প্রাণী উপাসনা
From Wikipedia, the free encyclopedia
প্রাণী উপাসনা (অথবা প্রাণীপূজা) বলতে প্রাণী সম্পর্কিত আচার-অনুষ্ঠান বোঝায়, উদাহরণস্বরূপ প্রাণী উপাস্য অথবা প্রাণী বলিদান। যখন একজন দেবতাকে শ্রদ্ধা করা হয় অথবা পূজা করা হয় প্রতিনিধি কোন পশুর মাধ্যমে, একটি প্রাণী অর্চনা গঠিত হয় (টিটার এবং প্রমুখ, ২০০২, পৃ. ৩৫৫)। প্রাণী অর্চনাসমূহকে তাদের বাহ্যিক গঠন বা নিহিতার্থ দ্বারা প্রকারভেদ করা যায়, যা অবশ্যই রূপান্তরের মধ্যে দিয়ে যেতে পারে।
চিরায়ত লেখক ডায়োডোরাস প্রাণীপূজার উৎস ব্যাখ্যা করেন সেই পুরাণ যাতে দেবতারা, আনুমানিকভাবে অসুরদের নিয়ে ভীত হয়ে, প্রাণীদের ছদ্মবেশে লুকিয়ে পড়েন। লোকেরা তখন স্বাভাবিকভাবেই তাদের দেবতারা যেসব প্রাণীর ছদ্মবেশ নিয়েছিলেন সেগুলোর পূজা করতে শুরু করল এবং দেবতারা তাদের আসল রূপে ফেরার পরও তা চালিয়ে যেতে লাগল। (Lubbock, 2005, পৃ. ২৫২)। ১৯০৬ সালে, হোয়াইজিনবর্ন ইঙ্গিত করেন যে প্রাণী উপাসনা মানুষের সহজাত কৌতূহল থেকে জন্ম নিয়েছে। আদিম মানব লক্ষ্য করে যে একটি প্রাণীর অনন্য বৈশিষ্ট্য আছে এবং এই বৈশিষ্ট্যের ব্যাখ্যাহীনতা মানুষের কৌতূহলকে নাড়া দেয়।(Weissenborn, 1906b, পৃ. ২৮২)। এই স্বাতন্ত্র্যসূচক বৈশিষ্ট্য নিয়ে আদিম মানবের পর্যবেক্ষণ বিস্ময়ের জন্ম দেয় এবং এই বিস্ময় অবশ্যম্ভাবীভাবে আরাধনা উৎপন্ন করে। এভাবে, আদিম মানব অননুকরণীয় বৈশিষ্ট্যসম্বলিত প্রাণীদের উপাসনা করত। (Weissenborn, 1906b, পৃ. ২৮২)। লাবক আরও সাম্প্রতিক এক অভিমত সামনে আনেন। লাবক প্রস্তাব করেন যে প্রাণী- পূজা পারিবারিক নাম থেকে উদ্ভূত লাভ করে। সমাজে, পরিবারগুলো তাদের নিজেদের এবং তাদের সন্তানদের নির্দিষ্ট প্রাণীদের নামে নামকরণ করত এবং শেষ পর্যন্ত পশুদের অন্যসব প্রাণী থেকে স্থাপন করল। অবশেষে, এইসব অভিমত গভীর শ্রদ্ধায় পরিণত হল এবং পুরোপুরি পারিবারিক প্রাণীর উপাসনায় বিকশিত হল (Lubbock, 2005, পৃ. ২৫৩)। একটি প্রাণী পবিত্র এই বিশ্বাস প্রায়ই তাদের আহার করা থেকে বিরত করে আহারের আইনে পরিণতি পায়। নির্দিষ্ট প্রাণীদের পবিত্র গণ্য করার সাথে সাথে, ধর্মগুলো বিপরীত ধারণা অবলম্বন করেছে, যে কিছু প্রাণী অপরিষ্কার।
এই ধারণা যে দেবতা নিজেকে প্রাণীতে মূর্ত করেন, কোন দেবতার রূপলাভ করার অনুরূপ, এবং তারপর পৃথিবীতে মনুষ্য প্রজাতির মধ্যে বসবাস করেন তা ইব্রাহিমীয় ধর্মগুলো দ্বারা উপেক্ষা করা হয় (Morris, 2000, পৃ. ২৬)। দেবতার স্বাধীন সভাসমূহে এবং খ্রিস্টীয় পর্বোপলক্ষে গ্রাম্য যাজকের প্রদত্ত অর্ঘ্য গির্জাসমূহে, প্রাণীদের খুব ক্ষুদ্র ধর্মীয় তাৎপর্য আছে (Schoffeleers, 1985; Peltzer, 1987; Qtd. in Morris, 2000, পৃ. ২৫)। অর্চনা রীতিনীতিতে এবং ধর্মে প্রাণীরা হ্রস্ব থেকে হ্রস্বতর গুরুত্মপূর্ণ এবং প্রতীকী হয়ে পড়েছে, বিশেষ করে আফ্রিকার সংস্কৃতিতে, খৃষ্টান এবং ইসলাম ধর্মের বিস্তারের সাথে সাথে (Morris, 2000, পৃ. ২৪)।
মিশরীয় সর্বদেবতার মন্দির বিশেষ করে প্রাণীরূপান্তরের ভক্ত ছিল, একেক দেবতার সাথে প্রচুর প্রাণীর পবিত্র হওয়ার মাধ্যমে—বিড়াল "ব্যাস্টেটে"র এর জন্যে, সারস এবং বেবুন "থথে"র জন্যে, কুমির "সেবেক" রা'র জন্যে, সেটের জন্যে মাছ, বেজি, ছুঁচো এবং পাখি "হোরাসের" জন্যে, কুকুর এবং শিয়াল "আনুবিসের" জন্যে, সাপ এবং বানমাছ "আটুমে"র জন্য, গুবরে পোকা "খেপেরা"র জন্য, ষাঁড় "এপিসের" জন্য। এইসব বিশ্বাসের কারণে প্রায়ই প্রাণীদের মমিতে পরিণত করা হত।