তিরুবনন্তপুরম জেলা
কেরালার একটি জেলা উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
কেরালার একটি জেলা উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
তিরুবনন্তপুরম জেলা, দক্ষিণ ভারতে অবস্থিত কেরল রাজ্যের ১৪ টি জেলার একটি জেলা৷ এটি কেরালার দক্ষিণতম জেলা। ১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দে এই জেলাটি গঠন করা হয় এবং জেলাসদর তিরুবনন্তপুরম শহরে স্থাপন করা হয়, এই শহরটি সমগ্র কেরালার রাজধানী। ১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দে পূর্বতন জেলার দক্ষিণ পূর্ব দিকের চারটি তালুক নিয়ে নতুন কন্যাকুমারী জেলা গঠন করা হয়, এবং অবশিষ্টাংশ জেলা সদরের নাম অনুসারে তিরুবনন্তপুরম জেলা নামে পরিচিত হয়। [2]
তিরুবনন্তপুরম জেলা ত্রিবান্দ্রম | |
---|---|
কেরলের জেলা | |
কেরালায় তিরুবনন্তপুরম জেলার মানচিত্র | |
স্থানাঙ্ক: ৮.৪৮° উত্তর ৭৬.৯৪° পূর্ব | |
রাষ্ট্র | ভারত |
রাজ্য | কেরল |
সদর | তিরুবনন্তপুরম |
তালুক | তালিকা
|
সরকার | |
• লোকসভা নির্বাচন কেন্দ্র | ২টি |
• বিধানসভা নির্বাচন কেন্দ্র | ১৪টি |
আয়তন | |
• সর্বমোট | ২,১৯২ বর্গকিমি (৮৪৬ বর্গমাইল) |
জনসংখ্যা (2011) | |
• সর্বমোট | ৩৩,০১,৪২৭ |
• জনঘনত্ব | ১,৫০০/বর্গকিমি (৩,৯০০/বর্গমাইল) |
• পৌর এলাকা | ৫৫.৭৫% |
জনতত্ত্ব | |
• সাক্ষরতা | ৯৩.০২%[1] |
যানবাহন নিবন্ধন | KL(কেএল)-০১, ১৬, ১৯, ২০, ২১, ২২, ৭৪, ৮১ |
দীর্ঘতম জাতীয় সড়ক | ৬৬ নং জাতীয় সড়ক |
গড় বার্ষিক বৃষ্টিপাত | ১,৭০০ মিলিমিটার |
জেলাটির মোট ক্ষেত্রফল ২,১৯২ বর্গকিলোমিটার (৫,৪১,৬৫৫ একর)। ২০১১ খ্রিস্টাব্দে জনগণনা অনুসারে এই জেলায় ৩৩,০১,৪৩৭ জন বাস করতেন,[3] যা ওই রাজ্যের মালাপ্পুরম জেলার পরে দ্বিতীয় বৃহত্তম জেলাভিত্তিক জনসংখ্যা। [4] জেলাটি ছয়টি তহশীল বিভক্ত, এগুলি হল: নেইয়াত্তিঙ্করা, কাট্টাকড়া, নেদুমানগড়, তিরুবনন্তপুরম, চিরয়িঙ্কিলু এবং বারকল তালুক।[5]
জেলেটির সর্বদক্ষিণে রয়েছে কন্যাকুমারিকা থেকে ৫৪ কিলোমিটার পশ্চিম দিকে অবস্থিত কালীক্কবিলা, যা সমগ্র রাজ্যের দক্ষিণতম বিন্দু। [6] জেলাটির নগরায়ন হার জনসংখ্যার বিচারে ৩৩.৭৫ শতাংশ। [7]
জেলাটিতে রয়েছে তিনটি প্রধান নদী, একাধিক স্বাদু জলের হ্রদ এবং প্রায় ৩০০টি পুকুর। জেলাটিন পূর্বাংশ জঙ্গল সংকুল এবং উত্তরাংশের অধিকাংশ স্থানে রাবার চাষ করা হয়। এ ব্যতীত বাকি স্থানগুলিতে শুষ্ক জমির ফসল তথা নারকেল, কলা এবং কাসাভা গাছের চাষ করা হয়। উর্বর অঞ্চলে প্রচুর পরিমাণে ধান চাষ করা হয়। [8]
তিরুবনন্তপুরম জেলার নামটি এসেছে জেলাসদর তিরুবনন্তপুরম শহরের নাম অনুসারে। তিরুবনন্তপুরম শব্দটিকে বিশ্লেষণ করলে তিনটি শব্দ পাওয়া যায় যথা "তিরু-অনন্ত-পুরম", এর অর্থ অনন্ত পতির বাসস্থান। [9] এই নামটি এসেছে সদর শহরের মধ্যস্থলে অবস্থিত একটি হিন্দু মন্দির থেকে। অনন্ত হল শ্রীবিষ্ণুর শয্যা তথা শেষনাগ। এখানে শ্রীবিষ্ণু হলেন শ্রী পদ্মনাভ স্বামী, এবং তিরুবনন্তপুরমের কেন্দ্রস্থলের অবস্থিত বিষ্ণু মন্দিরটি হল শ্রীপদ্মনাভস্বামী মন্দির। ১৯৯১ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত এর নাম ছিলো ত্রিবান্দ্রম কিন্তু পরবর্তীকালে কেরল সরকার স্থানীয় ভাষায় প্রচলিত তিরুবনন্তপুরম নামটিকে সমস্ত ভাষায় সরকারি বানান রূপে ঘোষণা করেন।
জেলার বিভিন্ন স্থানের মতো তিরুবনন্তপুরম শহরটিও প্রাচীন ঐতিহ্য, লোককাহিনী এবং সাহিত্যে বিশিষ্টভাবে উল্লেখযোগ্যতা রেখেছে।
১৬৮৪ খ্রিস্টাব্দে রাণী উমাইয়াম্মার রাজপ্রতিনিধিত্বকালে তিরুবনন্তপুরম শহর থেকে উপকুল বরাবর ৩২ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত বারকলের নিকট অঞ্চুতেঙ্গতে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি একটি কারখানা নির্মাণ ও তার সার্বিক উন্নয়নের জন্য সামান্য জমি পান৷ ঐ একই স্থান পূর্বে ব্যবসায়িক স্বার্থে পর্তুগীজ এবং ওলন্দাজরাও ব্যবহার করতেন৷ এই ঘটনার পর থেকেই ধীরে ধীরে ব্রিটিশরা ত্রিবাঙ্কুর রাজ্যের বিভিন্ন ক্ষেত্রে নিজেদের আধিপত্য বিস্তির করতে শুরু করে৷ [10]
তিরুবনন্তপুরমের আধুনিক ইতিহাস শুরু হয় অষ্টাদশ শতাব্দীতে রাজা মার্তণ্ড বর্মার (১৭২৯-১৭৫৮ খ্রিস্টাব্দ) সময়কাল থেকে৷ এই সময় থেকে তিরুবনন্তপুরমে বুদ্ধিজীবীদের দ্বারা শৈল্পিক উন্নতি ঘটতে থাকে এবং ক্রমে এটি শিল্পের কেন্দ্র হয়ে ওঠে।
খ্রিস্টীয় অষ্টাদশ শতাব্দীতে নির্মিত অনন্তনাগের উপর শায়িত বিষ্ণুমূর্তি সহ শ্রী পদ্মনাভস্বামী মন্দির শুধু এই শহরেরই বৈশিষ্ট্য নয় সমগ্র জেলারই একটি। মন্দিরটিতে বিষ্ণুর শ্রী পদ্মনাভ মূর্তি ছাড়াও রয়েছে শ্রীকৃষ্ণ, নরসিংহ দেব, গণেশ এবং আইয়াপ্পার মূর্তি। ১৭৪৫ খ্রিস্টাব্দে ত্রিবাঙ্কুর রাজপরিবারের রাজা মার্তণ্ড বর্মা তাহলে ত্রিবাঙ্কুর রাজ্যের রাজধানী পদ্মনাভপুরম (যা বর্তমানে তামিলনাড়ু রাজ্যের কন্যাকুমারী জেলাতে অবস্থিত) থেকে স্থানান্তরিত করে তিরুবনন্তপুরম এ আসেন এবং এই মন্দিরটি নির্মাণ করান। রাজা মার্তণ্ড বর্মা তার বাকি রাজত্বকাল শ্রী পদ্মনাভদাস নামে, তথা শ্রীপদ্মনাভের চরণে সমর্পিত করেন। বিস্তৃত মন্দির প্রাঙ্গণ, মন্দিরের সুউচ্চ একাধিক সূক্ষ্ম কাজ ও মূর্তি সংবলিত গোপুরম এবং ভেতরের একটি জলাশয়ে পতিত সমগ্র মন্দিরের প্রতিফলন বর্তমানকালে একাধিক দর্শনার্থী ও পুণ্যার্থী আকর্ষণ স্থল।
ভারতের স্বাধীনতা লাভের পূর্বে তিরুবনন্তপুরম শহরটি ত্রিবাঙ্কুর রাজ্যের রাজধানী ছিল। রাজ্য পুনর্গঠন আইন বলবৎ হলে ১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দের ১লা নভেম্বর তারিখে রাজ্য পুনর্গঠন কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী এই জেলা থেকে বিলাবাঙ্কুর সহ তোবল, অগস্ত্যেশ্বরম, কালকুলাম তালুকগুলি পৃথক করে তামিলনাড়ুর সঙ্গে যুক্ত করা হয়, যা পরে কন্যাকুমারী জেলা রূপে আত্মপ্রকাশ করে।
জেলাটির অবস্থান ৮.১৭ ডিগ্রী উত্তর অক্ষাংশ থেকে ৮.৫৪ ডিগ্রী উত্তর অক্ষাংশ এবং ৭৬.৪১ ডিগ্রী পূর্ব দ্রাঘিমা থেকে ৭৭.১৭ ডিগ্রী পূর্ব দ্রাঘিমা পর্যন্ত৷ জেলাটির দক্ষিণতম বিন্দু পারশালা ভারতীয় উপদ্বীপের দক্ষিণতম বিন্দু তামিলনাড়ুর কন্যাকুমারী থেকে ৫৪ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিম দিকে অবস্থিত। [11]
তিরুবনন্তপুরমের জলবায়ু সাধারণত উষ্ণ ক্রান্তীয় প্রকৃতির। অন্যতম বৃহত্তম সংরক্ষিত বনাঞ্চলের উপস্থিতি বৃষ্টিপাতের পরিমাণ এবং আঞ্চলিক জলবায়ুর উপর প্রভাব বিস্তার করে। পশ্চিমঘাট পর্বতমালার উচ্চতর স্থানগুলিতে শীতল আবহাওয়া অনুভূত হয়। উচ্চতা কমার সাথে সাথে উপকূল বরাবর উষ্ণতা বৃদ্ধি পেতে থাকে। গড় সর্বাধিক উষ্ণতা মোটামুটি ৩৫° এবং গড় সর্বনিম্ন উষ্ণতা ২০° সেলসিয়াসের মধ্যে থাকে। আরব সাগর কে পশ্চিমে রেখে পশ্চিমঘাট পর্বতমালা বরাবর উত্তর থেকে দক্ষিণে বিস্তৃত হওয়ার জন্য স্বাভাবিকভাবেই জেলাটির আর্দ্রতা একটু বেশি, গড় আর্দ্রতা ৯৫% এর কাছাকাছি। [12]
জেলাটির গড় বার্ষিক বৃষ্টিপাত প্রায় ১,৮২৭.৭ মিমি (৭২ ইঞ্চি)। [13] জুন থেকে সেপ্টেম্বর মাসে গ্রীষ্মকালের শেষ থেকে শরতকালের সূচনা অবধি সময়কালেই সর্বাধিক বৃষ্টিপাত হয়ে থাকে, যা সারা বছরের মোট বৃষ্টিপাতের পরিমাণের সিংহভাগ অংশ। অক্টোবর এবং নভেম্বর মাসে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কম হলেও তা নিরবচ্ছিন্ন থাকে। এপ্রিল এবং মে মাসে বজ্রবিদ্যুৎ সহ বৃষ্টিপাত হয়। [14]
ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি মাস বছরের শীতলতম সময়। এই সময় সমগ্র জেলার গড় উষ্ণতা ২০° সেলসিয়াসে নেমে আসে, চাষাড়া ভারতেই শীতকাল বলে পরিগণিত হয়। ফেব্রুয়ারি থেকে মার্চ মাস অবধি গ্রীষ্মকালীন উষ্ণতা ৩০-৩৫° সেলসিয়াসের মধ্যে হেরফের করে। [15]
তিরুবনন্তপুরম-এর আবহাওয়া সংক্রান্ত তথ্য | |||||||||||||
---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|
মাস | জানু | ফেব্রু | মার্চ | এপ্রিল | মে | জুন | জুলাই | আগস্ট | সেপ্টে | অক্টো | নভে | ডিসে | বছর |
সর্বোচ্চ রেকর্ড °সে (°ফা) | ৩৭ (৯৯) |
৩৮ (১০০) |
৩৮ (১০০) |
৩৮ (১০০) |
৩৮ (১০০) |
৩৯ (১০২) |
৩৮ (১০০) |
৩৮ (১০০) |
৩৩ (৯১) |
৩৮ (১০০) |
৩৭ (৯৯) |
৩৬ (৯৭) |
৩৯ (১০২) |
সর্বোচ্চ গড় °সে (°ফা) | ৩১.৫ (৮৮.৭) |
৩১.৯ (৮৯.৪) |
৩২.৬ (৯০.৭) |
৩২.৬ (৯০.৭) |
৩১.৬ (৮৮.৯) |
২৯.৭ (৮৫.৫) |
২৯.২ (৮৪.৬) |
২৯.৪ (৮৪.৯) |
৩০.০ (৮৬.০) |
২৯.৯ (৮৫.৮) |
৩০.৩ (৮৬.৫) |
৩১.০ (৮৭.৮) |
৩০.৮ (৮৭.৪) |
সর্বনিম্ন গড় °সে (°ফা) | ২২.২ (৭২.০) |
২২.৮ (৭৩.০) |
২৪.১ (৭৫.৪) |
২৪.৯ (৭৬.৮) |
২৪.৭ (৭৬.৫) |
২৩.৫ (৭৪.৩) |
২৩.১ (৭৩.৬) |
২৩.২ (৭৩.৮) |
২৩.৩ (৭৩.৯) |
২৩.৩ (৭৩.৯) |
২৩.১ (৭৩.৬) |
২২.৬ (৭২.৭) |
২৩.৪ (৭৪.১) |
সর্বনিম্ন রেকর্ড °সে (°ফা) | ১৫ (৫৯) |
১৭ (৬৩) |
২০ (৬৮) |
২০ (৬৮) |
২০ (৬৮) |
২১ (৭০) |
১৮ (৬৪) |
২০ (৬৮) |
১৮ (৬৪) |
২০ (৬৮) |
২০ (৬৮) |
২০ (৬৮) |
১৫ (৫৯) |
অধঃক্ষেপণের গড় মিমি (ইঞ্চি) | ২২.৭ (০.৮৯) |
২৪.৪ (০.৯৬) |
৪০.৪ (১.৫৯) |
১১৭.৪ (৪.৬২) |
২৩০.৪ (৯.০৭) |
৩২০.৮ (১২.৬৩) |
২২৬.৮ (৮.৯৩) |
১৩৮.১ (৫.৪৪) |
১৭৪.৬ (৬.৮৭) |
২৮১.৭ (১১.০৯) |
১৮৪.৫ (৭.২৬) |
৬৫.৯ (২.৫৯) |
১,৮২৭.৭ (৭১.৯৬) |
উৎস ১: [16] | |||||||||||||
উৎস ২: [17] |
তিরুবনন্তপুরম জেলাটি কেরালার দক্ষিণতম জেলা। এর উত্তর দিকে রয়েছে কোল্লাম জেলা, পূর্ব দিকে রয়েছে তামিলনাড়ু রাজ্যের তিরুনেলভেলি জেলা, দক্ষিণ-পূর্ব দিকে রয়েছে কন্যাকুমারী জেলা। জেলিটির পশ্চিম এবং দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে রয়েছে আরব সাগর।
২০১১ খ্রিস্টাব্দে ভারতের জনগণনা অনুসারে তিরুবনন্তপুরম জেলার জনসংখ্যা ছিল ৩৩,০১,৪২৭ জন। ওই বছর জনসংখ্যার বিচারে ভারতের মোট ৬৪০ টি জেলার মধ্যে এই জেলাটি ১০৩তম স্থান অধিকার করে। [4] জেলাটির জনঘনত্ব ১,৫০৯ জন প্রতি বর্গকিলোমিটার (৩,৯১০ জন/বর্গমাইল), জাকির আলোর অন্যান্য জেলার মধ্যে সর্বাধিক। [4] ২০০১ থেকে ২০১১ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে জেলাটির জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ছিল ২.২৫ শতাংশ।[4] তিরুবনন্তপুরম জেলায় প্রতি হাজার পুরুষে ১০৮৮ জন নারী বসবাস করেন। [4] জেলাটির মোট সাক্ষরতার হার ৯৩.০২ শতাংশ যেখানে পুরুষ সাক্ষরতার হার ৯৫.০৬ শতাংশ এবং নারী সাক্ষরতার হার ৯১.১৭ শতাংশ। [4]
বছর | জন. | ব.প্র. ±% |
---|---|---|
১৯০১ | ৪,৮৪,৪৯৩ | — |
১৯১১ | ৫,৬৯,৪৭২ | +১.৬৩% |
১৯২১ | ৬,৬৬,৩৯৩ | +১.৫৮% |
১৯৩১ | ৮,৫৬,৮৫১ | +২.৫৫% |
১৯৪১ | ১০,১৫,০৫৭ | +১.৭১% |
১৯৫১ | ১৩,২৭,৮১২ | +২.৭২% |
১৯৬১ | ১৭,৪৪,৫৩১ | +২.৭৭% |
১৯৭১ | ২১,৯৮,৬০৬ | +২.৩৪% |
১৯৮১ | ২৫,৯৬,১১২ | +১.৬৮% |
১৯৯১ | ২৯,৪৬,৬৫০ | +১.২৭% |
২০০১ | ৩২,৩৪,৩৫৬ | +০.৯৪% |
২০১১ | ৩৩,০১,৪২৭ | +০.২১% |
উৎস:[18] |
মালয়ালম হলো জেলাটির সরকারী ও সর্বাধিক প্রচলিত ভাষা এবং রয়েছে সহ দাপ্তরিক ইংরাজী ভাষা৷ এছাড়া তিরুবনন্তপুরম মহানগরে যথেষ্ট পরিমাণে তামিলভাষী, হিন্দিভাষী, তুলুভাষী এবং কম সংখ্যক গুজরাটিভাষী বসবাস করেন।
তিরুবনন্তপুরম জেলায় হিন্দু ধর্মাবলম্বীর সংখ্যা ৬৬.৪৬ শতাংশ, মুসলিম ধর্মাবলম্বীর সংখ্যা ১৩.৭২ শতাংশ এবং খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীর সংখ্যা ১৯.১০ শতাংশ। [19] বসবাসকারী হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা একাধিক জনগোষ্ঠী বা জাতিতে বিভক্ত। অন্যান্য জেলার মত এই জেলাতেও নাইয়ার, ব্রাহ্মণ, এড়াবা, তপশিলি জাতি এবং এগারটি অন্যান্য জাতির হিন্দু ধর্মাবলম্বী লোক বাস করেন। খ্রিস্টানরা মূলত লাতিন ক্যাথলিক, সাইরু মালাবার ক্যাথলিক, সাইরু মলঙ্করা ক্যাথলিক, মলঙ্করা অর্থোডক্স সিরিয়াক অর্থোডক্স প্রভৃতিতে বিভক্ত। মুসলিম সমাজে শিয়া এবং সুন্নি বিভাজন রয়েছে।
জেলাটির ৫০ শতাংশের অধিক লোক কৃষিকাজের উপর ভিত্তি করে জীবন অতিবাহিত করেন। সংখ্যার বিচারে মোট শ্রমজীবীর ৪২ শতাংশ লোক কৃষিকাজের সঙ্গে সরাসরি ভাবে যুক্ত। অধিকাংশ কার্যক্ষেত্রেই আয় কম এবং নিম্ন ও নিম্ন মধ্যবিত্ত প্রকৃতির। রাজনৈতিক এবং সামাজিক জনসর্তকতা সফলতার সাথে ঐতিহাসিক কিছু অনৈতিক রীতিনীতি থেকে মানুষকে সরিয়ে রেখেছে। জেলাটি তুলনামূলকভাবে আর্থসামাজিক দিক থেকে উন্নত।
তিরুবনন্তপুরম অর্থনীতির মূল কান্ডারী হলো সামাজিক মাধ্যম এবং তথ্য প্রযুক্তি বিভাগ, এছাড়াও রয়েছে কৃষিকাজ শিক্ষা এবং ভ্রমণভিত্তিক শিল্প পর্যটন। ভারতের প্রথম অ্যানিমেশন পার্ক তথা কিনফ্রা ফিল্ম এন্ড ভিডিও পার্ক তিরুবনন্তপুরম শহরেই অবস্থিত।
তিরুবনন্তপুরম জেলায় দুটি কেন্দ্রীয় সেক্টর, ১৪ টি রাজ্য সেক্টর, একটি কোঅপারেটিভ সেক্টর, চারটি যুগ্ম সেক্টর, এবং ৬০ টি বেসরকারি ছোট এবং বড় এন্টারপ্রাইজ সেক্টর রয়েছে। ২০০৩ খ্রিস্টাব্দের ৩১শে মার্চ কেরালা রাজ্য শিল্পোন্নয়ন নিয়ম (KSIDC) নতুন করে ৯,২৬২টি শূন্য পদ তৈরি করে চাকুরীক্ষেত্র বৃদ্ধি করেন এবং এই বাবদ ৩৪৩৯.৪ মিলিয়ন ভারতীয় অর্থ বিনিয়োগ করেন। [20] ২০০২ খ্রিষ্টাব্দে এখানে ৯০১টি নিবন্ধিত কার্যকর কারখানা ছিল, যার মধ্যে তেলঘানি, কাজু, লৌহ যন্ত্রাংশ, কার্পাস, কাগজ পৃন্টিং, রবার, রাসায়নিক দ্রব্য, দিয়াশলাই, সাধারণ প্রযৌক্তিক একক, অটোমোবাইল ওয়ার্কশপ প্রভৃতি কারখানা। সদর শহরে অবস্থিত কেরালার রাজ্য সরকার পরিচালিত শ্রী মূলম তিরুনাল শাস্তিয়াবপূর্ত্তি স্মৃতি প্রতিষ্ঠানটি রাজ্যের বৃহত্তম হস্ত ও কুটির শিল্প সংগ্রহের স্থান।
জেলাটির জেলা সদরের সমস্ত দপ্তর তিরুবনন্তপুরম শহরের কুড়াপ্পনকুন্নুতে অবস্থিত। প্রতিটি জেলার জেলাশাসক দ্বারা পরিচালিত হয়। প্রতি জেলাশাসক পাঁচজন সহকারী সমাহর্তার আনুকূল্যে থাকেন। তারা সাধারণ বিষয়, ভূমি সংক্রান্ত বিষয়, রাজস্ব সংক্রান্ত বিষয়, ভূমির পুনর্বিন্যাস এবং নির্বাচন সংক্রান্ত বিষয়ে হস্তক্ষেপ করেন। [21]
ক্রমিক | পুরসভা | জনসংখ্যা |
---|---|---|
1. | নেইয়াত্তিঙ্করা | ৬৯,৪৬৭ |
2. | নেদুমানগড় | ৬০,১৬১ |
3. | বারকল | ৪২,২৭৩ |
4. | আত্তিঙ্গল | ৩৫,৬৪৮ |
তিরুবনন্তপুরম জেলার ছয়টি তালুক হলো: নেইয়াত্তিঙ্করা, কাট্টাকড়া, নেদুমানগড়, তিরুবনন্তপুরম, চিরয়িঙ্কিলু এবং বারকল। প্রতিটি তালুক একজন করে তহশিলদারের দায়িত্বে রয়েছে। জেলাটিতে রয়েছে দুটি লোকসভা কেন্দ্র, এগুলি হলো ১৯ নং আত্তিঙ্গল এবং ২০ নং তিরুবনন্তপুরম লোকসভা কেন্দ্র৷ [22]
পূর্বতন ৪৭ নং জাতীয় সড়ক তথা বর্তমান সংখ্যায়নে জাতীয় সড়ক ৬৬ (ভারত)|৬৬ নং জাতীয় সড়কটি উত্তরে কালীক্কবিলা থেকে দক্ষিণে পারিপল্লীর নিকট নাবাইকুলাম অবধি বিস্তৃত৷ এই সড়কটি তিরুবনন্তপুরম জেলায় ৮০ কিমি (৫০ মা) দীর্ঘায়িত৷[23] মেইন সেণ্ট্রাল রোড এই জেলায় ৫৫ কিমি (৩৪ মা) অবধি দীর্ঘায়িত, যা উত্তর দিকে কেসবদাসপুরম, বেম্বায়ম, বেঞ্জারমূড়ু, কিলিমানূর এবং নীলমেল অঞ্চলের ওপর দিয়ে প্রসারিত৷ কেরালা জনসেবা কার্য দপ্তর এই জেলার ১,৫৫২ কিমি (৯৬৪ মা) রাস্তা রক্ষণাবেক্ষণ করেন৷ এছাড়া স্থানীয় সংগঠনগুলি জেলার ৯,৫০০ কিমি (৫,৯০০ মা) রাস্তা রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে রয়েছেন৷ জেলাটিতে রয়েছে ১১৬ টি উড়ালপুল৷
তিরুবনন্তপুরম জেলাতে রেল পরিষেবা দান করে দক্ষিণ রেলওয়ে৷ তিরুবনন্তপুরম স্টেশন ভারতের অন্যান্য অঞ্চলের সাথে ব্রজগেজ রেলপথের দ্বারা যুক্ত৷ জেলায় রয়েছে ৮২ কিমি (৫১ মা) রেলপথ৷[24] তিরুলনন্তপুরম জেলাতে বর্তমানে রয়েছে মোট ২০ টি রেলস্টেশন, যার মধ্যে তিরুবনন্তপুরম সেণ্ট্রাল রেল স্টেশন অন্যতম৷
তিরুবনন্তপুরম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে অন্তর্দেশীয় এবং একাধিক আন্তর্জাতিক বিমান পরিষেবা চালু রয়েছে। তিরুবনন্তপুরম থেকে সরাসরি কুয়েত সিটি, দুবাই, দামাম, সিঙ্গাপুর, মালে, কলম্বো, শারজাহ, মাস্কাট, মানামা, দোহা, জেদ্দা, এবং আবুধাবির মতো আন্তর্জাতিক শহর গুলোর সাথে আকাশপথে যোগাযোগ রয়েছে। তিরুবনন্তপুরমের সঙ্গে আকাশপথে সরাসরি যুক্ত অন্তর্দেশীয় শহর গুলি হল কলকাতা, চেন্নাই, দিল্লি, মুম্বাই, হায়দ্রাবাদ এবং বেঙ্গালুরু।
তিরুবনন্তপুরম জেলায় রয়েছে দুটি লোকসভা কেন্দ্র, যথা: আত্তিঙ্গল এবং তিরুবনন্তপুরম লোকসভা কেন্দ্র [25]
তিরুবনন্তপুরম জেলাতে রয়েছে চোদ্দটি বিধানসভা কেন্দ্র৷ [26]
ক্রমিক | নির্বাচনকেন্দ্র | সদস্য | দল | জোট |
---|---|---|---|---|
১ | বারকল | ভি জয় | সিপিআই(এম) | এলডিএফ |
২ | আত্তিঙ্গল | বি সত্যন | সিপিআই(এম) | এলডিএফ |
৩ | চিরৈনকীল | ভি শশী | সিপিআই | এলডিএফ |
৪ | নেদুমানগড় | সি দিবাকরণ | সিপিআই | এলডিএফ |
৫ | বামনপুরম | ডি কে মুরলী | সিপিআই(এম) | এলডিএফ |
৬ | আরুবিকরা | কে এস শবরীনাথন | জা কং | ইউডিএফ |
৭ | কাট্টাঘাট | আই বি সতীশ | সিপিআই(এম) | এলডিএফ |
ক্রমিক | নির্বাচনকেন্দ্র | সদস্য | দল | জোট |
---|---|---|---|---|
৮ | কালকূটম | কড়কমপল্লী সুরেন্দ্রন | সিপিআই(এম) | এলডিএফ |
৯ | বট্টিয়ুরকাবু | ভি কে প্রশান্ত | সিপিআই(এম) | এলডিএফ |
১০ | তিরুবনন্তপুরম | ভি এস শিবকুমার | জা কং | ইউডিএফ |
১১ | নেমম | ও রাজগোপাল | বিজেপি | এনডিএ |
১২ | পারশালা | সি কে হরীন্দ্রন | সিপিআই(এম) | এলডিএফ |
১৩ | কোবলম | এম ভিনসেণ্ট | জা কং | ইউডিএফ |
14 | নেইয়াত্তিঙ্করা | কে এ আনসালান | সিপিআই(এম) | এলডিএফ |
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.