শীর্ষ প্রশ্ন
সময়রেখা
চ্যাট
প্রসঙ্গ
সূরা ইখলাস
কুরআন শরীফের ১১২তম সূরা উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
Remove ads
স্রষ্টার একত্ববাদের ঘোষণা [১] বা একনিষ্ঠতা (Arabic: الْإِخْلَاص, আল-ইখলাস ) [২] বা একত্ববাদ (আরবি: التوحيد, আত-তাওহীদ),[৩] যা সাধারণত সূরা আল-ইখলাস নামে পরিচিত, হলো কুরআনের ১১২ তম অধ্যায় (সূরা)।
কুরআন এর এই (সূরা)টি মুসলমাগণ বিশেষভাবে অনুশীলন করেন, এবং ইসলাম এর দ্বিতীয় উৎস (হাদিস) সূরাটিকে পুরো কুরআনের এক-তৃতীয়াংশের সমান বলে ঘোষণা করে। বলা হয় যে, সূরা ইখলাস (নবুয়ত লাভের পর) মুহাম্মাদ ও কুরাইশ পৌত্তলিকদের দ্বন্দ্ব চলাকালীন মুহাম্মাদ (সল্লল্লহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাথে আল্লাহর বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে চ্যালেঞ্জের জবাব দিয়েছিল।[৪]
আল-ইখলাস কেবল এই সূরার নামই নয়, এর বিষয়বস্তুর শিরোনামও, কারণ এটি একমাত্র তাওহীদের সাথে সম্পর্কিত। সাধারনত কুরআনের অন্যান্য সূরাগুলো তদ্বীয় একটি শব্দের নামে নামকরণ করা হয়েছে। তবে এই সূরাতে ইখলাস শব্দটি কোথাও পাওয়া যায় না। অর্থাৎ, এর অর্থ এবং বিষয় বিবেচনায় রেখে এ নাম দেওয়া হয়েছে।
Remove ads
সার সংক্ষেপ
- 1-4 স্রষ্টার একত্ববাদের ঘোষণা ও স্রষ্টার নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্যসমূহ প্রকাশ। [৫][৬]
ভাবানুবাদ
১. বল, তিনিই আল্লাহ, এক-অদ্বিতীয়।
২. আল্লাহ কারো মুখাপেক্ষী নন, সকলেই তাঁর মুখাপেক্ষী। [৭]
৩. তিনি কাউকে জন্ম দেননি এবং তাঁকেও জন্ম দেয়া হয়নি।
৪. এবং তাঁর সমতুল্য কেহই নেই।
আবৃত্তি ও স্মৃতিতে সংরক্ষণ
মুসলমানগণ সওয়াব এর কাজ হিসেবে কুরআন সম্পূর্ণভাবে বা এর অংশবিশেষ আবৃত্তি এবং মুখস্থ করে থাকেন। শুদ্ধভাবে (তাজবিদ অনুসারে) কুরআন পাঠ করাকে একটি অতুলনীয় ইবাদত হিসেবে গণ্য করা হয়।[৮]
অবতরণের পটভূমি
মুশরিকরা হযরত মুহাম্মদ (স:) - কে আল্লাহ্ তা'আলার বংশ পরিচয় সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেছিল , যার জওয়াবে এই সূরা নাযিল হয়। অন্য এক বিবরণে আছে যে , মদীনার ইহুদিরা এ প্রশ্ন করেছিল। আবার কোনো কোনো বর্ণনায় রয়েছে যে , তারা আরও প্রশ্ন করেছিল- "আল্লাহ্ তা'আলা কিসের তৈরি ? স্বর্ণ-রৌপ্য নাকি অন্য কিছুর?" এর জওয়াবে সূরাটি অবতীর্ণ হয়েছে ৷[৯][১০]
পাণ্ডলিপি ও অনুবাদ

পাঠ ও লিপি
- আবু আমর হাফস ইবনে সুলাইমান ইবনে আল মুগিরাহ ইবনে আবি দাউদ আল আসাদি আল কুফি (হাফস) প্রদত্ত আঞ্চলিক রীতিতে আল-ইখলাসের পাঠ:
بِسْمِ ٱللَّهِ ٱلرَّحْمَٰنِ ٱلرَّحِيمِ
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
قُلْ هُوَ ٱللَّهُ أَحَدٌ
1 কুল হুওয়াল্লাহু আহাদ
ٱللَّهُ ٱلصَّمَدُ
2 আল্লাহুস সামাদ
لَمْ يَلِدْ وَلَمْ يُولَدْ
3 লাম ইয়ালিদ ওয়ালাম ইউলাদ
وَلَمْ يَكُن لَّهُۥ كُفُوًا أَحَدٌۢ
4 ওয়ালাম ইয়াকুল লাহু কুফুওয়ান আহাদ
- আবু সাঈদ উসমান ইবনে সাঈদ আল কুতুবি প্রদত্ত আঞ্চলিক রীতিতে পাঠ:
بِسۡمِ اِ۬للَّهِ اِ۬لرَّحۡمَٰنِ اِ۬لرَّحِيمِ
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
قُلۡ هُوَ ا۬للَّهُ اَحَدٌ
1 কুল হুওয়াল্লাহু আহাদ্
اَ۬للَّهُ اَ۬لصَّمَدُ
2 আল্লাহুস্ সামাদ্
لَمۡ يَلِدۡ وَلَمۡ يُولَدۡ
3 লাম্ ইয়ালিদ্ ওয়ালাম্ ইউলাদ্
وَلَمۡ يَكُن لَّهُۥ كُفُؤًا اَحَدٌۢ
4 ওয়ালাম্ ইয়াকুল্লাহু কুফুআন আহাদ
বাংলা অনুবাদ
- বলুন ( হে নবি ), তিনি আল্লাহ এক ও অদ্বিতীয় ,
- তিনি কারো মুখাপেক্ষী নন ,
- তিনি কাউকে জন্ম দেননি ; কেউ তাঁকে জন্ম দেননি ,
- আর তাঁর সমতুল্য কেউই নেই ।
অনুবাদ:মীর ফজলে আলী
Remove ads
ব্যাখ্যা
সারাংশ
প্রসঙ্গ
ইসলামের প্রারম্ভিক বছরগুলোতে কুরআনের কিছু সূরা বিভিন্ন নামে পরিচিত ছিল, কখনও কখনও অঞ্চল অনুসারে বিভিন্ন সূরা বিভিন্ন নামে পরিচিত ছিল।[১১] এই সূরাটি সেগুলোর মধ্যে একটি। সূরাটি তাওহীদের একটি সংক্ষিপ্ত ঘোষণা, আল্লাহর একত্ববাদ সমন্বিত চারটি আয়াত। আল-ইখলাস অর্থ "বিশুদ্ধতা" বা "একনিষ্ঠতা"।
এটি মক্কায় নাকি মদিনায় অবতীর্ণ তা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে।তবে সূরাটি মক্কায় অবতীর্ণ হওয়ার তথ্যই সম্ভাব্য এবং যুক্তিযুক্ত, বিশেষত যেহেতু এটি আবিসিনিয়ার বিলাল দ্বারা প্রমাণিত হয়, যিনি তাঁর নিষ্ঠুর কর্তা দ্বারা নির্যাতিত হচ্ছিলেন এবং "আহাদ, আহাদ!" [(আল্লাহ) একক, একক!] বারবার বলছিলেন। উবাই ইবনে কা’ব হতে বর্ণিত যে, সূরাটি অবতীর্ণ হয় মুশরিকদের প্রশ্নের প্রেক্ষিতে: "হে মুহাম্মাদ! তোমার প্রতিপালকের বংশপরিচয় আমাদেরকে বল।"
কুরআন ১১২:১-২ স্রষ্টার একত্ববাদ
সূরা আল ইখলাসে চারটি আয়াত রয়েছে:
১১২:১. বলুন: তিনি আল্লাহ, (যিনি) একক। ১১২:২. আল্লাহ আস-সামাদ (অমুখাপেক্ষী)। ১১২:৩. না তিনি কাউকে জন্ম দিয়েছেন, না তিনি জন্ম নিয়েছেন। ১১২:৪. এবং কেউই তার সমতুল্য নয়।[২]
এ বিষয়ে "তাফসির ইবনে কাসির" এ বলা হয়েছে,
যখন ইহুদিরা বলে, ‘আমরা আল্লাহর পুত্র উযায়েরকে উপাসনা করি’ এবং খ্রিস্টানরা বলে, ‘আমরা আল্লাহর পুত্র মাসীহ (ঈসা) এর উপাসনা করি’ এবং জুরোস্ত্রীরা বলে, ‘আমরা সূর্য ও চাঁদের উপাসনা করি’ এবং মুশরিকরা বলে ‘আমরা মূর্তিপূজা করি,' আল্লাহ তার রাসূলের প্রতি অবতীর্ণ করেছেন, "বলুনঃ তিনিই আল্লাহ এক। তিনিই এক, একক, তার কোন সমকক্ষ নেই, কোন সহকারী নেই, প্রতিদ্বন্দ্বী নেই, সমান এবং তার তুলনাও নেই।"[২]
এই শব্দটি (আল-আহাদ) পরাক্রমশালী আল্লাহ ছাড়া আর কারও পক্ষে ব্যবহার করা যাবে না, কারণ তিনি (আল্লাহ) তার সমস্ত গুণাবলীতে ও কর্মে নিখুঁত।
Remove ads
হাদিস
সারাংশ
প্রসঙ্গ

হাদিস অনুসারে এ সূরাটি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ এবং সূরা ইখলাস কুরআনের একটি সম্মানীত অংশ:
- আবু সাইদ আল খুদরি বর্ণনা করেন, এক ব্যক্তি অন্য একজনকে (নামাযে) আবৃত্তি করতে শুনল: ‘বলুন (হে মুহাম্মাদ): তিনিই আল্লাহ, তিনিই এক।’ (১১২.১) এবং তিনি এটি বারবার আবৃত্তি করলেন। যখন সকাল হয়ে গেল, তখন তিনি নবীজির নিকটে গেলেন এবং তাকে সে সম্পর্কে অবহিত করলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, "তাঁর কসম যাঁর হাতে আমার জীবন, এটি কুরআনের এক তৃতীয়াংশের সমান।[১২][১৩]
- ইয়াহিয়া, ইবনে শিহাব থেকে বর্ণনা করেছেন যে হুমায়দ ইবনে আবদ-রহমান ইবনে আওফ তাকে বলেছিলেন, সূরাতুল ইখলাস (সূরা ১১২) কোরআনের এক তৃতীয়াংশের সমান এবং সূরাতুল মুলক, (সূরা ৬৭) এর পাঠকারীর পক্ষে সুপারিশ করে।[১৪]
- ‘আয়েশা কর্তৃক বর্ণিত: নবী এক ব্যক্তির অধীনে একদল সেনাবাহিনী প্রেরণ করেছিলেন, যিনি তাঁর সাহাবীদের সাথে নামাযে ইমামতি করতেন এবং (সূরা ১১২) দিয়ে তাঁর তেলাওয়াত শেষ করতেন: 'বলুন (ও মুহাম্মদ): "তিনিই আল্লাহ, তিনিই এক। " ' (১১২.১) তারা যখন (যুদ্ধ থেকে) ফিরেছিলেন, সাহাবিরা রাসূলের কাছে তাঁর কুরআন পাঠের কথা উল্লেখ করেছিল। তিনি (তাদের) বললেন, "তাকে জিজ্ঞাসা করুন তিনি কেন এমনটি করেন?" তারা তাকে জিজ্ঞাসা করেছিল এবং তিনি বলেছিলেন, "আমি এটি করি কারণ এতে করুণাময়ের গুণাবলীর উল্লেখ রয়েছে এবং আমি এটি (আমার প্রার্থনায়) আবৃত্তি করতে ভালবাসি।" নবী (তাদের) বললেন, "তাকে বলুন যে আল্লাহ তাকে ভালবাসেন"।[১৫]
- ইমাম মালিক ইবনে আনাস, উবাইদ ইবনে হুনায়েন থেকে লিপিবদ্ধ করেছেন যে তিনি আবু হুরায়রাহকে বলতে শুনেছেন যে, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে বাইরে গিয়েছিলাম এবং তিনি একজন লোককে আবৃত্তি করতে শুনেছিলেন - বলুন: তিনিই একমাত্র আল্লাহ। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘এটা ফরজ’ আমি জিজ্ঞাসা করলাম, 'ফরজ কী?' তিনি জবাব দিলেন, "জান্নাত"।[২]
- আবু সাইদ বর্ণনা করেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সাহাবীদের বললেন, তোমাদের মধ্যে কারও পক্ষে একরাতের মধ্যে এক তৃতীয়াংশ কোরআন তিলাওয়াত করা কি কঠিন? তারা বলেছিলেন, হে আল্লাহর রসূল, আমাদের মধ্যে এমন কাজ করার ক্ষমতা কার? আল্লাহ প্রেরিত রাসূল জবাব দিয়েছিলেন: "আল্লাহ এক। তিনি অমুখাপেক্ষী... ' (সূরা আল-ইখলাস ১১২.১ .. শেষ অবধি) কুরআনের এক তৃতীয়াংশের সমান।[১৬][১৭]
- আল বুখারী, আমরাহ বিনতে আবদুর রহমান (যিনি নবীজীর স্ত্রী আয়েশার নিকটেই থাকতেন) থেকে বর্ণনা করেন, আয়েশা বলেছিলেন, "নবী একজন লোককে যুদ্ধ অভিযানের নেতা হিসাবে প্রেরণ করেছিলেন এবং তিনি (ঐ নেতা) সৈনিকদের নামাযে নেতৃত্ব দিতেন (ইমামতি করতেন)। নামাযে সাহাবীগণ এবং তিনি (কিরাতে) বলতেন: 'তিনিই আল্লাহ এক...' (১১২:১)। অতঃপর তারা ফিরে এসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট তা (এ ঘটনা) উল্লেখ করেন এবং রাসূল বলেন, "তাকে (নেতা) জিজ্ঞাসা করুন কেন তিনি তা করেন"। তারা তাকে জিজ্ঞাসা করলেন এবং তিনি বললেন, কারণ এটি দয়াময়ের (আল্লাহর) বর্ণনা এবং আমি তা আবৃত্তি করতে ভালবাসি। নবীজী (উত্তর শুনে) বললেন, তাকে জানিয়ে দাও যে, মহান আল্লাহ তাকে ভালবাসেন।[২] ইমাম বুখারি হাদিসটি তার গ্রন্থে স্থান দিয়েছেন। নাসাঈ এবং মুসলিম শরীফেও হাদিসটি রয়েছে।
- একটি বিশুদ্ধ হাদীসে বলা হয়েছে 'সকাল-সন্ধ্যায় সূরা আল-ইখলাস এবং আল-মু‘আওয়িদ্বাতান (সূরা আল-ফালাক ও সূরা আন-নাস) তিনবার আবৃত্তি করুন; তারা আপনাকে সবকিছু থেকে রক্ষা করবে। ' [আত-তিরমিযী] মুহাম্মদ নাসিরুদ্দিন আল-আলবানী হাদিসটির সত্যতা আঠাশ-ঊনত্রিশ বলে মন্তব্য করেছেন।[১৮]
- আয়েশা থেকে বর্ণিত, "নবী যখনই প্রতি রাতে বিছানায় যেতেন, তখন তিনি একসাথে তার হাত দুটো রাখতেন এবং সূরা ইখলাস, সূরা আল-ফালাক ও সূরা নাস পড়ার পর তার গায়ে বুলিয়ে দিতেন এবং মাথা থেকে শুরু করে তার শরীরের ওপর ঘষতেন। যা তিনি তিনবার করতেন।[১৯][২০]
- ইমাম আহমাদ বর্ণনা করেছেন যে, ইবনে উমর বলেছেন, আমি নবীকে সকালে ও সূর্যাস্তের পরে তেলাওয়াত করতে দেখেছি, বলুন: "হে কাফেরগণ! "'(সূরা কাফেরুন) এবং বলুন: "তিনিই আল্লাহ এক।"[২]
Remove ads
আরও দেখুন
- সূরা ফালাক
- সূরা নাস
- আল মু’আওয়িদ্বাতান
তথ্যসূত্র
বহিঃসংযোগ
Wikiwand - on
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Remove ads