Loading AI tools
বাংলাদেশের রংপুর বিভাগের বিভাগীয় এবং জেলাশহর উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
রংপুর বাংলাদেশের রংপুর বিভাগের প্রধান শহর এবং ১৮৬৯ সালে প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশের প্রাচীনতম একটি পৌর কর্পোরেশন। রংপুর জেলা গঠিত হয় ১৭৬৫ সালে এবং রংপুর শহর ১৭৬৯ সালের ১৬ ডিসেম্বর রংপুর জেলার বিভাগীয় সদর দপ্তর হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে। ১৮৯০ সালে তৎকালীন পৌর কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান ডিমলার জমিদার বাড়ির রাজা জানকীবল্লভ সেন রংপুর শহরে জলাবদ্ধতা ও মশার ও ম্যালেরিয়ার প্রাদুর্ভাব নিরসনে[4] তার মা শ্যামাসুন্দরীর নামে[5] যে খালটি পুনঃখনন করেন তাই আজকের শ্যামা সুন্দরী খাল নামে পরিচিত এবং তার দানকৃত বাগান বাড়ির জমিতে ১৮৯২ খ্রিষ্টাব্দে আজকের পৌরসভা ভবনটি গড়ে ওঠে। বর্তমানে আয়তনে দ্বিতীয় রংপুর সিটি কর্পোরেশন। রংপুর সাতশত বছরের ঐতিহ্য "শতরঞ্জি", "হাড়িভাঙ্গা আম", "তামাক" এর জন্য বিখ্যাত। রংপুরকে বলা হয় বাহের দেশ।
রংপুর | |
---|---|
বিভাগীয় সদরদপ্তর ও সিটি কর্পোরেশন | |
উপর থেকে: ধাপ থেকে রংপুরের স্কাইলাইন, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর টাউন হল, বেগম রোকেয়ার বাড়ি, রংপুর সিটি কর্পোরেশন এর ফটক, রংপুর চিড়িয়াখানা, তাজহাট জমিদার বাড়ি | |
রংপুর শহরের অবস্থান | |
স্থানাঙ্ক: ২৫.৫৬° উত্তর ৮৯.২৫° পূর্ব | |
দেশ | বাংলাদেশ |
বিভাগ | রংপুর বিভাগ |
জেলা | রংপুর জেলা |
প্রতিষ্ঠা | ১৬ ডিসেম্বর, ১৭৬৯ খ্রিষ্টাব্দ[1] |
পৌরসভা | ১ মে, ১৮৬৯[1] |
সিটি কর্পোরেশন | ১ জুলাই, ২০১২[2] |
সরকার | |
• ধরন | মেয়র - কাউন্সিলর |
• শাসক | রংপুর সিটি কর্পোরেশন |
• মেয়র | মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা |
আয়তন | |
• মহানগর | ২০৫.৭০ বর্গকিমি (৭৯.৪২ বর্গমাইল) |
উচ্চতা | ৩৪ মিটার (১১২ ফুট) |
জনসংখ্যা (২০২২) | |
• বিভাগীয় সদরদপ্তর ও সিটি কর্পোরেশন | ৭,০৮,৩৮৪ |
সময় অঞ্চল | বিএসটি (ইউটিসি+৬) |
পোস্ট কোড | ৫৪০০[3] |
জাতীয় টেলিফোন কোড | +৮৮০ |
কলিং কোড | ৫২১ |
ওয়েবসাইট | অফিশিয়াল ওয়েবসাইট |
রংপুর বিভাগের একমাত্র পুর্ণাঙ্গ সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, মুক্তিযুদ্ধে ৬ নম্বর সেক্টরে জীবন ত্যাগকারী বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ আবু মঈন মোহাম্মদ আশফাকুস সামাদ বীর উত্তম এর স্মরণে প্রতিষ্ঠিত বীর উত্তম শহীদ সামাদ স্কুল এন্ড কলেজ, সেনাবাহিনী কর্তৃক পরিচালিত রংপুর ক্যাডেট কলেজ এবং উত্তরবঙ্গের অক্সফোর্ড খ্যাত কারমাইকেল কলেজ এই শহরের দক্ষিণাংশে অবস্থিত।
১৫৭৫ সালে মুঘল সাম্রাজ্যের অধিপতি আকবরের সেনাপতি রাজা মানসিংহ রংপুর জয় করেন এবং ১৬৬৮ সালে সমগ্র রংপুরে মোগলদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা পায়। এ অঞ্চলের মোগালবাসা এবং মোগলহাট নামগুলো দীর্ঘ মোঘল শাসনের চিহ্ন বহন করছে। পরে রংপুর ঘোড়াঘাট সরকারের অধীনে চলে আসে এবং পরবর্তীতে ১৮'শ শতকের শেষের দিকে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসনামলে রংপুরে ফকির-সন্ন্যাসী বিদ্রোহ সংঘটিত হয়।[6] বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে রংপুর জেলার অবদান উল্লেখযোগ্য ।
আইন-ই-আকবরী অনুযায়ী, মুঘল আমলের রংপুর তিন ধরনের প্রশাসনিক এলাকায় বিভক্ত ছিল। মুঘল সম্রাট আকবরের সেনাপতি রাজা মান সিংহের নেতৃত্বে রংপুর ১৫৭৫ সালে বিজিত হয়, কিন্তু ১৬৮৬ সাল পর্যন্ত এটি সম্পূর্ণরূপে মুঘল সাম্রাজ্যে অন্তর্ভুক্ত হয়নি। ১৬১১ খ্রিস্টাব্দে রংপুরের পুরো অঞ্চলে মুঘল সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠিত হয়। মুঘলবাসা ("মুঘলদের একটি স্থান") এবং মুঘলহাট ("মুঘলদের দ্বারা সংগঠিত স্থানীয় বাজার") এর মতো স্থাননামগুলি রংপুর এবং এর আশেপাশের অঞ্চলের সাথে মুঘলদের সংযোগ ও অতীতের সাক্ষ্য বহন করে। পরে, রংপুর ঘোড়াঘাটের সরকারের নিয়ন্ত্রণে চলে যায়।
1765 সালে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি "দেওয়ানি" লাভ করার পর, রংপুর ব্রিটিশ শাসনের অধীনে আসে। ফকির-সন্ন্যাসী বিদ্রোহ রংপুর অঞ্চলে ঘটে, যেখানে ফকির মজনু শাহের মতো নেতারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। উল্লেখযোগ্য ঔপনিবেশিক বিরোধী বিদ্রোহী দেবী চৌধুরানী এবং ভবানী পাঠক এই অঞ্চলের ছিলেন। ১৮৫৭ সালের সিপাহী বিদ্রোহে বিদ্রোহী সিপাহীরা এই অঞ্চলে ব্রিটিশ শাসকদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে দেয়।পরে রংপুর ঘোড়াঘাট সরকারের অধীনে চলে আসে এবং পরবর্তীতে ১৮'শ শতকের শেষের দিকে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসনামলে রংপুরে ফকির-সন্ন্যাসী বিদ্রোহ সংঘটিত হয়। পরে, ১৯৩০ সালে, কংগ্রেসের আহ্বানে রংপুরের বিভিন্ন স্থানে প্রথম অসহযোগ আন্দোলন শুরু হয়। ১৯৪৬ সালের অক্টোবর মাসে এখানে উত্তরবঙ্গের কৃষক নেতাদের একটি সভা অনুষ্ঠিত হয় এবং নভেম্বর মাসে তেভাগা আন্দোলন শুরু হয়।
রংপুরের মোট জনসংখ্যা ৩১,৬৯,৬১৫ জন। সর্বোচ্চ ৯০.৬১% ইসলাম ধর্মালম্বী, হিন্দু সম্প্রদায় ৮.৯৩%, খ্রিষ্টান ০.২৫%, বৌদ্ধ ০.০৫% এবং অন্যান্য ০.১৫% সাঁওতাল, রাজবংশী এবং ওঁরাও জাতিগোষ্ঠী।[7]
আশেপাশের জেলাগুলোর জন্য রংপুর একটি বাণিজ্যিক কেন্দ্রবিন্দু ব্রিটিশ শাসনকাল থেকেই। শহরের কেন্দ্রবিন্দুতে অসংখ্য সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংক, বীমা সংস্থা, আবাসিক হোটেল, চীনা এবং দেশী-বিদেশী রেস্টুরেন্ট, ফাস্ট ফুড, মিষ্টির ও উপহারের দোকান রয়েছে। ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে এর প্রভাব অপরিসীম।
তাজহাট জমিদার বাড়ি রংপুর শহরের দক্ষিণে অবস্থিত। ১৯৮৪ সালে হাইকোর্ট হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত এটি তাজহাট জমিদার বাড়ি নামেই পরিচিত ছিলো। ব্রিটিশ শাসনামলের শেষে ভবনটি দ্রুত পরিত্যক্ত এবং ক্ষয়প্রাপ্ত হতে থাকে। ১৯৮০ সালের দিকে এই ভবনটিকে "কোর্ট হাউস" হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছিলো। ২০০৪ সালে তাজহাট জমিদার বাড়িকে সংস্কার করে যাদুঘরে রুপান্তরিত করা হয় এবং এই যাদুঘরের সংগ্রহে হিন্দুদের কালো পাথরের ভাস্কর্য, চারুলিপি এবং মুঘল আমলের শিল্প উল্লেখযোগ্য। তহবিলের অভাবে যাদুঘরটি মাঝে মাঝে বন্ধ থাকে।[8]
এই জমিদার বাড়িটির প্রান্তদেশ দক্ষিণ-পূর্ব সীমান্তে তিন কিলোমিটার বিস্তৃত।বাংলাদেশের সুপ্রীম কোর্টের রংপুর উচ্চ আদালতের শাখা হিসেবে ১৯৯৫ সালে প্রাসাদটি ব্যবহার করা হয়েছিলো। প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ কর্তৃক প্রাসাদটিকে সুরক্ষিত স্মৃতিস্তম্ভ হিসেবে ঘোষণা করা হয়। প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনের জন্য বাংলাদেশ সরকার ২০০২ সালে এটিকে জাদুঘরে রুপান্তরিত করে। তদনুসারে ২০০৫ সাল থেকে ভবনটি রংপুর জাদুঘর হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
সাংস্কৃতিক প্রোগ্রামের জন্য শহরের কেন্দ্রে একটি প্রাচীন অডিটোরিয়াম রয়েছে যেটি রংপুর টাউন হল নামে পরিচিত।
১৯১৬ সালে প্রতিষ্টিত কারমাইকেল কলেজ বাংলাদেশের পুরাতন কলেজগুলোর মধ্যে অন্যতম। এই কলেজের প্রধান আকর্ষণ তার প্রশাসনিক ভবন (বাংলা বিভাগে অবস্থিত)। ভবনটি ইন্দো-ইসলামিক রেনেসাঁ স্থাপত্যশিল্পের নিদর্শন।
জাদু নিবাস রংপুর সরকারি কলেজের পাশে রাধাবালভে অবস্থিত। এটি মশিউর রহমান যাদু মিয়ার নিবাস ছিলো। এই বাড়িটির বয়স আনুমানিক একশত বছর। বাড়িটি সম্ভবত মহারাজা গোপাল লাল রায় এর সময়ে নির্মিত এবং মালিকানাধীন ছিল, এই সময় রংপুর জেলা পরিষদ, রংপুর টাউন হল এবং তাজহাট জমিদার বাড়ি নির্মিত হয়েছিল।
মিঠাপুকুর তিনকাতারের মসজিদ
এটি রংপুরের মিঠাপুকুরে অবস্থিত।[9]
রংপুরের উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমুহ হলঃ
রংপুর আর্দ্র উপক্রান্তীয় জলবায়ুর মধ্যে অবস্থিত। রংপুরের আবহাওয়ার মধ্যে মৌসুমি বায়ু, উষ্ণ তাপমাত্রা, আর্দ্রতা, ও ভারী বৃষ্টিপাত বিদ্যমান। গ্রীষ্মকাল এপ্রিলের শুরু থেকে জুলাই পর্যন্ত স্থায়ী হয়। বার্ষিক তাপমাত্রা ২৪.৯ °সে (৭৬.৮ °ফা) এবং বার্ষিক বৃষ্টিপাত ২,১৯২ মিমি (৮৬.৩০ ইঞ্চি)
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.