শীর্ষ প্রশ্ন
সময়রেখা
চ্যাট
প্রসঙ্গ
উল্কা বৃষ্টি
উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
Remove ads
উল্কা বৃষ্টি হচ্ছে এক ধরনের আকাশ সম্বন্ধীয় ঘটনা যার ফলে মহাকাশ থেকে অনেক উল্কা এসে পৃথিবীর মাটিতে আছড়ে পড়ে অথবা তা মাটিতে পতিত হওয়ার আগেই মিলিয়ে যায়। উল্কা বৃষ্টি প্রধানত রাতের আকাশে দেখা যায়। উল্কা বৃষ্টি হয় কারণ মহাকাশে যখন কোনো ধুমকেতুর বিস্ফোরণ হয় তখন তার ধ্বংসাবশেষ পৃথিবীর অভিকর্ষ বলের প্রভাবে পৃথিবীর পৃষ্ঠে আসতে থাকে। এর ফলে পৃথিবী থেকে তা উল্কা বৃষ্টি হিসেবে দেখা যায়। অস্বাভাবিক উল্কা বৃষ্টি উল্কা ঝড় নামেও পরিচিত,যা ঘণ্টায় এক হাজারেরও বেশি উল্কা পৃথিবীতে এসে পড়ে। বেশির ভাগ উল্কা বৃষ্টিই শস্য দানার চেয়েও ছোটো।

Remove ads
উল্কা বৃষ্টির ইতিহাস
সারাংশ
প্রসঙ্গ

আধুনিক যুগে সর্বপ্রথম সবচেয়ে বিরাট উল্কা বৃষ্টি হয় ১৮৩৩ খ্রিষ্টাব্দে যা লিওনিড নামে পরিচিত। আনুমানিক ঘণ্টায় এক হাজারেরো বেশি উল্কা পৃথিবীতে এসে পড়েছিল। কিন্তু অন্যদিকে, দক্ষিণ আমেরিকার রকি মাউন্টেইন্স এ উল্কা বৃষ্টি কিছুটা কমার পর তা ৯ ঘণ্টার পর দেখা যায় দু-হাজারের মতো। আমেরিকান ডেনিসন অমস্টেড(১৭৯১-১৮৫৯) বিষয়টি খুব পরিষ্কারভাবে বর্ণনা করেন।[১] ১৮৩৩ খ্রিষ্টাব্দের শেষ দিকে এ বিষয়ে বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করার পর তিনি ১৮৩৪ খ্রিস্টব্দে এই বিষয়টি আমেরিকান জার্নাল অফ সাইন্স অ্যান্ড আর্টস এ উপস্থাপন করেন, যা ১৮৩৪ খ্রিষ্টাব্দের জানুয়ারি-এপ্রিল মাসের দিকে এবং ১৮৩৬ খ্রিষ্টাব্দে প্রকাশিত হয়। তিনি উল্লেখ করেছিলেন যে, এই উল্কা বৃষ্টি অনেকটা কম সময়ের ছিল এবং তা ইউরোপ এ দেখা যায়নি।[২] এবং যে উল্কা কন্সটেলেশন অফ লিও এর কেন্দ্র থেকে বিচ্ছুরিত হয়েছিল এবং তিনি অনুমান করেছিলেন যে, উল্কাগুলোর উৎপত্তি হয়েছিল মহাকাশের কোনো এক ক্লাউড পার্টিক্যাল থেকে। কাজ চলতে থাকে, যদিও এই ঘটনাটি গবেষকদের কিংকর্তব্যবিমূঢ় করে দিয়েছিল।
১৯৮১ খ্রিষ্টাব্দে ডোনাল্ড কে ইয়োমানস লিওনিডের ঘটনাটি পরীক্ষা করেন। তারপর আবার ১৯৮৫ খ্রিষ্টাব্দে কনড্রাতেভা এবং ই এ রেজনিকভ এই বিষয় সম্পর্কে আরো বিস্তারিত বর্ণনা করেন।পরবর্তীতে অনেক বিজ্ঞানী এই বিষয়কে প্রাধান্য দেন এবং লিওনিডস সম্পর্কে আরো বর্ণনা করেন এবং অনেকেই লিওনিডস সম্বন্ধে ভবিষ্যদ্বাণী দেন।
Remove ads
উজ্জ্বল কেন্দ্র
যেহেতু উল্কা বৃষ্টি কনাগুলো সমান্তরালভাবে পতিত হয়, এবং তাদের পতন হয় একটি বিন্দুকে কেন্দ্র করে। পৃথিবী থেকে দেখলে মনে হবে যেন উল্কাগুলো একটি নির্দিষ্ট বিন্দু থেকে ছড়িয়ে চারিদিকে সমান্তরালভাবে পরছে। অর্থাৎ অনেকটা শেকলের মতো, আর উল্কাগুলোর গতিবেগ প্রায় একই থাকে। অর্থাৎ সবাই একই গতি, ত্বরণ নিয়ে পৃথিবীতে পড়তে থাকে। তাদের ছড়িয়ে পড়ার মাঝে এক উজ্জ্বল কেন্দ্র দেখা যায়। এই উজ্জ্বল কেন্দ্রের সৃষ্টি হয়েছে একটি পরিপ্রেক্ষিতের প্রভাবের কারণে।
অনেকটা রাস্তার মোড়ের মতো যেখানে অনেকগুলো রাস্তার মুখ এসে মিলিত হয়। এই উজ্জ্বল কেন্দ্রকে রেডিয়েন্ট পয়েন্ট বলা হয়ে থাকে।[৩] এই পয়েন্ট পৃথিবীর ঘূর্ণনের কারণে ধীরে ধীরে এক জায়গা থেকে অন্যদিকে সরে যায়। অর্থাৎ সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পৃথিবী থেকে দেখলে মনে হবে স্থান পরিবর্তন করছে।

Remove ads
নামকরণ
উল্কা বৃষ্টি ইংরেজিতে নামকরণ করা হয়েছিল "meteor shower" সবচেয়ে কাছের নক্ষত্রপুঞ্জ থেকে যা রেডিয়েন্ট অবস্থানের খুবই কাছাকাছি ছিল।[৪]
উল্কা বৃষ্টির উৎপত্তি
সাধারণত মহাকাশে বিভিন্ন ধুমকেতুর ধ্বংসাবশেষ থেকে উল্কা বৃষ্টির সৃষ্টি হয়।
পৃথিবীর কাছাকাছি কোনো ধুমকেতুর ধ্বংসাবশেষ থাকলে তা অভিকর্ষজ বলের প্রভাবে পৃথিবীর দিকে ধেয়ে আসে। আর এরা এতো বেগ নিয়ে আসে যে, তা উত্তপ্ত হয়ে পৃথিবী পৃষ্ঠে পতিত হওয়ার আগেই ছাই হয়ে মিলিয়ে যায়।
বিখ্যাত উল্কা বৃষ্টি
সারাংশ
প্রসঙ্গ
পারসাইড এবং লিওনিড

আজ পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি দৃশ্যমান উল্কা বৃষ্টি হচ্ছে পারসাইড, যা প্রায় প্রত্যেক বছরের ১২ অগস্ট দেখা যায়, তা-ও প্রতি মিনিটে ১টি। এছাড়াও অন্যান্য সময় মাঝে মাঝে দেখা যায়। নাসার এক বিশেষ গণনাকারী যন্ত্র রয়েছে যার মাধ্যমে তারা প্রতি মিনিটে উল্কার সংখ্যা হিসাব করতে পারে।
লিওনিড প্রত্যেক বছরের ১৭ নভেম্বর দৃশ্যমান হয়। প্রায় ৩৩ বছর পর পর, লিওনিড উল্কা বৃষ্টি এক ধরনের উল্কা ঝড় সৃষ্টি করে, যার ফলে ঘণ্টায় হাজারেরো বেশি উল্কা দৃশ্যমান হয়। ১৮৩৩ খ্রিষ্টাব্দের পর লিওনিড থেকেই সর্বপ্রথম উল্কা বৃষ্টি নামকরণ করা হয়। ১৮৩৩ খ্রিষ্টাব্দের দিকে উল্কা বৃষ্টি হওয়ার পর বিজ্ঞানীরা দেখতে পান যে, তা বিচ্ছুরিত হয়েছিল গামা লিওনিস নামের তারকা থেকে।
সর্বশেষ বড় লিওনিড উল্কা বৃষ্টি হয়েছিল ১৯৯৯, ২০০১(দু-বার) এবং ২০০২ সালে(দু-বার)। এর আগেও উল্কা বৃষ্টি হয়েছিল ১৭৬৭, ১৭৯৯, ১৮৩৩, ১৮৬৬ এবং ১৮৬৭ সালে, তবে তা পারসাইড থেকে অনেক কম ছিল ।
গতানুগতিক উল্কা বৃষ্টি
ইন্টারন্যাশনাল অ্যাস্ট্রোনমিকাল ইউনিয়ন কর্তৃক উল্কা বৃষ্টিসমূহের নামকরণ করা হয়েছে।
Remove ads
পৃথিবী বহির্ভূত উল্কা বৃষ্টিসমূহ
সারাংশ
প্রসঙ্গ
পৃথিবীর মতো অন্যান্য স্বচ্ছ বায়ুমন্ডলেও উল্কা বৃষ্টি হতে পারে। যেহেতু চাঁদ পৃথিবীর প্রতিবেশী ,তাই চাঁদ ও উল্কা বৃষ্টির সম্মুখীন হতে পারে। বর্তমানে নাসা চাঁদের উল্কা বৃষ্টি নিয়ে গবেষণা চালিয়েছে,যার রক্ষনাবেক্ষণের মধ্যে রয়েছে মার্শাল স্পেস ফ্লাইট সেন্টার।

অনেক গ্রহতেই বিভিন্নরকম সংঘর্ষের ফলে সৃষ্ট বিভিন্নরকম গর্ত দেখা যায় যা অনেক দিন ধরে অবস্থান করে।[৫] কিন্তু নতুন গর্ত অনেক সময় উল্কা বৃষ্টির ফলে হতে পারে। মঙ্গল গ্রহ এবং এর উপগ্রহে উল্কা বৃষ্টি পর্যবেক্ষণ করা গিয়েছে। এই বিষয় অন্যান্য গ্রহে এখন পর্যন্ত দেখা যায় নি তবে তা হতে পারে। মঙ্গল গ্রহে বিশেষ করে,যদিও তা পৃথিবীতে উল্কা বৃষ্টির মতো নয় তা আলাদা দেখায়। কারণ পৃথিবীর কক্ষপথ এবং মঙ্গল গ্রহের কক্ষপথ এক নয়। আর পৃথিবী ও মঙ্গলের মাঝে ধুমকেতুর কক্ষপথ এক নয়। পৃথিবীর ভু পৃষ্ঠ থেকে ১% এরও কম ঘনত্ব মঙ্গল গ্রহের ভু পৃষ্ঠ,এর উপরের অংশ যেখানে উল্কা বৃষ্টি এসে আঘাত করে ,এই বিষয় খুবই সামঞ্জস্যপুর্ণ। কারণ বায়ুচাপের ফলে উভয় ঘটনাই একইরকম দেখায়। তবে যেহেতু মঙ্গল গ্রহ এবং পৃথিবী সূর্য থেকে দুরত্ব ভিন্ন, তাই সূর্যের আলোর প্রতিফলনে উল্কা বৃষ্টি কিছুটা ভিন্ন দেখায়।
৭ই মার্চ, ২০০৪ এ মার্স এক্সপ্লোরেশন রোভার স্পিরিট একটি সরু দাগের চিত্র সংগ্রহ করেছিল যা বর্তমানে মনে করা হয় যে, এটি মঙ্গল গ্রহে উল্কা বৃষ্টি যা ধুমকেতু ১১৪পি/ওয়াইজম্যান স্কিফ থেকে সৃষ্টি হয়েছিল।[৬] ২০ ডিসেম্বর, ২০০৭ সালে এটাতে খুবই কঠিন দৃশ্য অনুমান করা হয়েছিল। আরো অনেক উল্কা বৃষ্টি দেখা গিয়েছিল যা "ল্যামডা জেমিনিড" নামে পরিচিত ছিল। এগুলো ইটা একুয়ারিডস থেকে সৃষ্টি হয়েছিল।
এছাড়াও ১৯৯৪ সালে অনেক বৃহৎ উল্কা বৃষ্টি দেখা যায় যা অনেক গবেষণার পর বলা হয় যে, সৌরজগৎের অনেক বস্তু(বৃহস্পতি, বুধ, শনির উপগ্রহ টাইটান, নেপচুনের উপগ্রহ ট্রাইটন এবং প্লুটো) থেকে এসেছিল।
Remove ads
তথ্যসূত্র
Wikiwand - on
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Remove ads