শীর্ষ প্রশ্ন
সময়রেখা
চ্যাট
প্রসঙ্গ
জর্জিয়া
পূর্ব ইউরোপীয় দেশ উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
Remove ads
জর্জিয়া (জর্জীয়: საქართველო, আইপিএ: [sakʰartʰʷelo] () )পূর্ব ইউরোপের সংযোগস্থলের একটি আন্তঃমহাদেশীয় দেশ।এটি ককেশাস অঞ্চলের অংশ এবং এর পশ্চিমে কৃষ্ণসাগর, উত্তর ও উত্তরপূর্বাংশে রাশিয়া,দক্ষিণ পশ্চিমাংশে তুরস্ক,দক্ষিণে আর্মেনিয়া,আর দক্ষিণপূর্বাংশ আজারবাইজান দ্বারা ঘেরা।দেশটির আয়তন ৬৯,৭০০ বর্গ কিলোমিটার(২৬,৯০০ বর্গমাইল) আর জনসংখ্যা প্রায় ৩.৭ মিলিয়ন।[৯]তিবিলিসি একই সাথে দেশটির রাজধানী এবং বৃহত্তম শহর, এক-তৃতীয়াংশ জর্জিয়ান জনগোষ্ঠীর বাস এই শহরটিতেই।

প্রাচীন যুগে কোলচি,ইবেরিয়ার মতো বিভিন্ন স্বাধীন রাজ্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলো জর্জিয়ায়।চতুর্থ শতাব্দীর শুরুর দিকেই জর্জীয় উপজাতিরা খ্রিস্টধর্মে ধর্মান্তরিত হয়।যা প্রাথমিক জর্জীয় রাষ্ট্রের গোড়াপত্তনের জন্য তাদের আত্মিক ও রাজনৈতিক একতাবদ্ধ করণে ভূমিকা রাখে।মধ্যযুগে ঐক্যবদ্ধ জর্জীয় রাজ্য প্রসারিত হওয়া শুরু হয় এবং দ্বাদশ ও ত্রয়োদশ শতকে রাজা চতুর্থ ডেভিড বা David IV এবং রানী তামার বা Tamar এর শাসন আমলকে তাদের স্বর্ণযুগ বলা হয়।অত:পর রাজ্যটির পতন হয় এবং বিভিন্ন আঞ্চলিক শক্তির দ্বারা শাসিত ও উপনিবেশিত হয়।রাজ্যটি বিভিন্ন সময় মঙ্গল,তুর্কি ও পারস্যের বিভিন্ন সাম্রাজ্যের অধীনে ছিলো।১৭৮৩ সালে একটি জর্জীয় রাজ্য রাশিয়ান সাম্রাজ্যের সাথে মৈত্রী স্থাপন করে।আর এটিই উনবিংশ শতাব্দীতে শান্তিপূর্ণ ভাবে অধুনিক জর্জিয়ার রাজ্য সমূকে এক করতে ভূমিকা পালন করে। ১৯১৭ সালের রুশ বিপ্লবের পর জর্জিয়া জার্মানির নিরাপত্তায় একটি স্বাধীন প্রজাতন্ত্র গঠন করে।[১০]
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের শেষ হওয়ার পর সোভিয়েত ইউনিয়ন ১৯২২ সালে জর্জিয়ায় আক্রমণ করে এবং জর্জিয়াকে নিজের সাথে যুক্ত করে।জর্জিয়া হয়ে উঠে সোভিয়েত ইউনিয়নের একটি সাংবিধানিক প্রজাতন্ত্র।১৯৮০ এর দশক জুড়ে জর্জিয়ার স্বাধীনতা সংগ্রাম শুরু হয় ও দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে।যা সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে জর্জিয়াকে১৯৯১ সালের এপ্রিল মাসে বিভাজিত করে আর গঠিত হয় স্বাধীন জর্জিয়া।পরবর্তী দশক গুলতো সোভিয়েত পরবর্তী জর্জিয়া অর্থনৈতিক সমস্যা,রাজনৈতিক অস্থিরতা,জাতিগত দ্বন্দ,আবখাজিয়া আর দক্ষিণ ওশেটিয়ার বিভোজিত হওয়ার লড়াইয়ের মধ্যে দিয়ে যায়। ২০০৩ সালের রক্তহীন গোলাপ বিপ্লবের পর জর্জিয়া দৃঢ় ভাবে পশ্চিমা বৈদেশিক নীতি অনুসরণ শুরু করে।যা জর্জিয়ার কাছে উন্মুক্ত করে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও ন্যাটোর বিভিন্ন গনতান্ত্রিক ও অর্থনৈতিক লক্ষ্য সমূহকে।দেশটিকে পশ্চিমা ঢঙে সাজানো নিয়ে দ্রুতই রাশিয়ার সাথে সম্পর্কের অবনতি হতে থাকে।ফলে ২০০৮ সালে শুরু হয় রুশ-জর্জীয় যুদ্ধের। সেসময়ে জর্জিয়ার একাংশকে নিজেদের অন্তর্ভুক্ত করে নেয় রাশিয়া।
জর্জিয়া একটা প্রতিনিধিত্বমূলক গনতন্ত্রীয় দেশ,যেটি এককেন্দ্রিক সংসদীয় প্রজাতন্ত্র হিসেবে শাসিত হয়।[১১][১২] এটি উচ্চ মানব উন্নয়ন সূচক সম্বলিত উন্নয়নশীল একটি দেশ।স্বাধীনতার পর দেশটিতে অর্থনৈতিক সংস্কার সাধিত হয়েছে,যা একদিকে মুক্ত অর্থনীতির দুয়ার উন্মুক্ত করেছে অপরদিকে দূর্নীতি,দারিদ্রতা আর বেকারত্বের হার কে হ্রাস করতে ভূমিকা রাখছে।গাঁজাকে বৈধতা দানকারী প্রথম সারির দেশ এবিং একমাত্র সাবেক সমাজতান্ত্রিক রাজ্য। দেশটি বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার সদস্য যেমনঃ কাউন্সিল অফ ইউরোপ,ওএসসিই,ইউরোকন্ট্রোল, ইবিআরডি, দ্যা বিএসইসি,দ্যা জিইউএএম,দ্যা এডিবি,দ্যা ডাব্লিউটিও এবং দ্যা এনার্জি কমিউনিটি।
Remove ads
ব্যুৎপত্তি
সারাংশ
প্রসঙ্গ
ইতালীয় ভাষায় ১৩২০ খ্রিস্টাব্দে পিয়েত্রো ভেস্কন্টের মাপ্পা মুন্ডিতে "জর্জিয়া" নামটির প্রথম উল্লেখ রয়েছে।[১৩] প্রথম দিককার উল্লেখে ল্যাটিন বিশ্বে জর্জিয়া সর্বদা একই ট্রান্সলিটারেশনে লেখা হয়নি এবং এর প্রথম ব্যঞ্জণবর্ণ কে জে(J) ধরে তারা "জর্গিয়া"(Jorgia) হিসাবে বানান লিখতো।[১৪]"জর্জিয়া" সম্ভবত জর্জিয়ানদের পারস্য নাম থেকে উদ্ভূত - গুরগান, যা একাদশ এবং দ্বাদশ শতাব্দীতে সিরিয়াক গুর্জআন / গুর্জইয়ান এবং আরবি জুরজান / জুরযান থেকে এসেছিলো।পরিব্রাজক জ্যাকস ডি ভিট্রি লোর ভিত্তিক তত্ত্ব দিয়েছিলেন,তিনি জর্জিয়ানদের মধ্যে সেন্ট জর্জের জনপ্রিয়তা থাকায় সেখান থেকেই নামটির উৎপত্তি বর্ণনা করেছিলেন।[১৫] পরিব্রাজক জঁ চার্ডিন ভেবেছিলেন যে "জর্জিয়া" গ্রীক শব্দ γεωργός( '"চাষের ভূমি'")। অধ্যাপক আলেকজান্ডার মিকাবেরিডজে লিখেছেন যে, জর্জিয়া /জর্জিয়ান শব্দটির উৎপত্তির জন্য এই শতাব্দীর-পুরানো ব্যাখ্যাগুলি পণ্ডিত মহল দ্বারা প্রত্যাখ্যাত হয়েছে,যারা পারস্য শব্দ গুর্গ /গুরগান ("নেকড়ে"[১৬])কে শব্দটির মূল হিসাবে উল্লেখ করে।[১৭] পারস্য শব্দ গুর্গ/গুরগান থেকে শুরু হয়ে, পরবর্তীতে এই শব্দটি স্লাভিক এবং পশ্চিম ইউরোপীয় ভাষাসহ আরও অনেক ভাষায় গৃহীত হয়।[১৮]
এই পরিভাষাটা সম্ভবত গৃহীত হয়েছে নিককাট স্পিয়ান অঞ্চলে ব্যবহৃত ইরানী নাম গোরগান (নেকড়েদের ভূমি) থেক।[১৭][১৯]
স্থানীয় নাম সাকার্টভেলো (საქართველო: "কার্টভেলিয়ানদের ভূমি") যা উদ্ভুত হয়েছে জর্জিয়ান অঞ্চলের প্রাণকেন্দ্র কার্টিল থেকে, যা ৯ম শতকের নথিপত্রে বিদ্যমান ছিলো।ত্রয়োদশ শতকের জর্জিয়ান রাজ্যে বা কিংডম অব জর্জিয়ায় শব্দটির বহুল ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়।জর্জিয়ান উপজাতি সমূহ নিজেদেরকে কার্টভেলিয়ান বলে আত্মপ্রকাশ করতো যা প্রাচীন ইসরাইলীয় শহরে প্রাপ্ত উম লেইসুন ইন্সক্রিপশনে উল্লেখিত হয়েছে।মধ্যযুগীয় জর্জিীয় ঘটনাপঞ্জি তে, কার্টভেলিয়ানদের পূর্বপুরুষ হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে কার্টলোস কে,যাকে গন্য করা হয় জাফেথের প্রপৌত্র হিসেবে।যাইহোক,পণ্ডিতরা একমত যে শব্দটি কার্টস(karts) থেকে প্রাপ্ত,দ্বিতীয় শব্দটি প্রোটো-জর্জিয়ার গোত্রগুলির একটি যা প্রাচীনকালে প্রভাবশালী দল হিসেবে আবির্ভূত হয়।[১৭] সাকার্টভেলো (საქართველო) নামটি দুটি অংশ নিয়ে গঠিত।এর ক্রিয়ামূল, 'কার্টেভেল-ই' যা ইস্টার্ন রোমান সাম্রাজ্যের সোর্সগুলোতে পূর্ব জর্জীয় অঞ্চলের প্রাণকেন্দ্র হিসেবে পরিচিত কার্টলি ও ইবেরিয়া অঞ্চলের জাতিসত্তাকে নির্দেশ করে।প্রাচীন গ্রিকরা (স্ট্রাবো, হেরোডোটাস, প্লুটার্চ, হোমার, ইত্যাদি) এবং রোমানরা (তিতাস লিভিয়াস, টেসিটাস ইত্যাদি) পশ্চিমাঞ্চলের জর্জীয়দের কোলচিয়ান এবং পূর্বাঞ্চলের জর্জীয়দের ইবেরিয়ান (বিভিন্ন গ্রিক উৎসে: ইবেরোই) হিসাবে উল্লেখ করেছেন।[২০] আজ জর্জিয়ার সংবিধানের ইংরেজি সংস্করণে উল্লেখ করা হয়েছে যে, "জর্জিয়া জর্জিয়ার রাষ্ট্রের নাম হবে।" ১৯৯৫ সালের সংবিধান কার্যকর হওয়ার আগে দেশটির পূর্ণ, সরকারী নাম "জর্জিয়া" দেশের নাম জর্জিয়া প্রজাতন্ত্র ছিল।
বর্তমানে দেশটির সরকারি নাম হলো জর্জিয়া যা জর্জিয়ান সংবিধানে "জর্জিয়া রাষ্ট্রটির নাম হবে জর্জিয়া" বলে স্পষ্ট ভাবে উল্লেখিত হয়েছে।[২১] ১৯৫৫ সালে সংবিধান কার্যকর হওয়ার পূর্বে দেশটির নাম ছিলো "জর্জীয়ান প্রজাতন্ত্র", এখনো মাঝেমধ্যে এই নামেই ডাকা হয়ে থাকে।[২২]
Remove ads
ইতিহাস
সারাংশ
প্রসঙ্গ
প্রাগৈতিহাসিক
আধুনিক দিনের জর্জিয়া অঞ্চলটিতে পলোলিথিক যুগের পরে হোমো ইরেক্টাস দ্বারা বাসতি স্থাপন শুরু হয়। প্রোটো-জর্জিয়ান জনগোষ্ঠীর উল্লেখ ইতিহাসের পাতায় প্রথম দেখা যায় খ্রিস্টপূর্ব ১২শ অব্দের দিকে।[২৩] জর্জিয়ায় মদের প্রাচীনতম প্রমাণ পাওয়া গেছে, সেখানে ৮,০০০ বছরের পুরানো মদের বোতল আবিষ্কৃত হয়েছে।[২৪]
প্রত্ননির্দশন এবং প্রাচীন উৎসসমুহের তথ্য থেকে প্রাচীন রাজনীতি এবং রাষ্ট্র গঠনের উপাদানগুলি সম্পর্কে তথ্য পাওয়া যায়,যা খ্রিস্টপূর্ব ৭ম শতাব্দী এবং পরবর্তী সময়কালের বলে প্রমাণিত হয় উন্নত ধাতুবিদ্যা ও গোল্ডস্মিথ কৌশলের মাধ্যমে।[২৩] প্রকৃতপক্ষে, শুলাভেরি-শোমু সংস্কৃতিতে খ্রিস্টপূর্ব ৬ষ্ঠ সহস্রাব্দের সময় জর্জিয়ায় প্রাথম ধাতুবিদ্যা শুরু হয়েছিল।[২৫]
প্রাচীনত্ব
প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন সমূহ প্রমাণ করে যে, জর্জিয়া ৬০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দেরও পূর্বে থেকেই মদ উৎপাদনের জন্য পরিচিত ছিলো,যা সময়ের সাথে সাথে জর্জীয়ান সংস্কৃতি ও জাতীয় পরিচিতির পেছনে ব্যাপক ভূমিকা রাখে।[২৬] প্রাচীন সময়ে জর্জিয়া বিভিন্ন রাজ্যের অধিভুক্ত ছিলো,যাদের মধ্যে পূর্বের ইবেরিয়া আর পশ্চিমের কোলচি রাজ্য প্রধান ছিলো।গ্রিক পৌরাণিক কাহিনী মতে,কোলচিতে গোল্ডেন ফ্লিস(স্বর্ণখোচিত ভেড়ার লোম দিয়ে তৈরি পোশাক) অবস্থিত ছিলো এবং জেসন ও এর্গোনট দ্বারা আক্রমণের স্বীকার হয়েছিলো যা এপোলোনিয়াস রোডিয়াসের এর্গোনটিকাতে বর্ণিত হয়েছে।গোল্ডেন ফ্লিসকে পুরাণের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিলো সম্ভবত স্থানীয়ভাবে ভেড়ার লোমকে নদী থেকে প্রাপ্ত স্বর্ণের গুড়ো পৃথকীকরণের উপকরণ হিসেবে ব্যবহারের কারণে।[২৭] খ্রিস্টপূর্ব ৪র্থ শতাব্দীতে ইবেরিয়া রাজ্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলো যা একক রাজার অধীনে আধুনিক রাজ্য ও অভিজাত যাজকতন্ত্র গঠনের প্রাচীনতম উদাহরণ বহন করে।[২৮] রোমান প্রজাতন্ত্র ৬৬ খ্রিস্টপূর্বাব্দে বর্তমান জর্জিয়া অংশটি দখল করে এতে জায়গাটি পরিণত হয় ৭০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে স্থায়ী হওয়া ইরানো-রোমান ভূ-রাজনৈতিক দ্বন্দ ও যুদ্ধক্ষেত্রের মূল ভূখণ্ড হিসেবে।[২৯] প্রথম খ্রিস্টীয় শতাব্দী থেকে জর্জিয়ায় সচরাচর মিথ্রা,প্যাগান আর জরথ্রুস্টদের ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানই পালিত হতো।[৩০] ৩৩৭ খ্রিস্টাব্দে রাজা তৃতীয় মিরিয়ান জর্জিয়ার রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে খ্রিস্টধর্মকে ঘোষণা করে,যা আপনা আপনি সাহিত্য ও শিল্পের অগ্রগতি আর সংযুক্ত জর্জিয়া রাজ্য গঠনের সূতিকাগার হিসেবে কাজ করে।[৩১] এটি গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠতে দীর্ঘ সময় নিলেও তা জরথ্রুস্টদের পতনের কারণ হয়ে দাঁড়ায়(৪০),যা কিনা ৫ম শতাব্দী সময়কাল পর্যন্তও ইবেরিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্ম হিসেবে প্রতিষ্ঠিত ছিলো এবং বহু মানুষ এই ধর্মের আচার অনুষ্ঠান পালনের সাথে জড়িত ছিলো।[৩২]
Remove ads
সরকার ও রাজনীতি
সারাংশ
প্রসঙ্গ
প্রতিনিধিত্বমূলক সংসদীয় গণপ্রজাতন্ত্রের দেশ হলো জর্জিয়া যার সভা প্রধান হলেন প্রেসিডেন্ট[৩৩] আর প্রধানমন্ত্রী হলেন সরকার প্রধান।রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত হয় কেবিনেটে।কেবিনেট মন্ত্রীদের নিয়ে গঠিত হয় যার মুখ্য ভূমিকায় থাকেন প্রধানমন্ত্রী। সালোম জুরাবিশভিলি জর্জিয়ার বর্তমান প্রেসিডেন্ট হিসেবে আছেন যিনি ২০১৮ এর প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ৫৯.৫২% ভোটে নির্বাচিত হন।[৩৩] ২০২১ সাল থেকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন ইরাকলি ঘারিবাশভিলি।
জর্জিয়ার সংসদে ন্যাস্ত আছে আইন প্রণেতারাও।যা এককক্ষীয় এবং এতে রয়েছে ১৫০ জন সদস্য যারা ডেপুটি নামে পরিচিত, যাদের মধ্যে ৩০ জন বিভিন্ন জেলার নির্বাচিত সদস্য বাকি ১২০ জন বিজয়ী দল কর্তৃক নিযুক্ত হয়ে থাকে।সংসদ সদস্যগণ চার বছরের জন্য নির্বাচিত হন।২০১২ সালের ২৬ মে সাকাশভিলি পশ্চিমাঞ্চলের কুতাইসা শহরে নতুন সংসদ ভবন বিনির্মাণ করেন যাতে ক্ষমতাকে মেরুহীন করা যায় এবিং রাজনৈতিক কর্মকে আবাখাজিয়ার কাছাকাছি আনা যায়।[৩৪] ২০১২ তে ক্ষমতায় আসা সাকাশভিলির কৃত এই কাজ পরবর্তীতে বাতিল করা এবং ছয় বছর পর আবারও তিবিলিসেই সংসদ ভবনকে বহাল করা হয়।[৩৫]
বৈদেশিক সম্পর্ক
জার্জিয়ার সাথে তার প্রতিবেশী দেশ আর্মেনিয়া, আজারবাইজান ও তুরস্কের সুসম্পর্ক বিদ্যমান।জর্জিয়া জাতিসংঘ,ইউরোপীয় কাউন্সিল,বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা,কৃষ্ণসাগর ইকোনমিক কোঅপারেশন সংস্থা,GUAM,এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক সহ বিভিন্ন সংস্থার সদস্য।এছাড়া জর্জিয়ার সাথে ফ্রান্স,জার্মানি,ইসরাইল,জাপান,দক্ষিণ কোরিয়া,শ্রীলঙ্কা,তুরস্ক,ইউক্রেন,যুক্তরাষ্ট্র সহ বিভিন্ন দেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক বিদ্যমান রয়েছে।[৩৬]
উপর্যুপরি জর্জিয়া ন্যাটোর পূর্ণাঙ্গ সদস্য হতে কাজ করছে।এছাড়া ইউরোপীয় ইউনিয়নের সাথে জর্জিয়ার বেশ ভালো সম্পর্ক বিদ্যমান রয়েছে।
সামরিক বাহিনী
জর্জিয়ার রয়েছে সুশৃঙ্খল ও শক্তিশালী স্থল ও বিমান বাহিনী। যাদের একত্রে বলা হয় জর্জিয়ার প্রতিরক্ষা বাহিনী(GDF)।এই GDF বিভিন্ন প্রতিরক্ষা ও সামরিক কার্যক্রম চালনা করে আর এটি পরিচালিত হয় জর্জীয়ান সাংবিধানের সামরিক বাহিনীর আইন অনুযায়ী। ২০২১ সালে সামরিক খাতে জর্জিয়ার বাজেট ছিলো ২৮০ মিলিয়ন ডলার।যার ৭২ শতাংশ ব্যবহৃত হয়েছে প্রতিরক্ষা বাহিনীর উন্নয়নে।[৩৭][৩৮]
সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে স্বাধীনতার পর জার্জিয়া নিজস্ব সামরিক শিল্পখাত সমৃদ্ধ করা শুরু করে।১৯৯৯ সালে যাত্রা শুরু হয় STC Delta এর।[৩৯] বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটি সুসজ্জিত অস্ত্র বহর, আর্টিলারি সিস্টেম,এভিয়েশন সস্টেম,আত্মরক্ষার সরঞ্জাম,ক্ষুদ্রাস্ত্র সহ বিভিন্ন রকম সামরিক সরঞ্জাম তৈরি করে থাকে।[৪০]ইরাক যুদ্ধের শেষ ভাগে জর্জিয়ার প্রায় ২,০০০ সৈন্য Multi-National Force এর মধ্যে নিযুক্ত ছিলো।[৪১] এছাড়াও জর্জিয়া আফগানিস্তানে ন্যাটো পরিচালিত যুদ্ধেও অংশ নিয়েছিলো।যেখানে ২০১৩ সালে সৈন্য ছিলো ১,৫৬০ জন যা সে সময়ে কোনো ন্যাটো বহির্ভূত দেশের সৈন্যদের সর্বোচ্চ।[৪২] ১১,০০০ এরও বেশি সৈন্য বিভিন্ন সময় আফগান যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলো।[৪৩] ২০১৫ সালের হিসেব মতো আফগান যুদ্ধে নিহত হয় ৩১ জর্জীয়ান সৈনিক।[৪৪] যার অধিকাংশই নিহত হয় হেলমেন্দ ক্যাম্পেইনের সময়।এছাড়া ৩৫ জন পঙ্গু সহ মোট ৪৩৫ জন সৈন্য আহত হয়।[৪৫]
দূর্নীতি
গোলাপ বিপ্লবের পূর্বে জর্জিয়া বিশ্বের অন্যতম দূর্নীতিগ্রস্থ দেশের তালিকায় ছিলো।[৪৬] কিন্তু শান্তি বিপ্লবের পর দেশটির দূর্নীতি নাটকীয় ভাবে হ্রাস পেতে থাকে।২০১০ সালে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল জর্জিয়াকে দূর্নীতি দমনের নটরাজ হিসেবে ঘোষণা করে।[৪৭] ২০১২ সালে বিশ্বব্যাংক জর্জিয়ার দূর্নীতি দমনকে অভূতপূর্ব সাফল্য ঘোষণা করেন।জর্জিয়ার এই সাফল্য বিশ্ব বিবেককে বুঝিয়ে দেয় যে যেকোনো মাত্রার দূর্নীতিচক্র ভেঙে ফেলা সম্ভব,একজন দূর্নীতি গ্রস্থ কর্মীকে গড়ে তোলা সম্ভব একজন সৎ ও দায়িত্ববান কর্মী হিসবে।[৪৮]
Remove ads
প্রশাসনিক অঞ্চল
জর্জিয়া প্রশাসনিক দিক থেকে ৯ টি অঞ্চল,১ টি রাজধানী অঞ্চল আর দুটি সায়ত্তশাসিত প্রজাতন্ত্রে বিভক্ত।এগুলো সব মিলিয়ে ৬৭ টি জেলা আর ৫ টি স্ব-শাসিত শহরে বিভক্ত।[৪৯]
Remove ads
অর্থনীতি
প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণা থেকে উঠে এসেছে যে অতীত কাল থেকেই জর্জিয়া বিভিন্ন দেশ ও সাম্রাজ্যের সাথে ব্যবসা বাণিজ্যে লিপ্ত ছিলো এর পেছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে দেশটি কৃষ্ণসাগরের তীরে অবস্থান এবং সিল্ক রোডের অন্যতম রুট হওয়ায়। স্বর্ণ,রৌপ্য,তাম্র আর লৌহের খনন হয়েছে ককেশাস পর্বত অঞ্চলে।জর্জীয় মদ উৎপাদন তাদের অন্যতম প্রাচীন ঐতিহ্যের সাথে সাথে সে সময়ের অর্থনৈতিক উন্নয়নের চালিকাশক্তি হিসেবেও ভূমিকা রাখে।উপর্যুপরি দেশটিতে আছে বৃহত্তর হাইড্রো পাওয়ার।[৫১] আধুনিক সময়ে জর্জিয়ার আর্থিক উন্নয়নের পেছনে অবদান রেখে চলেছে কৃষি ও টুরিজম যা দেশটির আবহাওয়া ও মনোরম দৃশ্যের জন্য গড়ে উঠেছে।বিংশশতাব্দীর বেশিরভাগ সময় জুড়ে জর্জিয়ার অর্থনীতি সোভিয়েত আদলে পরিচালিত হতো।১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর জর্জিয়া অর্থনৈতিক খাতে সংস্কারে মনযোগ দেয় আর তৈরি করে একটি মুক্তবাজার অর্থনীতির।সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বের হয়ে যাওয়া অন্যান্য দেশের মতো জর্জিয়াও বেশ কয়েকবার অর্থনৈতিক ধ্বসের স্বীকার হয়।গৃহযুদ্ধ এবং দক্ষিণ ওসেটিয়া এবং আবখাজিয়ায় সংগঠিত সামরিক সাংঘাত অর্থনৈতিক ধ্বসের মাত্রা আরও বাড়িয়ে দেয়। একবিংশ শতাব্দীর শুরু থেকেই জর্জিয়ার অর্থনৈতিক উন্নয়নের লক্ষণ প্রকাশিত হতে শুরু করে।২০০৭ সালে জর্জিয়ার জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ১২ শতাংশ ছিলো যা জর্জিয়াকে স্থান দেয় পূর্ব ইউরোপের দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির দেশ হিসেবে।জর্জিয়ার প্রধান প্রধান আমদানি পণ্য হচ্ছে যানবাহন, ওর,জীবাশ্ম জ্বালানি এবং ফার্মাকিউটিকলস।প্রধান প্রধান রপ্তানি পণ্য হচ্ছে ওর,ফ্যারো অ্যালয়,যানবাহন, মদ,মিনারেল ওয়াটার ইত্যাদি।[৫২][৫৩] উল্লেখ্য যে ২০২১ সালে মুক্ত অর্থনীতিতে বিশ্বে ১২ তম অবস্থানে ছিলো জর্জিয়া।২০১৯ সালে দেশটি মানব উন্নয়ন সূচকে ৬১ তম অবস্থানে ছিলো।২০০০ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে জর্জিয়ার মানব উন্নয়ন সূচক বৃদ্ধির হার ১৭.৭%।[৫৪] জর্জিয়ার এই দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির উপর গুরুত্বপূর্ণ ভমিকা রেখেছে দেশটির শিক্ষা ব্যবস্থা।
Remove ads
যোগাযোগ ব্যবস্থা
বর্তমানে জর্জিয়ায় রেল,সড়ক,ফেরি ও আকাশপথে যাতায়াত সুবিধা বিদ্যমান আছে।অধিগৃহীত অঞ্চল সমূহ ব্যাতিত সর্বমোট জর্জিয়ায় সড়কপথ ২১,১১০ কিলোমিটার আর রেলপথ ১৫৭৬ কিলোমিটার।[৫৫] ককেশাস অঞ্চলে আর কৃষ্ণসাগরের উপকূলে অবস্থিত এই দেশটি আজারবাইজান পাস থেকে ইউরোপীয় ইউনিয়নে এনার্জি ট্রান্সপোর্টেসনের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সাম্প্রতিক সময়ে জর্জিয়া তাদের যোগাযোগ ব্যবস্থা আধুনিকায়নের জন্য প্রচুর টাকা বিনোয়গ করেছে।বিশেষ করে নতুন নতুন মহাসড়ক বিনির্মাণে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।তিবিলিসের মতো বড় ও গুরুত্বপূর্ণ শহর গুলোতে উন্নত রাস্তা তৈরি করা হয়েছে ইতোমধ্যে। তবে আন্তঃনগর রাস্তা গুলোর অবস্থা শোচনীয়ই বলা যায়।জর্জীয়ান রেলপথ ককেশাস অঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে কেননা কাসপিয়ান ও কৃষসাগরকে সংযুক্ত করেছে এই রেলপথ।আর এই রেলপথের জন্যেই সাম্প্রতিক সময়ে তারা এনার্জি ট্রান্সপোর্টেসনের সুবিধা পাচ্ছে যা আজারবাইজান হতে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ইউক্রেন আর তুরস্কে রপ্তানি হয়।[৫৬] অপরদিকে যাত্রী পরিবহনের জন্য ব্যবহৃত হয় জর্জীয়ান সরকার কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত জর্জীয়ান রেলপথ সমূহ। ২০০৪ থেকে জর্জীয়ান রেলপথ ব্যাপক উন্নয়ন ও সংস্কারের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে যা বাস্তবায়িত হলে যাত্রীদের জন্য হবে ব্যাপক সুবিধাজনক।[৫৬] আর এই সংস্কার প্রকল্পের অধীনে অতি দ্রুতই নিকট ভবিষ্যতে রেলপথ দেখবে অসংখ্য পরিবর্তন।[৫৬] জর্জিয়ায় আকাশ ও নৌপথ যা যাত্রী ও পণ্য বহনের খুবই প্রয়োজনীয় ভূমিকা রাখছে তা দিন দিন দেখছে উন্নতির মুখ।জর্জিয়ায় বর্তমানে ৪ টি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর রয়েছে।যাদের মধ্যে বৃহত্তম হলো তিবিলিস আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর।যার সাথে সংযোগ রয়েছে ইউরোপের বড় বড় অনেক শহরের।দেশটির অন্যান্য বিমানবন্দরসমূহ অনুন্নত অথবা সুনিয়ন্ত্রিত নয়। স্বল্প পরিসরে এদের সংস্কার চালু থাকলেও তা উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আনতে সক্ষম নয়।[৫৭] জর্জিয়ায় বেশ কিছু সমুদ্রবন্দর আছে যা কৃষ্ণসাগরের উপকূলে অবস্থিত। এদের মধ্যে বৃহত্তম ও ব্যাস্ততম বন্দরটি হচ্ছে বাটুমি বন্দর।যাত্রীবাহী ফেরি সমূহ জর্জিয়ার সাথে বুলগেরিয়া,রোমানিয়া, তুরস্ক আর ইউক্রেনকে যুক্ত করেছে।[৫৮]
Remove ads
তথ্যসূত্র
বহিঃসংযোগ
Wikiwand - on
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Remove ads