শীর্ষ প্রশ্ন
সময়রেখা
চ্যাট
প্রসঙ্গ

আস্তানা

কাজাখস্তানের রাজধানী উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ

আস্তানাmap
Remove ads

আস্তানা (কাজাখ: Астана, রুশ: Астана) মধ্য এশিয়ার রাষ্ট্র কাজাখস্তানের রাজধানী শহর। এটি দেশটির উত্তর-মধ্যভাগে আকমোলা প্রশাসনিক অঞ্চলে ইশিম নদীর উৎসের কাছে একটি খনিজ-সমৃদ্ধ স্তেপ তৃণভূমি অঞ্চলের কেন্দ্রভাগে অবস্থিত। শহরটি অঞ্চলটির বাণিজ্যিক ও অর্থনৈতিক কেন্দ্র হিসেবে কাজ করে। এর পূর্বে ২০১৯ থেকে ২০২২ পর্যন্ত শহরটি নুর-সুলতান (কাজাখ: Нұр-Сұлтан, রুশ: Нур-Султан) নামে, ও তারও আগে ১৯৯৮ থেকে ২০১৯ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত আস্তানা নামে পরিচিত ছিল।[১০] ২০১৯ সালের জরিপ অনুযায়ী আস্তানায় ১০ লক্ষেরও বেশি লোকের বাস ছিল, ফলে এটি কাজাখস্তানের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর।[১১] দেশটির সর্ববৃহৎ শহর হল আলমাতি, যা ১৯৯১ থেকে ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত দেশটির রাজধানী শহর ছিল।

দ্রুত তথ্য আস্তানা Астана, দেশ ...

আস্তানা শহরটি ১৮২৪ সালে রুশ সেনাবাহিনীর একটি ঘাঁটি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয় ও এখানে একটি দুর্গ নির্মাণ করা হয়। তখন এর নাম ছিল আকমোলিনস্ক। ১৮৬৮ সালে এটি একটি প্রশাসনিক কেন্দ্রে পরিণত হয়। ১৯৩৯ সালে এটিকে একটি ওবলাস্ত বা প্রদেশের কেন্দ্র হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়; তখন এখানে ৩০ হাজারের কিছু বেশি অধিবাসী ছিল। ১৯৫০-এর দশকের মধ্যভাগে সোভিয়েত সরকার অকৃষ্ট ও অব্যবহৃত ভূমি অভিযান শুরু করলে শহরটির গুরুত্ব অনেক বৃদ্ধি পায়। ১৯৬০ সালে এটির নাম পরিবর্তন করে ৎসেলিনোগ্রাদ (রুশ "অকৃষ্ট ভূমির নগরী") রাখা হয়, কেননা সেসময় সোভিয়েত প্রধানমন্ত্রী নিকিতা খ্রুশ্চেভ উত্তর কাজাখস্তান অর্থনীতিকে উন্মুক্ত করার উদ্দেশ্যে অকৃষ্ট ভূমি কর্মসূচিটির প্রসারের জন্য কাজ করছিলেন। ১৯৬০ থেকে ১৯৬৫ সাল পর্যন্ত শহরটি কাজাখস্তানের উত্তরভাগের পাঁচটি প্রদেশ সংযুক্ত করে গঠিত একটি ক্রাইয়ের (প্রশাসনিক অঞ্চল) রাজধানী ছিল। সেসময় শহরটিতে বিপুলসংখ্যক নতুন ভবন ও স্থাপনা নির্মাণ করা হয় এবং শিক্ষক প্রশিক্ষণ, কৃষি, চিকিৎসাবিজ্ঞান, প্রকৌশল ও নির্মাণের জন্য অনেক উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করা হয়। ১৯৯১ সালে কাজাখস্তান স্বাধীনতা লাভের পর ১৯৯২ সালে শহরটির নাম বদলে আগমোলা ("শ্বেতসমাধি") রাখা হয়। ১৯৯৪ সালে একটি সংসদীয় প্রস্তাব পাশের পরবর্তী বছরে অর্থাৎ ১৯৯৫ সালে রাষ্ট্রপতির একটি অধ্যাদেশবলে আগমোলাকে আলমাতিকে প্রতিস্থাপন করে কাজাখস্তান প্রজাতন্ত্রের নতুন রাজধানীর মর্যাদা দেওয়া হয়। দক্ষিণ কাজাখস্তানে আলমাতি শহর থেকে সরকারি মন্ত্রণালয় ও প্রশাসনিক কার্যালয়গুলি এখানে স্থানান্তরিত হতে শুরু করে। ১৯৯৭ সালে ডিসেম্বর মাসে স্থানান্তর সম্পূর্ণ হয়। ১৯৯৮ সালের জুন মাসে নতুন রাজধানী শহরটিকে আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হয় এবং সেসময় এর নাম বদলে আস্তানা রাখা হয়। কাজাখ ভাষায় আস্তানা শব্দের অর্থ "রাজধানী"। কাজাখস্তানের মোটামুটি কেন্দ্রভাগে অবস্থানের কারণে এবং প্রধান অর্থনৈতিক বাজারগুলির (রাশিয়া ও ইউরোপ) কাছাকাছি অবস্থিত বলে আস্তানাকে রাজধানী হিসেবে নির্বাচন করা হয়। কাজাখস্তানের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি নুরসুলতান নাজারবাইয়েভ দেশটির খনিজ তেল রপ্তানি করে প্রাপ্ত মুনাফা ব্যয় করে আস্তানা শহরের ব্যাপক সম্প্রসারণ ও পুনর্নির্মাণ সম্পন্ন করেন। শহরটি নতুন প্রশস্ত রাজপথ ও নীল-সোনালী ভবনগুলির পরিকল্পনার জন্য সরকার জাপানি স্থপতি কুরোকাওয়া কিশৌকে দায়িত্ব দেয়। ব্রিটিশ স্থপতি নর্ম্যান ফস্টারকে ২০০ ফুটেরও বেশি উঁচু পিরামিড আকৃতির নতুন "শান্তি ও রফা প্রাসাদ"-টিকে নকশা করার দায়িত্ব দেওয়া হয়। নতুন এই প্রাসাদটিতে একটি গ্রন্থাগার ও একটি গীতিনাট্যশালা আছে। রাষ্ট্রপতি নুরসুলতান রাষ্ট্রপতির পদ থেকে অব্যাহতি নেয়ার এক দিন পরে ২০১৯ সালের ২০শে মার্চ তাঁর সম্মানে শহরটির নাম বদলে নুর-সুলতান রাখা হয়। তবে ২০২২ সালে সেপ্টেম্বর মাসে কাজাখস্তানের নতুন রাষ্ট্রপতি কাসিম-জোমার্ত তোকাইয়েভ শহরটির নাম বদলে আবার "আস্তানা" রাখেন।

আস্তানা শহরটি একটি পরিবহন কেন্দ্র, যার সাথে প্রাকৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধ অঞ্চলগুলির সহজ সংযোগ আছে। শহরটির প্রকৌশলীয় অবকাঠামোটিও টেকসই। বিদেশী অর্থ বিনিয়োগকারীদেরকে উৎসাহিত করার চেষ্টায় শহরটিকে একটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের মর্যাদা দেওয়া হয়, যেখানে আমদানি ও রপ্তানিকৃত পণ্যদ্রব্যের উপরে কোনও শুল্ক প্রদান করতে হয় না এবং নির্মাণ ও ভূমি-উন্নয়ন প্রকল্পগুলির জন্য রেয়াতী কর ব্যবস্থা বিদ্যমান। এটি দেশটির একটি গুরুত্বপূর্ণ রেল সংযোগস্থলও বটে। এটি আন্তঃকাজাখস্তান ও দক্ষিণ সাইবেরীয় রেলপথ দুইটির সংযোগস্থলে অবস্থিত। নুর-সুলতানের প্রধান শিল্পগুলির মধ্যে মাংস-মোড়কজাতকরণ এবং কৃষি যন্ত্রপাতি ও রাসায়নিক দ্রব্যাদি উৎপাদন উল্লেখ্য। নুর-সুলতানের চারপাশের এলাকাটি একটি গুরুত্বপূর্ণ খাদ্যশস্য-উৎপাদনী অঞ্চল।

Remove ads

ভূগোল

সারাংশ
প্রসঙ্গ

জলবায়ু

Thumb
নুর-সুলতান (আস্তানা) শহর এবং তার আশেপাশের এলাকার কৃত্রিম উপগ্রহ-থেকে-তোলা আলোকচিত্র

আস্তানা হচ্ছে পৃথিবীর দ্বিতীয় শীতলতম রাজধানী শহর। প্রথম স্থানে আছে মঙ্গোলিয়ার রাজধানী উলানবাটোর। উলানবাটোরের পরে কানাডার অটোয়া দ্বিতীয় শীতলতম রাজধানী হিসেবে পরিচিত ছিলো। কিন্তু ১৯৯৭ সালে আস্তানা রাজধানী হিসেবে ঘোষিত হওয়ার পরে দ্বিতীয় শীতলতম রাজধানী শহরের স্বীকৃতি পায়। আস্তানায় গ্রীষ্মকালে কালেভদ্রে খুবই সংক্ষিপ্ত বৃষ্টিপাত হয়। এর শীতকাল খুবই দীর্ঘ, শীতল এবং শুষ্ক। নভেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে এপ্রিলের শুরু পর্যন্ত শহরের নদীগুলোতে বরফ জমাট বেঁধে থাকে।

আরও তথ্য আস্তানা-এর আবহাওয়া সংক্রান্ত তথ্য, মাস ...
Remove ads

জনসংখ্যা

২০১৭ সালের কাজাখস্তানের জরিপ অনুযায়ী আস্তানার মোট জনসংখ্যা ছিল ১,০২৯,৫৫৬ জন, যা ২০০২ সালের জনসংখ্যার চেয়ে ডাবল এবং তখন জনসংখ্যা ছিল ৪৯৩,০০০ জন। ২০১৪ সালের এক পরিসংখ্যান অনুযায়ী শহরের মোট জনসংখ্যার ৬৫.২% কাজাখ, ২৩.৮% রুশ, ২.৯% ইউক্রেনীয়, ১.৭% তাতার, ১.৫% জার্মান এবং ৪.৯% অন্যান্য জাতীয়গোষ্ঠির লোক বসবাস করে।

অনেকেই যুক্তি দিয়েছিলেন যে উত্তর-পশ্চিম দিকে জাতিগত কাজাখিদের আকৃষ্ট করার অভিযান রাজধানী স্থানান্তরিত করার মূল কারণ ছিল, যা প্রাক্তন রাজধানী আলমাতি এবং ভূমিকম্পের অঞ্চলে এর অবস্থানের জন্য সম্প্রসারণের জায়গার অভাবে অফিসিয়ালি সরানো হয়েছিল। আস্তানা আলমাতির চেয়ে 'কাজাখস্তানের শিল্প কেন্দ্রের কাছাকাছি ছিল।[১৩]

১৯৮৯ সালে স্তেলিনগ্রাদের জনসংখ্যা ছিল ২৮১,০০০ জন এবং জাতিগত মিশ্রণ ছিল প্রায় ১৭.৭% কাজাখ, ৫৪.১% রুশ এবং ২৮.২% অন্যান্য জাতিগোষ্ঠীর।[১৪]

ইসলাম এ শহরের প্রধান ধর্ম। নূর-সুলতানে প্রচলিত অন্যান্য ধর্মগুলি হল খ্রিস্টান ধর্ম (প্রাথমিকভাবে রুশ অর্থোডক্স, রোমান ক্যাথলিক এবং প্রোটেস্ট্যান্টিজম), ইহুদী ও বৌদ্ধ।[১৫] বিশ্ব ও ঐতিহ্যবাহী ধর্মের নেতাদের কংগ্রেস আয়োজন করার জন্য ২০০৬ সালে প্যালেস অব পিস অ্যান্ড রিকনসিলিয়েশন বিশেষভাবে নির্মিত হয়েছিল। এটিতে বিভিন্ন ধর্মের থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। যেমন: ইহুদী, ইসলাম, খ্রিস্টান, বৌদ্ধ, হিন্দু ধর্ম, তাও ধর্ম এবং অন্যান্য ধর্ম।

Remove ads

ক্রীড়া

আস্তানা শহরে বিভিন্ন ধরনের ক্রীড়া দল রয়েছে। প্রধান ফুটবল দলটি হল আস্তানা এফসি যা কাজাখস্তান প্রিমিয়ার লিগের একটি বড় মানের দল। ২০০৯ সালে প্রতিষ্ঠিত এফসি আস্তানা চারটি লিগ শিরোপা, তিনটি কাজাখ কাপ এবং দুটি কাজাখ সুপার কাপ জিতেছে।[১৬] তাদের ঘরের মাঠ হল আস্তানা অ্যারিনা, যা কাজাখস্তান জাতীয় ফুটবল দল এবং এফসি বায়তেরেকের ঘরের মাঠ হিসাবে কাজ করে। এফসি বায়তেরেক কাজাখস্তান ফার্স্ট ডিভিশনের সদস্য। ২০১২ সালে যুব ফুটবল বিকাশের জন্য এটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।[১৭] এফসি আস্তানা-১৯৬৪ কাজীমুকন মুনাইতপসভ স্টেডিয়ামে ভিত্তিক একটি ফুটবল দল, যারা আস্তানা পৌর ফুটবল লিগে খেলেছে। ক্লাবটির সবচেয়ে সফল বছরগুলি ছিল ২০০০ এর দশক, যখন তারা ৩টি লিগ শিরোপা জিতেছিল।

তথ্যসূত্র

Loading related searches...

Wikiwand - on

Seamless Wikipedia browsing. On steroids.

Remove ads