শীর্ষ প্রশ্ন
সময়রেখা
চ্যাট
প্রসঙ্গ

আমানুল্লাহ মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান

১৯৬৯ সালের গণ-আন্দোলনের একজন শহীদ উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ

আমানুল্লাহ মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান
Remove ads

আমানুল্লাহ মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান (জুন ১০, ১৯৪২ - জানুয়ারি ২০, ১৯৬৯) একজন শহীদ ছাত্রনেতা; তিনি আইয়ুব খানের পতনের দাবীতে মিছিল করার সময় জানুয়ারি ২০, ১৯৬৯ সালে পুলিশের গুলিতে নিহত হন। তবে তিনি সর্বসমক্ষে শহীদ আসাদ নামেই অধিক পরিচিত ব্যক্তিত্ব। শহীদ আসাদ হচ্ছেন ১৯৬৯ সালের গণ-আন্দোলনে পথিকৃৎ তৎকালীন পূর্ব-পাকিস্তানের তিন শহীদদের একজন; অন্য দু'জন হচ্ছেন - শহীদ রুস্তমশহীদ মতিউর[] স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধে বিশেষ অবদানের জন্য ২০১৮ সালে তিনি স্বাধীনতা পদক পান।[]

দ্রুত তথ্য আমানুল্লাহ মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান, জন্ম ...
Remove ads

পরিবার

১৯৪২ সালের ১০ জুন নরসিংদী জেলার শিবপুর উপজেলার ধানুয়া গ্রামের হাতিরদিয়ায় এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। পিতা আলহাজ্ব মাওলানা মোহাম্মদ আবু তাহের বি.এ.বি.টি হাতিরদিয়া সাদত আলী হাই স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা হেডমাষ্টার ছিলেন।

আসাদের মায়ের নাম মতি জাহান খাদিজা খাতুন। তিনি নারায়নগঞ্জ আই.ই.টি (ইসলামি এডুকেশন ট্রাষ্ট) গার্লস প্রাইমারি স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা ছিলেন। আসাদের জন্মের পর তিনি শিক্ষকতা ছেড়ে দেন। তাঁর ছয় পুত্র ও দুই কন্যার মধ্যে আসাদ ছিলেন চতুর্থ।

Remove ads

প্রারম্ভিক জীবন

সারাংশ
প্রসঙ্গ
Thumb
আমানউল্লাহ আসাদুজ্জামান

শহীদ আসাদ ১৯৪২ সালের ১০ জুন নরসিংদী জেলার শিবপুর উপজেলার ধানুয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বড় ভাইয়ের নাম প্রকৌশলী রশিদুজ্জামান। শিবপুর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ১৯৬০ সালে মাধ্যমিক শিক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে উচ্চ শিক্ষার্থে জগন্নাথ কলেজ (বর্তমান জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়) ও এমসি কলেজে পড়াশোনা করেন। ১৯৬৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক (সম্মান) শ্রেণীতে ভর্তি হয়ে ১৯৬৬ সালে বি.এ এবং ১৯৬৭ সালে এম.এ ডিগ্রী অর্জন করেন। এই বৎসরেই আসাদ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ) এবং কৃষক সমিতির সভাপতি মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাষাণী'র নির্দেশনায় কৃষক সমিতিকে সংগঠিত করার লক্ষ্যে শিবপুর, মনোহরদী, রায়পুরা এবং নরসিংদী এলাকায় নিজেকে সম্পৃক্ত রাখেন।

ঢাকা'র সিটি ল কলেজে তিনি ১৯৬৮ সালে আরও ভালো ফলাফলের জন্যে দ্বিতীয়বারের মতো এম.এ বা স্নাতকোত্তর ডিগ্রী অর্জনের জন্য চেষ্টা করছিলেন।[] ১৯৬৯ সালে মৃত্যুকালীন সময়ে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগে এম.এ শেষ বর্ষের ছাত্র ছিলেন তিনি। শহীদ আসাদ তৎকালীন ঢাকা হল (বতর্মান শহীদুল্লাহ হল) শাখার পূর্ব-পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি হিসেবে এবং পূর্ব-পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়ন (ইপসু-মেনন গ্রুপ), ঢাকা শাখার সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে নিবেদিত প্রাণ আসাদুজ্জামান গরিব ও অসহায় ছাত্রদের শিক্ষার অধিকার বিষয়ে সর্বদাই সজাগ ছিলেন। তিনি শিবপুর নৈশ বিদ্যালয় নামে একটি নৈশ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন এবং শিবপুর কলেজ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে স্থানীয় শিক্ষানুরাগী ব্যক্তিদেরকে সাথে নিয়ে আর্থিক তহবিল গড়ে তোলেন।[]

Remove ads

জানুয়ারি ২০, ১৯৬৯

সারাংশ
প্রসঙ্গ

পটভূমি

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৬ দফা দাবীর স্বপক্ষে এবং আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় অন্যান্য আসামীদের মুক্তি দাবীর আন্দোলনে আসাদের মৃত্যু পরিবেশকে আরও ঘোলাটে করে তুলে ও গুরুত্বপূর্ণ ঘটনায় রূপান্তরিত হয়। ৬ ডিসেম্বর, ১৯৬৮ সালে মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাষাণী'র ডাকে হরতাল আহ্বানের ফলে ব্যবসায়ীরা তাতে পূর্ণ সমর্থন জানায়।[] এ প্রেক্ষাপটে গভর্নর হাউজ ঘেরাওয়ের ফলে ছাত্র সংগঠনগুলো পূর্ব থেকেই নতুন করে আন্দোলনের প্রস্তুতি নিয়েছিল।

৪ জানুয়ারি, ১৯৬৯ইং তারিখে ছাত্রদের ১১ দফা এবং বঙ্গবন্ধুর ৬ দফা দাবীর সাথে একাত্মতা পোষণ করে ছাত্র সংগঠনের নেতৃবৃন্দ, যাতে প্রধান ভূমিকা রাখেন শহীদ আসাদ। ১৭ জানুয়ারি, ১৯৬৯ইং সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে ছাত্ররা দেশব্যাপী সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের ডাক দেয়। ফলে গভর্নর হিসেবে মোনেম খান ১৪৪ ধারা আইন জারী করেন যাতে করে চার জনের বেশি লোক একত্রিত হতে না পারে।

মিছিল এবং মৃত্যু

Thumb
১৯৬৯ সালের ২১ জানুয়ারি দৈনিক আজাদ পত্রিকায় 'পুলিশের গুলীতে ছাত্র নিহত' শিরোনামে আসাদের মৃত্যুর খবর

পূর্ব পরিকল্পনা অনুসারে ২০ জানুয়ারি, ১৯৬৯ইং তারিখ দুপুরে ছাত্রদেরকে নিয়ে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের পার্শ্বে চাঁন খাঁ'র পুল এলাকায় মিছিল নিয়ে অগ্রসর হচ্ছিলেন আসাদুজ্জামান। পুলিশ তাদেরকে চাঁন খাঁ'র ব্রীজে বাঁধা দেয় ও চলে যেতে বলে। কিন্তু বিক্ষোভকারী ছাত্ররা সেখানে প্রায় এক ঘণ্টা অবস্থান নেয় এবং আসাদ ও তার সহযোগীরা স্বৈরাচারী সরকারের বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে থাকে। ঐ অবস্থায় খুব কাছ থেকে আসাদকে লক্ষ্য করে এক পুলিশ অফিসার গুলিবর্ষণ করে। তৎক্ষণাৎ গুরুতর আহত অবস্থায় আসাদকে হাসপাতালে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।

মৃত্যু পরবর্তী

সারাংশ
প্রসঙ্গ

গুচ্ছ গুচ্ছ রক্তকরবীর মতো কিংবা সূর্যাস্তের

জ্বলন্ত মেঘের মতো আসাদের শার্ট

উড়ছে হাওয়ায় নীলিমায়।

বোন তার ভায়ের অম্লান শার্টে দিয়েছে লাগিয়ে

নক্ষত্রের মতো কিছু বোতাম কখনো

হৃদয়ের সোনালী তন্তুর সূক্ষতায়

বর্ষীয়সী জননী সে–শার্ট

উঠোনের রৌদ্রে দিয়েছেন মেলে কত দিন স্নেহের বিন্যাসে।

ডালীম গাছের মৃদু ছায়া আর রোদ্দুর-শোভিত

মায়ের উঠোন ছেড়ে এখন সে-শার্ট

শহরের প্রধান সড়কে

কারখানার চিমনি-চূড়োয়

গমগমে, এভেন্যুর আনাচে কানাচে

উড়ছে, উড়ছে অবিরাম

আমাদের হৃদয়ের রৌদ্র-ঝলসিত প্রতিধ্বনিময় মঠে,

চৈতন্যের প্রতিটি মোর্চায়।

আমাদের দুর্বলতা, ভীরুতা কলুষ আর লজ্জা

সমস্ত দিয়েছে ঢেকে একখণ্ড বস্ত্র মানবিক;

অাসাদের শার্ট আজ আমাদের প্রাণের পতাকা।

—"আসাদের শার্ট"

ছাত্র-জনতা কর্তৃক আসাদের রক্তমাখা শার্ট

হাজারো ছাত্র-জনতা আসাদের মৃত্যুতে একত্রিত হয়ে পুনরায় মিছিল বের করে এবং শহীদ মিনারের পাদদেশে জমায়েত হয়। কেন্দ্রীয় প্রতিরোধ কমিটি তাকে শ্রদ্ধা জানাতে ২২, ২৩ ও ২৪ জানুয়ারি সারাদেশে ধর্মঘট আহ্বান করে। ধর্মঘটের শেষ দিনে পুলিশ পুনরায় গুলিবর্ষণ করে। ফলশ্রুতিস্বরূপ আসাদের মৃত্যুতে ফিল্ড মার্শাল আইয়ুব খান সরকার দু'মাসের জন্য ১৪৪-ধারা আইনপ্রয়োগ স্থগিত রাখতে বাধ্য হয়।[][]

জনপ্রিয় সংস্কৃতিতে

  • শোকাতুর ও আবেগে আপ্লুত অগণিত ছাত্র-জনতার মিছিলে শহীদ আসাদের রক্তমাখা শার্ট দেখে বাংলা সাহিত্যের আধুনিক কবি শামসুর রাহমান তার অমর কবিতা “আসাদের শার্ট” লিখেন।
  • এছাড়াও, বাংলাদেশের অন্যতম কবি হেলাল হাফিজ এ ঘটনায় ক্রোধে ফেঁটে পড়েন এবং ক্ষোভ প্রকাশ করে কালজয়ী "নিষিদ্ধ সম্পাদকীয়" কবিতাটি লিখেন।

রশীদ তালুকদারের চিত্রকর্ম

ছাত্র আন্দোলনে আসাদের মৃত্যুতে প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে বাংলাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় আলোকচিত্র শিল্পী রশীদ তালুকদার তার ক্যামেরায় স্থিরচিত্র হিসেবে ছাত্র-জনতার দীর্ঘ মিছিলসহ আসাদের শার্টের ছবি ওঠান।[]

হরতাল আহ্বান

১৯৭০ সালের ১৫ জানুয়ারি তারিখের সিদ্ধান্ত মোতাবেক ২০ জানুয়ারি: শহীদ আসাদ দিবস হিসেবে পালনের জন্য পূর্ব বাংলা বিপ্লবী ছাত্র ইউনিয়ন ঐদিন পূর্ণ দিবস হরতাল আহ্বান করে।

শার্ট হস্তান্তর

২৩ জানুয়ারি, ২০১০ইং তারিখে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর কর্তৃক ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানে শহীদ আসাদ, শহীদ রুস্তম ও শহীদ মতিউর স্মরণে শ্রদ্ধা নিবেদন অণুষ্ঠানে শহীদ আসাদের ভাই অধ্যাপক এইচ এম মনিরুজ্জামান আসাদের শার্ট হস্তান্তর করবেন বলে জানিয়েছেন। এছাড়াও, বেগমগঞ্জ, নোয়াখালীর কালু মিয়া শেখের পুত্র শহীদ রুস্তমের রক্তমাখা শার্ট জাদুঘরে জমা দিয়েছেন তার সহযোদ্ধা মুক্তিযোদ্ধা আবদুল খালেক ও মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল আহাদ।[]

Remove ads

স্মারক চিহ্নসমূহ

  • বাংলাদেশের অনেক জায়গায় জনগণ আইয়ুব খানের নামফলক পরিবর্তন করে শহীদ আসাদ রাখে বিশেষতঃ জাতীয় সংসদ ভবনের ডান পার্শ্বে অবস্থিত আইয়ুব গেটের পরিবর্তে আসাদ গেট রাখা হয়। এছাড়াও, আইয়ুব এভিন্যিউ'র পরিবর্তে আসাদ এভিনিউ এবং আইয়ুব পার্কের পরিবর্তে আসাদ পার্ক নামকরণ করা হয়।
  • ১৯৭০ সালে ১ম শহীদ আসাদ দিবসে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের প্রধান ফটকে জনগণ "ঊনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থানের স্মারক ও অমর আসাদ" শিরোনামে একটি স্মৃতিফলক নির্মাণ করে যেখানে আসাদ গুলিতে নিহত হয়েছিলেন।
  • শিবপুর ও ধানুয়া এলাকার স্থানীয় লোকজন ১৯৭০ সালে শিবপুর শহীদ আসাদ কলেজ নামে একটি মহাবিদ্যালয় এবং ১৯৯১ সালে আসাদের নিজের গ্রাম ধানুয়ায় স্থানীয় অধিবাসীরা শহীদ আসাদ কলেজিয়েট গার্লস স্কুল ও কলেজ প্রতিষ্ঠা করে।[]
  • প্রতি বছরই জানুয়ারির ২০ তারিখে শহীদ আসাদের দেশমাতৃকার সেবায় মুক্তি এবং স্বাধীনতার লক্ষ্যে তার মহান আত্মত্যাগ ও অবদানকে বাঙ্গালী জাতি অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে গভীর শ্রদ্ধায় শহীদ আসাদ দিবস পালন করে থাকে।
  • ২০২০ সালে ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ হলে তার নামে একটি স্মৃতি পাঠাগার তৈরী করা হয়
Remove ads

গণজাগরণ

আসাদের স্মরণে নির্মিত ভাস্কর্য হচ্ছে গণজাগরণ। ১৯৯২ সালে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের জরুরি বিভাগের গেটের উত্তরদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের বা ডাকসু'র উদ্যোগে আসাদের স্মৃতিকে অমর ও অক্ষয় করে তুলতে এবং গণঅভ্যুত্থানের চেতনাকে জাগ্রত রাখতে গণজাগরণ নামে নির্মিত হয় আসাদের স্মৃতিস্তম্ভ। শিল্পী প্রদ্যোত দাস এ ভাস্কর্যটি নির্মাণ করেছিলেন।

১৯৯২ সালের ২৪ জানুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন ভাইস-চ্যান্সেলর অধ্যাপক মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান মিয়া ও আসাদ স্মৃতি পরিষদের তৎকালীন সভাপতি অধ্যাপক সাখাওয়াত আলী'র উপস্থিতিতে এ ভাস্কর্য উদ্বোধন করেন শহীদ আসাদের বড় ভাই ইঞ্জিনিয়ার রশিদুজ্জামান। নির্মাণের কয়েক বছরের মধ্যেই কর্তৃপক্ষীয় অবহেলায় স্থানীয় টোকাই ও দুর্বৃত্তদের দ্বারা ভাস্কর্যটি কাঁত হয়ে পড়ে। এরপর সেখান থেকে কোন একসময় এটি উধাও হয়ে যায়।[]

Remove ads

তথ্যসূত্র

আরও দেখুন

বহিঃসংযোগ

Loading related searches...

Wikiwand - on

Seamless Wikipedia browsing. On steroids.

Remove ads