Loading AI tools
ইতিহাসের বিভিন্ন দিক উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
ক্রিকেট বিশ্বকাপের ইতিহাস ১৯৭৫ সালের ক্রিকেট বিশ্বকাপ প্রবর্তনের মাধ্যমে শুরু হয়। প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত ক্রিকেটের বৃহৎ এ প্রতিযোগিতা ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। তখন এ বিশ্বকাপের নামকরণ করা হয়েছিল প্রুডেন্সিয়াল বিশ্বকাপ।
১৮৭৭ সালে অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ডের মধ্যকার প্রথম টেস্ট খেলা অনুষ্ঠিত হয়। ১৯০০ সালের গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিকে ক্রিকেট খেলা অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল। গ্রেট ব্রিটেন ১৫৮ রানের ব্যবধানে ফ্রান্সকে হারিয়েছিল।[1] পরবর্তীকালে আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটি ক্রিকেট খেলা বাদ দেয়।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেট প্রতিযোগিতা হিসেবে ১৯১২ সালে ত্রি-দেশীয় প্রতিযোগিতা আয়োজনের প্রথম প্রচেষ্টা চালানো হয়। ঐ সময়ে টেস্টভূক্ত ৩টি দেশ - ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকাকে নিয়ে টেস্ট ক্রিকেট প্রতিযোগিতাটি প্রতিকূল আবহাওয়া ও দর্শকদের অনাগ্রহের কারণে ভণ্ডুল হয়ে যায়। পরীক্ষামূলকভাবে পরবর্তীতে আর চেষ্টা চালানো হয়নি।[2] তারপর থেকেই আন্তর্জাতিক টেস্ট ক্রিকেট অঙ্গনে সংশ্লিষ্ট এ দলগুলো দ্বি-পক্ষীয় সিরিজে পরিণত হয় ও প্রতিযোগিতার বিপক্ষে অথবা দুই দেশের বাইরে লীগের বিরোধিতা করে।
১৯৬০-এর দশকের শুরুতে কাউন্টি ক্রিকেটে ইংরেজ দলগুলো ক্রিকেটের স্বল্প সংস্করণে জড়িয়ে পড়ে যা কেবলমাত্র একদিন সময়ের ছিল। ১৯৬২ সালে ৪-দল নিয়ে গড়া মিডল্যান্ডস নক-আউট কাপ[3] ও ১৯৬৩ সালে জিলেট কাপের প্রচলন শুরু হয়। ক্রমে একদিনের ক্রিকেটের জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকে। ১৯৬৯ সালে সানডে লীগ নামে একটি জাতীয় লীগের আয়োজন করা হয়।
১৯৭১ সালে মেলবোর্নে ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার মধ্যকার টেস্ট খেলাটি বৃষ্টির কারণে চারদিন খেলার অনুপযুক্ত ছিল। নির্ধারিত চূড়ান্ত ও পঞ্চম দিনে প্রথমবারের মতো একদিনের আন্তর্জাতিক খেলা আয়োজন করা হয়। উত্তেজিত দর্শকদের সামলাতে কর্তৃপক্ষ চল্লিশ ওভারের খেলা আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেয়।[4] তখন ৮-বলে এক ওভার গণ্য করা হতো।
এ সফলতা ও জনপ্রিয়তাকে পুঁজি করে ইংল্যান্ডসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশে ঘরোয়াভিত্তিতে একদিনের প্রতিযোগিতা আয়োজনের প্রেক্ষিতে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল কর্তৃপক্ষ ক্রিকেট বিশ্বকাপ আয়োজনের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করতে থাকেন।[5]
১৯৭৫ সালে প্রথমবারের মতো পুরুষদের ক্রিকেট বিশ্বকাপ প্রতিযোগিতা ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠিত হয়। এর প্রধান কারণ ছিল একমাত্র টেস্টক্রিকেটভূক্ত দেশ হিসেবে পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা থাকা।[6] প্রুডেন্সিয়াল প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানির আর্থিক সহযোগিতায় প্রথম তিনটি প্রতিযোগিতা প্রুডেন্সিয়াল কাপ নামে পরিচিতি পায়। খেলাগুলো ৬০-ওভারব্যাপী ছিল ও দলগুলো সনাতনী ধাঁচে সাদা পোশাক ও লাল বল নিয়ে খেলে। সবগুলো খেলাই দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত হয়। প্রথম প্রতিযোগিতায় অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, পাকিস্তান, ভারত ও নিউজিল্যান্ড - ঐ সময়ের টেস্টভূক্ত এ ছয়টি দেশ এবং শ্রীলঙ্কাসহ পূর্ব আফ্রিকা দল অংশগ্রহণ করে। আন্তর্জাতিক ক্রীড়াঙ্গনে দক্ষিণ আফ্রিকার অংশগ্রহণে নিষেধাজ্ঞা থাকায় অংশ নিতে পারেনি। চূড়ান্ত খেলায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ দল ১৭ রানের ব্যবধানে অস্ট্রেলিয়াকে পরাজিত করে ট্রফি জয় করে।
পরের দুই বিশ্বকাপ ১৯৭৯ ও ১৯৮৩ সালে পুনরায় ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠিত হয়। ১৯৭৯ সালে বিশ্বকাপকে ঘিরে প্রথমবারের মতো আইসিসি ট্রফি’র প্রবর্তন করা হয়।[7] এ প্রতিযোগিতায় কেবলমাত্র টেস্ট ক্রিকেট বহির্ভূত শ্রীলঙ্কা ও কানাডা দলকে বিশ্বকাপের জন্য মনোনীত করা হয়। ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৯২ রানের ব্যবধানে ইংল্যান্ডকে পরাজিত করে পুনরায় শিরোপা জয় করে। বিশ্বকাপ চলাকালীন এক সভায় আইসিসি প্রতি চার বছর অন্তর বিশ্বকাপ আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেয়।
১৯৮৩ সালের বিশ্বকাপ প্রতিযোগিতা ধারাবাহিকভাবে তৃতীয়বারের মতো ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠিত হয়। এ প্রতিযোগিতায় শ্রীলঙ্কা দল টেস্টভূক্ত দল হিসেবে অংশগ্রহণ করে। আইসিসি ট্রফি জয়ের মাধ্যমে জিম্বাবুয়ে দল বিশ্বকাপে খেলার সুযোগ পায়। চূড়ান্ত খেলায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলকে ৪৩ রানের ব্যবধানে পরাভূত করে অঘটন ঘটায় ও প্রথমবারের মতো শিরোপা লাভ করে। প্রতিযোগিতার শুরুতে ভারতের বিশ্বকাপ জয়ের সম্ভাবনা ছিল ১:৬৬।[5]
১৯৮৭ সালের ক্রিকেট বিশ্বকাপ ভারত ও পাকিস্তানে যৌথভাবে অনুষ্ঠিত হয়। এরফলে এটিই প্রথম বিশ্বকাপ যা ইংল্যান্ডের বাইরে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এছাড়াও, প্রথম প্রতিযোগিতা হিসেবে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ফাইনালে পৌঁছতে পারেনি। ইংল্যান্ডের সাথে তুলনান্তে দিবালোকের পার্থক্যজনিত কারণে দলের ইনিংসে ৬০-ওভারের পরিবর্তে ৫০-ওভারে নির্ধারণ করা হয়। অস্ট্রেলিয়া মাত্র ৭ রানের ব্যবধানে ইংল্যান্ডকে পরাজিত করে শিরোপা লাভে সমর্থ হয়।
১৯৯২ সালের ক্রিকেট বিশ্বকাপ অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডে যৌথভাবে অনুষ্ঠিত হয়। রঙিন পোশাক, সাদা বলের ব্যবহার, দিন/রাতের খেলা এবং ফিল্ডিংয়ের সীমাবদ্ধতার পরিবর্তন ইত্যাদির প্রবর্তন ঘটানো হয়। আন্তর্জাতিক ক্রীড়াঙ্গন থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের পর দক্ষিণ আফ্রিকা ক্রিকেট দল প্রথমবারের মতো প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়। একসময় ‘কোণঠাসা বাঘ’ নামে পরিচিত পাকিস্তান শুরুতে খারাপ করলেও বিজয়ী হিসেবে আবির্ভূত হয়। মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে অনুষ্ঠিত খেলায় দলটি ইংল্যান্ডকে চূড়ান্ত খেলায় ২২ রানে পরাজিত করে।[8]
১৯৯৬ সালে ক্রিকেট বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন হয় শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট দল।এই বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হয় ভারত,পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কায়।ফাইনালে অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে প্রথমবারের মত চ্যাম্পিয়ন হয় শ্রীলঙ্কা।
অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ ৫ বার চ্যাম্পিয়ন হয় , ১৯৮৭,১৯৯৯,২০০৩,২০০৭, ২০১৫ বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়|এছাড়াও তারা ১৯৭৫ ও ১৯৯৬ বিশ্বকাপে রানার্সআপ হয়|
ষোল বছর পর ১৯৯৯ সালে ইংল্যান্ডে বিশ্বকাপ প্রতিযোগিতা ফিরে আসে। তন্মধ্যে কিছু খেলা আয়ারল্যান্ড, স্কটল্যান্ড ও নেদারল্যান্ডসে অনুষ্ঠিত হয়। গ্রুপ-পর্বে দুই খেলায় পরাজয়ের পরও শিরোপা প্রত্যাশী দলগুলোর অন্যতম অস্ট্রেলিয়া দল বাদ-বাকী সাত খেলায় জয়ী হয়ে শিরোপা লাভে সক্ষম হয়। হেডিংলিতে অনুষ্ঠিত সুপার সিক্স পর্বের খেলায় দক্ষিণ আফ্রিকাকে পরাজিত করে পরবর্তী স্তরে অগ্রসর হয়। দক্ষিণ আফ্রিকা ২৭১ রানে সম্মানজনক ইনিংস গড়ে। জবাবে অস্ট্রেলিয়ার দলনেতা স্টিভ ওয়াহ হার্শেল গিবসের হাতে বল দিলেও তা ফেলে দিলে বিশ্বকাপও তারা ফেলে দেয়। ওয়াহ অপরাজিত সেঞ্চুরি করেন ও শেষ বলে জয়ের লক্ষ্যমাত্রায় নিয়ে যান। তারপর উভয় দল সেমি-ফাইনালে পুনরায় মুখোমুখি হয়। অস্ট্রেলিয়া ২১৩ রানে গুটিয়ে যায়। শেষ ওভারে দক্ষিণ আফ্রিকার ৯ রান প্রয়োজন ছিল ও হাতে ছিল মাত্র ১ উইকেট। ম্যান অব দ্য টুর্নামেন্টের পুরস্কার প্রাপক ল্যান্স ক্লুজনার স্ট্রাইক করছিলেন। প্রথম দুই বলে সীমানার বাইরে নিয়ে গেলেও ক্লুজনার ও অ্যালান ডোনাল্ড চতুর্থ বলে রান নিতে গিয়ে রান আউটের শিকার হন। ফলে ম্যাচ টাই হয়। কিন্তু পূর্বেকার ফলাফলের প্রেক্ষিতে অস্ট্রেলিয়া ফাইনালে চলে যায়। অন্য সেমি-ফাইনালে পাকিস্তান গ্রুপ-পর্ব ও সুপার সিক্স পর্বে শীর্ষস্থানে থেকে নিউজিল্যান্ডকে ৯ উইকেটের ব্যবধানে পরাজিত করে। ফাইনালে অস্ট্রেলিয়া দল পাকিস্তানকে মাত্র ১৩২ রানে অল-আউট করে। মাত্র ২০ ওভারের মধ্যেই আট উইকেট হাতে রেখে অস্ট্রেলিয়া জয়ের লক্ষ্যে পৌঁছে।
২০০৩ ক্রিকেট বিশ্বকাপও অস্ট্রেলিয়া জিতে| বিশ্বকাপে তারা প্রত্যেক খেলায় জয় লাভ করে| এই টুর্নামেন্টের অস্ট্রেলিয়ার সেরা ব্যাটসম্যান ছিলেন রিকি পন্টিং, তিনি ৫১ গড়ে ৪১৫ রান করেন , আর সেরা বোলার ছিলেন ব্রেট লি , তিনি ২২ টি উইকেট নেন| ফাইনালে অস্ট্রেলিয়া রানের হিসাবে সবচেয়ে বড় জয় পায়| তারা ভারতকে ১২৫ রানে হারায়|
২০০৭ বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে অস্ট্রেলিয়া বিশ্বকাপ জয়ের হ্যাটট্রিক করে| এই টুর্নামেন্টেও তারা অপরাজিত থাকে|ম্যাথু হেইডেন টুর্নামেন্টে সর্বোচ্চ ৬৫৯ রান করেন, গ্লেন ম্যাকগ্রা ২৬ উইকেট নেন|
২০১৫ সালে অস্ট্রোলিয়া তাদের পঞ্চম শিরোপা অর্জন করে। স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়া এবং অপর আয়োজক দেশ, নিউজিল্যান্ডে অনুষ্ঠিত হওয়া বিশ্বকাপে এই দুই দেশই ফাইনালে জায়গা করে নেয়। অস্ট্রেলিয়া খুবই সহজ ভাবে ফাইনালে নিউজিল্যান্ডকে পরাজিত করে এবং পঞ্চমবারের মতো বিশ্বকাপ জয়ের স্বাদ গ্রহণ করে।
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.