শীর্ষ প্রশ্ন
সময়রেখা
চ্যাট
প্রসঙ্গ
গাড়ি
এক থেকে আটজন যাত্রী পরিবহনে ব্যবহৃত চার চাকাযুক্ত মোটরযান উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
Remove ads
গাড়ি বা মোটরগাড়ি একপ্রকার মোটরচালিত চার চাকার যানবাহন যা কমসংখ্যক যাত্রী বহন করে।[১] এটি সাধারণত এক থেকে আটজন যাত্রী বহন করতে পারে, আর মাল পরিবহনের তুলনায় যাত্রী পরিবহনে বেশি ব্যবহৃত হয়।[২]

১৭৬৯ সালে ফরাসি উদ্ভাবক নিকোলা-জোসেফ কুনিয়ো প্রথম বাষ্পচালিত সড়কযানের উদ্ভাবন করেন। ১৮০৮ সালে সুইস উদ্ভাবক ফ্রাঁসোয়া ইজাক দ্য রিভাজ প্রথম অন্তর্দহন ইঞ্জিনচালিত গাড়ি তৈরি করেছিলেন। ১৮৮৬ সালে কার্ল বেঞ্জ দৈনন্দিন ব্যবহার্য আধুনিক গাড়ির উদ্ভাবন করেন। বিংশ শতাব্দী জুড়ে বাণিজ্যিক গাড়ি বহুল প্রচলিত হয়ছ। ১৯০৮ সালে ফোর্ড মডেল টি চালু হয়, যা সাধারণ জনগণের ক্রয়যোগ্য প্রথম মোটরগাড়ির মধ্যে অন্যতম। ফোর্ড মোটর কোম্পানি এই মার্কিন গাড়িটি তৈরি করেছিল। যুক্তরাষ্ট্রে ঘোড়ার গাড়ির পরিবর্তে মোটরগাড়ি ব্যবহার ক্রমশ বৃদ্ধি পেয়েছিল।[৩] দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপ ও বিশ্বের অন্যান্য প্রান্তে মোটরগাড়ির চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছিল।[৪] মোটরগাড়িকে উন্নত অর্থনীতির এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসাবে মনে করা হয়। একবিংশ শতাব্দীতে মূলত চীন, ভারত ও অন্যান্য নতুন শিল্পোন্নত দেশে মোটরগাড়ির ব্যবহার ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে।[৫][৬]
গাড়িতে চালনা ও নির্দিষ্ট স্থানে রাখার ব্যবস্থা, যাত্রী স্বাচ্ছন্দ্য এবং বিভিন্নরকম বৈদ্যুতিক বাতি রয়েছে। বিগত কয়েক দশকে গাড়িতে আরও বৈশিষ্ট্য ও ব্যবস্থা যোগ করা হয়েছে, যার ফলে এটি আরও জটিল হয়ে উঠেছে। এর মধ্যে পিছনে দেখার ক্যামেরা, শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ, দিক নির্ণয় ও বিনোদন ব্যবস্থা উল্লেখযোগ্য। ২০২০-এর দশকের শুরুতে ব্যবহৃত বেশিরভাগ গাড়ি অন্তর্দহন ইঞ্জিন ও জীবাশ্ম জ্বালানি দ্বারা চালিত। মোটরগাড়ির ইতিহাসের প্রারম্ভেই উদ্ভাবিত বৈদ্যুতিক গাড়ি ২০০০-এর দশকের বাণিজ্যিকভাবে লভ্য হয়ে উঠেছিল এবং ২০২৫ সালের আগে এর খরচ পেট্রলচালিত গাড়ির চেয়ে কম হওয়ার কথা।[৭][৮] জীবাশ্ম জ্বালানি চালিত গাড়ি থেকে বৈদ্যুতিক গাড়িতে রূপান্তর মূলত জলবায়ু পরিবর্তন উপশম করার একটি উপায় বলে মনে করা হচ্ছে।[৯]
গাড়ি ব্যবহারে লাভ ও ক্ষতি উভয়ই রয়েছে। ব্যক্তিগত ক্ষতির মধ্যে রয়েছে গাড়ি কেনা, সুদ পরিশোধ (ধার করে কেনা গাড়ির ক্ষেত্রে), মেরামত, রক্ষণাবেক্ষণ, জ্বালানি, অবচয়, চালানোর সময়, গাড়ি রাখার ফি ও বীমা।[১০] সামাজিক ক্ষতির মধ্যে রয়েছে সড়ক রক্ষণাবেক্ষণ, জমির ব্যবহার, যানজট, বায়ু দূষণ, শব্দ দূষণ, জনস্বাস্থ্য এবং জীবনকালের শেষে গাড়িকে পরিত্যাগ করা। সড়ক দুর্ঘটনা বিশ্বজুড়ে আঘাতে মৃত্যুর বৃহত্তম কারণ।[১১] ব্যক্তিগত লাভের মধ্যে রয়েছে চাহিদামাফিক পরিবহন, সচলতা, স্বাধীনতা ও বিভিন্নরকম সুবিধা।[১২] সামাজিক লাভের মধ্যে রয়েছে অর্থনৈতিক লাভ (যেমন মোটরযান শিল্প থেকে জীবিকা ও সম্পত্তি সৃষ্টি), পরিবহনে সংস্থান, অবসরযাপন ও ভ্রমণে সুযোগ এবং কর আদায়ের মাধ্যমে অর্থ লাভ।[১৩]
Remove ads
ব্যুৎপত্তি
বাংলা "গাড়ি" শব্দটি প্রাকৃত "গড্ডী" (𑀕𑀟𑁆𑀟𑀻) শব্দ হতে উদ্ভূত, যা আবার সংস্কৃত "গন্ত্রী" (गन्त्री) বা "গান্ত্রী" (गान्त्री) শব্দ হতে উদ্ভূত। বর্তমানে বাংলাসহ বিভিন্ন ভাষায় মূলত একপ্রকার মোটরযান বোঝানোর জন্য "গাড়ি" শব্দটি ব্যবহৃত হয়, যদিও অন্যান্য প্রকারের যানবাহনের নামে "গাড়ি" শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে, যেমন টানা গাড়ি, রেলগাড়ি ইত্যাদি।
ইতিহাস
সারাংশ
প্রসঙ্গ

১৬৪৯ সালে জার্মানির নুরেমবার্গের বাসিন্দা হান্স হাউচ প্রথম কলকব্জার গাড়ি তৈরি করেন।[১৪][১৫] চীনে ফার্ডিনান্ড ভার্বিস্ট নামক একজন জেসুইট প্রচারক ১৬৭২ সাল নাগাদ প্রথম বাষ্পচালিত যানের নকশা তৈরি করেন। এটা চীনা সম্রাট খাংশির জন্য ৬৫ সেন্টিমিটার (২৬ ইঞ্চি) দীর্ঘ খেলনাগাড়ি, আর এটা চালক বা যাত্রী বহনের উপযুক্ত নয়।[১২][১৬][১৭] তবে ভার্বিস্টের গাড়ি সফলভাবে চালানো বা তৈরি করা হয়েছিল কিনা তা নিশ্চিত নয়।[১৭]
১৭৬৯ সাল নাগাদ নিকোলা-জোসেফ কুনিয়ো প্রথম পূর্ণাকার স্বচালিত যান নির্মাণের জন্য অধিক পরিচিত। তিনি একটা বাষ্পচালিত তিন চাকার যান তৈরি করেন।[১৮] এছাড়া তিনি ফরাসি সেনাবাহিনীর জন্য দুটা বাষ্পচালিত ট্রাক্টর তৈরি করেন, যার মধ্যে একটি জাতীয় শিল্পকলা ও কারিগরি সংগ্রহশালায় সংরক্ষিত।[১৮] তবে তার উদ্ভাবনে পানি সরবরাহ ও বাষ্পচাপ নিয়ন্ত্রণের সমস্যা ছিল।[১৮] ১৮০১ সালে রিচার্ড ট্রেভিথিক "পাফিং ডেভিল" নামক একটি সড়ক লোকোমোটিভ নির্মাণ ও প্রদর্শন করেন, যা প্রথম কোনো বাষ্পচালিত সড়কযানের প্রদর্শন বলে বিবেচিত। তবে এটা যথেষ্ট বাষ্পচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে পারছিল না, আর এর কার্যকর ব্যবহার খুবই সীমিত।
১৮০৭ সালে নিসেফর নিয়েপ্স ও তার ভাই ক্লোদ সর্বপ্রথম অন্তর্দহন ইঞ্জিন তৈরি করেন, আর তারা ফ্রান্সের সাওন নদীতে একটা নৌকায় এর প্রয়োগ করেন।[১৯] একই সালে সুইস উদ্ভাবক ফ্রঁসোয়া ইজাক দ্য রিভাজ স্বাধীনভাবে একটা অন্তর্দহন ইঞ্জিন তৈরি করেন, আর এটা দিয়ে প্রথম অন্তর্দহন ইঞ্জিঞ্চালিত যানের উদ্ভাবন করেন। নিয়েপ্সের ইঞ্জিন লাইকোপোডিয়াম বীজগুটির চূর্ণ, কয়লা ধুলার সূক্ষ্ম চূর্ণ এবং তৈলমিশ্রিত রেজিনের জ্বালানি দিয়ে চালানো হতো। অন্যদিকে দ্য রিভাজের ইঞ্জিন হাইড্রোজেন ও অক্সিজেনের মিশ্রণ দিয়ে চালিত।[১৯] উভয় ইঞ্জিনই সফল হতে পারেনি। এছাড়া স্যামুয়েল ব্রাউন, স্যামুয়েল মোরে ও এতিয়েন লেনোয়ার[২০] প্রত্যেকে অন্তর্দহন ইঞ্জিনচালিত যানবাহন তৈরি করেন, কিন্তু কারুরই ইঞ্জিন সফল হয়নি।[২১]
১৮৮১ সালের নভেম্বরে ফরাসি উদ্ভাবক গুস্তাভ ত্রুভে একটি বিদ্যুৎচালিত তিন চাকার গাড়ির প্রদর্শন করেন।[২২] যদিও তখন একাধিক জার্মান প্রকৌশলী মোটরগাড়ি নিয়ে কাজ করেছিলেন, তবে ১৮৮৬ সালকেই আধুনিক গাড়ি, অর্থাৎ দৈনন্দিন ব্যবহার্য ও বিপণনযোগ্য মোটরগাড়ির জন্মসাল বলে বিবেচনা করা হয়। তখন জার্মান উদ্ভাবক কার্ল বেঞ্জ তার উদ্ভাবন বেঞ্জ পাটেন্ট-মোটরভাগেনের পেটেন্ট করেন। তিনিই মোটরগাড়ির উদ্ভাবক বলে বিবেচিত।[২১][২৩][২৪]
Remove ads
উপাদান
সারাংশ
প্রসঙ্গ
প্রচালন ও জ্বালানি

২০২০-এর দশকের শুরুতে ব্যবহৃত বেশিরভাগ গাড়ি অন্তর্দহন ইঞ্জিনে দহন করা পেট্রল দ্বারা চালিত। কিছু দেশ পুরনো পেট্রলচালিত গাড়ি নিষিদ্ধ করে এবং কিছু দেশ ভবিষ্যতে পেট্রলচালিত গাড়ি বিক্রি নিষিদ্ধ করার পরিকল্পনা করেছে। তবে কিছু পরিবেশবাদী সংগঠনের মতে জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ন্ত্রণ করার জন্য জীবাশ্ম জ্বালানি চালিত যানবাহনের ব্যবহার ক্রমশ বন্ধ করা উচিত। ২০১৭ সালে পেট্রলচালিত গাড়ির উৎপাদন সর্বোচ্চ।[২৫][২৬]
অন্তর্দহন গাড়িতে ব্যবহৃত অন্যান্য হাইড্রোকার্বন জ্বালানির মধ্যে ডিজেল, অটোগ্যাস ও সংকুচিত প্রাকৃতিক গ্যাস (সিএনজি) উল্লেখযোগ্য। জীবাশ্ম জ্বালানি ভর্তুকি অপসারণ,[২৭][২৮] খনিজ তেলের উপর নির্ভরশীলতা নিয়ে দুশ্চিন্তা, কঠোরতর পরিবেশ আইন এবং গ্রিন হাউস গ্যাস নির্গমনে বাধানিষেধ গাড়ির বিকল্প জ্বালানির কাজে গতি সঞ্চার করে। বিকল্প গাড়ির মধ্যে সংকর গাড়ি, বৈদ্যুতিক গাড়ি ও হাইড্রোজেন গাড়ি উল্লেখযোগ্য। ২০২১ সালে বিক্রিত সমস্ত গাড়ির মধ্যে ৯ শতাংশ বৈদ্যুতিক, আর সেই বছরের শেষে বিশ্বের সড়কপথে ১.৬ কোটির বেশি বৈদ্যুতিক গাড়ি চলাচল করছিল।[২৯] তবে দ্রুত বৃদ্ধির সত্ত্বেও ২০২১ সালের শেষে বিশ্বের সড়কপথে চলাচল করা গাড়ির মধ্যে সম্পূর্ণভাবে বৈদ্যুতিক ও প্লাগ-ইন হাইব্রিড গাড়ি ২ শতাংশেরও কম।[২৯]
আলো

লাল: পিছনের আলো
গাড়িতে সাধারণত বিভিন্নরকম আলো বসানো থাকে। এর মধ্যে হেডলাইট বা সামনের আলো উল্লেখযোগ্য, যা সামনের দিককে আলোকিত করে এবং গাড়িকে অন্যান্যদের কাছে দৃশ্যমান করে, যার ফলে রাতের বেলায় গাড়ি ব্যবহার করা যায়। এছাড়া লাল রঙের আলোর মাধ্যমে কখন ব্রেক ব্যবহার করা হয়েছে তা বোঝানো যায়; হলুদাভ বাদামি রঙের আলোর মাধ্যমে চালকের সম্ভাব্য দিক পরিবর্তনকে ইঙ্গিত করা হয়। চালক ও যাত্রীদের জন্য গাড়ির অভ্যন্তরে আলো বসানো থাকে।
ওজন ও আকার
বিংশ শতাব্দীর শেষে ও একবিংশ শতাব্দীর শুরুতে ব্যাটারি,[৩০] আধুনিক ইস্পাতের সুরক্ষা খাঁচা, অ্যান্টি-লক ব্রেক, এয়ারব্যাগ এবং আরও ক্ষমতাশালী ও দক্ষ ইঞ্জিনের জন্য গাড়ির ওজন বৃদ্ধি পেয়েছে।[৩১] ২০১৯-এর হিসাব অনুযায়ী[হালনাগাদ], গাড়ির ওজন সাধারণত ১ থেকে ৩ টন (১,০০০ থেকে ৩,০০০ কিলোগ্রাম; ২,২০০ থেকে ৬,৬০০ পাউন্ড)-এর মধ্যে।[৩২] সংঘর্ষের প্রেক্ষিতে ভারী গাড়ি চালকের পক্ষে আরও নিরাপদ কিন্তু অন্যান্য যানবাহন ও সড়ক ব্যবহারকারীর পক্ষে আরও ভয়ঙ্কর।[৩১]
কিছু অঞ্চলে ভারী গাড়িতে অতিরিক্ত করারোপের জন্য[৩৩] এবং পথচারীদের নিরাপত্তা উন্নীত করার জন্য গাড়ি প্রস্তুতকারকদের ইস্পাতের জায়গায় রিসাইকেল করা অ্যালুমিনিয়ামের মতো পদার্থ ব্যবহার করতে উৎসাহিত করেছে।[৩৪]
Remove ads
সুরক্ষা

সড়ক দুর্ঘটনা বিশ্বজুড়ে আঘাতে মৃত্যুর বৃহত্তম কারণ।[১১] বর্তমানে নতুন গাড়ির জন্য সুরক্ষার পরীক্ষা প্রক্রিয়া রয়েছে, যেমন ইউরো ও মার্কিন এনসিএপি পরীক্ষা[৩৫] এবং ইন্স্যুরেন্স ইনস্টিউট ফর হাইওয়ে সেফটি (আইআইএইচএস) দ্বারা বিভিন্ন পরীক্ষা।[৩৬]
লাভ ও ক্ষতি
গাড়ি ব্যবহারের খরচের মধ্যে রয়েছে গাড়ি কেনা, সুদ পরিশোধ (ধার করে কেনা গাড়ির ক্ষেত্রে), মেরামত, রক্ষণাবেক্ষণ, জ্বালানি, অবচয়, চালানোর সময়, গাড়ি রাখার ফি ও বীমা।[১০] অন্যদিকে, লাভের মধ্যে রয়েছে চাহিদামাফিক পরিবহন, সচলতা, স্বাধীনতা ও বিভিন্নরকম সুবিধা।[১২]
একইভাবে, গাড়ি ব্যবহারে সামাজিক ক্ষতির মধ্যে রয়েছে সড়ক রক্ষণাবেক্ষণ, জমির ব্যবহার, যানজট, বায়ু দূষণ, শব্দ দূষণ, জনস্বাস্থ্য এবং জীবনকালের শেষে গাড়িকে পরিত্যাগ করা। সড়ক দুর্ঘটনা বিশ্বজুড়ে আঘাতে মৃত্যুর বৃহত্তম কারণ।[১১] সামাজিক লাভের মধ্যে রয়েছে অর্থনৈতিক লাভ (যেমন মোটরগাড়ি শিল্প থেকে জীবিকা ও সম্পত্তি সৃষ্টি), পরিবহনে সংস্থান, অবসরযাপন ও ভ্রমণে সুযোগ এবং কর আদায়ের মাধ্যমে অর্থ লাভ।[১৩]
Remove ads
পরিবেশগত প্রভাব
সারাংশ
প্রসঙ্গ

গাড়ি শহরে বায়ু দূষণের অন্যতম কারণ[৩৮] এবং সমস্তপ্রকার গাড়ি ব্রেক, টায়ার ও সড়ক ক্ষয় থেকে ধুলোবালি উৎপন্ন করে।[৩৯] গাড়িকে চালানোর জন্য বিভিন্নরকম জ্বালানি ব্যবহার করা হলেও বেশিরভাগ গাড়ি পেট্রল বা ডিজেল ব্যবহার করে এবং ২০১৯-এর হিসাব অনুযায়ী[হালনাগাদ] বিশ্বের তৈল উৎপাদনের প্রায় এক-চতুর্থাংশ পেট্রল ও ডিজেল হিসাবে ব্যবহৃত হয়।[২৫] পেট্রল ও ডিজেল উভয় গাড়ি বৈদ্যুতিক গাড়ির চেয়ে বেশি দূষণ সৃষ্টি করে।[৪০] ২০২১ সালে গাড়ি ও ভ্যান সরাসরি কার্বন ডাইঅক্সাইড নিঃসরণের ৮ শতাংশের জন্য দায়ী।[৪১]
২০২০-এর দশকে নির্মিত গাড়ির কাঙ্ক্ষিত জীবনকাল প্রায় ১৬ বছর বা প্রায় ২০ লাখ কিলোমিটার (১২.৪ লাখ মাইল) যদি অনেকটা চালানো হয়।[৪২] এসইউভি গাড়ির বিক্রি বৃদ্ধি জ্বালানি অর্থনীতির পক্ষে খারাপ।[২৫] ইউরোপের অনেক শহর পুরনো জীবাশ্ম জ্বালানি চালিত গাড়িকে নিষিদ্ধ করেছে এবং ২০৩০ সাল থেকে আমস্টারডামে জীবাশ্ম জ্বালানি চালিত সমস্ত গাড়িকে নিষিদ্ধ করা হবে।[৪৩] চীনের অনেক শহর জীবাশ্ম জ্বালানি চালিত গাড়ির লাইসেন্স দেওয়াকে সীমিত করেছে[৪৪] এবং ২০২৫ থেকে ২০৫০ সালের মধ্যে অনেক দেশ এইধরনের গাড়ি বিক্রি বন্ধ করার পরিকল্পনা করেছে।[৪৫]
গাড়ি উৎপাদনের জন্য প্রচুর রিসোর্স বা সম্পদ লাগে এবং বর্তমানে অনেক প্রস্তুতকারক তাদের কারখানার পরিবেশগত কর্মসম্পাদন নথিবদ্ধ করে, যার মধ্যে শক্তির ব্যবহার, বর্জ্য ও পানির অপচয় অন্তর্গত।[৪৬] প্রত্যেক কিলোওয়াট-ঘণ্টা ব্যাটারি প্রস্তুত করতে যতটা কার্বন নির্গত হয়, এক ট্যাংকপূর্ণ পেট্রলকে দহন করলে ঠিক ততটাই কার্বন নির্গত হয়।[৪৭] গাড়ির জনপ্রিয়তা বৃদ্ধির ফলে শহরগুলো অপরিকল্পিতভাবে বেড়ে উঠে, যা আরও অনেকজনকে গাড়িতে করে ভ্রমণ করতে উৎসাহিত করে, যার ফলে মানুষদের মধ্যে নিষ্ক্রিয়তা ও স্থূলতা দেখা দেয়, যা আবার বিভিন্নরকম রোগ সৃষ্টি করতে পারে।[৪৮]
Remove ads
নতুন গাড়ি প্রযুক্তি
যদিও ২০২০-এর দশকে প্রচলিত ব্যাটারিচালিত গাড়ির যথেষ্ট উন্নয়নকাজ চলছে,[৪৯] অন্যান্য উন্নয়নশীল গাড়ি প্রচালনশক্তির মধ্যে রয়েছে তারবিহীন চার্জিং,[৫০] হাইড্রোজেন গাড়ি[৫১] ও হাইড্রোজেন/বৈদ্যুতিক সংকর গাড়ি।[৫২] বিকল্প জ্বালানি গবেষণার মধ্যে রয়েছে জ্বালানি কোষে হাইড্রোজেনের পরিবর্তে অ্যামোনিয়ার ব্যবহার।[৫৩]
গাড়ির প্রচলিত ইস্পাতনির্মিত গঠনকে প্রতিস্থাপনকারী পদার্থের মধ্যে রয়েছে অ্যালুমিনিয়াম,[৫৪] ফাইবারগ্লাস, কার্বন তন্তু, বায়োকম্পোজিট ও কার্বন ন্যানোটিউব।[৫৫]
স্বয়ংক্রিয় গাড়ি

স্বয়ংক্রিয় গাড়ি বা রোবোট্যাক্সি[৫৬][৫৭][৫৮] সীমিত মানব ইনপুট বা কোনো মানব ইনপুট ছাড়াই পরিচালিত হয়।[৫৯][৬০] এইধরনের গাড়ি নিজেই সমস্ত গাড়ি চালনার কর্মকাণ্ডের জন্য দায়বদ্ধ, যেমন পরিবেশকে অনুভব করা, গুরুত্বপূর্ণ ব্যবস্থার পর্যালোচনা করা এবং গাড়িকে নিয়ন্ত্রিত করা, যার মধ্যে রয়েছে সূচনা বিন্দু থেকে গন্তব্যে পৌঁছনো।[৬১] স্বয়ংক্রিয় গাড়ি এখনও সাধারণ জনগণের ব্যবহার থেকে দূরেই রয়েছে।[৬২]
Remove ads
শিল্প
সারাংশ
প্রসঙ্গ
মোটরযান শিল্প পৃথিবীর বিভিন্ন মোটরযান উৎপাদন ও বিক্রয় করে, যার তিন-চতুর্থাংশই গাড়ি। ২০২০ সালে বিশ্বজুড়ে ৫.৬ কোটি গাড়ি তৈরি হয়েছিল,[৬৩] যা গত বছরের ৬.৭ কোটির তুলনায় কম।[৬৪] চীনের মোটরযান শিল্প সবচেয়ে বেশি গাড়ি তৈরি করে (২০২০ সালে ২ কোটি), যার পরেই আছে জাপান (৭০ লাখ), জার্মানি, দক্ষিণ কোরিয়া ও ভারত।[৬৫]
বিশ্বের সড়কপথে প্রায় একশত কোটি গাড়ি রয়েছে।[৬৬] এরা বছরে ১ ট্রিলিয়ন লিটার (০.২৬ ট্রিলিয়ন ইউএস গ্যালন)-এর বেশি পেট্রল ও ডিজেল দহন করে আর প্রায় ৫০ এক্সাজুল (১৪,০০০ terawatt-hour) শক্তি ব্যয় করে।[৬৭] চীন ও ভারতে গাড়ির সংখ্যা দ্রুতহারে বাড়ছে।[৬৮] কেউ কেউ মনে করে যে গাড়িভিত্তিক পৌর পরিবহন ব্যবস্থা টেকসই নয়, প্রচুর শক্তি ব্যয় করে, জনগণের স্বাস্থ্যে কুপ্রভাব বিস্তার করে এবং ক্রমবর্ধমান বিনিয়োগ সত্ত্বেও ক্রমহ্রাসমান পরিষেবা প্রদান করছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এই কুপ্রভাবের শিকার সেইসব জনগোষ্ঠী যাদের গাড়ি চালানোর সম্ভাবনা সর্বনিম্ন।[৬৯][৭০] টেকসই পরিবহন আন্দোলন এইসব সমস্যার সমাধান অনুসন্ধান করে। গাড়ি শিল্পও গণপরিবহন খাতের সঙ্গে তীব্রতর প্রতিযোগিতার শামিল হচ্ছে। ২০২১ সালের জুলাই মাসে ইউরোপীয় কমিশন "ফিট ফর ৫৫" বিধান প্যাকেজে মোটরযান খাতের ভবিষ্যৎ নিয়ে গুরত্বপূর্ণ নির্দেশ জারি করেছিল।[৭১][৭২] এই প্যাকেজ অনুযায়ী ২০৩৫ সালে ইউরোপীয় বাজারে বিক্রয় করা সমস্ত নতুন গাড়িকে নির্গমনহীন হতে হবে।[৭৩][৭৪][৭৫]
Remove ads
বিকল্প যানবাহন

বর্তমানে মোটরগাড়ির একাধিক বিকল্প রয়েছে, যেমন গণপরিবহন (বাস ও রেলগাড়ি), সাইকেল ও হাঁটা। সাইকেল ভাড়া ব্যবস্থা চীন ও ইউরোপের বিভিন্ন শহরে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, যেমন আমস্টারডাম ও কোপেনহেগেন। যুক্তরাষ্ট্রের বড় শহরেও অনুরূপ প্রকল্পের কাজ চলছে।[৭৬][৭৭] এছাড়া ব্যক্তিগত দ্রুতগামী গণপরিবহন ব্যবস্থা মোটরগাড়ির বিকল্প হতে পারে যদি এটি সামাজিকভাবে গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠে।[৭৮]
আরও দেখুন
- গাড়ির শ্রেণিবিভাগ
- সমাজে গাড়ির প্রভাব
তথ্যসূত্র
আরও পড়ুন
বহিঃসংযোগ
Wikiwand - on
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Remove ads