Loading AI tools
উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
লুইস রাইনার (১২ জানুয়ারি ১৯১০ – ৩০ ডিসেম্বর ২০১৪ ছিলেন একজন জার্মান-মার্কিন চলচ্চিত্র অভিনেত্রী।[1][2] তিনি একাধিক একাডেমি পুরস্কার বিজয়ী প্রথম অভিনয়শিল্পী। তার মৃত্যুকালে তিনি ছিলেন সবচেয়ে দীর্ঘজীবী অস্কার বিজয়ী।[3]
লুইস রাইনার | |
---|---|
Luise Rainer | |
জন্ম | |
মৃত্যু | ৩০ ডিসেম্বর ২০১৪ ১০৪) বেলগ্রাভিয়া, লন্ডন, যুক্তরাজ্য | (বয়স
নাগরিকত্ব | জার্মানি, যুক্তরাজ্য |
পেশা | অভিনেত্রী |
কর্মজীবন | ১৯২৬-১৯৯৭ |
আদি নিবাস | হামবুর্গ, জার্মানি |
দাম্পত্য সঙ্গী | ক্লিফোর্ড ওডেটস (বি. ১৯৩৭; বিচ্ছেদ. ১৯৪০) রবার্ট নিটেল (বি. ১৯৪৫; মৃ. ১৯৮৯) |
সন্তান | ফ্রান্সেস্কা নিটেল-বাউয়ার (জ. ১৯৪৬) |
রাইনার ১৬ বছর বয়সে জার্মানিতে অস্ট্রিয়ার প্রধান সারির মঞ্চ পরিচালক মাক্স রেইনহার্টের অধীনে তার অভিনয় জীবন শুরু করেন। কয়েক বছরের মধ্যে তিনি রেইনহার্টের ভিয়েনা থিয়েটারের অভিনয়শিল্পীদের সাথে বার্লিনের মঞ্চের অন্যতম প্রসিদ্ধ তারকা হয়ে ওঠেন। সমালোচকগণ তার অভিনয়ের মানের প্রশংসা করেন। বেশ কয়েক বছর মঞ্চে এবং অস্ট্রিয়া ও জার্মানির চলচ্চিত্রের অভিনয় পর মেট্রো-গোল্ডউইন-মেয়ারের প্রতিভা অনুসন্ধান দল তাকে আবিষ্কার করে এবং ১৯৩৫ সালে এই স্টুডিওর সাথে তিন বছরের চুক্তি করেন। অনেক চলচ্চিত্র নির্মাতা প্রত্যাশা করেন যে তিনি সে সময়ের এমজিএমের প্রধান নারী তারকা গ্রেটা গার্বোর মত হবেন।
রাইনারের প্রথম মার্কিন চলচ্চিত্র হল এসকেপেড (১৯৩৫)। পরের বছর তিনি সঙ্গীতধর্মী জীবনীমূলক দ্য গ্রেট জিগফেল্ড-এ পার্শ্ব ভূমিকায় অভিনয় করেন, তবে তার অল্প সময়ের পর্দা উপস্থিতি স্বত্ত্বেও তার আবেগপূর্ণ অভিনয় দর্শকদের মুগ্ধ করে এবং তিনি শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর জন্য একাডেমি পুরস্কার লাভ করেন। তার পরবর্তী কাজের জন্য স্টুডিওর অসম্মতি থাকার পরও আরভিং থালবার্গ বুঝাতে সক্ষম হন পার্ল এস. বাকের দ্য গুড আর্থ ছবিতে চীনা কৃষকের স্ত্রী চরিত্রে তিনি অভিনয় করতে সক্ষম হবেন। তার পূর্বের চরিত্রের সাথে এই চরিত্রের বৈপরীত্ব থাকার পরও তার এই কাজের জন্য তিনি পুনরায় শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী বিভাগে একাডেমি পুরস্কার অর্জন করেন।[4] রাইনার প্রথম ব্যক্তি হিসেবে ৩০ বছর পূর্ণ হওয়ার পূর্বেই দুটি অস্কার জয় করেন, পরবর্তীতে এই কৃতিত্ব গড়েন জোডি ফস্টার।
তিনি পরবর্তীকালে বলেন টানা দুটি অস্কার বিজয়ের মত খারাপ কিছু হতে পারে না, দর্শক তার থেকে অনেক বেশি প্রত্যাশা করত, কিন্তু তিনি তা পূরণ করতে পারেন নি। কয়েকটি অগুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয়ের পর এমজিএম ও রাইনার হতাশ হয়ে পড়েন এবং তিন বছরের সংক্ষিপ্ত চলচ্চিত্র কর্মজীবনের শেষে তিনি ইউরোপে ফিরে যান। তার পতনের পিছনে কারণ হিসেবে অনেকে তার স্বামী নাট্যকার ক্লিফোর্ড ওডেটসের দুর্বল উপদেশ ও প্রযোজক আরভিং থালবার্গের ৩৭ বছর বয়সে অপ্রত্যাশিত মৃত্যুকেই দায়ী করে থাকেন।[5]
রাইনার ১৯১০ সালের ১২ জানুয়ারি জার্মান সাম্রাজ্যের ডুসেলডর্ফে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা হাইনরিখ "হাইনৎস" রাইনার (মৃ. ১৯৫৬) এবং মাতা এমিলি "এমি" কনিগসবের্গার (মৃ. ১৯৬১)।[6] তার পিতা ছিলেন একজন ব্যবসায়ী, তাকে এতিম অবস্থায় ছয় বছর বয়সে টেক্সাসে পাঠানো হয়েছিল এবং পরবর্তীকালে তিনি ইউরোপে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। তার পিতার জন্য তিনি জন্মসূত্রে মার্কিন নাগরিক।[7] তিনি উচ্চবিত্ত পরিবারের সন্তান ছিলেন এবং তার পরিবার ইহুদি ধর্মাবলম্বী ছিল।[8][9] রাইনারের শৈশব কাটে প্রথমে হামবুর্গে ও পরে অস্ট্রিয়ার ভিয়েনায়। কিছু কিছু সূত্রে তার জন্মস্থান ভিয়েনা হিসেবেও উল্লেখিত হয়েছে।[10][11][12] তার শৈশব সম্পর্কে তিনি বলেন, "আমি ধ্বংসের মধ্যে জন্ম নিয়েছি। ভিয়েনায় আমার শৈশব ছিল খিদে, দারিদ্র ও বিপ্লবে পরিপূর্ণ।"[13]
রাইনার ১৯৩৫ সালে একজন সম্ভাবনাময় নবাগত হিসেবে হলিউডে আগমন করেন।[10] জীবনীকার চার্লস হাইয়াম উল্লেখ করেন যে এমজিএম স্টুডিওর প্রধান লুইস বি. মেয়ার ও গল্প সম্পাদক স্যামুয়েল মার্ক্স হলিউডে আসার পূর্বে তার কাজের ফুটেজ দেখেছিলেন এবং দুজনে মনে করেন তার মুখশ্রী সুন্দর, তার মধ্যে আকর্ষণ ও এক ধরনের শিশুসুলভ নমনীয়তা রয়েছে।[14] ইংরেজি ভাষায় তার দখল অল্প থাকায় মেয়ার অভিনেত্রী কনস্ট্যান্স কলিয়ারকে তার সংলাপ ও নাট্যধর্মী উপস্থাপনা প্রশিক্ষণের জন্য নিয়োগ দেন। রাইনার দ্রুতই ইংরেজি ভাষায় দক্ষ হয়ে ওঠেন।[14]
হলিউডে তার প্রথম চলচ্চিত্র ছিল এসকেপেড (১৯৩৫)। এটি তার নিজেরই একটি অস্ট্রীয় চলচ্চিত্রের পুনর্নির্মাণ। এতে তার বিপরীতে অভিনয় করেন উইলিয়াম পাওয়েল।[15] মিয়ার্না লয় এই ছবির অর্ধেক চিত্রায়নের পর কাজ ছেড়ে দিলে তিনি এই কাজে অন্তর্ভুক্ত হন। প্রিভিউ দেখার পর রাইনার পর্দায় তাকে বিশাল ও তার পূর্ণ মুখশীর দেখানোর অসন্তুষ্ট ছিলেন।[16] ছবিটির জন্য রাইনারের ব্যাপক প্রচারণা চালানো হয় এবং তাকে “হলিউডের পরবর্তী চাঞ্চল্যকর তারকা” হিসেবে তার অভিহিত করা হয়। কিন্তু তিনি কোন সাক্ষাৎকার দিতে অসম্মতি জানান।[17]
রাইনার ১৯৩৫ সালে অ্যানা হেল্ডের জীবনী নিয়ে নির্মিত সঙ্গীতধর্মী জীবনীমূলক দ্য গ্রেট জিগফেল্ড ছবিতে অভিনয় করেন। এই ছবিতেও তার বিপরীতে ছিলেন উইলিয়াম পাওয়েল,[18] এবং পাওয়েল তার অভিনয় দক্ষতায় মুগ্ধ হয়ে তাকে এসকেপেড-এর সমপরিমাণ পারিশ্রমিক প্রদান করেন।[17] হাইয়ামের ভাষ্যমতে আরভিং থালবার্গ অনুভব করেছিলেন তার স্টুডিওর সকল তারকাদের মধ্যে শুধু রাইনারই এই কাজটি করতে পারবে। কিন্তু রাইনার বলেন স্টুডিওর প্রধান মেয়ার তাকে এই ছোট চরিত্রে অভিনয় করতে নিষেধ করেছিলেন এবং বলেছিলেন, "আপনি এখন একজন তারকা এবং এই কাজ করতে পারেন না।"[19]
১৯৩৫ সালের শেষভাগে চিত্রায়ন শুরুর কিছুদিন পর গণমাধ্যমে তার অভিনয়ের সক্ষমতা নিয়ে সন্দেহ দেখা যায়।[20] পোলীয় এই মঞ্চ অভিনেত্রীর ভূমিকায় তাকে ঠিকঠাক কাজ করতে না পারায় সমালোচিত হতে হয়। পরিচালক বলেন রাইনারকে মূলত তার চোখের কারণে এই চরিত্রের জন্য নেওয়া হয়েছে। তিনি দাবী করেন তার চোখ খুব বড় ও কামোদ্দীপক ও এতে ছদ্ম দুষ্টুমির গুণ রয়েছে, যা এই চরিত্রের জন্য দরকারী।[20]
থালবার্গের প্রত্যাশা অনুযায়ী তিনি সফলতার সাথে তার ছলনাময়ী, কামোদ্দীপ্তনা ও নমনীয়তা প্রদর্শন করতে সক্ষম হন।[14] একটি দৃশ্যে তার চরিত্রটির তার প্রাক্তন স্বামী ফ্লোরেনৎস জিগফেল্ডকে তার নতুন বিবাহের অভিনন্দন জানানোর জন্য টেলিফোনে কথা বলছেন। এতে তার কণ্ঠ প্রফুল্লতা ও নৈরাশ্যের মধ্যে স্থির হয়ে ছিল এবং যখন ফোন রাখেন তিনি কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন।[5] রাইনার তার আবেগপূর্ণ অভিনয় দিয়ে দর্শকদের মুগ্ধ করেন এবং এই কাজের জন্য শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর জন্য একাডেমি পুরস্কার অর্জন করেন।[5]
রাইনারের পরবর্তী চলচ্চিত্র ছিল দ্য গুড আর্থ (১৯৩৭)। এতে তিনি পল মুনির সাথে অভিনয় করেন।[21] ১৯৩৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসে তাকে এই কাজের জন্য নির্বাচিত করা হয় এবং তিনি কাজের জন্য প্রধান অভিনেত্রী হিসেবে প্রথম পছন্দ ছিলেন।[22] এই ছবিতে তার চরিত্রটি ছিল একজন ভদ্র চীনা কৃষাণী ভূমিকায়, যে তার স্বামীর প্রতি অনুগত। সম্পূর্ণ ছবিতে তাকে অল্প সংলাপ বলতে দেখা যায় এবং এই নৈশব্দকে চলচ্চিত্র ইতিহাসবেত্তা অ্যান্ড্রু স্যারিস দ্য গ্রেট জিগফেল্ড-এর টেলিফোন দৃশ্যের পর অসাধরন কাজ বলে গণ্য করেন। এই কাজের জন্য তিনি টানা দ্বিতীয়বারের মত শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী বিভাগে একাডেমি পুরস্কার জয় করেন।[23]
এমজিএম স্টুডিওর হয়ে তার আরও চারটি চলচ্চিত্র হল দি এম্পেরারস ক্যান্ডলস্টিকস (১৯৩৭), বিগ সিটি (১৯৩৭), দ্য টয় ওয়াইফ (১৯৩৮) ও ড্রামাটিক স্কুল (১৯৩৮)। যদিও রাইনার তার কাজের জন্য প্রশংসিত হয়েছিলেন, এই ছবিগুলো গ্রহণ করার উপদেশ ছিল খুবই দুর্বল এবং সর্বোপরি কাজগুলো সমাদৃত হয়নি। ১৯৩৬ সালের নভেম্বরে রাইনার দি এম্পেরারস ক্যান্ডলস্টিকস ছবির কাজ শুরু করেন। এই ছবিতে তিনি শেষবারের মত পাওয়েলের সাথে কাজ করেন। ছবিতে তিনি লাল রঙের পরচুলা ব্যবহার করেন এবং আদ্রিয়ানের নকশা করা পোশাক পরিধান করেন। আদ্রিয়ান দাবী করেন ১৯৩৭ সালের শেষভাগে রাইনার ফ্যাশনের দিক থেকে হলিউডের অন্যতম প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব হয়ে ওঠেন।[24] সেটে তিনি তারকার মত যত্ন লাভ করেন, তার নিজের ড্রেসিং রুম, ডিকশন শিক্ষক, একান্ত সহকারী, পোশাক পরিবর্তন সহকারী, চুলবিন্যাস ও রূপসজ্জাকার ছিল।[24] দি এম্পেরারস ক্যান্ডলস্টিকস ছিল রাইনারের প্রথম চলচ্চিত্র যার জন্য তিনি সমালোচিত হয়েছিলেন এবং বলা হয়েছিল যে তার অভিনয়ের ধরনের উন্নতি হয় নি।[25]
বিগ সিটি ছবিতে তার বিপরীতে অভিনয় করেন স্পেন্সার ট্রেসি। রাইনারের অভিনয় ইতিবাচক সমালোচনা পেলেও সমালোচকগণ বলেন এমন একটি "আধুনিক চরিত্রের জন্য তাকে নেওয়াটা সংগত হয় নি এবং ট্রেসির স্ত্রীর ভূমিকায় তাকে খুবই অদ্ভুত দেখাচ্ছিল।[26] এই সমালোচনা ও হলিউড ত্যাগের ঘোষণা সত্ত্বেও রাইনার এই ছবিটি মুক্তির পর সাত বছরের জন্য তার চুক্তি নবায়ন করেন।[27] বেশিরভাগ সমালোচক মনে করেন দ্য টয় ওয়াইফ ছবিতে রাইনারকে সবচেয়ে মোহনীয় ছিলেন। এমজিএমের সাথে তার শেষ চলচ্চিত্র ছিল ড্রামাটিক স্কুল। তাকে যখন এই চলচ্চিত্রের জন্য নেওয়া হয়েছিল, তখন বক্স অফিসে তার জনপ্রিয়তা কমে গিয়েছিল। তিনি এমজিএমের অন্যান্য সহকর্মী – গ্রেটা গার্বো, জোন ক্রফোর্ড, নর্মা শিয়েরার, ক্যাথরিন হেপবার্ন, মে ওয়েস্ট, ফ্রেড অ্যাস্টেয়ার, কে ফ্রান্সিস ও অন্যান্যদের সাথে ইন্ডিপেন্ডেন্ট থিয়েটার ওনার্স অব আমেরিকার দেওয়া “বক্স অফিস পয়জন” হিসেবে স্বীকৃত হন।[28]
রাইনার ২০১৪ সালের ৩০শে ডিসেম্বর ১০৪ বছর বয়সে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে লন্ডনে তার নিজ বাড়িতে মৃত্যুবরণ করেন।[2] ১৩ দিন পর তার ১০৫তম জন্মদিন ছিল।[1] রাইনার তার জীবনের শেষ সময় লন্ডনের বেলগ্রাভিয়ার ৫৪ ইটন স্কয়ারে কাটান, একই ফ্ল্যাটে অভিনেত্রী ভিভিয়েন লেই বসবাস করতেন। ২০১৫ সালে তার স্মৃতিচিহ্নগুলোর নিলাম ডাকা হয়। নিলামে তার উত্তরাধিকারগণ ৪৮৯,০৬৯ মার্কিন ডলার পান।[29]
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.