নোম চম্স্কি
মার্কিন ভাষাবিজ্ঞানী, দার্শনিক ও রাজনৈতিক সমালোচক / From Wikipedia, the free encyclopedia
নোম চম্স্কি (পূর্ণনাম আভ্রাম নোম চম্স্কি; ইংরেজি: Avram Noam Chomsky); জন্ম ৭ই ডিসেম্বর, ১৯২৮) একজন মার্কিন তাত্ত্বিক ভাষাবিজ্ঞানী, শিক্ষাবিদ, দার্শনিক ও সমাজ সমালোচক। তিনি বর্তমানে ম্যাসাচুসেটস ইন্সটিটিউট অফ টেকনোলজি নামক মার্কিন প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের আজীবন অধ্যাপক (Emeritus professor) এবং একই সাথে ইউনিভার্সিটি অফ অ্যারিজোনা নামক মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশিষ্ট অধ্যাপক হিসেবে কাজ করছেন।
নোম চম্স্কি | |
---|---|
জন্ম | (1928-12-07) ডিসেম্বর ৭, ১৯২৮ (বয়স ৯৫) |
অন্যান্য নাম | আভ্রাম নোম চম্স্কি |
মাতৃশিক্ষায়তন | পেনসিলভ্যানিয়া বিশ্ববিদ্যালয় বিএ ১৯৪৯, এমএ ১৯৫১, পিএইচডি ১৯৫৫ |
যুগ | বিংশ শতাব্দীর দার্শনিক |
চম্স্কি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভেনিয়া অঙ্গরাজ্যের ফিলাডেলফিয়া শহরে এক মধ্যবিত্ত আশকেনাজি ইহুদী অভিবাসী পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন এবং সেখানেই বেড়ে ওঠেন। তিনি ইউনিভার্সিটি অফ পেনসিলভেনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে পড়াশোনা করেছেন। সেখান থেকে তিনি পরবর্তীতে ১৯৫৫ সালে ভাষাবিজ্ঞানে ডক্টরেট সনদ লাভ করেন। তিনি সেখানে মার্কিন ভাষাবিজ্ঞানী জেলিগ হ্যারিসের অধীনে কাজ করেন। স্নাতকোত্তর পর্যায়ে পড়াশোনা করার সময় চম্স্কি ১৯৫১ থেকে ১৯৫৫ সাল পর্যন্ত হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে সহকারী গবেষক(Junior research fellow) হিসেবে কাজ করেন। ১৯৫৫ সালে তিনি ম্যাসাচুসেটস ইন্সটিটিউট অফ টেকনোলজি নামক প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ফরাসি ও জার্মান ভাষার প্রশিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। ১৯৭৬ সালে তিনি সেখানকার ভাষাবিজ্ঞানের ইন্সটিটিউটের অধ্যাপক পদ লাভ করেন।
বিগত অর্ধশতাব্দীরও বেশি সময় ধরে ভাষাবিজ্ঞান শাস্ত্রে চম্স্কির কাজ গভীর প্রভাব বিস্তার করে আসছে। তিনি ১৯৫৭ সালে তার সিন্ট্যাকটিক স্ট্রাকচার্স গ্রন্থে "রূপান্তরমূলক উৎপাদনশীল ব্যাকরণ" নামক তত্ত্বটির অবতারণা করেন, যা অনেকের মতে আধুনিক ভাষাবিজ্ঞানে এক "বিপ্লবের" সূচনা করে। চম্স্কি ভাষাবিজ্ঞানকে মানবমন-সংক্রান্ত বিষয় গবেষণার কেন্দ্রে স্থাপন করেন। চম্স্কির পূর্বে বিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে ভাষাবিজ্ঞানীরা বিভিন্ন ভাষার বহিঃস্থ কাঠামোর মিল-অমিল নিয়ে বেশি গবেষণা করতেন। তিনি ভাষা ও মানবমনের গবেষণাতে এই অভিজ্ঞতাধর্মী ধারার সমালোচনা করেন এবং যুক্তিবাদী দৃষ্টিভঙ্গির প্রতি সমর্থন প্রদান করেন। তার মতে, প্রতিটি মানব শিশু জন্মের সময়েই যেকোন ভাষা আয়ত্বকরণের মূল সৃজনশীল বৈশিষ্টগুলি নিয়ে জন্মগ্রহণ করে। এই সা্র্বজনীন বৈশিষ্টগুলি মানুষের অবচেতন মনে অবস্থান করে।ভাষাবিজ্ঞানীদের কাজ হল, সংজ্ঞা ও যৌক্তিক বিশ্লেষণের মাধ্যমে এই বৈশিষ্টগুলির আসল রূপ উদ্ঘাটন করা। কেবল ভাষাবিজ্ঞান নয়, চম্স্কি সংজ্ঞানাত্মক বিজ্ঞান এবং মন ও ভাষার দর্শন শাস্ত্রেও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। তার এই তাত্ত্বিক অবদানগুলি বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধে "সংজ্ঞানাত্মক বৈজ্ঞানিক বিপ্লবের" সূচনা করে এবং এর ক্রমবিকাশে শক্তিশালী ভূমিকা রাখে।
চম্স্কি রাজনৈতিক ভিন্নমতাবলম্বী হিসেবে মার্কিন অভ্যন্তরীণ রাজনীতি, বৈদেশিক নীতি ও বুদ্ধিজীবী সংস্কৃতির উপর তথাকথিত মার্কিন "অর্থনৈতিক অভিজাতদের" ক্ষতিকর প্রভাব বিশ্লেষণ করেন; যার সুবাদে তিনি বিশ্বব্যাপী অসংখ্য ভক্ত ও অনুরাগী অর্জন করেন। তিনি কিশোর বয়সেই স্থানীয় সংবাদপত্রে রাজনীতির উপর লিখতেন। কিন্তু রাজনীতি নিয়ে বেশি লেখালেখি শুরু করেন ১৯৬০-এর দশক থেকে। সেসময় দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বৈদেশিক নীতি ছিল তার সমালোচনার বিষয়। এরপর মার্কিন পররাষ্ট্রনীতির ব্যাপারে সাধারণ মার্কিন জনগণের ঐকমত তৈরির ক্ষেত্রে বিভিন্ন গণমাধ্যম ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির ভূমিকার তীক্ষ্ণ সমালোচনা করে অনেকগুলি বই লিখেন। চম্স্কি মার্কিন পররাষ্ট্রনীতির ধ্বংসাত্মক ফলাফলগুলি নিয়ে নিয়মিত খোলাখুলি সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, "মার্কিন বুদ্ধিজীবীদের দায়িত্ব হল, মার্কিন সরকারের অনৈতিক নীতিগুলির যৌক্তিক সমালোচনা করা এবং এই নীতিগুলিকে পরাস্ত করার লক্ষ্যে ব্যবহারযোগ্য রাজনৈতিক কৌশল অনুসন্ধান করা। রাজনৈতিকভাবে চম্স্কি ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যভিত্তিক সমাজতন্ত্র ও নৈরাজ্যমূলক শ্রমিকসংঘবাদের অনুসারী।