Loading AI tools
মার্কিন অভিনেত্রী উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
ম্যারি লুইস "মেরিল" স্ট্রিপ (Mary Louise "Meryl" Streep; জন্ম: ২২ জুন ১৯৪৯) একজন মার্কিন অভিনেত্রী ।[1] তাকে তার প্রজন্মের সেরা অভিনেত্রী হিসেবে গণ্য করা হয়।[2][3] [4][5][6] স্ট্রিপ তার চরিত্রে বৈচিত্রতা ও বিভিন্ন ভাষার দক্ষতার জন্য সুপরিচিত। চার দশকের কর্মজীবনে তিনি অসংখ্য পুরস্কার ও মনোনয়ন লাভ করেছেন। রেকর্ড সংখ্যক ২১টি একাডেমি পুরস্কারের মনোনয়ন গ্রহীতা স্ট্রিপ ৩টি একাডেমি পুরস্কার লাভ করেন[7] এবং রেকর্ড সংখ্যক ৩১টি গোল্ডেন গ্লোব পুরস্কারের মনোনয়নের মধ্যে ৮টি পুরস্কার লাভ করেন, যা মনোনয়ন ও বিজয়ের দিক থেকে সর্বাধিক।[8][9]
মেরিল স্ট্রিপ | |
---|---|
ইংরেজি: Meryl Streep | |
জন্ম | ম্যারি লুইস স্ট্রিপ ২২ জুন ১৯৪৯ সামিট, নিউ জার্সি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র |
শিক্ষা |
|
পেশা | অভিনেত্রী |
কর্মজীবন | ১৯৭৫–বর্তমান |
দাম্পত্য সঙ্গী | ডন গামার (বি. ১৯৭৮) |
সঙ্গী | জন কাজ্যাল (১৯৭৬-৭৮, তার মৃত্যু) |
সন্তান |
|
পিতা-মাতা |
|
পুরস্কার | পূর্ণ তালিকা |
১৯৭৫ সালে ট্রেলাওনি অব দ্য ওয়েলস মঞ্চনাটক দিয়ে স্ট্রিপের মঞ্চে অভিষেক ঘটে এবং পরের বছর ডাবল-বিলের টুয়েন্টি সেভেন ওয়াগন্স ফুল অব কটন ও আ মেমোরি অব টু মানডেজ নাটকের জন্য শ্রেষ্ঠ চরিত্রাভিনেত্রী বিভাগে টনি পুরস্কারের মনোনয়ন লাভ করেন। ১৯৭৭ সালে জুলিয়া চলচ্চিত্রে অভিনয়ের মধ্য দিয়ে তার চলচ্চিত্রে অভিষেক ঘটে। ১৯৭৮ সালে তিনি হলোকাস্ট মিনি ধারাবাহিকে অভিনয় করে সীমিত ধারাবাহিকে সেরা প্রধান অভিনেত্রী বিভাগে প্রাইমটাইম এমি পুরস্কার অর্জন করেন এবং দ্য ডিয়ার হান্টার চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য তার প্রথম একাডেমি পুরস্কারের মনোনয়ন লাভ করেন। তিনি ক্রেমার ভার্সাস ক্রেমার (১৯৭৯) চলচ্চিত্রে অভিনয় করে শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেত্রী বিভাগে একাডেমি পুরস্কার অর্জন করেন এবং ১৯৮০-এর দশকের চলচ্চিত্র অভিনেত্রী হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন। তিনি সোফিস চয়েস (১৯৮২) চলচ্চিত্রে হলোকাস্ট থেকে বেঁচে যাওয়া ব্যক্তি চরিত্রে অভিনয় করে শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী বিভাগে একাডেমি পুরস্কার অর্জন করেন এবং আউট অব আফ্রিকা (১৯৮৫) চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন, যেটি সেই সময়ে তার সবচেয়ে ব্যবসাসফল চলচ্চিত্র। তিনি ১৯৮০-এর দশকের শেষভাগে এবং ১৯৯০-এর দশকে বিভিন্ন পুরস্কার এবং সমালোচকদের প্রশংসা অর্জন করেন। ব্যবসাসফলতা মিশ্র হলেও তার অভিনীত হাস্যরসাত্মক ডেথ বিকামস হার (১৯৯২) ও নাট্যধর্মী দ্য ব্রিজেস অব ম্যাডিসন কাউন্টি (১৯৯৫) এই সময়ে সর্বাধিক আয় করে।
স্ট্রিপ পরবর্তী দশকগুলোতেও অ্যাডাপ্টেশন (২০০২), দি আওয়ার্স (২০০২), দ্য ডেভল অয়েয়ারস প্রাডা (২০০৬), ডাউট (২০০৮), মাম্মা মিয়া (২০০৮), জুলি অ্যান্ড জুলিয়া (২০০৯), ইট্স কমপ্লিকেটেড (২০০৯), ইনটু দ্য উডস (২০১৪), দ্য পোস্ট (২০১৭) ও লিটল উইমেন (২০১৯) চলচ্চিত্রে শ্রেষ্ঠাংশে অভিনয় করে তার তারকাখ্যাতি ধরে রাখেন। এই সময়ে তিনি দি আয়রন লেডি (২০১১) চলচ্চিত্রে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী মার্গারেট থ্যাচারের ভূমিকায় অভিনয় করে তার তৃতীয় একাডেমি পুরস্কার অর্জন করেন। মঞ্চে তিনি দ্য পাবলিক থিয়েটারের প্রযোজনায় ২০০১ সালের দ্য সিগাল। টেলিভিশনে তিনি অ্যাঞ্জেলস ইন আমেরিকা (২০০৩) মিনি ধারাবাহিকে অভিনয় করে আরেকটি প্রাইমটাইম এমি পুরস্কার অর্জন করেন, এবং নাট্যধর্মী বিগ লিটল লাইজ-এর দ্বিতীয় মৌসুম (২০১৯) ও হাস্যরসাত্মক অনলি মার্ডার্স ইন দ্য বিল্ডিং-এর তৃতীয় মৌসুম (২০২৩)-এ অভিনয় করেন।
স্ট্রিপ একাধিক সম্মানসূচক পুরস্কার গ্রহণ করেছেন। তিনি ২০০৪ সালে এএফআই আজীবন সম্মাননা পুরস্কার, ২০০৮ সালে ফিল্ম সোসাইটি অব লিংকন সেন্টার থেকে গালা ট্রিবিউট, মার্কিন সংস্কৃতিতে অবদানের জন্য ২০১১ সালে কেনেডি সেন্টার সম্মাননা অর্জন করেন। রাষ্ট্রপতি বারাক ওবামা তাকে ২০১০ সালে ন্যাশনাল মেডেল অব আর্টস এবং ২০১৪ সালে প্রেসিডেনশিয়াল মেডেল অব ফ্রিডমে ভূষিত করেন।[10] ২০০৩ সালে ফ্রান্স সরকার তাকে ওর্দ্র দে আর্ত এ দে লেত্রের কমান্ডার উপাধিতে ভূষিত করে।[11] ২০১৭ সালে হলিউড ফরেন প্রেস অ্যাসোসিয়েশন তাকে গোল্ডেন গ্লোব সেসিল বি. ডামিল পুরস্কার প্রদান করে।[12]
ম্যারি লুইস স্ট্রিপ ১৯৪৯ সালের ২২শে জুন নিউ জার্সির সামিট শহরে জন্মগ্রহণ করেন।[13][14] তার মাতা ম্যারি উলকিনসন স্ট্রিপ (ম্যারি উল্ফ উইলকিনস) একজন পেশাদার চিত্রকর ও চিত্র সম্পাদক ছিলেন। তার পিতা হ্যারি উইলিয়াম স্ট্রিপ জুনিয়র ছিলেন একজন ঔষধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের নির্বাহী।[15][16][17] ডানা ডেভিড এবং তৃতীয় হ্যারি উইলিয়াম নামে তার দু'টো ভাই রয়েছে।[18][19]
পৈত্রিকসূত্রে তার পূর্বপুরুষগণ জার্মানির লোফেনাউ বংশোদ্ভূত। পরবর্তীকালে তারা অভিবাসিত হয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ীভাবে বসবাস করতে থাকেন। তন্মধ্যে পূর্বপুরুষদের একজন মেয়র হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন।[20] তার পিতার পূর্বপুরুষদের অন্য একটি গোষ্ঠী সুইজারল্যান্ডের ছোট্ট নগরী গিসুইল বংশোদ্ভূত। তার মায়ের পূর্বপুরুষেরা ইংরেজ, আইরিশ ও জার্মান ছিলেন।[21] তাদের কিয়দংশ পেনসিলভানিয়া এবং রোড আইল্যান্ডে জন্মেছেন ও সপ্তদশ শতকে ইংল্যান্ড থেকে অভিবাসিত হয়ে এসেছেন।[17][22]
১৯৭১ সালে দ্য প্লেবয় অব সেভিলের মাধ্যমে মেরিল স্ট্রিপের পেশাদার মঞ্চ অভিনেত্রী হিসেবে অভিষেক হয়। স্ট্রিপ ১৯৭৫ সালে নিউ ইয়র্ক সিটিতে চলে আসেন এবং পাবলিক থিয়েটারে ম্যান্ডি প্যাটিনকিন ও জন লিথগোর সাথে জোসেফ প্যাপের ট্রেলাউনি অব দ্য ওয়েলস মঞ্চনাটকে অভিনয় করেন।[23] এই বছরে তিনি আরও পাঁচটি মঞ্চনাটকে অভিনয় করেন, যার মধ্যে রয়েছে প্যাপের নিউ ইয়র্ক শেকসপিয়ার উৎসব আয়োজনের ফিফথ হেনরি, রাউল জুলিয়ার সাথে দ্য টেমিং অব দ্য শ্রু ও স্যাম ওয়াটারস্টন ও জন শেজেলের সাথে মেজার ফর মেজার। এই সময়ে শেজেলের সাথে সম্পর্ক গড়ে ওঠে এবং তারা একত্রে বসবাস শুরু করেন। কিন্তু তিন বছর পর শেজেল মারা যান।[23] তিনি ব্রডওয়ে মঞ্চে সঙ্গীতধর্মী হ্যাপি এন্ড মঞ্চনাটকে কেন্দ্রীয় ভূমিকায় অভিনয় করেন এবং অফ-ব্রডওয়ে মঞ্চে অ্যালিস অ্যাট দ্য প্যালেস নাটকে অভিনয় করে ওবিই পুরস্কার লাভ করেন। ১৯৭৭ সালে টেলিভিশন চলচ্চিত্র দ্য ডেডলিয়েস্ট সিজনে অভিষিক্ত হন।
১৯৭৭ সালে জুলিয়া চলচ্চিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে তার বড় পর্দায় অভিষেক হয়। এতে শ্রেষ্ঠাংশে অভিনয় করেন জেন ফন্ডা এবং স্ট্রিপ একটি ক্ষুদ্র চরিত্রে অভিনয় করেন।
চলচ্চিত্র সমালোচনা এবং ব্যবসায়িক উভয় পর্যায়েই তার অভিনীত দ্য ডিয়ার হান্টার (১৯৭৮) এবং ক্রেমার ভার্সাস ক্রেমার (১৯৭৯) চলচ্চিত্র দু'টি সাফল্য লাভ করে এবং একাডেমি পুরস্কার বা অস্কারের জন্য মনোনীত হয়। তন্মধ্যে ক্রেমার ভার্সাস ক্রেমার চলচ্চিত্রটি অস্কার বিজয়ী হবার পাশাপাশি স্ট্রিপকেও সেরা পার্শ্ব অভিনেত্রীর পুরস্কার এনে দেয়।[24] পরবর্তীতে সোফিস চয়েজ (১৯৮২) চলচ্চিত্রের জন্য তিনি সেরা অভিনেত্রী হিসেবে নির্বাচিত হন। ১৯৭৯ সালে ক্রেমার ভার্সাস ক্রেমার চলচ্চিত্রটি মুক্তি পায়।। এভারি কোরমানের উপন্যাস অবলম্বনে এ চলচ্চিত্রের পরিচালক ছিলেন রবার্ট বেনটন। আমেরিকান এক দম্পতির বিবাহ-বিচ্ছেদকে কেন্দ্র করে নির্মিত চলচ্চিত্রটিতে আশেপাশের মানুষজন, বিশেষত ক্রেমার দম্পতির শিশুপুত্রের ওপর এ ঘটনার প্রভাবকে কেন্দ্র করে বিস্তৃত হয়েছে এর প্রেক্ষাপট। জোয়ানা ক্রেমার চরিত্রে মেরিল স্ট্রিপ তার অভিনয় দক্ষতা প্রদর্শন করে সেরা পার্শ্ব অভিনেত্রী হিসেবে একাডেমী পুরস্কার লাভ করেছিলেন। এছাড়াও, প্রায় $১০৬,২৬০,০০০ ডলার আয় করে চলচ্চিত্রটি।[25]
২০০৮ সালে স্ট্রিপ বাণিজ্যধর্মী চলচ্চিত্র হিসেবে ফাইলিডা লয়েডের পরিচালনায় মামা মিয়া! ছবিতে নায়িকা চরিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। চলচ্চিত্রে একই নামে অর্থাৎ মামা মিয়া শিরোনামে গানও রয়েছে। সুইডেনের অ্যাবা পপ দলের গানের উপর ভিত্তি করে রচিত হয়েছে।
চলচ্চিত্রটিতে মামা মিয়া গানটি স্ট্রীপের মাধ্যমে ধারণ করা হয়। এর ফলে গানটি অসম্ভব জনপ্রিয়তা অর্জন করে। অক্টোবর, ২০০৮ সালে পর্তুগীজ মিউজিক চার্টে ৮ম শীর্ষস্থানীয় গান হিসেবে মর্যাদা পায়।[26]
৩৫তম পিপলস চয়েজ এ্যাওয়ার্ডের সাউন্ডট্র্যাক হতে জনপ্রিয় গান বিভাগে তার কণ্ঠে গীত গানটি পুরস্কৃত হয়।[27] এ গানের জন্যেই স্ট্রিপ ২০০৮ সালে ৫ম বারের মতো গ্র্যামি এ্যাওয়ার্ডের জন্যে মনোনীত হন।
ন্যাশনাল উইমেনস্ হিস্ট্রি মিউজিয়ামের মুখপাত্র হিসেবে মেরিল স্ট্রিপ নিযুক্ত রয়েছেন। এতে তিনি উল্লেখযোগ্য পরিমাণের অর্থ দান করেছেন। সদ্য মুক্তিপ্রাপ্ত দি আইরন লেডি চলচ্চিত্র থেকে প্রাপ্ত ফিও এতে রয়েছে। এছাড়াও তিনি অগণিত অনুষ্ঠানে আতিথ্য বরণ করছেন।[28]
মেরিল স্ট্রিপ অভিনেতা জন কেজেলের সাথে মার্চ, ১৯৭৮ সাল পর্যন্ত বিবাহ-বহির্ভূতভাবে ৩ বছর বসবাস করেছিলেন।[29] অতঃপর ভাস্কর ডন গামারকে ১৫ সেপ্টেম্বর, ১৯৭৮ সালে বিয়ে করেন।[30] এ সংসারে ৪ সন্তান - হেনরী হ্যাঙ্ক ওল্ফ গামার (জন্ম: ১৩ নভেম্বর, ১৯৭৯), মেরি উইলা মেমি গামার (জন্ম: ৩ আগস্ট, ১৯৮৩), গ্রেস জেন গামার (জন্ম: ৯ মে, ১৯৮৬) এবং লুইসা জেকবসন গামার (জন্ম: ১২ জুন, ১৯৯১) রয়েছে। তন্মধ্যে - মেরি উইলা মেমি গামার এবং গ্রেস জেন গামার অভিনেত্রী হিসেবে কর্মরত।[15] এছাড়াও, হেনরী হ্যাঙ্ক ওল্ফ গামার কণ্ঠশিল্পী হিসেবে রয়েছে।[31]
মেরিল স্ট্রিপ এ পর্যন্ত ২১ বার একাডেমী পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়েছেন; তন্মধ্যে বিজয়ী হয়েছেন ৩ বার। গোল্ডেন গ্লোব পুরস্কারে মনোনীত হয়েছে ৩২ বার; বিজয়ী হয়েছেন ৮ বার। উভয়ক্ষেত্রেই তিনি যে-কোন অভিনেত্রীর চেয়ে সবচেয়ে বেশি মনোনয়ন কিংবা পুরস্কার প্রাপ্তির দিক দিয়ে এগিয়ে আছেন। এছাড়াও, দুইবার এমি পুরস্কার, দুইবার স্ক্রিন অ্যাক্টরস গিল্ড পুরস্কার, একবার কান চলচ্চিত্র উৎসব পুরস্কার, পাঁচবার নিউইয়র্ক ফিল্ম ক্রিটিকস সার্কেল পুরস্কার, পাঁচবার গ্র্যামি পুরস্কারের জন্য মনোনয়ন, দুইবার বাফটা পুরস্কার, একবার অস্ট্রেলিয়ান ফিল্ম ইনস্টিটিউট পুরস্কার এবং একবার টনি পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়েছিলেন। ২০০৪ সালে এএফআই আজীবন সম্মাননা পুরস্কারেও ভূষিত হয়েছেন তিনি।
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.