শীর্ষ প্রশ্ন
সময়রেখা
চ্যাট
প্রসঙ্গ
ইমরান খান
পাকিস্তানের ২২তম প্রধানমন্ত্রী ও প্রাক্তন ক্রিকেটার উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
Remove ads
ইমরান আহমদ খান নিয়াজি (উর্দু: عمران احمد خان نیازی ; জন্ম: ৫ অক্টোবর ১৯৫২) একজন পাকিস্তানি রাজনীতিবিদ ও সাবেক ক্রিকেটার। তিনি ২০১৮ সালের আগস্ট মাস থেকে ২০২২ সালের এপ্রিল মাস পর্যন্ত পাকিস্তানের ২২তম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি রাজনৈতিক দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই)-এর প্রতিষ্ঠাতা এবং ১৯৯৬ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত এই দলের চেয়ারম্যান ছিলেন। তিনি ১৯৮০-এর দশক থেকে ১৯৯০-এর দশকের শুরুর ভাগ পর্যন্ত পাকিস্তান জাতীয় ক্রিকেট দলের অধিনায়ক ছিলেন।
লাহোরে জন্মগ্রহণকারী ইমরান খান কেবল কলেজ, অক্সফোর্ড থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেন। তিনি ১৯৭১ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ দিয়ে তার আন্তর্জাতিক ক্রিকেট জীবন শুরু করেন। তিনি ১৯৯২ সাল পর্যন্ত খেলা চালিয়ে যান এবং ১৯৮২ থেকে ১৯৯২ পর্যন্ত সবিরামভাবে অধিনায়কত্ব করে যান। তার অধিনায়কত্বে পাকিস্তান ১৯৯২ ক্রিকেট বিশ্বকাপ জয় লাভ করে, যা এই প্রতিযোগিতায় পাকিস্তানের একমাত্র বিজয়। বিশ্ব ক্রিকেটের সর্বকালের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার ইমরান খানের নাম আইসিসি ক্রিকেট হল অব ফেমেও অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। খেলোয়াড়ী জীবন শেষ করে তিনি ১৯৯৬ সালে পাকিস্তান তেহরিক-ই-পাকিস্তান (পিটিআই) গঠন করে রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হন। তিনি ২০০২ সালের সাধারণ নির্বাচনে জাতীয় সংসদে আসন লাভ করেন এবং ২০০৭ সাল পর্যন্ত মিয়াঁওয়ালি থেকে বিরোধী দলীয় সদস্য ছিলেন। পিটিআই ২০০৮ সালের সাধারণ নির্বাচন বর্জন করে এবং ২০১৩ সালের সাধারণ নির্বাচনে জনগণের ভোটে দ্বিতীয় বৃহত্তম দল হয়ে ওঠে। ২০১৮ সালের সাধারণ নির্বাচনে পিটিআই জাতীয় সংসদে বৃহত্তম দল হয়ে ওঠে এবং স্বাধীন দলগুলোর সাথে জোট সরকার গঠন করে ২০১৮ সালের ১৮ আগস্ট খান পাকিস্তানের ২২তম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন।[৪]
২০২৩ সালের ৯ই মে ইসলামাবাদ উচ্চ আদালতের আনীত দুর্নীতির দায়ে ইমরান খান গ্রেপ্তার হন। সারা পাকিস্তানে তার সমর্থকেরা মিছিল করে, যার ফলে সেনা মোতায়ন করে তার সমর্থকদের গ্রেপ্তার করা হয়। মুক্তির পর খান তার গ্রেপ্তারের জন্য সেনাপ্রধান আসিম মুনিরকে দায়ী করেন। বিদেশে কূটনীতিক ভ্রমণকালে গৃহীত রাষ্ট্রের জিম্মায় থাকা উপহার সামগ্রী কেনা বেচার অপরাধে দোষী সাবস্ত করে ২০২৩ সালের ৫ই আগস্ট তাকে তিন বছরের জেল দেওয়া হয়। ২০২৩ সালের ২৯শে আগস্ট একজন পাকিস্তানির আপিলের ভিত্তিতে আদালত ইমরান খানের তিন বছরের জেল বাতিল করে তার জামিন মঞ্জুর করেন। তথাপি রাষ্ট্রীয় গোপনীয়তা ফাঁস ও অফিসিয়াল সিক্রেটস আইন লংঘন সংক্রান্ত কূটনীতিক সাইফার মামলায় কারারুদ্ধ থাকতে হয়। ২০২৪ সালের ৩০শে জানুয়ারি বিশেষ আদালত ইসলামাবাদে সরকারের কাছে ওয়াশিংটনে নিযুক্ত পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূতের প্রেরিত গোপন তার বার্তার জনসম্মুখে আনার অভিযোগে ইমরান খানকে ১০ বছরের কারাদন্ডাদেশ প্রদান করে।
Remove ads
জন্ম ও পরিবার
ইমরান খান ১৯৫২ সালের ৫ই অক্টোবর লাহোর, পাঞ্জাব, পাকিস্তান জন্মগ্রহণ করেন।[৫] পূর্ববর্তী কিছু প্রতিবেদনে বলা হয় তিনি ১৯৫২ সালের ২৫শে নভেম্বর জন্মগ্রহণ করেন।[৬][৭][৮][৯] প্রতিবেদনে বলা হয় পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড ভুলবশত তার পাসপোর্টে ৫ই অক্টোবর উল্লেখ করেছিল।[১০] ইমরান খান পুরপ্রকৌশলী ইকরামুল্লাহ খান নিয়াজি ও তার স্ত্রী শওকত খানুমের একমাত্র পুত্র। তার চার বোন রয়েছে।[১১] উত্তর-পশ্চিম পাঞ্জাবের মিয়াঁওয়ালিতে দীর্ঘকাল যাবত বসবাসরত তার পরিবার পশতু বংশোদ্ভূত এবং নিয়াজি গোত্রের অন্তর্গত।[১২] তার পূর্বপুরুষদের একজন হাইবাত খান নিয়াজি ১৬শ শতাব্দীতে শের শাহ সুরির অন্যতম সেনাপতি ও পাঞ্জাবের গভর্নর ছিলেন।[১৩][১৪] ইমরান খানের মায়ের দিক থেকে একাধিক ক্রিকেটার এসেছেন যারা পাকিস্তানের প্রতিনিধিত্ব করেছেন, তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন জাভেদ বুরকি ও মাজিদ খান।[১৫] মায়ের দিক থেকে তিনি সুফি যোদ্ধা-কবি ও পশতু বর্ণমালার উদ্ভাবক পির রোশনের বংশধর। তার মায়ের পূর্বপুরুষদের ভিটা খাইবার পাখতুনখোয়ার দক্ষিণ ওয়াজিরিস্তানের কানিগুরাম শহরে।[১৬] তার মায়ের পরিবার ৬০০ বছর ভারতের পাঞ্জাবের জলন্ধরের বস্তি দনিশমন্দায় বসবাস করত এবং পাকিস্তানের স্বাধীনতার পর তারা লাহোরে পাড়ি জমায়।[১৭][১৮]
Remove ads
রাজনৈতিক কর্মজীবন
সারাংশ
প্রসঙ্গ
প্রাথমিক বছর

ক্রিকেটীয় কর্মজীবনে খানকে একাধিকবার রাজনৈতিক পদের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। ১৯৮৭ সালে, তৎকালীন রাষ্ট্রপতি মুহাম্মদ জিয়া-উল-হক তাকে পাকিস্তান মুসলিম লীগে (পিএমএল) রাজনৈতিক পদের প্রস্তাব দেন যা তিনি প্রত্যাখ্যান করেন। [১৯] নওয়াজ শরিফ তাকে তার রাজনৈতিক দলে যোগদানের আমন্ত্রণও জানিয়েছিলেন। [১৯]
১৯৯৩ সালে, মঈন কুরেশির তত্ত্বাবধায়ক সরকার খানকে পর্যটন রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিযুক্ত করেন এবং সরকার ভেঙে না যাওয়া পর্যন্ত তিন মাসের জন্য কার্যভারেও অধিষ্ঠিত ছিল। [২০]
২৫ এপ্রিল ১৯৯৬ সালে, খান পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) নামে একটি রাজনৈতিক দল প্রতিষ্ঠা করেন। [১৫][২১] তিনি ১৯৯৭ সালের পাকিস্তানের সাধারণ নির্বাচনে পিটিআই-এর প্রার্থী হিসাবে দুটি নির্বাচনী এলাকা - এনএ-৫৩, মিয়ানওয়ালি ও এনএ-৯৪, লাহোর থেকে পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদের আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন কিন্তু জয়ী হতে পারেননি এবং উভয় আসনেই পিএমএল (এন) এর প্রার্থীদের কাছে হেরে যান। [২২]
খান ১৯৯৯ সালে জেনারেল পারভেজ মোশাররফের সামরিক অভ্যুত্থানকে সমর্থন করেছিলেন,[২৩] ধারণা করেছিলেন যে মোশাররফ "দুর্নীতির অবসান ঘটাবেন, রাজনৈতিক মাফিয়াদের খালি করবেন"। [২৪] খানের মতে, তিনি ২০০২ সালে প্রধানমন্ত্রীর জন্য মোশাররফের পছন্দ ছিলেন কিন্তু প্রস্তাব ফিরিয়ে দেন। [২৫] খান ২০০২ সালের অক্টোবরে পাকিস্তানের সাধারণ নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন যা ২৭২টি নির্বাচনী এলাকা জুড়ে হয়েছিল এবং যদি তার দল সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোট না পায় তবে জোট গঠনের জন্য তিনি প্রস্তুত ছিলেন। [২৬] তিনি মিয়ানওয়ালি থেকে নির্বাচিত হন। [২৭] ২০০২ সালের গণভোটে, খান সামরিক স্বৈরশাসক জেনারেল মোশাররফকে সমর্থন করেছিলেন, যখন সমস্ত মূলধারার গণতান্ত্রিক দল সেই গণভোটকে অসাংবিধানিক বলে ঘোষণা করেছিল। [২৮] তিনি কাশ্মীর ও পাবলিক অ্যাকাউন্টস সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির অংশ হিসাবেও কাজ করেছেন। [২৯] ৬ মে ২০০৫-এ, কিউবার গুয়ানতানামো বে নেভালের একটি মার্কিন সামরিক কারাগারে কোরআন অবমাননার বিষয়ে নিউজউইকের গল্পে মুসলিম বিশ্বের দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য খানকে "সর্বাধিক সরাসরি দায়ী" হিসাবে দ্য নিউ ইয়র্কারে উল্লেখ করা হয়েছিল।[৩০] জুন ২০০৭ সালে, খান সংসদের ভিতরে ও বাইরে রাজনৈতিক বিরোধীদের মুখোমুখি হন। [৩১]
২ অক্টোবর ২০০৭-এ, সর্বদলীয় গণতান্ত্রিক আন্দোলনের অংশ হিসাবে, খান ৬ অক্টোবর নির্ধারিত রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের প্রতিবাদে পার্লামেন্ট থেকে পদত্যাগ করার জন্য আরও ৮৫ জন সংসদ সদস্যের সাথে যোগ দেন, যেটি জেনারেল মোশাররফ সেনাপ্রধানের পদ থেকে পদত্যাগ না করেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছিলেন। [৩২] ৩ নভেম্বর ২০০৭-এ, রাষ্ট্রপতি মোশাররফ পাকিস্তানে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করার পর খানকে গৃহবন্দী করা হয়। পরে খান পালিয়ে আত্মগোপন করেন। [৩৩] তিনি অবশেষে ২৪ নভেম্বর পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র বিক্ষোভে যোগ দিতে আত্মগোপন থেকে বেরিয়ে আসেন। [৩৪] সমাবেশে, খানকে ইসলামী জমিয়ত-ই-তালাবার ছাত্র কর্মীরা ধরে নিয়েছিল এবং মোটামুটি ব্যবস্থা করেছিল। [৩৫] প্রতিবাদের সময় তাকে গ্রেফতার করা হয় এবং তাকে পাঞ্জাব প্রদেশের ডেরা গাজী খান কারাগারে পাঠানো হয় যেখানে মুক্তি পাওয়ার আগে তিনি কয়েকদিন কারাবাস ভোগ করেছিলেন। [৩৬]
ইমরানকে ক্ষমতা থেকে সরাতে বিরোধী দলগুলো একজোট হয়ে ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে পাকিস্তান ডেমোক্রেটিক মুভমেন্ট (পিডিএম) গঠন করে। বছর দেড়েকের মাথায় এই পিডিএম পার্লামেন্টে ইমরানের বিরুদ্ধে অনাস্থা ভোটের প্রস্তাব তোলে। দলীয় কিছু নেতা বিরোধী শিবিরে হাত মেলালে ওই ভোটে হেরে যান তিনি। [৪]
২০২২ সালের ৯ মে ইমরান খানকে আল-কাদির ট্রাস্ট মামলায় ইসলামাবাদ হাইকোর্টের বাইরে থেকে সর্বশেষ গ্রেফতার করেছে দেশটির ন্যাশনাল অ্যাকাউন্টিবিলিটি ব্যুরো রেঞ্জার্সের সদস্যরা। রেঞ্জার্সের বাহিনী একটি কালো ভিগো গাড়িতে করে নিয়ে যায়।[৩৭][৩৮] পরবর্তীতে তাকে জামিনে মুক্ত করে দেওয়া হয়।[৩৯][৪০] ২০২২ সালের ৩ নভেম্বর পিটিআইয়ের লংমার্চের বহর ওয়াজিরাবাদে পৌঁছালে ইমরান খানকে হত্যার চেষ্টা হয়। পায়ে বেশ কয়েকটি গুলি লাগে তাঁর। তখন লংমার্চ বন্ধ ঘোষণা করেন ইমরান। ২০২২ সালের ১০ এপ্রিল ঘড়ির কাঁটা মধ্যরাত ১২টা ছোঁয়ার পরপরই ইমরান খানের প্রধানমন্ত্রিত্ব শেষ হয়ে যায়।


Remove ads
ইমরানের জেল
প্রায় ১৮ মাস ধরে কারাগারে বন্দী আছেন ইমরান খান। এবার উনিশ কোটি পাউন্ডের আর্থিক দুর্নীতি মামলায় দোষী সাব্যস্ত হলেন পাকিস্তানের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী। মামলায় দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন তার স্ত্রী বুশরা বিবিও। ২০২৫ সালের ১৭ জানুয়ারি রাওয়ালপিন্ডির একটি দুর্নীতি দমন আদালতের বিচারক ইমরান খানকে দোষী সাব্যস্ত করে তাকে ১৪ বছরের কারাবাসের সাজা শুনিয়েছেন। আর তার স্ত্রী বুশরার সাত বছরের কারাদণ্ড হয়েছে।[৪১]
তথ্যসূত্র
বহিঃসংযোগ
Wikiwand - on
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Remove ads