Loading AI tools
উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
মালিক ইজ্জুদ্দীন মুহাম্মদ শিরান খলজী লখনৌতির শাসনকর্তা ছিলেন। তিনি ১২০৬ থেকে ১২০৭ সাল পর্যন্ত লখনৌতি শাসন করেছেন।[1]
মালিক ইজ্জুদ্দীন মুহাম্মদ শিরান খলজী | |
---|---|
محمد شيران خلجی | |
বাংলার শাসক | |
কাজের মেয়াদ ১২০৬ – ১২০৮ | |
সার্বভৌম শাসক | কুতুবউদ্দিন আইবেক |
পূর্বসূরী | ইখতিয়ার উদ্দিন মুহাম্মাদ বিন বখতিয়ার খলজী |
উত্তরসূরী | ইওজ খলজী |
ব্যক্তিগত বিবরণ | |
মৃত্যু | আনু. ১২০৮ |
সমাধিস্থল | মাহীসন্তোষ, ধামইরহাট, নওগাঁ জেলা, বাংলাদেশ |
ধর্ম | ইসলাম |
মালিক ইজ্জুদ্দীন মুহাম্মদ শিরান খলজীর সঠিক জন্ম তারিখ জানা যায় নি। তার জন্ম আফগানিস্থানে। তিনি খলজ গোত্রের লোক ছিলেন[2][3][4][5] যা ছিল তুর্কি গোত্র। তারা দক্ষিণ এশিয়ায় আসার প্রায় ২০০ বছর আগে আফগানিস্থানে বসতি স্থাপন করেন।[6][7][8] শিরান বখতিয়ার খলজী অধীনে নাগৌরর প্রশাসক ছিলেন।[9] তার ভাই আহমেদ শিরান। দুই ভাই খলজী আমির ছিলেন। তিনিও ইখতিয়ারুদ্দীন মুহম্মদ বখতিয়ার খলজীর অধীনে কাজ করতেন।
বখতিয়ার খিলজির মৃত্যুর পর অভিজাতবৃন্দ শিরান খিলজিকে শাসক হিসেবে মনোনীত করেন। ক্ষমতারোহণের পর তিনি আলি মর্দান খিলজির অনুগত বিদ্রোহী বাহিনীর উপর আক্রমণ করেন। আলি মর্দান খিলজি দিল্লী পালিয়ে যান এবং দিল্লীর সুলতানকে বাংলা আক্রমণ করতে প্ররোচিত করেন। আলি মর্দান খিলজির অযোধ্যার গভর্নর কায়মাজ রুমির সঙ্গী হয়ে বাংলা আক্রমণ করেন। ফলে শিরান খিলজি ক্ষমতাচ্যুত হন। এরপর তিনি দিনাজপুর (ধারণা করা হয় এটি ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা, বাংলাদেশের দিনাজপুর জেলা নয়) পালিয়ে যান। কিছুকাল পর তিনি সেখানে মৃত্যুবরণ করেন।[10]
মালিক ইজ্জুদ্দীন মুহাম্মদ শিরান খলজী ছিলেন বখতিয়ার খলজীর সামরিক সহযোগী। বখতিয়ার খলজী কামরূদ ও তিব্বত অভিযানে বের হলে মুহাম্মদ শিরান খলজী এবং তার ভাই আহম্মদ শিরান খলজীকে সেনাবাহিনীসহ লখনোর ও জাজনগরে পাঠান। কিন্তু অভিযানে বখতিয়ার খলজীর পরাজয় ঘটে এবং তিনি মারা যান। বখতিয়ার খলজীর মৃত্যুর সংবাদ শুনে মুহাম্মদ শিরান খলজী এবং আহম্মদ শিরান খলজী রাজধানী দেবকোটে ফিরে আসেন। এর পূর্বে বখতিয়ার খলজী যখন নদীয়া দখল করেন, তখন রায় লখমনিয়া নদীয়া থেকে পলায়ন করেন। তার সেনাবাহিনী ও হাতীর পাল ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়ে। মুহাম্মদ শিরান খলজী লখমনিয়ার পিছু নেন। কথিত আছে যে, তিনি একাই আঠারোটি হাতি মাহুতসহ বন্দী করেন। এই ঘটনার পর থেকে তার সুনাম ও সাহসের পরিচয় সমগ্র রাজ্যে ছড়িয়ে যায়।
বখতিয়ার খলজীর মৃত্যুর পর লখনৌতির শাসনভার নিয়ে ষড়যন্ত্র শুরু হয়। তখন দেবকোটের ক্ষ্মতা দখল করেছিলেন আলী মর্দান। মুহাম্মদ শিরান খলজী দেবকোটে ফিরে আসার খবর পেয়ে আলী মর্দান ঘোড়াঘাটে চলে যান। দেবকোটে সমস্ত খলজী আমীরদের মধ্যে একতা প্রতিষ্ঠা করে মুহাম্মদ শিরান খলজী নতুন নেতা নির্বাচিত হন। সমস্ত খলজী আমীর তাকে সমর্থন দেয়। তাদের সমর্থন পেয়ে তিনি আলী মর্দানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন এবং তার অভিমুখে রওনা হন। যুদ্ধে আলী মর্দান পরাজিত হন। তাকে জেলে বন্দী করে রাখা হয়। এই ঘটনার পর সকল খলজী আমীর তার আনুগত্য স্বীকার করে এবং প্রত্যেক আমীর নিজ নিজ জায়গীর এলাকা শাসন করতে শুরু করে। মুহাম্মদ শিরান খলজীর রাজধানী হিসেবে দেবকোট বহাল থাকে।
আলী মর্দান কৌশলে জেল থেকে পালিয়ে দিল্লী চলে যায়। তখন সুলতান ছিলেন কুতুবউদ্দিন আইবেক। আলী মর্দান সুলতানকে মুহাম্মদ শিরান খলজীর বিরুদ্ধে ক্ষেপিয়ে তুলেন। তার চক্রান্তে কুতুবউদ্দিন আইবেক কায়মেজ রূমীকে অযোধ্যা থেকে লখনৌতিতে পাঠিয়ে দেন। এসময় হুসামুদ্দীন ইওজ খলজি, যিনি বখতিয়ার খলজীর কাছ থেকে গঙ্গাতরী অঞ্চল পেয়েছিলে, কায়মাজ রূমীকে অভ্যর্থনা জানাতে গেলেন। কায়মেজ রূমী তাকে দেবকোটের জায়গীর প্রদান করলেন। ফলে মুহাম্মদ শিরান খলজী অন্যান্য খলজী আমীরদের সাথে নিয়ে দেবকোট আক্রমণ করেন। কায়মেজ রূমীর সাথে খলজী আমীরদের যুদ্ধ সংঘটিত হয় এবং খলজী আমীররা যুদ্ধে পরাজিত হন। যুদ্ধে পরাজয়ের পর খলজী আমীরদের মধ্যে পারস্পরিক সংঘাত শুরু হয়। অনেক আমীর শিরান খলজীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে। মাসেদা -সন্তোষের কাছে বিদ্রোহ শুরু হলে মুহাম্মদ শিরান খলজী পরাজিত হন এবং বিদ্রোহীদের হাতে নিহত হন।
বর্তমান নওগাঁ জেলার ধামুর হাট উপজেলার মহিসন্তোষে একটি প্রাচীন সমাধি সেনাপতি শিরান খিলজির সমাধি বলে পরিচিত। সমাধিটি ১৪ ফুট দীর্ঘ। এর পাশে একটি প্রাচীন মসজিদ রয়েছে। পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার থেকে প্রায় ২৫ কিমি. উত্তর পশ্চিমে এই স্থানটি অবস্থিত।
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.