শীর্ষ প্রশ্ন
সময়রেখা
চ্যাট
প্রসঙ্গ
বেঙ্গালুরু
ভারতের কর্ণাটক রাজ্যের রাজধানী উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
Remove ads
বেঙ্গালুরু (কন্নড়: ಬೆಂಗಳೂರು, বেঙ্গল়ূরু, ), পূর্বনাম ব্যাঙ্গালোর বা বাঙ্গালোর, ভারতের কর্ণাটক রাজ্যের রাজধানী ও বৃহত্তম শহর। ২০১১ সালের জনগণনা অনুসারে বেঙ্গালুরুর জনসংখ্যা ৮৪ লক্ষ, অর্থাৎ এটি ভারতের তৃতীয় সবচেয়ে জনবহুল এবং দক্ষিণ ভারতের সবচেয়ে জনবহুল শহর। বৃহত্তর বেঙ্গালুরু পৌর এলাকার জনসংখ্যা প্রায় ৮৫ লক্ষ, অর্থাৎ এটি দেশের পঞ্চম সবচেয়ে জনবহুল পৌরপিণ্ড। শহরটি দাক্ষিণাত্য মালভূমিতে সমুদ্রতল থেকে ৯২০ মিটার (৩,০২০ ফুট) উচ্চতায় অবস্থিত। উদ্যান ও শ্যামলিমার জন্য বেঙ্গালুরু "উদ্যাননগরী" নামে পরিচিত।
প্রাপ্ত প্রত্নবস্তু অনুযায়ী খ্রিস্টপূর্ব ৪০০০ অব্দ থেকে বেঙ্গালুরু অঞ্চলে বসতি স্থাপন করা হয়েছিল। শহরের বেগুর অঞ্চলের নাগেশ্বর মন্দির থেকে প্রাপ্ত কন্নড় ভাষায় খোদাই করা ৮৯০ খ্রিস্টাব্দের প্রস্তরখণ্ডে "বেঙ্গল়ূরু" নাম প্রথম উল্লেখ পাওয়া যায়। ৩৫০ খ্রিস্টাব্দ থেকে এটি পশ্চিম গঙ্গ রাজবংশ দ্বারা শাসিত ছিল। একাদশ শতাব্দী থেকে এটি চোল সাম্রাজ্যের অংশ হয়। মধ্যযুগের শেষে এটি হৈসল ও পরে বিজয়নগর সাম্রাজ্যের অংশ ছিল। ১৫৩৭ সালে বিজয়নগরের সামন্ত প্রথম কেম্পে গৌড়া একটি মাটির দুর্গ স্থাপন করেন, যা আধুনিক বেঙ্গালুরু শহরের কেন্দ্র হিসাবে বিবেচিত। বিজয়নগরের পতনের পর কেম্পে গৌড়া স্বাধীনতা ঘোষণা করেছিলেন আর তার উত্তরসূরী শহরের সম্প্রসারণ করেন। ১৬৩৮ সালে বিজাপুরের সেনাবাহিনী তৃতীয় কেম্পে গৌড়াকে পরাজিত করে, যার ফলে বেঙ্গালুরু শাহাজীর একটি জায়গিরে পরিণত হয়। মুঘল সাম্রাজ্য পরে বেঙ্গালুরু দখল করে মহীশূরের মহারাজা চিক্ক দেবরাজকে বিক্রয় করে দেয়। ১৭৫৯ সালে দ্বিতীয় কৃষ্ণরাজ ওয়াডিয়ারের মৃত্যুর পর হায়দার আলী মহীশূরের শাসক হন, যার ফলে বেঙ্গালুরু তার এখতিয়ারে আসে। হায়দার আলীর মৃত্যুর পর টিপু সুলতান মহীশূরের শাসক হন।
ইঙ্গ-মহীশূর যুদ্ধের সময় ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি বেঙ্গালুরু দখল করে, আর তৃতীয় কৃষ্ণরাজ ওয়াডিয়ারকে শহর হস্তান্তর করে দেয়। ১৮০৯ সালে ব্রিটিশরা তাদের রক্ষীসেনাকে বেঙ্গালুরুতে (তখন ব্যাঙ্গালোর) স্থানান্তরিত করেছিল, আর পুরনো শহরে বাইরে ক্যান্টনমেন্ট বা সেনানিবাস স্থাপন করে। ঊনবিংশ শতাব্দীর ব্যাঙ্গালোর কার্যত দুটি পৃথক বসতি নিয়ে গঠিত ছিল: পুরনো "পেটে" ও নতুন ক্যান্টনমেন্ট। ১৯৪৭ সালে ভারতের স্বাধীনতার পর ব্যাঙ্গালোর মহীশূর রাজ্যের রাজধানী হয়েছিল, যা ১৯৭৩ সালে কর্ণাটক রাজ্যে পরিণত হয়েছিল। ১৯৪৯ সালে ব্যাঙ্গালোরের দুটি পৃথক বসতি একটি পৌর প্রশাসনের অধীনে এসেছিল।
বেঙ্গালুরু ভারতের সবচেয়ে দ্রুতহারে বর্ধনশীল মহানগরীর মধ্যে অন্যতম। ২০২৩-এর হিসাব অনুযায়ী[হালনাগাদ] বেঙ্গালুরু মহানগর এলাকার আনুমানিক জিডিপি $৩৫৯.৯ বিলিয়ন। শহরটি তথ্য প্রযুক্তির প্রধান কেন্দ্র, আর এটি বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুতহারে বর্ধনশীল প্রযুক্তি কেন্দ্রের অন্যতম। দেশের তথ্য প্রযুক্তি পরিষেবার বৃহত্তম কেন্দ্র ও রফতানিকারক হিসাবে এটি "ভারতের সিলিকন ভ্যালি" হিসাবে বহুল স্বীকৃত। উৎপাদন খাত শহরের অর্থনীতির অন্যতম অবদানকারী, আর এখানে একাধিক রাষ্ট্রায়ত্ত উৎপাদন কোম্পানির সদর দপ্তর রয়েছে। এছাড়া বেঙ্গালুরুতে একাধিক জাতীয় মর্যাদার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে।
Remove ads
ব্যুৎপত্তি
সারাংশ
প্রসঙ্গ
শহরটির বেগুর অঞ্চল থেকে প্রাপ্ত নবম শতাব্দীর প্রস্তরখণ্ড থেকে "বেঙ্গল়ূরু" নামের প্রাচীনতম উল্লেখ পাওয়া যায়। পশ্চিম গঙ্গ রাজবংশ সময়কার কন্নড় ভাষায় শিলালেখতে ৮৯০ খ্রিস্টাব্দের একটি যুদ্ধে বেঙ্গালুরুর নাম উল্লেখ করা হয়েছে।[১০] তবে ১৫৩৭ সালে প্রথম কেম্পে গৌড়া কোড়িগেহল্লি নিকট একটি গ্রামের নাম থেকে শহরের নাম বেঙ্গালুরু রেখেছিলেন। এছাড়া ষোড়শ শতাব্দীতে বিজয়নগরের সময় এটি "কল্যাণপুর", "কল্যাণপুরী" বা "দেবরায়পট্টন" নামে পরিচিত ছিল।[১১]
একটা সন্দেহজনক কাহিনী অনুযায়ী দ্বাদশ শতাব্দীর হৈসল সম্রাট দ্বিতীয় বীর বল্লাল শিকারের পথে জঙ্গলে হারিয়ে যান। ক্লান্ত ও ক্ষুধার্ত অবস্থায় তিনি একজন দরিদ্র বৃদ্ধার সাথে দেখা করেন আর বৃদ্ধা তাকে খাদ্য হিসাবে সিদ্ধ শিম দেন। কৃতজ্ঞ সম্রাট জায়গাটার নাম "বেণ্ডকাল়ূরু" দেন, যার অর্থ "সিদ্ধ শিমের নগর", আর তা ক্রমে "বেঙ্গল়ূরু" নামে বিবর্তিত হয়েছে।[১১][১২] সূর্যনাথ ইউ. কামাতের মতে শহরের নাম "বেঙ্গ" থেকে এসেছে, যা পীতশাল গাছের কন্নড় নাম এবং ঐ অঞ্চলে প্রচুর পীতশাল গাছ রয়েছে।[১৩] অন্যান্য তত্ত্ব অনুযায়ী কেম্পে গৌড়া নির্মিত বেঙ্কটেশ্বর মন্দিরের উপস্থিতির জন্য শহরটি "ৱেঙ্কটূরু" নামে পরিচিত ছিল, কিংবা সেখানে কোয়ার্জ পাথরের প্রাচুর্যের জন্য এটি "বেনচকল্লূরু" নামে পরিচিত ছিল।[১১]
যাইহোক, "বেঙ্গল়ূরু" নামটা ব্রিটিশ আমলে ইংরেজি ভাষায় বিকৃত হয়ে "Bangalore" হিসাবে গৃহীত হয়। সেটা আবার বাংলায় "ব্যাঙ্গালোর", "বাঙ্গালোর", "বঙ্গলুর" ইত্যাদি বানানে গৃহীত হয়। ভারতের স্বাধীনতার পর ২০০৫ সালের ১১ ডিসেম্বরে ইউ. আর. অনন্তমূর্তি শহরের নাম পুনরায় "বেঙ্গালুরু" রাখার প্রস্তাব করেন, আর কর্ণাটক সরকার এটা গ্রহণ করে।[১৪] ২০০৬ সালে বৃহৎ বেঙ্গালুরু মহানগর পালিকে নাম পরিবর্তনের প্রস্তাব পাশ করে। ২০১৪ সালের ১ নভেম্বর ভারত সরকার নাম পরিবর্তনের প্রস্তাব অনুমোদন করে আর রাজ্য সরকার সরকারিভাবে শহরের নাম "বেঙ্গালুরু" রাখে।[১৫][১৬][১৭]
Remove ads
ইতিহাস
সারাংশ
প্রসঙ্গ
প্রাচীনকাল ও মধ্যযুগ
বেঙ্গালুরুর উপকণ্ঠ থেকে প্রাপ্ত প্রস্তর যুগীয় প্রত্নবস্তু থেকে জানা যায় যে খ্রিস্টপূর্ব ৪০০০ অব্দ থেকে বেঙ্গালুরু অঞ্চলে মানব বসতি রয়েছে।[১৮][১৯] শহরের কোরমঙ্গল ও চিক্কজাল এলাকা থেকে খ্রিস্টপূর্ব ৮০০ অব্দের লৌহ যুগীয় সরঞ্জাম ও সমাধি স্তূপ পাওয়া যায়। এইচএএল ও যশবন্তপুর এলাকা থেকে অগাস্টাস, টাইবেরিয়াস, ক্লডিয়াস ও ক্যালিগুলার মতো রোমান সম্রাটদের মুদ্রা পাওয়া যায়, যা খ্রিস্টীয় প্রথম শতাব্দীতে ভারতের সঙ্গে রোম ও অন্যান্য সভ্যতার বাণিজ্যে এই অঞ্চলের ভূমিকাকে চিহ্নিত করে।[১১]
বর্তমান বেঙ্গালুরু পরপর একাধিক দক্ষিণ ভারতীয় রাজত্বের অংশ ছিল। খ্রিস্টীয় চতুর্থ থেকে দশম শতাব্দী পর্যন্ত পশ্চিম গঙ্গ রাজবংশ এই অঞ্চলে শাসন করেছিল, যা ঐ অঞ্চলে কার্যকর রাজত্ব স্থাপনকারী প্রথম রাজবংশ।[২০] এডগার থারস্টনের মতে খ্রিস্টাব্দের শুরু থেকে খ্রিস্টীয় একাদশ শতাব্দীর চোল আক্রমণ পর্যন্ত ২৮ জন রাজা পশ্চিম গঙ্গ রাজ্য শাসন করেছিল। ৩৫০ থেকে ৫৫০ সাল পর্যন্ত পশ্চিম গঙ্গ রাজবংশ সার্বভৌমভাবে শাসন করেছিল। পরে সে দশম শতাব্দী পর্যন্ত চালুক্য ও রাষ্ট্রকূটের সামন্ত হিসাবে শাসন করেছিল।[১৩] ৮৬০ সালে পশ্চিম গঙ্গ রাজা প্রথম এরেগঙ্গ নীতিমার্গের আমলে বেগুর অঞ্চলে নাগেশ্বর মন্দির স্থাপন করা হয়।[২১][২২] ১০০৪ সালে চোল সম্রাট প্রথম রাজরাজের আমলে যুবরাজ প্রথম রাজেন্দ্রের নেতৃত্বে চোল বাহিনী পশ্চিম গঙ্গ বাহিনীকে পরাজিত করে, আর ঐ অঞ্চলের রাজত্ব চোলদের হাতে আসে।[২১][২৩] এই সময়কালে বর্তমান বেঙ্গালুরুতে দক্ষিণের তামিলভাষী অঞ্চল ও অন্যান্য কন্নড়ভাষী অঞ্চল থেকে যোদ্ধা, প্রশাসক, বণিক, কারিগর, পশুপালক, কৃষক, ধর্মীয় ব্যক্তি ইত্যাদি গোষ্ঠীর আবির্ভাব ঘটে।[২০] চোল রাজবংশ এই অঞ্চলে একাধিক মন্দির তৈরি করেছে, যেমন চোক্কনাথস্বামী মন্দির, মুক্তিনাথেশ্বর মন্দির, চোলেশ্বর মন্দির ও সোমেশ্বর মন্দির।[২১]
১১১৭ সালে দক্ষিণ কর্ণাটকের তলক্কড়ের যুদ্ধে হৈসল সম্রাট বিষ্ণুবর্ধন চোল বাহিনীকে পরাজিত করেন, আর ঐ অঞ্চলের রাজত্ব হৈসলদের হাতে আসে।[২১][২৪] ১৩৪৩ সালে হৈসল সম্রাট তৃতীয় বীর বল্লালের মৃত্যুর পর অঞ্চলটি বিজয়নগর সাম্রাজ্যের রাজত্বের অধীনে আসে। সেখানে পরপর চারটি রাজবংশের শাসন ছিল: সঙ্গম (১৩৩৬-১৪৮৫), সলুব (১৪৮৫-১৪৯১), তুলুব (১৪৯১-১৫৬৫) ও অরবিড়ু (১৫৬৫-১৬৪৬)।[২৫] ষোড়শ শতাব্দীর শুরুর দিকে অচ্যুত দেবরায় হেসরঘট্টের নিকট অর্কবতী নদী বরাবর একটা বাঁধ নির্মাণ করেন, আর এর জলাধার দিয়ে অঞ্চলে জল সরবরাহ করা হতো।[২৬]
প্রতিষ্ঠা ও আদি আধুনিক যুগ

১৫৩৭ সালে বিজয়নগর সম্রাট অচ্যুত দেবরায়ের আমলে প্রথম কেম্পে গৌড়া নামক একজন স্থানীয় সামন্ত আধুনিক বেঙ্গালুরুর নগরকেন্দ্র স্থাপন করেন। তিনি গঙ্গরাজের বিরুদ্ধে অভিযান করেন, আর তাকে পরাজিত করে কাঞ্চীপুরমে নির্বাসিত করে যুদ্ধক্ষেত্রে একটি মাটির দুর্গ স্থাপন করেন, যা আধুনিক বেঙ্গালুরুর নগরকেন্দ্র হয়ে ওঠে। কেম্পে গৌড়া নবগঠিত শহরকে "গণ্ডুভূমি" (অর্থাৎ "বীরের ভূমি") বলে অভিহিত করেন।[২৮] দুর্গের মধ্যে শহরকে একাধিক উপবিভাগে ভাগ করা হয়েছিল, আর এই উপবিভাগ "পেটে" নামে পরিচিত।[২৯] শহরে দুটি প্রধান রাস্তা ছিল: চিক্কপেটে ও ডোড্ডপেটে, যা শহরের মাঝখানে ডোড্ডপেটে চত্বরে মিলিত হয়।[৩০] কেম্পে গৌড়া জল সংরক্ষণের জন্য একাধিক পুকুর তৈরি করেছেন।[৩১] বিজয়নগর সাহিত্যে শহরটি "দেবরায়নগর", "কল্যাণপুর", "কল্যাণপুরী" ইত্যাদি নামে পরিচিত ছিল।[৩২]
১৫৬৫ সালে তালিকোটা যুদ্ধে বিজপয়নগরের পতনের পর কেম্পে গৌড়া স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। তার উত্তরসূরী দ্বিতীয় কেম্পে গৌড়া শহরের চতুঃসীমা নির্দেশ করার জন্য চারটি টাওয়ার নির্মাণ করেন।[৩৩] ১৬৩৮ সালে রানাদুল্লা খান ও শাহাজী ভোঁসলের নেতৃত্বে বিজাপুরের আদিল শাহী সেনাবাহিনী দ্বিতীয় কেম্পে গৌড়াকে পরাজিত করে, আর অঞ্চলটি শাহাজীর একটি জায়গিরে পরিণত হয়।[৩১] ১৬৩৯ সালে শাহাজী শহর পুনর্নির্মাণের আদেশ দেন ও বড় বড় দুর্গ নির্মাণ করেন। এছাড়া অঞ্চলে জলের ঘাটতি দূর করার জন্য নতুন জলাধার নির্মাণ করেন।[৩১][৩২] ১৬৮৭ সালে মুঘল সম্রাট আওরঙ্গজেবের আদেশে সেনাপতি কাশিম খান শাহাহীর পুত্র প্রথম একোজীকে পরাজিত করে বেঙ্গালুরুকে মহীশূর রাজ্যের রাজা চিক্ক দেবরাজকে (শাসনকাল ১৬৭৩-১৭০৪) ইজারা দেন।[৩১] ১৭৫৯ সালে দ্বিতীয় কৃষ্ণরাজ ওয়াডিয়ারের মৃত্যুর পর মহীশূর সেনাবাহিনীর সর্বাধিনায়ক হায়দার আলী নিজেকে মহীশূর রাজ্যের শাসক হিসাবে ঘোষণা করেন। ১৭৬০ সালে তিনি বেঙ্গালুরুতে দিল্লি ও মহীশূর তোরণ নির্মাণ করেন।[৩৪] হায়দারের মৃত্যু পর রাজ্যটি তার পুত্র টিপু সুলতানের হাতে চলে যায়, আর ১৭৬০ সালে বেঙ্গালুরুতে লালবাগ উদ্যান স্থাপিত হয়।[৩৫] সেই সময় শহরটি কৌশলগত গুরুত্বসম্পন্ন একটি বাণিজ্যিক ও সামরিক কেন্দ্রে পরিণত হয়েছিল।[৩২]
১৭৯১ সালের ২১ মার্চ তৃতীয় ইঙ্গ-মহীশূর যুদ্ধের সময় কর্নওয়ালিসের নেতৃত্বে ব্রিটিশ বাহিনী বেঙ্গালুরু দুর্গ দখল করেছিল, যা টিপু সুলতানের বিরুদ্ধে ব্রিটিশ প্রতিরোধের কেন্দ্র হিয়ে উঠেছিল।[৩৬] ১৭৯৯ সালে চতুর্থ ইঙ্গ-মহীশূর যুদ্ধে টিপু সুলতানের মৃত্যুর পর বেঙ্গালুরু (ইংরেজি বিকৃতিতে "ব্যাঙ্গালোর") মহীশূরের মহারাজার অধীনে এসেছিল। ১৭৯৯ সালে মহীশূর শহরে মহীশূর রাজ্যের সরকারি বাসভবন স্থাপিত হয়, যা ১৮০৪ সালে বেঙ্গালুরুতে স্থানান্তরিত হয়।[৩৭] ১৮৪৩ সালে এর অবসান ঘটানো হলেও ১৮৮১ সালে এটি পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়, আর ১৯৪৭ সালে ভারতের স্বাধীনতা পর্যন্ত এটি সরকারি বাসভবন হিসাবে কাজ করত।[৩৭][৩৮] ব্রিটিশরা ব্যাঙ্গালোরকে তাদের রক্ষীসেনা রাখার উপযুক্ত স্থান বলে বিবেচনা করেছিল, আর ১৮০৯ সালে শ্রীরঙ্গপত্তন থেকে ব্রিটিশ রক্ষীসেনাকে হলসুরুতে (ইংরেজি বিকৃতিতে "আলসুর") স্থানান্তর করেছিল। সেখানকার একাধিক গ্রামকে অধিকৃত করে একটা আস্ত শহর গড়ে তোলা হয়েছিল, যা ব্যাঙ্গালোর ক্যান্টনমেন্ট নামে পরিচিত হয়। এই নতুন শহরের নিজস্ব প্রশাসনিক সংস্থা ছিল, যদিও এটা কার্যত মহীশূর রাজ্যের ব্রিটিশ ছিটমহল ছিল।[৩৯] ১৮৫৩ সালে ব্যাঙ্গালোর ও অন্যান্য শহরের মধ্যে টেলিগ্রাফ সংযোগ আর ১৮৬৪ সালে ব্যাঙ্গালোর ও মাদ্রাজের মধ্যে রেল সংযোগ স্থাপন করা হয়েছিল, যা ব্যাঙ্গালোরের অর্থনৈতিক বৃদ্ধিতে অবদান রেখেছিল।[৪০]
পরবর্তী আধুনিক যুগ ও সাম্প্রতিক ইতিহাস
ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষে ব্যাঙ্গালোর কার্যত দুটি শহর নিয়ে গঠিত ছিল: কন্নড় অধ্যুষিত পেটে, আর ইংরেজ ও তামিল অধ্যুষিত ক্যান্টনমেন্ট।[৪১][৪২] ঊনবিংশ শতাব্দী জুড়ে ব্যাঙ্গালোর ক্যান্টনমেন্ট এক স্বতন্ত্র সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক বৈশিষ্ট্য অর্জন করেছিল। সেখানে বৃহৎ সামরিক উপস্থিতি আর মহীশূর রাজ্যের বাইরে থেকে আগত বৈচিত্র্যপূর্ণ বেসামরিক জনগণ ছিল।[৪১] ব্রিটিশরা শহরের পরিকাঠামো উন্নত করেছিল, রাস্তা চওড়া করেছিল আর নতুন বসতি স্থাপন করেছিল। ১৮৬২ সালে শহরকে ৮টা ওয়ার্ডে ভাগ করা হয়েছিল। ১৮৯২ সালে চামরাজপেটেতে প্রথম খাঁটি আবাসিক এলাকা প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। ১৮৯৫ সালে তরগুপেটেতে নতুন পাইকারি বাজার প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল।[৪৩] ১৯৮৯ সালে ব্যাঙ্গালোরে বিউবনিক প্লেগের মড়ক লাগে, যার ফলে প্রায় ৩,৫০০ জনের প্রাণহানি হয়। এই মড়কের ফলে সৃষ্ট সংকটের ফলে শহরে অনাময় ব্যবস্থা উন্নয়নের উপর জোর দেওয়া হয়েছিল, আর মহামারি-বিরোধী কার্যকলাপে সমন্বয় সাধনের জন্য নতুন যোগাযোগ তার স্থাপন করা হয়েছিল। উপযুক্ত অনাময় ব্যবস্থা-সহ নতুন ঘর নির্মাণের বিধি কার্যকর হয়েছিল, একজন স্বাস্থ্য আধিকারিক মনোনীত করা হয়েছিল আর সুসমন্বয়ের জন্য শহরকে ৪টা ওয়ার্ডে ভাগ করা হয়েছিল।[৪৪][৪৫]

১৯০৬ সালে ব্যাঙ্গালোরে বিদ্যুৎ ব্যবস্থা চালু হয়েছিল, আর এটা ভারতের সর্বপ্রথম শহরের মধ্যে অন্যতম যার বিদ্যুৎ ব্যবস্থা রয়েছে।[৪৬] ১৯১২ সালে ব্রিটিশ ভারতীয় সেনাবাহিনীর আধিকারিক ক্যাপ্টেন ম্যাকক্লিনটক ব্যাঙ্গালোরে ব্যাঙ্গালোর টর্পেডো বলে একপ্রকার আক্রমণাত্মক বিস্ফোরক যুদ্ধাস্ত্র উদ্ভাবন করেন, যা প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে বহুল ব্যবহৃত হয়েছিল।[৪৭] ১৯২৭ সালে চতুর্থ কৃষ্ণরাজা ওয়াডিয়ারের শাসনের ২৫তম বার্ষিকী উপলক্ষ্য থেকে ব্যাঙ্গালোর "ভারতের উদ্যান নগরী" বলে পরিচিত হয়েছে। শহরের মানোন্নয়নের জন্য উদ্যান, লোক ভবন ও হাসপাতাল নির্মাণের মতো প্রকল্প চালু করা হয়েছিল।[৪৮]
ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে ব্যাঙ্গালোর গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছিল। ১৯২৭ ও ১৯৩৪ সালে মহাত্মা গান্ধী ব্যাঙ্গালোর ভ্রমণ করেন আর সেখানকার জনসভায় বক্তৃতা দেন।[১৮] ১৯২৬ সালে প্রাপ্য় বোনাসের দাবিতে বিনি মিলসের বস্ত্র শ্রমিকরা একটা ধর্মঘট ডাকে। এর ফলে পুলিশ লাঠিচার্জ ও গুলিবর্ষণ করে, আর তাতে চারজন নিহত ও কয়েকজন আহত হয়।[৪৯] ১৯২৮ সালের জুলাইয়ে ব্যাঙ্গালোরের সুলতানপেটে এলাকার একটি বিদ্যালয় চত্বর থেকে একটি গণেশ মূর্তি অপসারণের ফলে সেখানে সাম্প্রদায়িক কলহ সৃষ্টি হয়েছিল।[৫০] ১৯৪০ সালে ব্যাঙ্গালোর ও বোম্বাইয়ের মধ্যে প্রথম উড্ডয়ন সম্পন্ন হয়েছিল, যার ফলে ব্যাঙ্গালোর ভারতের শহরের মানচিত্রে ঠাঁই পেয়েছে।[৫১]
১৯৪৭ সালে ভারতের স্বাধীনতার পর ব্যাঙ্গালোর মহীশূর রাজ্যের অংশ হিসাবে রয়ে যায়, তবে মহীশূরের মহারাজা সেখানকার রাজপ্রমুখে পরিণত হয়।[৫২] ১৯৪৫ সালে সিটি ইমপ্রুভমেন্ট ট্রাস্ট এবং ১৯৪৯ সালে ব্যাঙ্গালোর নগর ও ব্যাঙ্গালোর ক্যান্টনমেন্ট একত্রিত হয়ে ব্যাঙ্গালোর পৌর নিগম গঠন করা হয়েছিল।[৫৩] এই দুই সংস্থার কার্যকলাপের মধ্যে সমন্বয় সাধনের জন্য ১৯৭৬ সালে কর্ণাটক সরকার ব্যাঙ্গালোর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডিএ) গঠন করেছিল।[৫৪] সেখানকার জনখাতে কর্মসংস্থান ও শিক্ষার সুযোগে রাজ্যের অন্যান্য প্রান্ত থেকে কন্নড় জনগণ ব্যাঙ্গালোরে আসতে লাগল। উত্তর কর্ণাটক অঞ্চল থেকে জনসমাগমের ফলে ১৯৪০-এর দশক ও ১৯৭০-এর দশকে ব্যাঙ্গালোর দ্রুতহারে বৃদ্ধিলাভ করেছিল। ১৯৬১ সালে ব্যাঙ্গালোর ভারতের ষষ্ঠ বৃহত্তম শহর ছিল,[৩২] আর তখন শহরের জনসংখ্যা ছিল ১২,০৬,৯৬১।[৫৫] পরবর্তী দশকে বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি কোম্পানির প্রতিষ্ঠার ফলে ব্যাঙ্গালোরের উৎপাদন খাত ক্রমশ বৃদ্ধিলাভ করছিল।[৫৬]
১৯৮০-এর দশকে ব্যাঙ্গালোরের নগরায়ন তৎকালীন নগরসীমাকে অতিক্রম করেছিল, যার ফলে সমগ্র মহানগর এলাকার উন্নয়নে সমন্বয় সাধনের জন্য ১৯৮৬ সালে ব্যাঙ্গালোর মহানগর এলাকা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ গঠন করা হয়েছিল।[৫৪] ১৯৮১ সালের ৮ ফেব্রুয়ারিতে শহরের ভেনাস সার্কাসে অগ্নিকাণ্ডের ফলে ৯২ জনের বেশি নিহত হয়েছিল, আর এর বেশিরভাগই শিশু।[৫৭] ১৯৮০-এর দশক ও ১৯৯০-এর দশকে ব্যাঙ্গালোরের ভূসম্পত্তির বাজার বৃদ্ধিলাভ করছিল। তখন দেশের অন্যপ্রান্ত থেকে মূলধন বিনিয়োগকারীকে ব্যাঙ্গালোরের বড় বড় জমি ও ঔপনিবেশিক বাংলো কিনে সেখানে বহুতল ফ্ল্যাট ভবন তৈরি করেছিল।[৫৮] ১৯৮০-এর দশকের শেষ থেকে একাধিক তথ্য প্রযুক্তি কোম্পানি শহরে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, আর বিংশ শতাব্দীর শেষ থেকে ব্যাঙ্গালোর "ভারতের সিলিকন ভ্যালি" বলে পরিচিতি লাভ করে।[৩২] কর্মসূত্রে দেশের অন্যপ্রান্ত থেকে ব্যাঙ্গালোরে আগমনের ফলে সেখানে জনবিস্ফোরণ ঘটে, যার ফলে ২০১১ সালে ব্যাঙ্গালোর ভারতের তৃতীয় সবচেয়ে জনবহুল শহরে পরিণত হয়।[৫৯][৬০] একবিংশ শতাব্দীতে ২০০৮, ২০১০ ও ২০১৩ সালে বেঙ্গালুরুতে একাধিক সন্ত্রাসী হামলা ঘটেছে।[৬১][৬২][৬৩]
Remove ads
ভূগোল
বেঙ্গালুরু দক্ষিণ ভারতের কর্ণাটক রাজ্যের দক্ষিণ-পূর্বে মহীশূর মালভূমির কেন্দ্রে অবস্থিত, যা বৃহত্তর দাক্ষিণাত্য মালভূমির অংশ। এর গড় উচ্চতা ৯০০ মিটার (৩,০০০ ফুট)।[৬৪][৬৫]:৮ শহরের আয়তন ৭৪১ বর্গকিলোমিটার (২৮৬ বর্গমাইল)।[৬৬]
৭,০০৫ বর্গকিলোমিটার (২,৭০৫ বর্গমাইল) আয়তনের বৃহত্তর বেঙ্গালুরু অঞ্চল তিনটি জেলা জুড়ে বিস্তৃত: বেঙ্গালুরু নগর, বেঙ্গালুরু গ্রামীণ ও রামনগর জেলা। ১৯৮৫ সালে প্রতিষ্ঠিত ব্যাঙ্গালোর মহানগর এলাকা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ সমগ্র মহানগর এলাকার পরিকল্পনার জন্য দায়বদ্ধ।[৬৭][৬৮] এর ভূমিরূপ সাধারণত সমতল। এর সর্বোচ্চ বিন্দু ডোড্ডবেট্টহল্লি (৯৬২ মিটার (৩,১৫৬ ফুট)), যা শহরের পশ্চিমদিকে অবস্থিত। শহরের দক্ষিণের ভূখণ্ড বন্ধুর। সেখানে গ্রানাইট ও নিসের পাহাড় ও শিলা রয়েছে।[৬৪]
জনপরিসংখ্যান
সারাংশ
প্রসঙ্গ
২০১১ সালের জনগণনা অনুযায়ী বেঙ্গালুরুর জনসংখ্যা ৮৪,৪৩,৬৭৫। অর্থাৎ এটি ভারতের তৃতীয় সবচেয়ে জনবহুল ও দক্ষিণ ভারতের বৃহত্তম শহর।[৫৯] বেঙ্গালুরু পৌরপিণ্ডের জনসংখ্যা ৮৪,৯৯,৩৯৯। অর্থাৎ এটি ভারতের পঞ্চম সবচেয়ে জনবহুল পৌরপিণ্ড।[৫][৭০] ২০১৬ সালের অনুমান অনুযায়ী বেঙ্গালুরু পৌরপিণ্ডের জনসংখ্যা ১ কোটির বেশি।[৭১] বিগত দুই দশক ধরে ভারতের অন্যপ্রান্ত থেকে আগমনের জন্য বেঙ্গালুরু ভারতের সবচেয়ে দ্রুতহারে বর্ধনশীল শহরের মধ্যে অন্যতম।[৫৯][৭২] জনসংখ্যার প্রায় ১৩.২ শতাংশ তফসিলি জাতি ও তফসিলি জনজাতির অন্তর্গত।[৭৩]
বেঙ্গালুরুতে প্রায় ৫৯৭টি বস্তি রয়েছে, যা জনসংখ্যার ১৬ শতাংশ।[৭৪][৭৫] শহরের জিনি সহগ ০.৬৪, যা গুরুতর অর্থনৈতিক বৈষম্যকে ইঙ্গিত দিচ্ছে।[৭৩][৭৬] বিভিন্ন গবেষণায় শহরের বিভিন্ন প্রান্তের অবকাঠামো উন্নয়নে বৈষম্য আর গণহারে স্থানচ্যুতি, বস্তির দ্রুতবিস্তার এবং দরিদ্র ও শ্রমিক শ্রেণির পাড়ায় জলের ঘাটতি ও পয়ঃনিষ্কাশনের সমস্যার জন্য জনস্বাস্থ্যে সংকটের ইঙ্গিত পাওয়া যায়।[৭৭] আবাসন ও নগর বিষয়ক মন্ত্রক দ্বারা প্রকাশিত "জীবনযাপনে স্বাচ্ছন্দ্যের সূচক ২০২০"-এ বেঙ্গালুরু ১০ লাখের অধিক জনসংখ্যাবিশিষ্ট সবচেয়ে বসবাসযোগ্য শহর।[৭৮]
Remove ads
প্রশাসন ও রাজনীতি
সারাংশ
প্রসঙ্গ
প্রশাসন

১৮৬২ সালের ২৭ মার্চ ব্যাঙ্গালোর মিউনিসিপ্যাল বোর্ড (পৌর পর্ষদ) গঠন করা হয়েছিল, আর ক্যান্টনমেন্টের জন্য পৃথক পর্ষদ গঠন করা হয়। ১৮৮১ সালে এরা যথাক্রমে ব্যাঙ্গালোর সিটি মিউনিসিপ্যালিটি ও ব্যাঙ্গালোর সিভিল অ্যান্ড মিলিটারি মিউনিসিপ্যালিটিতে পরিণত হয়। ১৯৪৯ সালে উভয় পৌরসভাকে ৭০ জন সদস্যের একক পৌর নিগমে একত্রিত করা হয়েছিল। ২০০৭ সালে ব্যাঙ্গালোর মহানগর পালিকেের সাথে সাতটি পার্শ্ববর্তী নগর পৌরসভা, একটি শহর পৌরসভা ও ১১১টি গ্রাম পঞ্চায়েত একত্রিত হয়ে বৃহৎ বেঙ্গালুরু মহানগর পালিকে (বিবিএমপি) গঠিত হয়।[৭৯] বিবিএমপি-র আয়তন ৭৪১ বর্গকিলোমিটার (২৮৬ বর্গমাইল), আর এটি ১০টি জোন ও ২২৩টি ওয়ার্ডে বিভক্ত ছিল।[২][৮০] মহানাগরিক (মেয়র) বিবিএমপি-র প্রধান, যা পারিষদদের দ্বারা নির্বাচিত। পারিষদরা আবার জনগণের ভোট দ্বারা নির্বাচিত।[৭৯][৮১] পৌর কমিশনার দৈনন্দিন প্রশাসনের জন্য দায়বদ্ধ।[৮২] ২০২৫ সালে বিবিএমপি-র জায়গায় বৃহত্তর বেঙ্গালুরু কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠিত হয়, যার আয়তন ১,৪০০ বর্গকিলোমিটার (৫৪০ বর্গমাইল)।[৮৩]
১৯৭৬ সালে ব্যাঙ্গালোর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডিএ) প্রতিষ্ঠিত হয়, আর এটা শহরের পরিকল্পনা ও উন্নয়নের জন্য দায়বদ্ধ শীর্ষ সংস্থা।[৮৪] ১৯৮৫ সালে প্রতিষ্ঠিত ব্যাঙ্গালোর মহানগর এলাকা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিএমআরডিএ) সমগ্র মহানগর এলাকার পরিকল্পনার জন্য দায়বদ্ধ।[৬৭]
কর্ণাটকের রাজধানী হিসাবে বেঙ্গালুরুতে বিধান সৌধ, বিকাশ সৌধ, রাজভবন, উচ্চ আদালত ইত্যাদি রাজ্য সরকারি ভবন অবস্থিত। কর্ণাটকের রাজ্য আইনসভা ও নির্বাহী সদর বিধান সৌধ,[৮৫] রাজ্য মন্ত্রকসমূহ বিকাশ সৌধ[৮৬][৮৭] এবং রাজ্যপালের ভবন রাজভবনে অবস্থিত।[৮৮]
আইন-শৃঙ্খলা

বেঙ্গালুরুর কর্ণাটক উচ্চ আদালত কর্ণাটক রাজ্যের সর্বোচ্চ বিচারালয়।[৮৯][৯০] বেঙ্গালুরু নগর পুলিশ (বিসিপি) শহরের প্রধান আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, আর এর শীর্ষে একজন পুলিশ কমিশনার থাকে।[৯১] শহরকে আটটি পুলিশ এলাকায় ভাগ করা হয়, আর প্রত্যেক পুলিশ এলাকার শীর্ষে একজন করে উপ-কমিশনার থাকে।[৯২] বিসিপি অপরাধ, গোয়েন্দা ও প্রশাসন বিভাগ নিয়ে গঠিত।[৯৩] এছাড়া পুলিশের পৃথক বিশেষ ও সশস্ত্র ইউনিটও রয়েছে।[৯৪] ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাস-এর হিসাব অনুযায়ী[হালনাগাদ], বেঙ্গালুরু নগর পুলিশ ১১৩টি থানা জুড়ে ১৮,৩০৮ জন কর্মরত বেসামরিক পুলিশ আধিকারিক এবং ৬,৯৯৯ জন সশস্ত্র রিজার্ভ বাহিনী রয়েছে। শহরে লক্ষ ব্যক্তি পিছু ১৯১ জন পুলিশ আধিকারিক রয়েছে, যা জাতিসংঘের মানদণ্ড অনুযায়ী ৬৭৩ জনের চেয়ে নিচে।[৯৫] বেঙ্গালুরু নগর ট্রাফিক পুলিশ (বিসিটিপি) শহরের ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার জন্য দায়বদ্ধ।[৯৬] ট্রাফিক পুলিশ তিনটি জোন জুড়ে ৪৮টি থানায় কাজ করে।[৯৩][৯৭]
২০২১-এর হিসাব অনুযায়ী[হালনাগাদ], বেঙ্গালুরু শহরে অপরাধের হার লক্ষ ব্যক্তি পিছু ২৭.২।[৯৮] ১৯৯৭ সালে প্রতিষ্ঠিত ব্যাঙ্গালোর কেন্দ্রীয় সংশোধনাগার শহরের প্রধান সংশোধনাগার।[৯৯][১০০]
রাজনীতি
বেঙ্গালুরুর বেশিরভাগ অংশ চারটি লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত: ব্যাঙ্গালোর উত্তর, ব্যাঙ্গালোর গ্রামীণ, ব্যাঙ্গালোর দক্ষিণ ও ব্যাঙ্গালোর মধ্য।[১০১] বেঙ্গালুরু শহর কর্ণাটক বিধানসভার ২৮ জন সদস্যদের নির্বাচিত করে।[১০২] দুটি রাজনৈতিক দলকে নিয়ে শহরের রাজনীতি আবর্তিত হয়: ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) ও ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস। দক্ষিণ ভারতের অন্যান্য প্রধান শহরে বিভিন্ন আঞ্চলিক দলের আধিপত্য রয়েছে, কিন্তু বেঙ্গালুরুতে কেবল জনতা দল (ধর্মনিরপেক্ষ) (জেডিএস) আঞ্চলিক দলের কিছু প্রভাব রয়েছে।[১০৩] ২০২৩ সালের বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি শহরের ১৫টি ও কংগ্রেস ১৩টি আসন জেতে।[১০৪] ২০২৪ সালের সাধারণ নির্বাচনে বিজেপি শহরের সমস্ত লোকসভা আসন জেতে।[১০৫] ২০১৫ সালে বৃহৎ বেঙ্গালুরু মহানগর পালিকের (বিবিএমপি) সর্বশেষ নির্বাচন হয়েছিল। তাতে বিজেপি ১০০টি ও কংগ্রেস ৭৬টি আসন জিতেছিল। জেডিএস-এর সহায়তায় কংগ্রেস ২০১৯ সাল পর্যন্ত মহানাগরিক পদ অধিকার করে ছিল। এর পর জেডিএস বিজেপি-র প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন করলে বিজেপি পৌর নিগমের ক্ষমতা দখল করে।[১০৬][১০৭] ২০২০ সালে পৌর নিগমের মেয়াদ সম্পন্ন হয়েছিল, আর ২০২৫ পর্যন্ত কোনো নির্বাচন হয়নি। ততক্ষণ বিবিএমপি সরকার দ্বারা মনোনীত প্রশাসক গৌরব গুপ্ত দ্বারা শাসিত ছিল।[১০৮][১০৯]
Remove ads
সংস্কৃতি
সারাংশ
প্রসঙ্গ
জাতিগোষ্ঠী ও ধর্ম
২০১১ সালের জনগণনা অনুযায়ী হিন্দুধর্ম বেঙ্গালুরুর প্রধান ধর্ম, আর সেখানে হিন্দু ৭৮.৯, মুসলিম ১৩.৯, খ্রিস্টান ৫.৪ ও জৈন ১.০ শতাংশ।[১১০] বেঙ্গালুরুর মুসলিমরা দক্ষিণী, কচ্ছি মেমন, মোপলা ইত্যাদি জনগোষ্ঠীর অন্তর্গত।[১১১] বেঙ্গালুরুর খ্রিস্টানরা ক্যাথলিক ও প্রটেস্ট্যান্ট সম্প্রদায়ের মধ্যে বিভক্ত, আর ক্যাথলিকরা আবার তামিল খ্রিস্টান, ম্যাঙ্গালোরীয় ক্যাথলিক, কন্নড় খ্রিস্টান, সেন্ট টমাস খ্রিস্টান ইত্যাদি সম্প্রদায়ে বিভক্ত।[১১২][১১৩][১১৪]
শহরে স্থানীয় কন্নড় জাতি ছাড়াও তামিল, তেলুগু ও দক্ষিণী জাতির লোকেদের বসবাস রয়েছে।[১১৫][১১৬][১১৭] ষোড়শ শতাব্দীতে কন্নড়ভাষী তামিল জনগণ ব্যবসার জন্য এই অঞ্চলে বসতি স্থাপন করেছিল।[১১৮] মহীশূর রাজত্বের আহ্বানে তেলুগু জাতির জনগণ এই শহরে আসে।[১১৯] বিংশ শতাব্দীর শেষে শিক্ষা ও কর্মের জন্য অন্যান্য রাজ্যের জনগণ ক্রমশ এই শহরে বসতি স্থাপন করে।[১২০] বেঙ্গালুরুর অভিবাসীদের মধ্যে প্রায় ৯০ শতাংশ দক্ষিণ ভারতের রাজ্য থেকে এসেছে। উত্তর ভারতের রাজ্য থেকে আগত অভিবাসী গোষ্ঠীদের মধ্যে উত্তরপ্রদেশী গুজরাতি, পাঞ্জাবি, বাঙালি, মারাঠি, রাজস্থানী ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।[৬০] খোদ কর্ণাটকের অভিবাসী গোষ্ঠীর মধ্যে কোঙ্কণী, কোড়ব ও তুলুব উল্লেখযোগ্য।[১১৫] ২০০৬ সালে বেঙ্গালুরুতে ১০,০০০ জন ইঙ্গ-ভারতীয়দের বসবাস ছিল।[১২১]
ভাষা
কন্নড় ভাষা বেঙ্গালুরু-সহ কর্ণাটকের একমাত্র সরকারি ভাষা।[১২৩] ২০১১ সালের জনগণনা অনুযায়ী কন্নড় ভাষা শহরের ৪২.১ শতাংশ জনগণের মাতৃভাষা। এর পরে আছে তামিল, তেলুগু, উর্দু, হিন্দি, মালয়ালম ও মারাঠি ভাষা। অন্যান্য সংখ্যালঘু ভাষাগোষ্ঠীর মধ্যে কোঙ্কণী, বাংলা, মারোয়াড়ি, তুলু, ওড়িয়া, গুজরাতি, কোড়ব, পাঞ্জাবি, সিন্ধি ও নেপালি উল্লেখযোগ্য।[১২২] বাবুকর্মীদের মধ্যে ইংরেজি ভাষা বহুল প্রচলিত, আর এটা বেঙ্গালুরুর প্রাথমিক ব্যবসায়িক ভাষা।[১২৩][১২৪] একাধিক ভাষাভাষীর শহর হিসাবে বেঙ্গালুরুতে ইংরেজি ও দেশি ভাষার ব্যবহার নিয়ে প্রায়ই বিতর্ক ও সমস্যার সৃষ্টি হয়। ২০২৩ সালে রাজ্য সরকার সমস্ত ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের নামফলকে কন্নড় ভাষার ব্যবহার বাধ্যতামূলক করে, যার ফলে প্রতিবাদ দেখা দেয়।[১২৫][১২৬] এছাড়া শহরে বিভিন্ন ভাষার ব্যবহার নিয়ে একাধিক মামলা ও প্রতিবাদ হয়েছে, আর এ বিষয়ে জনমত বৈচিত্র্য়পূর্ণ।[১২৭][১২৮]
রন্ধনশৈলী
বেঙ্গালুরুতে উত্তর ভারতীয়, দক্ষিণ ভারতীয়, চীনা, পাশ্চাত্য ইত্যাদি শৈলীর খাদ্য প্রচলিত।[১২৯][১৩০] জনপ্রিয় নিরামিষ আহারের মধ্যে মশলা ধোসা, পনির বিরিয়ানি ও পনির বাটার মশলা উল্লেখযোগ্য।[১৩১] শহরে উডুপি রন্ধনশৈলীর রেস্তোরাঁ জনপ্রিয় আর সেখানে প্রায়ই নিরামিষ ও আঞ্চলিক শৈলীর খাদ্য পরিবেশন করা হয়।[১৩২] এছাড়া বেঙ্গালুরুতে একাধিক ভেগান রেস্তোরাঁ রয়েছে, যেখানে কোনো প্রাণিভিত্তিক খাদ্য পরিবেশন করা হয় না। পেটা ইন্ডিয়া বেঙ্গালুরুকে ভারতের সবচেয়ে ভেগান-বান্ধব শহর বলে বিবেচনা করে।[১৩৩][১৩৪]
Remove ads
অর্থনীতি
সারাংশ
প্রসঙ্গ

বেঙ্গালুরু ভারতের সবচেয়ে দ্রুতহারে বর্ধনশীল মহানগরীর মধ্যে অন্যতম।[১৩৫][১৩৬][১৩৭] ২০২৩-এর হিসাব অনুযায়ী[হালনাগাদ] বেঙ্গালুরু মহানগর এলাকার আনুমানিক জিডিপি $৩৫৯.৯ বিলিয়ন,[৭] আর এটি ভারতের সবচেয়ে উৎপাদনশীল মহানগর এলাকার মধ্যে অন্যতম।[১৩৮][১৩৯] শহরটি কর্ণাটক রাজ্য জিডিপি-র প্রায় এক-তৃতীয়াংশ অবদান রাখে। এর শৈল্পিক ভিত্তি পরিষেবা (৩৯.৫%), উৎপাদন (৩৬%) ও কৃষির (২.৩%) মধ্যে বিভক্ত।[১৪০][১৪১] বেঙ্গালুরুতে দেশের চতুর্থ বৃহত্তম ফাস্ট-মুভিং কনজিউমার গুডসের (এফএমসিজি) বাজার রয়েছে।[১৪২] প্রধান প্রধান শিল্পখাতের মধ্যে তথ্য প্রযুক্তি (আইটি), মোটরযান, বায়বান্তরীক্ষ, বস্ত্র, নির্মাণ, জৈবপ্রযুক্তি, ইলেকট্রনিক্স, টেলিযোগাযোগ, কৃষি ও খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ উল্লেখযোগ্য।[১৪৩] শহর ও শহরতলি জুড়ে বিভিন্ন শিল্পতালুক বিস্তৃত।[১৪৪][১৪৫] ২০১৬-এর হিসাব অনুযায়ী[হালনাগাদ], বেঙ্গালুরুতে ৭৫,০০০-এর বেশি শিল্পসংস্থা ছিল, যার মধ্যে ২,০০০-এর বেশি তথ্য প্রযুক্তি কোম্পানি।[১৪১]

বেঙ্গালুরু তথ্য প্রযুক্তির প্রধান কেন্দ্র, আর এটি প্রায়ই বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুতহারে বর্ধনশীল প্রযুক্তি কেন্দ্রের মধ্যে স্থান পায়।[১৪৬][১৪৭] বেঙ্গালুরু দেশের বৃহত্তম তথ্য প্রযুক্তি কেন্দ্র আর এটা "ভারতের সিলিকন ভ্যালি" নামে পরিচিত।[১৪৮][১৪৯][১৫০] ২০২৪ সালে বেঙ্গালুরুর তথ্য প্রযুক্তি রফতানির আনুমানিক মূল্য $৬৪ বিলিয়ন, আর এটা ভারতের মোট তথ্য প্রযুক্তি রফতানির এক-তৃতীয়াংশ অবদান রাখে।[১৫১][১৫২] শহরের তথ্য প্রযুক্তি শিল্প বিভিন্ন বাণিজ্যিক এলাকা ও বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল রয়েছে, যেমন ইলেকট্রনিক সিটি, ইন্টারন্যাশনাল টেক পার্ক, সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক, বাগমানে টেক পার্ক, গ্লোবাল ভিলেজ টেক পার্ক, ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার ইত্যাদি।[১৫৩] তথ্য প্রযুক্তি শিল্পের বৃদ্ধির ফলে শহরে দেশের সমস্ত প্রান্ত থেকে জনসমাগম ঘটেছে, যার ফলে শহরের পরিকাঠামো উন্নয়নের চাহিদা সৃষ্টি হয়েছে এবং শহরটি অন্যান্য সমস্যার সম্মুখীন হয়েছে।[১৪৬][১৫৪] স্থানীয় চাকরি উন্নয়নে প্রতিকূলতা, জমির মূল্য বৃদ্ধি ও ক্ষুদ্রশিল্প বন্ধের জন্য তথ্য প্রযুক্তি শিল্পকে দায়ী করা হয়।[১৫৫] পরিকাঠামো উন্নয়নের জন্য পরবর্তী বিনিয়োগে শহরের বিরোধিতা কিছু নতুন ও বর্ধনশীল ব্যবসায়িক সংস্থাদের অন্যত্র সরে যেতে বাধ্য করেছে।[১৫৬]
এছাড়া বেঙ্গালুরু ভারতের জৈবপ্রযুক্তি শিল্পের প্রধান কেন্দ্র, ২০২১-২২ অর্থবর্ষে যার মূল্য প্রায় $২৫ বিলিয়ন।[১৫৭][১৫৮] শহরে ৪০-এর বেশি জৈবপ্রযুক্তি কোম্পানি রয়েছে, আর এটি "ভারতের জৈবপ্রযুক্তির রাজধানী" বলে পরিচিত।[১৫৯][১৬০]
Remove ads
পরিকাঠামো
সারাংশ
প্রসঙ্গ
জল সরবরাহ

১৯৬৪ সালে প্রতিষ্ঠিত ব্যাঙ্গালোর জল সরবরাহ ও পয়ঃনিষ্কাশন পর্ষদ (বিডব্লিউএসএসবি) বেঙ্গালুরুতে জল সরবরাহ প্রদান করে।[১৬১] বৃষ্টিপাত থেকে শহর প্রতিদিন গড় ৮০ কোটি লিটার জল লাভ করে।[১৬২] ষোড়শ শতাব্দীতে বৃষ্টির জল সংগ্রহের জন্য কেম্পে গৌড়া হ্রদ নির্মাণ করেন।[১৬৩] ২০২১-এর হিসাব অনুযায়ী[হালনাগাদ], বেঙ্গালুরুর দৈনন্দিন জলের চাহিদা ২১০ কোটি লিটার, যার মধ্যে মহানগর পালিকে বা পৌর নিগম ১৪৫ কোটি জল প্রদান করে। আগে বেঙ্গালুরু অর্কবতী নদী থেকে জল সংগ্রহ করলেও ক্রমবর্ধমান চাহিদার ফলে ১৯৬৪ সালে কাবেরী জল সরবরাহ প্রকল্প শুরু হয়েছিল। বর্তমানে কাবেরী নদীর জল সংগ্রহ করে বেঙ্গালুরুর জলের চাহিদার অধিকাংশ মেটানো হয়, আর কাবেরী থেকে সংগৃহীত জলের পরিমাণ ১৯৭৪ সালে দিনে ১৩.৫ কোটি লিটার থেকে ২০১৪ সালে দিনে ১৪৫ কোটি লিটারে উন্নীত হয়েছে।[১৬৪] ২০১৫ সালের একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায় যে বস্তি খালিকরণ প্রকল্পের এক-তৃতীয়াংশে মৌলিক জল পরিষেবার সংযোগ ছিল না। বস্তিবাসীদের ৬০ শতাংশের সম্পূর্ণ জল সরবরাহ ব্যবস্থা ছিল না, বরং তারা নিজেদের মধ্যে ভাগ করে জল সরবরাহ ব্যবস্থা ব্যবহার করত।[১৬৫] বিশেষ করে গ্রীষ্মকালে এবং নিম্ন বৃষ্টিপাতের বছরে বেঙ্গালুরু জল ঘাটতির সম্মুখীন হয়।[১৬৬]
বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও দূষণ
বৃহত্তর বেঙ্গালুরু কর্তৃপক্ষ শহরের বর্জ্য সংগ্রহ ও ব্যবস্থাপনার জন্য দায়বদ্ধ। কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের (সিপিসিবি) পৃষ্ঠপোষকতার অধীনে কর্ণাটক রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ (কেএসপিসিবি) দুষণ নিয়ন্ত্রণ ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনার নির্দেশিকা প্রকাশের দায়িত্বে রয়েছে, আর কেএসপিসিবি-এর সদর সপ্তর বেঙ্গালুরুতে অবস্থিত।[১৬৭][১৬৮] ২০২২ সালের হিসাব অনুযায়ী বেঙ্গালুরু প্রতিদিন প্রায় ৬০০০ টন কঠিন বর্জ্য উৎপাদন করে।[১৬৯] শহরের বর্জ্যকে পৃথক করে ঘনবিন্যস্ত করে শহরের তিনটি আবর্জনা প্রক্রিয়াকরণ কেন্দ্রের মধ্যে যেকোনো একটিতে স্থানান্তর করা হয়।[১৭০] ২০২৪ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী এই তিনটি আবর্জনা প্রক্রিয়াকরণ কেন্দ্র পরিবেশের নিয়মবিধি লঙ্ঘন করছে আর উচ্চ পরিমাণে ভাসমান কণা নিঃসরণ করে, যা স্থানীয় পরিবেশ ক্ষতি করে আর শহরের দূষণের মাত্রা বৃদ্ধি করে।[১৭১] ২০২৪-এর হিসাব অনুযায়ী[হালনাগাদ], মহানগর পালিকে সাতটি আর্দ্র বর্জ্য প্রক্রিয়াকরণ কেন্দ্র, ১৩টি জৈব মিথেন উৎপাদন কেন্দ্র ও একটি আবর্জনাভূমি রয়েছে।[১৭২] এছাড়া মহানগর পালিকে আরও তিনটি আবর্জনাভূমি পরিচালনা করত, কিন্তু স্থানীয়দের অভিযোগ এবং অপরিচ্ছন্ন পরিবেশে রোগবিস্তারের ফলে সেগুলো বন্ধ করে দেওয়া হলো।[১৭৩] ২০২৪ সালে মহানগর পালিকে নতুন আবর্জনাভূমি নির্মাণের জন্য ৪টি নতুন জায়গা শনাক্ত করেছে।[১৭৪] বর্জ্য ব্যবস্থাপনার নির্দেশিকার অংশ হিসাবে কর্ণাটক সরকার শহরের কিছু নির্দিষ্ট কোম্পানিকে চিকিৎসা ও ইলেকট্রনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনার অধিকার দান করে।[১৭৫] তবে ২০২৪ সালের অক্টোবর মাসের প্রতিবেদন থেকে জানা যায় যে এর মধ্যে কিছু কোম্পানি নির্দেশিকা অনুসারে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা করেনি, বরং তারা নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে বর্জ্য পুনর্বিক্রয় করছে।[১৭৬]
অবৈজ্ঞানিক উপায়ে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ছাড়াও যানবাহন ও শিল্পাঞ্চল থেকে নির্গত গ্যাসের জন্য বেঙ্গালুরুতে দূষণের মাত্রা যথেষ্ট,[১৭৭][১৭৮] তবে এলাকাভেদে দূষণের মাত্রায় তারতম্য রয়েছে, আর বিশেষ করে শিল্পাঞ্চল ও উচ্চ ট্রাফিক অঞ্চলে ভাসমান কণার গাঢ়ত্ব অনেক বেশি। শহরের ২০টি স্টেশনের বায়ুর গুণমান সূচকের (একিউআই) যদৃচ্ছ নমুনা সংগ্রহ থেকে উচ্চ ট্রাফিক অঞ্চলে প্রবল থেকে তীব্র বায়ু দূষণের ইঙ্গিত পাওয়া যায়।[১৭৯] ২০২৪ সালে বায়ুর গড় গুণমান গ্রহণযোগ্য মাত্রায় থাকলেও কিছু এলাকায় পিএম ২.৫-এর মাত্রা সিপিসিবি দ্বারা নির্ধারিত ৬০ মাইক্রোগ্রাম/ঘনমিটার মাত্রার সীমাকে ছাড়িয়ে ক্যায়।[১৮০] বেঙ্গালুরুর ভৌত, জৈবিক ও আর্থসামাজিক চরিত্র বিশ্লেষণ থেকে ইঙ্গিত পাওয়া যায় যে শহরের বায়ুর গুণমান ও শব্দ দূষণ নিকৃষ্ট মাত্রার।[১৮১]
যোগাযোগ ব্যবস্থা
১৮০০ সালে বেঙ্গালুরুর প্রথম ডাকঘর প্রতিষ্ঠিত হয়।[১৮২] সরকারি সংস্থা ইন্ডিয়া পোস্ট ডাক পরিষেবা প্রদান করে, আর ২০২৪ সালে এটি বেঙ্গালুরুর চারটি জোন জুড়ে ২৪৭টি ডাকঘর পরিচালনা করে।[১৮৩][১৮৪] ১৮৫৩ সালে দূরপাল্লার যোগাযোগের জন্য টেলিগ্রাফ চালু করা হয়েছিল, আর ১৮৫৬ সালে শহরে ৫৩৮ কিলোমিটার (৩৩৪ মাইল) দীর্ঘ টেলিগ্রাফ তার ছিল।[১৮৫] ১৯২৮ সালে টেলিফোন পরিষেবা চালু করা হয়েছিল।[১৮৬] ১৯৯০-এর দশকের শুরুতে এসটিপিআই কার্যালয়ে তারযুক্ত ইন্টারনেট পরিষেবা প্রদান করে, আর ভিএসএনএল (বিদেশ সঞ্চার নিগম লিমিটেড) শহরের ঘরে ঘরে ডায়াল আপ সংযোগ চালু করে।[১৮৭][১৮৮]
ভারতী এয়ারটেল বেঙ্গালুরুতে দেশের প্রথম ৪জি নেটওয়ার্ক পরিষেবা চালু করেছিল।[১৮৯] ২০২৩-এর হিসাব অনুযায়ী[হালনাগাদ], চারটি জিএসএম নেটওয়ার্ক পরিচালনাকারী মোবাইল ফোন পরিষেবা কোম্পানি ৪জি ও ৫জি পরিষেবা প্রদান করে: ভারতী এয়ারটেল, বিএসএনএল (ভারত সঞ্চার নিগম লিমিটেড), ভোডাফোন আইডিয়া ও রিলায়েন্স জিও। পাঁচটা প্রধান পরিচালক ও বিভিন্ন ক্ষুদ্র স্থানীয় পরিচালক তারযুক্ত ব্রডব্যান্ড পরিষেবা প্রদান করে।[১৯০] ২০১৪ সালের ২৪ জানুয়ারি কর্ণাটক সরকার বেঙ্গালুরুর কয়েকটি নির্দিষ্ট এলাকায় "নাম্মা ওয়াই-ফাই" নামক বিনামূল্যের তারবিহীন নেটওয়ার্ক পরিষেবা চালু করে।[১৯১]
গণমাধ্যম

১৮৪০ সালে ওয়েসলিয়ান খ্রিস্টান মিশন বেঙ্গালুরুতে প্রথম ছাপাখানা প্রতিষ্ঠা করে।[১৯২][১৯৩] ১৮৬০ সালে বেঙ্গালুরুতে ইংরেজি সংবাদপত্র ব্যাঙ্গালোর হেরাল্ড ও কন্নড় সংবাদপত্র মৈসুরু বৃত্তান্ত বোধিনী চালু হয়েছিল।[১৮৫][১৮৬] ১৯২৭ সালে পি. আর. রামায় ব্যাঙ্গালোর প্রেস প্রতিষ্ঠা করেন আর সেখান থেকে কন্নড় সংবাদপত্র তয়ী নাডু ও ইংরেজি সংবাদপত্র ডেইলি নিউজ প্রকাশ করতে শুরু করেন।[১৯৪] বেঙ্গালুরুতে কন্নড়, ইংরেজি, উর্দু, তামিল ইত্যাদি ভাষায় সংবাদপত্র ও সাময়িকী প্রকাশিত হয়।[১৯৫] ২০২২-এর হিসাব অনুযায়ী[হালনাগাদ], শহরে দিনে ১ লক্ষের বেশি কপি বিক্রয় হওয়া দৈনিক সংবাদপত্রের মধ্যে দ্য টাইমস অব ইন্ডিয়া, বিজয় কর্ণাটক, প্রজাবাণী ও বিজয়বাণী উল্লেখযোগ্য।[১৯৬] এছাড়া একাধিক স্থানীয় সংবাদপত্র ও সাময়িকপত্র শহর থেকে প্রকাশনা করে।[১৯৭] এক্সপ্লোসিটির মতো স্থানীয় সংবাদ ওয়েবসাইট স্থানীয় সংবাদ প্রদান করে।[১৯৮]
১৯৫৫ সালের ২ নভেম্বর আকাশবাণী তার বেঙ্গালুরু স্টেশন থেকে এএম সম্প্রচার শুরু করে।[১৯৯] ২০০১ সালে শহরের প্রথম বেসরকারি এফএম বেতার চ্যানেল হিসাবে রেডিও সিটি আত্মপ্রকাশ করেছিল।[২০০] ২০২০-এর হিসাব অনুযায়ী[হালনাগাদ], প্রধান এফএম বেতার স্টেশনের মধ্যে বিগ এফএম, রেডিও মির্চি, রেডিও সিটি ও রেড এফএম উল্লেখযোগ্য।[২০১][২০২]
সরকারি সংস্থা দূরদর্শনের বেঙ্গালুরু কেন্দ্র থেকে পার্থিব ও উপগ্রহ টেলিভিশন চ্যানেল সম্প্রচার করা হয়, যা ১৯৮১ সালের ১ নভেম্বরে স্থাপিত হয়েছিল। ১৯৮৩ সালে দূরদর্শনের বেঙ্গালুরু কার্যালয়ে একটা উৎপাদন কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছিল, যার ফলে ১৯৮৩ সালের ১৯ নভেম্বরে কন্নড় ভাষায় একটি সংবাদ প্রোগ্রাম শুরু করা সম্ভবপর হয়েছিল।[২০৩] টিভি প্রোগ্রাম সম্প্রচারের জন্য ১৯৮৫ সালে ১৪০ মিটার (৪৬০ ফুট) উঁচু টিভি টাওয়ার চালু করা হয়েছিল।[২০৪] ১৯৯০ সালে দূরদর্শন কন্নড় ভাষায় তার উপগ্রহ চ্যানেল "ডিডি চন্দন" চালু করে।[২০৩][২০৫] ১৯৯১ সালের সেপ্টেম্বরে স্টার টিভি শহরে প্রথম চালু হওয়া বেসরকারি উপগ্রহ চ্যানেল হিসাবে আত্মপ্রকাশ করে।[২০৬] ২০০০-এর দশকের শেষে বেঙ্গালুরুতে ডিরেক্ট টু হোম (ডিটিএইচ) পরিষেবা চালু হয়।[২০৭]
Remove ads
পরিবহন
সারাংশ
প্রসঙ্গ
আকাশপথ

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় বালচাঁদ হীরাচাঁদ ভারতে উড়োজাহাজ নির্মাণ ও মেরামত করতে চেয়েছিলেন। এর জন্য মার্কিন ব্যবসায়ী উইলিয়াম পলির সঙ্গে অংশীদারিতে ব্যাঙ্গালোরে একটা বিমানাঙ্গন স্থাপন করা হয়। ১৯৪১ সালে হিন্দুস্তান এরোনটিক্স লিমিটেডের অংশ হিসাবে সেখানে পরিষেবা শুরু করেছিল, যা বর্তমানে এইচএএল বিমানবন্দর নামে পরিচিত।[২০৮][২০৯] ২০০৮ সাল পর্যন্ত এইচএএল বিমানবন্দর শহরের প্রধান বিমানবন্দর ছিল।[২১০][২১১][২১২] ২০০৮ সালের ২৪ মে শহর থেকে ৩১ কিলোমিটার (১৯ মাইল) দূরে দেবনহল্লিতে অবস্থিত কেম্পেগৌড়া আন্তৰ্জাতিক বিমানবন্দর পরিচালনা শুরু করে।[২১৩] যাত্রীসংখ্যার ভিত্তিতে এটা ভারতের তৃতীয় ব্যস্ততম বিমানবন্দর।[২১৪][২১৫] বেঙ্গালুরু মেট্রোপলিটান ট্রান্সপোর্ট কর্পোরেশন (বিএমটিসি) বিমানবন্দর ও শহরের মধ্যে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বাস পরিচালনা করে।[২১৬]
ভারতীয় বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণ কমান্ডের সদর সপ্তর বেঙ্গালুরুতে অবস্থিত।[২১৭] ইয়েলাহাঙ্কায় বিমানবাহিনীর ঘাঁটি রয়েছে,[২১৮] আর সেখানে এরো ইন্ডিয়া নামক দুই বছরব্যাপী এয়ার শো আয়োজন করা হয়।[২১৯][২২০]
রেলপথ

১৮৬৪ সালের ১ আগস্ট ব্যাঙ্গালোর ক্যান্টনমেন্ট ও জোলরপেট্টৈয়ের মধ্যে শহরের প্রথম রেলপথ চালু হয়।[২২১][২২২] একই বছরে মাদ্রাজ-ব্যাঙ্গালোর মেল (বর্তমান বেঙ্গালুরু-চেন্নাই মেল) পরিষেবা চালু করা হয়। ১৮৯২ সালে যশবন্তপুর স্টেশন প্রতিষ্ঠা করা হয়।
বেঙ্গালুরু মাইসোর স্টেট রেলওয়ের অংশ ছিল, যা ১৯৫১ সালে ভারতীয় রেলের দক্ষিণ রেল অঞ্চলের অংশ হয়। ১৯৭১ সালে বেঙ্গালুরু রেল বিভাগ প্রতিষ্ঠা করা হয়।[২২১] ২০০৩ সালে বেঙ্গালুরু দক্ষিণ পশ্চিম রেলের অন্তর্ভুক্ত হয়, আর এই অঞ্চলের সদর হুবলিতে স্থাপিত হয়।[২২৩] ভারতীয় রেল বেঙ্গালুরুর ১৮টি রেলওয়ে স্টেশন পরিচালনা করে, আর এর মধ্যে প্রধান প্রধান রেলওয়ে স্টেশনের মধ্যে বেঙ্গালুরু সিটি, যশবন্তপুর, বেঙ্গালুরু ক্যান্টনমেন্ট, কৃষ্ণরাজাপুরম ও স্যার এম. বিশ্বেশ্বরায় টার্মিনাল উল্লেখযোগ্য।[১৪১][২২৪][২২৫]
২০২৪-এর হিসাব অনুযায়ী[হালনাগাদ], বেঙ্গালুরুতে কোনো শহরতলি রেল ব্যবস্থা নেই। ২০২৬ সালে বেঙ্গালুরু শহরতলি রেলের প্রথম রেলপথ চালু হবে বলে আশা করা হয়।[২২৬] ২০১১ সালে শহরের দ্রুতগামী গণপরিবহন ব্যবস্থা বেঙ্গালুরু মেট্রো বা নাম্মা মেট্রো চালু হয়, যা দক্ষিণ ভারতের প্রথম পরিচালিত মেট্রো ব্যবস্থা।[২২৭][২২৮] ২০২৪-এর হিসাব অনুযায়ী[হালনাগাদ], দুটি সক্রিয় রেলপথ নিয়ে গঠিত বেঙ্গালুরু মেট্রো ব্যবস্থা ৭৬.৯৫ কিলোমিটার (৪৭.৮১ মাইল) দীর্ঘ, আর এটা ভারতের দ্বিতীয়-দীর্ঘতম পরিচালিত মেট্রো ব্যবস্থা।[২২৯][২৩০] সম্প্রসারণের অংশ হিসাবে আরও তিনটে রেলপথ নির্মাণের অধীন।[২৩১][২৩২]
সড়কপথ

২০২৪ সালে বেঙ্গালুরুর সড়কপথের দৈর্ঘ্য প্রায় ১৪,০০০ কিলোমিটার (৮,৭০০ মাইল)।[২৩৩] ১০ কিলোমিটার (৬.২ মাইল) দীর্ঘ চক্রপথ ইনার রিং রোড কোরমঙ্গলকে ইন্দিরানগরের সাথে সংযুক্ত করে।[২৩৪] ১৯৯৬ থেকে ২০০২ সালের মধ্যে ৬০ কিলোমিটার (৩৭ মাইল) দীর্ঘ চক্রপথ আউটার রিং রোড তৈরি করা হয়েছিল।[২৩৫] এমজি রোড কেন্দ্রীয় বাণিজ্যিক এলাকার রাজপথ।[২৩৬][২৩৭] বেঙ্গালুরু স্বর্ণ চতুর্ভুজ মহাসড়ক ব্যবস্থার অংশ, আর এটা চেন্নাই-মুম্বই রেলপথে অবস্থিত।[২৩৮] শহর দিয়ে অতিক্রান্ত জাতীয় সড়কের মধ্যে এনএইচ ৪৪, এনএইচ ৪৮, এনএইচ ২৭৫, এনএইচ ৭৫, এনএইচ ৬৪৮ ও এনএইচ ৯৪৮ উল্লেখযোগ্য।[২৩৯][২৪০] ২০২৩ সালের মার্চ মাসে চালু বেঙ্গালুরু-মহীশূর এক্সপ্রেসওয়ে শহরকে মহীশূরের সাথে যংযুক্ত করে।[২৪১]

১৯৯৭ সালে প্রতিষ্ঠিত বেঙ্গালুরু মেট্রোপলিটান ট্রান্সপোর্ট কর্পোরেশন (বিএমটিসি) অন্তঃনগর বাস পরিষেবা প্রদান করে।[২৪২] ২০২৪-এর হিসাব অনুযায়ী[হালনাগাদ], বিএমটিসি ৬,৩৪০টি বাস ও ৫,৭৬৬টি বাসপথ নিয়ে দিনে ৫৭,৬৬৭টি ভ্রমণ পরিচালনা করে। অন্তঃনগর বাস পরিষেবার জন্য শহরে ৪৮টি বাস স্টেশন ও ৫০টি ডিপো রয়েছে।[২৪৩] ২০০৫ সালে বিএমটিসি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বাস চালু করে। এগুলি প্রধান বাসপথ এবং বিভিন্ন শহর-বিমানবন্দর বাসপথে পরিচালিত হয়।[২৪৪] এছাড়া এটি ১,১০০-এর বেশি বৈদ্যুতিক বাস পরিচালনা করে।[২৪৩] একক ভ্রমণের টিকিট ছাড়াও নিত্যযাত্রীদের জন্য বিএমটিসি বিভিন্ন পাস বিতরণ করে।[২৪৫]
কর্ণাটক সরকারের সংস্থা কর্ণাটক রাষ্ট্রীয় সড়ক পরিবহন সংস্থা (কেএসআরটিসি) আন্তঃনগর বাস পরিচালনা করে। বিভিন্ন শ্রেণির পরিষেবার মাধ্যমে কেএসআরটিসি বেঙ্গালুরুকে কর্ণাটক ও পার্শ্ববর্তী রাজ্যের অন্যান্য প্রধান শহরের সাথে সংযুক্ত করে।[২৪৬] শহরের প্রধান বাস স্টেশনের মধ্যে কেম্পেগৌড়া বাস স্টেশন, শান্তিনগর বাস স্টেশন ও মহীশূর রোড বাস স্টেশন।[২৪৭][২৪৮] শহরের অন্যান্য সড়কযানের মধ্যে মোটরভ্যান, অটোরিকশা, মিটার ট্যাক্সি ও পর্যটক ট্যাক্সি উল্লেখযোগ্য।[২৪৯][২৫০]
১৯০৩ সালে বেঙ্গালুরুতে মোটরযান চালু করা হয়।[২৫১] ২০২২ সালের মার্চ-এর হিসাব অনুযায়ী[হালনাগাদ], দিনে গড় ১,৫৩০টি যানবাহন শহরের আঞ্চলিক পরিবহন কার্যালয়গুলোতে (আরটিও) রেজিস্ট্রিকৃত হয়।[২৫২][২৫৩] ২০২৩-এর হিসাব অনুযায়ী[হালনাগাদ], শহরে প্রায় ১ কোটি যানবাহন রয়েছে, যার মধ্যে প্রায় ৭৫ লক্ষ দুই চাকার যানবাহন রয়েছে।[২৫৪] যানবাহনের দ্রুতহার সংখ্যাবৃদ্ধি এবং এর অপরিকল্পিত প্রকৃতির ফলে যানজট ও পরিকাঠামো সম্পর্কিত একাধিক প্রশাসনিক সমস্যার সৃষ্টি হয়। এর ফলে বিভিন্ন জায়গায় গ্রিডলক দেখা দেয়, যেখানে যান চলাচল স্তব্ধ হয়ে যায়। ট্রাফিক সমস্যা সমাধানের জন্য চালু করা উড়ালসেতু ও একমুখী ট্রাফিক ব্যবস্থা কেবল সীমিত পরিসরে সফল হয়েছে।[২৫৫] যানবাহন থেকে নির্গত ধোঁয়ার ফলে শহরে যথেষ্ট বায়ু দূষণ হয়। ২০১৬ সালের প্রতিবেদনে পাওয়া যায় যে শহরের ডিজেলচালিত যানবাহনের ৩৬ শতাংশের বেশি ধোঁয়া নির্গমনের সাধারণ সীমাকে অতিক্রম করেছে।[১৭৭][২৫৬]
Remove ads
খেলাধুলা
বিভিন্ন রকমের খেলাধুলার পরিকাঠামো শহরে গড়ে উঠেছে। ক্রিকেটের জন্য রয়েছে এম. চিন্নাস্বামী স্টেডিয়াম। তেমনি ফুটবলের জন্য রয়েছে শ্রী কান্তিরাভা স্টেডিয়াম।
বৈদেশিক সম্পর্ক
বেঙ্গালুরুতে ইসরায়েল,[২৫৭] জাপান,[২৫৮] জার্মানি[২৫৯] ও ফ্রান্সের বাণিজ্যিক দূতাবাস;[২৬০] মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভার্চুয়াল বাণিজ্যিক দূতাবাস;[২৬১] এবং আয়ারল্যান্ড,[২৬২] পেরু,[২৬৩] ফিনল্যান্ড,[২৬৪] মালদ্বীপ[২৬৫] ও সুইজারল্যান্ডের[২৬৬] অবৈতনিক দূতাবাস রয়েছে। এছাড়া সেখানে ব্রিটিশ ডেপুটি হাইকমিশন[২৬৭] ও কানাডার বাণিজ্য কার্যালয় রয়েছে।[২৬৮]
নিম্নলিখিত শহরের সঙ্গে বেঙ্গালুরুর ভগিনী শহরের সম্পর্ক রয়েছে:
Remove ads
আরও দেখুন
তথ্যসূত্র
আরও পড়ুন
বহিঃসংযোগ
Wikiwand - on
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Remove ads