ধে জড়িয়েছে। [16][17]
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.