বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরী একটি মণিপুরী জাতি ভুক্ত সম্প্রদায় ও ভাষার নাম।

দ্রুত তথ্য বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরী, দেশোদ্ভব ...
বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরী
দেশোদ্ভবউত্তর-পূর্ব ভারত, বাংলাদেশ, মায়ানমার ও অন্যান্য কিছু দেশ
অঞ্চলদক্ষিণ এশিয়ার পূর্বাঞ্চল
মাতৃভাষী
১২০,০০০ (২০০১-২০০৩)ভারতের ২০০১ সালের আদমশুমারী
ইন্দো-ইউরোপিয়ান
বাংলা লিপিদেবনাগরী লিপি
ভাষা কোডসমূহ
আইএসও ৬৩৯-১none
আইএসও ৬৩৯-২inc
আইএসও ৬৩৯-৩bpy
বন্ধ

লিখন পদ্ধতি

বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরী সম্প্রদায়ের ভাষার নাম বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরী। তবে বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরীরা নিজেদের ভাষাকে 'ইমার ঠার বা 'মাতৃভাষা' বলে। বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরী ভাষা লিখার জন্য বর্তমানে পূর্ব নাগরী লিপি ব্যবহার করা হয়। অসমীয়া বর্ণমালা থেকে দুটি বর্ণ বা অক্ষর (ৰ, ৱ) এই ভাষায় ব্যবহার করা হয়। অনেকে বাংলার বদলে দেবনাগরী লিপি ব্যবহার করে।

বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরী ভাষায় অন্যান্য ভাষার প্রভাব

ইতিহাস

ভারতের মণিপুর রাজ্য থেকে এই সম্প্রদায়ের উৎপত্তি। ১৭শ খ্রীষ্টাব্দের মাঝামাঝি মণিপুর রাজ্যে বার্মিজদের সঙ্গে ৭ বৎসর স্থায়ী যুদ্ধে মণিপুরের অন্যান্য আরও জাতি ও উপজাতির ন্যায় বর্তমান বাংলাদেশ সহ ভারতবর্ষের বিভিন্ন স্থানে বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরীরা ছড়িয়ে পড়ে।

বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরী ভাষাভাষী জনসংখ্যা

বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরী ভাষার বিস্তার

বাংলাদেশে বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরী

মণিপুর থেকে ছড়িয়ে পড়ার পরপরই বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে মণিপুরীরা বসতি স্থাপন শুরু করে। তার মধ্যে সর্বপ্রথম ঢাকার তেজগাঁও এলাকায় মণিপুরীরা বসতি স্থাপন করে, যেটি বর্তমানে মণিপুরী পাড়া (বাংলাদেশের বর্তমান জাতীয় সংসদের পূর্ব পাশ) নামে খ্যাত। সেখান থেকে দেশের সর্বত্র বিশেষ করে সিলেট বিভাগে মণিপুরীদের প্রধান বসতি গড়ে ওঠে।

বাংলাদেশের সংবিধানবাঙালি ব্যতীত অন্য জাতির স্বীকৃতি না থাকায় মণিপুরীরা আটকে পড়া বিহারীদের মত ভাগ্য বরণ না করার মানসে নিজেরা উপজাতি না হওয়া সত্ত্বেও উপজাতি শব্দটিকে স্বীকার করে বর্তমানে বাংলাদেশের শিক্ষা, চাকরি ও বেতার টিভিতে অনুষ্ঠান করার সুযোগ গ্রহণ করে আসছে।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন] উল্লেখ্য, মণিপুরীরা ভারতে উপজাতি হিসাবে পরিচিত নয় এবং ভারতের অসম ও ত্রিপুরা রাজ্যে বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরী ভাষায় প্রাথমিক স্তরে শিক্ষা দান করা হয়।

বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরীরা বাংলাদেশের ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন (ভানুবিল কৃষক প্রজা আন্দোলন), ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে শহীদ গিরীন্দ্র সিংহ, রবীন্দ্র সিংহ-সহ আরও অনেকে বীরত্ব প্রদর্শন করে বাংলাদেশের জাতীয় ইতিহাসে অবদান রাখার সুযোগ লাভ করেন। বাংলাদেশ সরকার এই সম্প্রদায়ের সংস্কৃতি বিকাশে সিলেট বিভাগের মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ থানায় মাধবপুরে একটি "মণিপুরী ললিত কলা একাডেমী" স্থাপন করেন।

বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরীর ভাষায় বাংলাদেশ থেকে নিয়মিত "পৌরি পত্রিকা" নামে একটি মাসিক পত্রিকা প্রকাশিত হয়ে আসছে। তাছাড়াও, "ইথাক" পত্রিকা নামে অপর একটি সংবাদপত্র বর্তমানে কিছুদিন অপ্রকাশিত অবস্থায় রয়েছে, যেটি শীঘ্রই পুণপ্রকাশিত হবে বলে স্থানীয় পত্র-পত্রিকায় বিজ্ঞাপন প্রচারিত হয়েছে।

ভারতে

বাংলাদেশ ছাড়াও ভারতের উত্তরপুর্বাঞ্চলের আসাম, ত্রিপুরামণিপুরে বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরী জাতির লোক বাস করে। অসমের বরাক উপত্যকার বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরীদের রয়েছে সুদীর্ঘ ভাষা সংগ্রামের ইতিহাস। মাতৃভাষায় শিক্ষার দাবিতে আন্দোলনের ফলে ১৯৮৩ সনে অসম সরকার মণিপুরী বিষ্ণুপ্রিয়া ভাষায় প্রাথমিক শিক্ষা চালুর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। কিন্তু পরে সরকার এই সিদ্ধান্ত স্থগিত করলে বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরীরা ফুসে ওঠে। ১৯৯৬ সনের ১৬ মার্চ মাতৃভাষায় শিক্ষার দাবিতে মণিপুরী বিষ্ণুপ্রিয়াদের ৫০১ ঘণ্টার রাজপথ-রেলপথ অবরোধ আন্দোলনে অসমের করিমগঞ্জে পুলিশের গুলিতে শহীদ হন সুদেষ্ণা সিংহ নামের এক বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরী তরুণী। এরই সাথে আহত হন অরুন সিংহ(২৬), প্রমোদিনী সিংহ(২৫), কমলাকান্ত সিংহ (৪৫), দীপংকর সিংহ(২৫), প্রতাপ সিংহ (২৬), নমিতা সিংহ (৪০), রত্না সিংহ (২৪), বিকাশ সিংহ (২৭), শ্যামল সিংহ(২০) সহ অসংখ্য ভাষা আন্দোলনকারী।  ৯ এপ্রিল ১৯৯৯ তারিখে প্রদত্ত একটি রায়ের মাধ্যমে ভারতের গৌহাটি হাইকোর্ট জনগোষ্ঠীর নাম ‘মণিপুরী’ হিসাবে চিহ্নিত করে ভারতের অসম ও ত্রিপুরা সরকারের ‘ওবিসি’ তালিকার মধ্যে

(ক)মণিপুরী মৈতৈ, (খ)মণিপুরী বিষ্ণুপ্রিয়া, (গ)মণিপুরী ব্রাহ্মণ ও (ঘ)মণিপুরী মুসলিমদের

অন্তর্ভুক্তিকে আইনগতভাবে অনুমোদন করে। এরপর ভারত সরকার অসম ও ত্রিপুরা রাজ্যের স্কুলগুলোতে মণিপুরী মৈতৈ ও মণিপুরী বিষ্ণুপ্রিয়া উভয় ভাষায় শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ করে দেয়। পরবর্তীকালে ২০০৬ সনে ভারতের সুপ্রীম কোর্ট এক যুগান্তকারী রায়ের মাধ্যমে ‘বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরী’ ভাষাকে সাংবিধানিক স্বীকৃতি দেয়।

সাহিত্য

বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরীরা মণিপুর ছাড়ার পরপরই নিজেদের ভাষা প্রায় ভুলতে শুরু করেছিল। বর্তমানে এই ভাষায় প্রচুর সাহিত্য চর্চা শুরু হয়েছে। বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরী ভাষার প্রাচীন আমলের সাহিত্যের মধ্যে লোককথা, লোকগান, লোককবিতা, ছড়া এবং পৌরেই (প্রবচন) উল্লেখযোগ্য। এদের মধ্যে বরন ডাহানির এলা বা "বৃষ্টি ডাকার গান" (রচনাকাল, ১৪৫০-১৬০০ খ্রীস্টাব্দ) এবং প্রাচীন জীবনযাত্রা নিয়ে রচিত মাদই সরারেলর এলা-র (রচনাকাল ১৫০০-১৬০০ খ্রীস্টাব্দ) কথা উল্লেখ করা যায়। গানগুলি বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরীর সাহিত্যের প্রাচীন নিদর্শন ধরা হয়।

বিংশ শতকর তৃতীয় দশক থেকে বিষ্ণুপ্রিয়া মনিপুরী সাহিত্যের আধুনিক যুগের সূচনা ঘটে। ঐ সময়কার প্রধান চারজন লেখক হলেন লেইখমসেনা সিংহ (নাটক: বভ্রুবাহন, মণিপুর বিজয়), মদনমোহন শর্মা (গ্রন্থ: বালিপিন্ড, হরিশ্চন্দ্র, সুবলমিলন, তিলত্তমা, বাসক, সুদমাবিপ্র), আমুসেনা সিংহ (নাটক: অঙ্গদ রায়বার, শক্তিশেল, তরনীসেন বধ, নাগপাশ, মহীরাবণ বধ) এবং গোকুলানন্দ গীতিস্বামী (মাতৃমঙ্গল গীতাভিনয় নাটক, সমাজ জাগরণমূলক নানান পদাবলী, এলা, বারো কবিতা)। এছাড়া রোহিনী রাজকুমার, গোলাপসেনা সিংহ বারো গোষ্ঠবিহারী সিংহের নামও উলেখযোগ্য। বিষ্ণুপ্রিয়া মনিপুরী ভাষায় প্রথম প্রকাশিত পত্রিকা জাগরন (সম্পাদক শ্রী অর্জ্জুন সিংহ), ১৯২৫ সালে।

বর্তমান যুগের বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরী ভাষার উল্লেখযোগ্য সাহিত্যিকদের তালিকা এরকম:

ভারত

  • অধ্যাপক ব্রজেন্দ্র কুমার সিংহ - বাংলা ও বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরী
  • ডঃ কালি প্রসাদ সিংহ - সংস্কৃত ও বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরী
  • বরুণ কুমার সিংহ -ইংরেজি ও বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরী
  • দিল্স লক্ষ্মীন্দ্র কুমার সিংহ - অসমীয়া ও বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরী
  • দিল্স দেবজ্যোতি সিংহ - ইংরেজি, অসমীয়া ও বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরী
  • মধু মঙ্গল সিনহা-বাংলা, বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরী ও ইংরেজি।
  • কৃষ্ণ সিংহ (শিলচর) - ইংরেজি ও বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরী।

বাংলাদেশ

  • শুভাশিস সিনহা - বাংলা ও বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরী
  • রণজিত সিংহ - বাংলা ও বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরী
  • অসীম কুমার সিংহ - ইংরেজি, বাংলা ও বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরী

সংস্কৃতি

সাংস্কৃতিক দিক থেকে বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরীরা অনেক উন্নত। মণিপুরী নৃত্য ভারতীয় নৃত্যকলার এক বিরাট স্থান দখল করে রয়েছে। ভারতীয় ৫ টি শাস্ত্রীয় নৃত্যের মধ্যে মণিপুরী নৃত্য অন্যতম।

শিল্প

বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরীদের বস্ত্র শিল্প ভারত ও বাংলাদেশের সর্বত্র সমাদৃত।

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

বহিঃসংযোগ

গ্রন্থপঞ্জী

Wikiwand in your browser!

Seamless Wikipedia browsing. On steroids.

Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.

Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.