শীর্ষ প্রশ্ন
সময়রেখা
চ্যাট
প্রসঙ্গ
কলি যুগ
চতুর্যুগের মধ্যে বর্তমান যুগ উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
Remove ads
কলিযুগ (সংস্কৃত: कलियुग) হল হিন্দুশাস্ত্র অনুযায়ী চতুর্যুগের শেষ যুগ। অন্য তিনযুগ হলো সত্যযুগ, ত্রেতাযুগ, ও দ্বাপরযুগ।[১][২][৩] কলিযুগ বলতে বোঝায় " কলির যুগ বা কলির অধিকৃত যুগ", "অন্ধকারের যুগ", "অপকর্ম ও দুঃখের যুগ", বা "কলহ ও কপটতার যুগ"।[৪]

এ যুগে পৃথিবীতে ধর্ম সংকোচিত হয়ে অধর্মের আধিক্য ঘটবে। পুণ্য হবে এক ভাগ এবং পাপ হবে তিন ভাগ। মানুষ সল্প আয়ু নিয়ে জন্মাবে। তাদের আয়ু হবে মাত্র একশত বছর।[৫] নিজের হাতে সাড়ে তিন হাত হবে শরীরের আয়তন (প্রায় ৫.৫ ফুট)। কলিযুগের প্রথম অংশের রাজাগণ হলেন পরীক্ষিৎ, জনমেজয়, শতানিক, বিক্রমাদিত্য প্রভৃতি একশ বিশজনের অধিক সংখ্যক চন্দ্রবংশীয় নৃপতিগণ ও ম্লেচ্ছ বংশীয় নৃপতিগণ। মানুষের প্রাণ থাকবে অন্নে। গঙ্গা হচ্ছে এযুগের তীর্থ। সব পাত্র ব্যবহার করা হয়। মানুষ তপস্যাহীন, সত্য থেকে দূরে অবস্থানরত। রাজনীতি কুটিল। শাসক ধনলোভী। ব্রাহ্মণ শাস্ত্রহীন। পুরুষ স্ত্রীর অনুগত। পাপে অনুরক্ত। সৎ মানুষের কষ্ট বৃদ্ধি। দুষ্টের প্রভাব বৃদ্ধি। কলি যুগের শেষ অবতার হলেন বিষ্ণুর অবতার কল্কি। তিনি কলি পুরুষের নাশ ঘটিয়ে এক নতুন যুগচক্রের শুরু করবেন।
মহাভারত , মনুস্মৃতি , বিষ্ণুস্মৃতি এবং বিভিন্ন পুরাণে কলিযুগের সম্পূর্ণ বর্ণনা পাওয়া যায় ।[৬]
Remove ads
কলিযুগের ব্যাপ্তিকাল
হিন্দুগ্রন্থে চতুর্যুগের (মহাযুগ) কথা বর্ণনা হয়েছে, যেখানে এই চার যুগ চক্রাকারে আবর্তন করে। সত্যযুগ হতে শুরু করে পরবর্তী যুগের (ত্রেতা, দ্বাপর ও কলি) দৈর্ঘ্য ক্রমে এক-চতুর্থাংশ (২৫%) করে হ্রাস পায়।[৭][৮] প্রতিটি যুগকে তার যুগ-সন্ধ্যা (ঊষা) এবং যুগ-সন্ধ্যাংশের (সন্ধ্যা) মধ্যবর্তী একটি প্রধান সময়কাল হিসাবে বর্ণনা করা হয়, যেখানে প্রতিটি গোধূলি (ভোর/সন্ধ্যা) প্রধান সময়কালের দশমাংশ অবধি থাকে। অর্থাৎ সত্যযুগ ৪,০০০ দৈব বছর হলে এবং ওই যুগের আগে ৪০০ দৈববছর সন্ধ্যা এবং শেষে ৪০০ দৈববছর সন্ধ্যাংশ হয়।[৯] পরবর্তী যুগগুলোতে সময়ের পরিমাণ ১,০০০(এক হাজার) দৈববছর করে এবং সন্ধ্যা ও সন্ধ্যাংশ ১০০(এক শত) দৈববছর করে কমে যায়। এর সময় দৈর্ঘ্যকে কখনো দৈব-বছর এককে হিসাব করা হয়। প্রতিটি দৈব-বছর ৩৬০টি সৌর (মানব) বছরের সমান।[১০][১১][১২]
কলিযুগ হচ্ছে চারযুগের মাঝে চতুর্থ। ঊষা ও সন্ধ্যা সহ কলিযুগের সময়কাল মোট ১,২০০ দৈব বছর বা ৪৩২,০০০ সৌর বছর।[৭][৮]
- কলিযুগ সন্ধ্যা (ঊষা): ৩৬,০০০ (১০০ দৈব) বছর
- কলিযুগ (সত্য): ৩৬০,০০০ (১০০০ দৈব) বছর
- কলিযুগ সন্ধ্যা (সন্ধ্যা):৩৬,০০০ (১০০ দৈব) বছর
Remove ads
বর্তমান কলিযুগের সূচনা
বর্তমান সময়টিকে কলিযুগের সময় বলা হয়। মাঘী পূর্ণিমায়াং শুক্রবারে কলিযুগোৎপত্তিঃ[১৩]। পুরাণ সূত্র অনুসারে,[টীকা ১] কৃষ্ণের তিরোভাব দ্বাপর যুগের সমাপ্তি এবং কলিযুগের সূচনা করে। বলা হয়ে থাকে ৩১০২ খ্রিস্টপূর্বাব্দের চৈত্রমাসের শুক্লা প্রতিপাদ তিথিতে(১৭ ও ১৮ই ফেব্রুয়ারির মধ্যরাতে) বর্তমান কলিযুগের সূচনা হয়েছে।[১৯][২০] এ যুগের পরিমাণ হবে ৪,৩২,০০০ বছর।[২১] কলিযুগের সূচনা হতে এখন পর্যন্ত প্রায় ৫০০০ বৎসর অতিক্রম করেছে।[২১] কলিযুগ ৫১২৩ বছর আগে শুরু হয়েছিল এবং ২০২২ থেকে ৪২৬,৮৭৭ বছর বাকি আছে[২২][২৩][২৪] কলিযুগ ৪২৮,৮৯৯ খ্রিস্টাব্দে শেষ হবে।[২৫][ক] এভাবে বহু চতুর্যুগ অতিক্রান্তের পর সৃষ্টির শুরু হতে এখন পর্যন্ত অতিক্রান্ত সময়, ১৯৭ কোটি ২৯ লক্ষ ৪৯ হাজার বছর।[২১] কলিযুগের সূচনার সময় সৌরজগতের সকল গ্রহ একই সূত্রে অবস্থান করছিল। বেদব্যাস রচিত বিষ্ণু পুরাণে বলা হয়েছে যে শ্রী কৃষ্ণের পৃথিবী ত্যাগ করে স্বর্গারোহণের সময় থেকে পৃথিবীতে কলি যুগের সূচনা হয়েছে।
Remove ads
মানুষের আয়ুস্কাল
মানুষের আয়ুস্কাল সম্বন্ধে মনুসংহিতাতে বলা হয়েছে, সত্যযুগে মানুষের আয়ু ছিল ৪০০(চার শত) বছর। পরবর্তী ৩ যুগে ১০০ বছর করে পরমায়ু কমে যায়।[২৬] এবং সব শেষে কলি যুগে মানুষের পরমায়ু প্রায় ১০০ বছর হয়।[৫]
লক্ষণ
সারাংশ
প্রসঙ্গ
বিষ্ণু পুরাণ অনুযায়ী[২৭] কলিযুগে,
- বেদবিহিত ক্রিয়াসমূহ হ্রাস পাবে।
- বর্ণ ও আশ্রমের আচারানুরূপ প্রবৃত্তি সকল বিলুপ্ত হবে।
- ধর্মানুরূপ বিবাহ হবে না।
- কম ধনের অধিকারী হয়ে মানুষ এ যুগে বেশি গর্ব করবে।
- ধর্মগ্রন্থের প্রতি মানুষের আর্কষণ থাকবে না।
- মাতাপিতাকে মানবে না।
- পুত্র পিতৃহত্যা বা পিতা পুত্র হত্যা করতে কুণ্ঠিত হবে না।
- ধনহীন পতিকে স্ত্রীরা ত্যাগ করবে। আর ধনবান পুরুষরা সেই স্ত্রীগণের স্বামী হবে।
- কলিযুগে ধর্মের জন্য ব্যয় না করে কেবল গৃহাদি নির্মাণে অর্থ ব্যয় করবে।
- মানুষ পরকালের চিন্তা না করে কেবল অর্থ উর্পাজনের চিন্তাতেই নিরন্তর নিমগ্ন থাকবে।
- কলিযুগে নারীরা সাধারণতঃ স্বেচ্ছাচারিণী ও বিলাস উপকরণে অতিশয় অনুরাগিণী হবে এবং পুরুষরা অন্যায়ভাবে অর্থ উপার্জন করতে অভিলাষী হবে।
- সুহ্বদদের প্রার্থনাতে মানুষ নিজের অনুমাত্র স্বার্থ পরিত্যাগ করবেনা। অসমর্থ মানুষরা ধনহীন হয়ে নিরন্তর দুর্ভিক্ষ ও ক্লেশ ভোগ করবে।
- কলিকালে মানুষ স্নান না করে ভোজন করবে।
- কলিকালে স্ত্রীলোকরা নিতান্তই লোভী হবে, বহু ভোজনশীল হবে।
- স্ত্রীরা দুহাতে মাথা চুলকাতে চুলকাতে অনায়াসে পতি আজ্ঞা অবহেলা করবে। নিজের দেহ পোষণে ব্যস্ত থাকবে, নিরন্তন কঠোর ও মিথ্যা বাক্য বলবে।
- আচারহীন ব্রাহ্মণপুত্ররা ব্রহ্মচারীর বেশ ধারণ বেদ অধ্যয়ন করবে। গৃহস্থরা হোমাদি করবেন না এবং উচিত দানসমূহও প্রদান করবেন না। মানুষ অশাস্ত্রীয় তপস্যা করবে।
- কলিকালে ৮ থেকে ১০বছরের বালকের সহবাসে ৫ থেকে ৭বছর বয়সের বালিকারা সন্তান প্রসব করবে।
- মানুষের বুদ্ধি অতি অল্প,তাঁদের ইন্দ্রিয় প্রবৃত্তি অতিশয় কুৎসিত, তাদের অন্তঃকরণ অতিশয় অপবিত্র হবে। আর অল্প কালেই বিনাশ লাভ করবে। যখন পাষণ্ড লোকের প্রভাব অত্যন্ত বাড়বে, তখন সমাজের ভালো লোক কোন দায়িত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত থাকবে না। সজ্জনের হানি লক্ষিত হবে।
- অল্প বৃষ্টি হবে, কলিকালে ফসল কম হবে।
- মানুষ শ্বশুরের অনুগত হয়ে, কার মাতা কার পিতা এরকম কথা বলবে।
- সুন্দরী স্ত্রী যার তার সাথে বন্ধুত্ব হবে, নিজ ভাইয়ের সাথে শত্রুভাব পোষন করবে।
ভাগবতে বলা আছে ছলনা মিথ্যা আলস্য নিদ্রা হিংসা দুঃখ শোক ভয় দীনতা প্রভৃতি হবে এযুগের বৈশিষ্ট্য। এই কলিযুগে কৃষ্ণনাম জপ ও কালীনাম ভজনাই সকলকে উদ্ধার করতে পারে। মনু সংহিতায় বলা হয়েছে যে সত্যযুগে তপস্যা, ত্রেতাযুগে জ্ঞান, দ্বাপরযুগে যজ্ঞ এবং কলিতে দানই প্রধান ধর্ম হয়।[২৮]
হিন্দুধর্মে প্রায়শই ভারতীয় ষাঁড় বা বৃষ ধর্মের প্রতীক। বলা হয়, ধর্মের প্রথম পর্যায় সত্যযুগে ধর্মরূপী ষাঁড়ের চারটি পা থাকে। পরবর্তী প্রতিটি যুগে একটি করে পা হ্রাস পায়। ধর্মের চারটি চরণ বা পাদ হলো তপস্যা , শৌচ , দয়া এবং সত্য । [২৯] সত্যযুগ বা স্বর্ণযুগের চারপাদ ধর্ম কলিযুগে হ্রাস পেয়ে এক চতুর্থাংশে নেমে আসে, যেখানে ধর্মরূপী ষাঁড়ের একটি পা, যা সত্য তথা ধর্মের প্রতীক, অবশিষ্ট থাকে।[৩০]
মহাভারত
কুরুক্ষেত্র যুদ্ধ এবং কৌরবদের পতন এইভাবে যুগ-সন্ধি (এক যুগ থেকে অন্য যুগে উত্তরণের বিন্দু )তে ঘটেছিল। [৩১]
ভবিষ্যদ্বাণীকৃত ঘটনা
মহাভারতে মার্কণ্ডেয়ের একটি বক্তৃতায় কলিযুগের মানুষ, প্রাণী, প্রকৃতি এবং আবহাওয়া সম্পর্কে কিছু উল্লেখ করা হয়েছে। [৩২]
Remove ads
কলি যুগের অবতার

পুরাণ অনুযায়ী কলি যুগে অবতার সংখ্যা দুই।
গৌতম বুদ্ধ ছিলেন বৌদ্ধধর্মের প্রতিষ্ঠাতা। তিনি আশ্বিন মাসের শুক্লা দশমী তিথিতে জন্মগ্রহণ করেন।
কলিযুগের একদম শেষের দিকে কল্কি অবতারের আর্বিভাব ঘটবে। শম্ভল গ্রামে বিষ্ণুযশ নামে এক ব্রাহ্মণের সন্তান হয়ে সুমতি নামে ব্রাহ্মণ কন্যার গর্ভে বিষ্ণুর দশম অবতার কল্কিদেব জন্ম নিবেন। কল্কি হবে বিষ্ণুযশ-সুমতির চতুর্থ সন্তান। বিষ্ণুযশ-সুমতির প্রথম তিন সন্তানের নাম হবে যথাক্রমে কবি, প্রাজ্ঞ, ও সুমন্তক। তিনি কলিযুগের সকল অন্যায় ও অধর্মের অবসান করে তিনি পুনরায় সত্যযুগের সূচনা করবেন।[৩৩]
Remove ads
১০,০০০ বছর উপ-সময়
ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণে, গঙ্গার প্রতি কৃষ্ণ বলেছেন কলিযুগের প্রথম ১০,০০০ বছর ভক্তিযোগী তথা বৈষ্ণবদের উপস্থিতির কারণে কলিযুগের কু-প্রভাব হ্রাস পাবে, এরপর পৃথিবীতে ধার্মিক মনুষ্যগণ থাকবে না, এবং কলিযুগের অসৎ প্রভাব বৃদ্ধি পাবে। [৩৪] গৌড়ীয় বৈষ্ণবধর্ম বিশ্বাস করে যে, কলিযুগে এই উপ-কালটি চৈতন্য মহাপ্রভুর (১৪৮৬ খ্রিস্টাব্দ) জন্মের সাথে শুরু হয়েছিল। [৩৫]
তথ্যসূত্র
টীকা
আরও দেখুন
বহিঃসংযোগ
Wikiwand - on
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Remove ads