Loading AI tools
জৈনধর্মের দুই প্রধান ধারার একটি উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
দিগম্বর জৈন ধর্মের দুটি সম্প্রদায়ের একটি। অন্যটি হলো শ্বেতাম্বর সম্প্রদায়। দিগম্বর সন্ধি বিচ্ছেদ করলে দাঁড়ায় দিক্ + অম্বর। অর্থাৎ 'দিগম্বর' অর্থ হলো দিক যার অম্বর বা বস্ত্র।দিগম্বর সম্প্রদায়ের অনুসারীগণ মোক্ষ প্রাপ্তির জন্য নগ্নতাকে মুখ্য গণ্য করে এবং নারীদের মোক্ষ স্বীকার করে না। তারা শ্বেতাম্বরদের ৪৫ গ্রন্থকেও স্বীকার করে না। তাদের বক্তব্য হচ্ছে যে, জিন ভগবান দ্বারা কথিত আগম গ্রন্থের অধিকাংশ কাল-দোষে ধ্বংস হয়ে গিয়েছে। তীর্থঙ্কর মহাবীরের পর ইন্দ্রভুতি গৌতম , সুধর্ম ও জাম্বুস্বামী পর্যন্ত পরে জৈনসংঘে বিশেষ মতভেদের চিহ্ন দৃষ্টিগোচর হয়নি। পরবর্তীতে জাম্বুস্বামীর পর দিগম্বর ও শ্বেতাম্বর সম্প্রদায়ের আচার্য পরম্পরাগুলো ভিন্ন হয়ে যায়।
দিগম্বরদের মতে, বিষ্ণু, নন্দী, অপরাজিত গোবর্ধন ও ভদ্রবাহু নামক পাঁচজন শ্রুতকেবলী হয়েছেন, অন্যদিকে শ্বেতাম্বর পরম্পরায় প্রভব, শয়্যংভব, যশভদ্র, সম্ভুতবিজয় ও ভদ্র্রবাহু শ্রুতকেবলী হিসাবে বিবেচিত হয়েছেন। ভদ্রবাহু উভয় সংঘে সাধারণ, এ থেকে অনুমান করা যায় ভদ্র্রবাহুর সময় পর্যন্ত জৈন সংঘে দিগম্বর-শ্বেতাম্বর মতপার্থক্য ছিল না। শ্বেতাম্বর সম্প্রদায়ের মতে, মহাবীর নির্বাণ এর ৬০৯ বছর পর (৮৩ খ্রিষ্টাব্দ) স্থবীপুরে শিবভূতি কর্তৃক ভোটিক মত (দিগম্বর) প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। কোংডিন্য ও কোট্টিবীর শিবভূতির দুজন প্রধান শিষ্য ছিলেন।
দিগম্বর মতানুসারে, উজ্জয়িনীতে চন্দ্রগুপ্তের রাজত্বকালে আচার্য ভদ্রবাহুর খরা সম্পর্কিত ভবিষ্যদ্বাণী শোনার পর তার শিষ্য বিশাখাচার্য তার সংঘ নিয়ে পুন্নাট গিয়েছিলেন, কিছু সাধু সিন্ধু অঞ্চলে গিয়েছিলেন। যখন সাধুরা উজ্জয়িনী থেকে ফিরে এসেছিল, সেখানে দুর্ভিক্ষ ছিল। এসময়, সংঘের আচার্য নগ্নতাকে ঢাকার জন্য সাধুদের অর্ধফালক পরতে আদেশ দেন; পরবর্তীতে কিছু সাধু অর্ধফালক ত্যাগ করেনি, এদেরকে শ্বেতাম্বর বলা হয়। মথুরার জৈন শিলালিপি থেকেও প্রমাণিত হয়েছে যে, খ্রিস্টীয় প্রথম শতাব্দীর দিকে উভয় সম্প্রদায় একে অপরের থেকে আলাদা হয়েছিল। গুজরাত ও কাঠিয়াবাড়ে শ্বেতাম্বর এবং দক্ষিণ ভারত, মধ্যপ্রদেশ ও উত্তর প্রদেশে দিগম্বর বেশি দেখা যায়।
দিগম্বর মুনি বিবস্ত্র থাকেন, পড়গাহন করার সময় দাঁড়ানো অবস্থায় বিনাপাত্রে নিজ হাতেই আহার নেন। শুধু পিচ্ছী ও কমণ্ডুলু সাথে রাখেন এবং পায়ে হেঁটে চলাচল করেন।
সব দিগম্বর মুনিদের জন্য ২৮ টি মূলগুণ অনুসরণ করা বাধ্যতামূলক। এগুলো হল: [1]
ব্রত | নাম | অর্থ |
---|---|---|
মহাব্রত - তীর্থঙ্কর ও মহাপুরুষদের পালন করতে হয় এমন পাঁচটি ব্রত | ১. অহিংসা | কোন জীবকে দেহ, মন, বাক্য দ্বারা কোন কষ্ট না দেয়া |
২. সত্য | হিত, মিত, প্রিয় শব্দ বলা | |
৩. আস্তেয় | দেওয়া হয়নি এমন বস্তু গ্রহণ না করা | |
৪. ব্রহ্মচর্য | দেহ, মন, বাক্য থেকে মৈথুন কর্ম পূর্ণরুপে ত্যাগ করা | |
৫. আত্মত্যাগ | পদার্থের প্রতি মমত্বরুপ পরিণমন পূর্ণরুপে ত্যাগ | |
সমিতি - পাঁচটি প্রবৃত্তিগত সতর্কতা [1] | ৬. ইর্যাসমিতি | সতর্কতা পূর্বক চার হাত জমি দেখে চলা |
৭. ভাষাসমিতি | নিন্দা ও দূষিত ভাষা পরিত্যাগ | |
৮. এষণাসমিতি | শ্রাবকের জায়গায় ৪৬ দোষমুক্ত আহার গ্রহণ | |
৯. আদাননিক্ষেপ | ধর্মীয় উপকরণ উঠাতে ও রাখতে সতর্কতা | |
১০. প্রতিষ্ঠাপন | নির্জন স্থানে মল-মুত্র ত্যাগ | |
পঞ্চেন্দ্রিয়নিরোধ | ১১ - ১৫ | পাঁচ ইন্দ্রিয়ের উপর নিয়ন্ত্রণ |
আবশ্যক - ছয়টি প্রয়োজনীয় কর্ম | ১৬. সামায়িক
(সমতা) |
সমতা ধারণ পূর্বক আত্মকেন্দ্রিক হওয়া |
১৭. স্তুতি | 24 তীর্থঙ্করদের প্রশংসা | |
১৮. বন্দনা | ভগবানের প্রতিমা ও আচার্যকে প্রণাম | |
১৯. প্রতিক্রমণ | ভুল সংশোধন | |
২০. প্রত্যাখ্যান | ত্যাগ | |
২১. কায়োতসর্গ | দেহের মায়া ত্যাগ করে স্বরূপে লীন হওয়া | |
নিয়ম - সাতটি নিয়ম | ২২. অস্নান | স্নান না করা |
২৩. অদন্তধাবন | দন্তপংক্তি না মাঁজা | |
২৪. ভূশায়ন | মাটির উপর বিশ্রাম | |
২৫. একভুক্তি | দিনে একবার ভোজন | |
২৬. স্থিতিভোজন | দাঁড়িয়ে উভয় হাত দিয়ে খাদ্য গ্রহণ | |
২৭. কেশলোঁচ | মাথা এবং দাঁড়ির কেশ হাত দিয়ে উপড়ানো | |
২৮. নগ্নতা | দিগম্বর অবস্থায় থাকা | |
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.