শীর্ষ প্রশ্ন
সময়রেখা
চ্যাট
প্রসঙ্গ
ট্রেভর বেইলি
ইংরেজ ক্রিকেটার উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
Remove ads
ট্রেভর এডওয়ার্ড বেইলি, সিবিই (ইংরেজি: Trevor Bailey; জন্ম: ৩ ডিসেম্বর, ১৯২৩ - মৃত্যু: ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০১১) এসেক্সের ওয়েস্টক্লিফ-অন-সী এলাকায় জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত টেস্ট ক্রিকেট তারকা, ক্রিকেট লেখক ও ধারাভাষ্যকার ছিলেন।[১][২] ইংল্যান্ড ক্রিকেট দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন ট্রেভর বেইলি। দলে তিনি মূলতঃ অল-রাউন্ডার ছিলেন। তবে দক্ষতা থাকলেও তার ব্যাটিংশৈলী তেমন দর্শনীয় ছিল না। এ প্রসঙ্গে বিবিসি স্মৃতিচারণমূলক বক্তব্য প্রদান করে যে, দর্শকদের বিনোদনের তুলনায় দলের মাঝেই বিরক্তিকর পরিবেশ সৃষ্টি করতো।[১] তার রক্ষণাত্মক দৃষ্টিভঙ্গীর কারণেই ‘বার্নাকল বেইলি’ ডাকনামে পরিচিতি পেয়েছেন তিনি।[৩] তাস্বত্ত্বেও আন্তর্জাতিক ক্রীড়াঙ্গনে বিশ্বের অন্যতম সেরা অল-রাউন্ডারের মর্যাদা পেয়েছেন।
Remove ads
প্রারম্ভিক জীবন
এসেক্সের ওয়েস্টক্লিফ-অন-সী এলাকায় বেইলি জন্মগ্রহণ করেন। নৌদপ্তরে তার বাবা চাকরি করতেন। বেইলি সাদামাটা জীবনধারায় গড়ে উঠেন। পরিবারটি লেই-অন-সী এলাকার অর্ধ-সংযুক্ত গৃহে বসবাস করতো। সপ্তাহে ১২ শিলিংয়ের বিনিময়ে এক ব্যক্তি তাদেরকে সহায়তায় নিযুক্ত ছিলেন। তবে তাদের নিজস্ব কোন গাড়ী ছিল না।[৩] সাগর তীরবর্তী এলাকায় তিনি প্রথম ক্রিকেট খেলা শিখতে শুরু করেন।[৩]
ক্রীড়ায় বৃত্তিলাভ করে তিনি অ্যালেন কোর্ট প্রিপ স্কুলে ভর্তি হন। সেখানে তিনি সাবেক এসেক্স অধিনায়ক ডেনিস উইলকক্সের কাছ থেকে ক্রিকেট খেলা শিখেন।[৩] এরপর ডালউইচ কলেজে চলে যান।[৪] সেখানে তার প্রথম বছরে মাত্র ১৪ বছর বয়সে ডালউইচের প্রথম ক্রিকেট একাদশ দলের সদস্যতা লাভ করেন।[১] ১৯৩৯ ও ১৯৪০ সালে বিদ্যালয়ের ব্যাটিং ও বোলিং গড়ে শীর্ষ স্থান অধিকার করেন। ১৯৪১ সালে অধিনায়কত্ব লাভ করেন। ১৯৪২ সালে ডালউইচের শেষ বছরে আবারো তিনি গড়ে শীর্ষ ছিলেন।[৩]
Remove ads
খেলোয়াড়ী জীবন
সারাংশ
প্রসঙ্গ
জুন, ১৯৪৯ সালে সফরকারী নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে তার টেস্ট অভিষেক ঘটে। হেডিংলিতে অনুষ্ঠিত প্রথম খেলাতেই তিনি বাজিমাৎ করেন। ১১৮ রান দিয়ে ৬ উইকেট দখল করেন।[৫] ১৯৪৯ থেকে ১৯৫৯ সময়কালে ইংল্যান্ডের পক্ষে ৬১ টেস্টে অংশগ্রহণের সুযোগ পান। ডানহাতি ফাস্ট-মিডিয়াম বোলার, নির্ভরযোগ্য ডানহাতি ব্যাটসম্যান ও দক্ষ ফিল্ডার হিসেবে বেশ সুনাম কুড়িয়েছেন। প্রায়শঃই তিনি স্লিপ কিংবা লেগ গালি অঞ্চলে অবস্থান করতেন। অ্যালেক বেডসার ও পরবর্তীতে ফ্রেড ট্রুম্যান, ব্রায়ান স্ট্যাদাম ও ফ্রাঙ্ক টাইসনের ফাস্ট-বোলিংয়ের সাথে তার সুইং বোলিংয়ে বেশ মিল ছিল। ২৯ গড়ে ১৩২ উইকেট নেন। প্রায় ৩০ গড়ে রান সংগ্রহ করেন। অপরাজিত ১৩৪ রান করেন ও ৩২ ক্যাচ নেন।
সুদৃঢ়চিত্তে রক্ষণাত্মক ব্যাটিং করে স্মরণীয় হয়ে রয়েছেন তিনি। ১৯৫৩ সালে লর্ডসে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় টেস্টে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ইংল্যান্ড সমূহ পরাজয়ের মুখোমুখি হলে পঞ্চম উইকেট জুটিতে উইলি ওয়াটসনকে সাথে নিয়ে রক্ষণাত্মক কৌশল অবলম্বন করেন। এ দুইজন বোলারদের মোকাবেলা করে চার ঘণ্টারও অধিক সময় অতিবাহিত করলে খেলাটি ড্রয়ে পরিণত হয়। ২৫৭ মিনিটে ৭১ তুলেন।[৬] ঐ সিরিজেরই চতুর্থ টেস্টে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে ইংল্যান্ডকে ১-০ ব্যবধানে পিছিয়ে পড়া থেকে রক্ষা করেন। এরফলে অ্যাশেজ নিজেদের দখলে রাখতে সমর্থ হয়। শেষদিনের দ্বিতীয় ইনিংসে ইংল্যান্ডের শুরু হয় ১৭৭/৫ দিয়ে। তারা কেবলমাত্র ৭৮ রানে এগিয়ে ছিল। বেইলি ২৬২ মিনিটে মাত্র ৩৮ রান তুলেন। অস্ট্রেলিয়া মাত্র ১১৫ মিনিটে ১৭৭ রান তুলে। হাতে সাত উইকেট ও ৪৫ মিনিটে ৬৬ রানের লক্ষ্যমাত্রায় থাকাকালে তিনি দীর্ঘ দূরত্ব নিয়ে বোলিং করলে ওভার রেটে চাপ পড়তে থাকে। এছাড়াও তিনি লেগ স্ট্যাম্প বরাবরে নেতিবাচকভাবে বেশ দূরত্বে বোলিং করেন। এরফলে অস্ট্রেলিয়া ৩০ রান দূরে থাকে ও খেলাটি ড্রয়ের দিকে চলে যায়।[৭] পঞ্চম ও চূড়ান্ত টেস্টে ইংল্যান্ড জয় পেলে তারা অ্যাশেজ করায়ত্ত্ব করে।
১৯৫৩-৫৪ মৌসুমে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে যান। জ্যামাইকার কিংস্টনে অনুষ্ঠিত সিরিজের পঞ্চম টেস্টের প্রথম ইনিংসে চমৎকার বোলিং করেন। ব্যাটিং সহায়ক পিচে আউটসুইংয়ের মাধ্যমে তিনি তার সেরা বোলিং পরিসংখ্যান ৭/৩৪ করেন। এরফলে ওয়েস্ট ইন্ডিজ দল ১৩৯ রানে অল-আউট হয়। তবে, গ্রাউন্ডসম্যান আশাবাদী ছিলেন যে স্বাগতিক দল ৭০০ রান তুলতে সক্ষম।[৩] খেলায় ইংল্যান্ড জয়ী হলে সিরিজটি ২-২ ড্র হয়।[৮] ঐ সফরে তিনি দলের সহঃ অধিনায়কের মর্যাদা পান। কিন্তু দূর্ভাগ্যজনকভাবে তিনি কখনো ইংল্যান্ড দলের অধিনায়কত্ব করার সুযোগ পাননি।
১৯৫৮-৫৯ মৌসুমে অ্যাশেজ সফরে অস্ট্রেলিয়ায় যান। সেখানেই তিনি তার শেষ টেস্টগুলোয় অংশ নেন। ঐ সফরটি তার খারাপভাবে কাটে। ব্রিসবেনে অনুষ্ঠিত[৯] সিরিজের প্রথম টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে ৬ ঘণ্টা থেকে ৩ মিনিট কম নিয়ে ৫০ রান তুলেন।[৩][১০] এরফলে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে ধীরতম অর্ধ-শতক করেন তিনি। অস্ট্রেলিয়ায় এ খেলাটি প্রথম টেস্ট খেলা হিসেবে টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচারিত হয়েছিল।[১১] মেলবোর্নে তার চূড়ান্ত টেস্টে জোড়া শূন্য পান।[১২] এরপর তাকে আর ইংল্যান্ড দলে দেখা যায়নি।
Remove ads
প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হবার অল্প কিছুদিন পরই ১৯৪৬ সালে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে তার খেলোয়াড়ী জীবন শুরু হয়। এরপর পরবর্তী ২১ বছরে তিনি ৬৮২ খেলায় অংশ নিয়ে ২৩.১৩ গড়ে ২,০৮২ উইকেট পান। এরফলে তিনি সর্বকালের সেরা উইকেট সংগ্রহকারীদের তালিকায় ২৫তম স্থান লাভ করেন। এছাড়াও ইনিংসের সবগুলো উইকেট লাভে সক্ষম হয়েছেন বেইলি। ১৯৪৯ সালে ক্লাকটনে ল্যাঙ্কাশায়ারের বিপক্ষে ১০/৯০ পান। ২৮,৬৪১ রান তুলে সর্বকালের সেরা রান সংগ্রাহকদের তালিকায় ৬৭তম স্থান অধিকার করেন। ১৯৬১ থেকে ১৯৬৬ সাল পর্যন্ত কাউন্টি দলটির অধিনায়কত্ব করেন।
১৯৫৯ সালে ট্রেভর বেইলি দুই সহস্রাধিক রান ও শতাধিক উইকেট লাভ করেছেন। তার পূর্বে কেবলমাত্র জেমস ল্যাংগ্রিজ ১৯৩৭ সালে ২০৮২ রান ও ১০২ উইকেট লাভ করেছিলেন।
অবসর
১৯৬৭ সালে ক্রিকেট থেকে অবসর নেন। এরপরও তিনি অনেকগুলো বছর ওয়েস্টক্লিফ-অন-সী ক্রিকেট ক্লাবের পক্ষে খেলা চালিয়ে যান। এ সময় তিনি ক্রিকেট সাংবাদিক ও উপস্থাপকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন। ১৯৬৪ থেকে ১৯৬৯ সাল পর্যন্ত প্রধান প্রশাসনিক কর্মকর্তারূপে কাউন্টির সচিবের দায়িত্ব পালন করেন। এরপূর্ব সহকারী সচিব ছিলেন তিনি। অবসর পরবর্তীকালে বেশ কয়েকটি গ্রন্থ প্রকাশ করেন ও ক্রিকেটে ধারাভাষ্যকার হিসেবে কাজ করেন। তন্মধ্যে ২৬ বছর বিবিসির রেডিও অনুষ্ঠান টেস্ট ম্যাচ স্পেশালে কর্মরত ছিলেন।
২৩ বছর দ্য ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের ক্রিকেট ও ফুটবল সংবাদদাতা ছিলেন।[১১][১৩] ১৯৭৪ থেকে ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত বিবিসির টেস্ট ম্যাচ স্পেশালে নিয়মিতভাবে কাজ করেন।[১৪] ঐ সময়ই সতীর্থ ধারাভাষ্যকার ব্রায়ান জনস্টন তাকে ‘বয়েল’ ডাকনামে নামাঙ্কিত করেন। অবসরকালীন তিনি চকওয়েল পার্ক গ্রাউন্ডে ওয়েস্টক্লিফ-অন-সী ক্লাবের খেলাগুলো উপভোগ করতেন; যে মাঠে তিনি তার বিদ্যালয়কালীন, ক্লাব ও কাউন্টির পক্ষে অনেকবার খেলেছেন।[১৫]
১০ ফেব্রুয়ারি, ২০১১ তারিখে ওয়েস্টক্লিফ-অন-সী এলাকায় অবসরকালীন ফ্ল্যাটে অগ্নিকাণ্ডে তার দেহাবসান ঘটে।[১৬][১৭] তার স্ত্রী গ্রেটা অক্ষত থাকেন।[৩] এ দম্পতির দুই পুত্র ও এক কন্যা রয়েছে।[৬][১৮]
Remove ads
মূল্যায়ন
অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ধীরগতিতে রান সংগ্রহের কারণে ব্যাপক পরিচিতি পেয়েছেন। নেভিল কারদাস তার একটি ইনিংস সম্পর্কে ১৯৭০ সালে প্রকাশিত ‘ফুল স্কোর’ গ্রন্থে লিখেন। ২০ রান সংগ্রহের পূর্বে নববিবাহিত যুগল হিথ্রো ত্যাগ করে লিসবনে পৌঁছে সেখানে মধুচন্দ্রীমা উদযাপনে ব্যস্ত থাকে। বেইলি তার ৫০ রান সংগ্রহের সময় তারা সারবিটনের অর্ধ-সংযুক্ত গৃহে আবাস গড়ে। ইনিংসের শেষদিকে তারা বিবাহ-বিচ্ছেদের দিকে অগ্রসর হয়।[১৯][২০] তার অসম্ভব রক্ষণাত্মক ব্যাটিংয়ের কারণে তিনি ‘বার্নাকল’ ডাকনামে পরিচিতি পান।[২১]
ইংল্যান্ড এবং ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতি জাইলস ক্লার্ক তাকে দেশের অন্যতম সেরা অল-রাউন্ডারদের একজনরূপে গণ্য করেন। তবে, টেস্ট ম্যাচ স্পেশালে বেইলির সহকর্মী জোনাথন অ্যাগ্নিউ তার প্রসঙ্গে মন্তব্য করেন যে, ‘তিনি লড়াকু প্রকৃতির ব্যাটসম্যান ও আক্রমণাত্মক বোলিংয়ের অধিকারী ছিলেন। বুদ্ধিমান ক্রিকেটার ও ভবিষ্যৎবক্তা হিসেবে আশ্চর্যজনকভাবে বিশেষজ্ঞ ছিলেন তিনি।’[১৪]
Remove ads
সম্মাননা
১৯৫০ সালে উইজডেন কর্তৃক বর্ষসেরা ক্রিকেটার হিসেবে মনোনীত হন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে ফ্রেড টিটমাস ও রে ইলিংওয়ার্থের সাথে মাত্র তিনজন খেলোয়াড়ের একজনরূপে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে ২০,০০০ রান ও ২,০০০ উইকেট পেয়েছেন।[৩] আইসিসি ক্রিকেট রেটিং অনুযায়ী তার খেলোয়াড়ী জীবনের অধিকাংশ সময়ই বিশ্বের সেরা অল-রাউন্ডারের মর্যাদা লাভ করেছেন।[২২] সাউদেন্ড ইউনাইটেড ফুটবল ক্লাবের পরিচালক মনোনীত হয়েছিলেন।[১৮]
১৯৯৪ সালে ক্রিকেটে তার অসামান্য ভূমিকার কারণে কমান্ডার অব দি অর্ডার অব দ্য ব্রিটিশ এম্পায়ার পদবীতে ভূষিত হন।[১১]
Remove ads
রচনাসমগ্র
ট্রেভর বেইলি নিম্নবর্ণিত পুস্তক রচনা করে গেছেন:
- Cricketers in the Making, with D R Wilcox, Hutchinson
- Playing to Win, Hutchinson, 1954 - an account of the 1953 Test series in which England regained the Ashes which had been held by Australia since 1934
- Trevor Bailey's Cricket Book, Muller, 1959
- Championship Cricket, Muller, 1961
- Improve Your Cricket, Penguin, 1963
- The Greatest of My Time, Sportsmans, 1970
- Sir Gary: Life of Sir Garfield Sobers, Collins, 1976, আইএসবিএন ৯৭৮-০-০০-২১৬৭৬৪-২
- History of Cricket, Allen & Unwin, 1979, আইএসবিএন ৯৭৮-০-০৪-৭৯৬০৪৯-৯
- Lord's Taverners' Fifty Greatest, 1945–83, Heinemann, 1983, আইএসবিএন ৯৭৮-০-৪৩৪-৯৮০৩৯-০
- From Larwood to Lillee, with Fred Trueman, Macdonald, 1984, আইএসবিএন ৯৭৮-০-৩৫৬-১০৪১২-৬
- Wickets, Catches and the Odd Run (autobiography), Willow Books, 1986, আইএসবিএন ০-০০-২১৮১২৭-৪
- Spinners' Web, with Fred Trueman, Willow Books, 1988, আইএসবিএন ৯৭৮-০-০০-২১৮২৬৭-৬
Remove ads
তথ্যসূত্র
আরও দেখুন
গ্রন্থপঞ্জী
বহিঃসংযোগ
Wikiwand - on
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Remove ads