শীর্ষ প্রশ্ন
সময়রেখা
চ্যাট
প্রসঙ্গ

তিতুমীর

বাঙালি মুজাহিদ ও ব্রিটিশ বিরোধী বিপ্লবী উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ

তিতুমীর
Remove ads

তিতুমীর, যার প্রকৃত নাম সৈয়দ মীর নিসার আলী (জন্ম: ২৭ জানুয়ারি, ১৭৮২, ১৪ মাঘ, ১১৮২ বঙ্গাব্দ - মৃত্যু: ১৯ নভেম্বর, ১৮৩১) ছিলেন একজন ব্রিটিশ বিরোধী ব্যক্তিত্ব।[][] তিনি বাঙ্গালা আমিরাত নামক স্বল্পস্থায়ী রাষ্ট্রের বাদশাহ ছিলেন। তিনি ব্রিটিশ শাসন ও তাদের অনুগত অত্যাচারী জমিদারদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম এবং তার বিখ্যাত বাঁশের কেল্লার জন্য বিখ্যাত হয়ে আছেন।[][][][] ব্রিটিশ সেনাদের সাথে যুদ্ধরত অবস্থায় এই বাঁশের কেল্লাতেই তার মৃত্যু হয়।[]

দ্রুত তথ্য সৈয়দ মীর নিসার আলী খান, উপাধি ...
Remove ads

জন্ম

সারাংশ
প্রসঙ্গ

তিতুমীর ১৭৮২ সালের ২৭ জানুয়ারি (১৪ মাঘ ১১৮২ বঙ্গাব্দ) ২৪ পরগনা জেলার বসিরহাট মহকুমার বাদুড়িয়া থানার বাগজোলা গ্রাম পঞ্চায়েতের হায়দারপুর (মতান্তরে বাদুড়িয়া থানার বাগজোলা গ্রাম পঞ্চায়েতের চাঁদপুর) গ্রামে একটি সুন্নী মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম সৈয়দ মীর হাসান আলী এবং মাতার নাম আবিদা রুকাইয়া খাতুন। তিতুমীরের পরিবারের লোকেরা নিজেদের হযরত আলীর বংশধর বলে দাবি করতেন। তার এক পূর্বপুরুষ সৈয়দ শাহাদত আলী ইসলাম প্রচারের উদ্দেশ্যে আরব থেকে বাংলায় আসেন। শাহাদত আলীর পুত্র সৈয়দ আবদুল্লাহ দিল্লির সুলতান কর্তৃক জাফরপুরের প্রধান কাজী নিযুক্ত হন এবং তাকে মীর ইনসাফ খেতাবে ভূষিত করা হয়। শাহাদত আলীর বংশধরগণ ‘মীর’ ও ‘সৈয়দ’ উভয় পদবীই ব্যবহার করতেন।[][] তিতুমীরের প্রাথমিক শিক্ষা হয় তার গ্রামের বিদ্যালয়ে। পরবর্তীকালে তিনি স্থানীয় একটি মাদ্রাসাতে লেখাপড়া করেন। ১৮ বছর বয়সে তিতুমীর কোরআনে হাফেজ হন এবং হাদিস বিষয়ে পাণ্ডিত্য লাভ করেন। একই সাথে তিনি বাংলা, আরবিফার্সি ভাষায় ব্যুৎপত্তি লাভ করেন।[] তার জন্মের পর তার একবার অসুখ হয় সেই অসুখের জন্য ডাক্তার দিলেন ভীষণ তেতো ওষুধ, এই ওষুধ শিশু তো দূরের কথা, বুড়োরাই মুখে নেবে না কিন্তু প্রায় দশ-বারোদিন তিনি এই ওষুধটি হাসিমুখেই খেলেন, এতে বাড়ির সবাই অবাক তাই প্রথমে তার নাম হয় তেতো, এরপর তিতু এবং সবশেষে তিতুর সঙ্গে মীর লাগিয়ে হয় তিতুমীর।[১০]

Remove ads

প্রারম্ভিক জীবন

১৮২২ সালে তিতুমীর মক্কায় হজ্ব পালনের উদ্দেশ্যে যান।[১১] তিনি সেখানে আরবের স্বাধীনতার অন্যতম পথপ্রদর্শক সৈয়দ আহমেদ শহীদের শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন ও ওয়াহাবি মতবাদে অনুপ্রাণিত হন। সেখান থেকে এসে (১৮২৭) তিতুমীর তার গ্রামের দরিদ্র কৃষকদের সাথে নিয়ে জমিদার এবং ব্রিটিশ নীলকদের বিরুদ্ধে সংগঠিত হয়ে আন্দোলন শুরু করেন। তিনি এবং তার অনুসারীরা তৎকালীন হিন্দু জমিদারদের অত্যাচারের প্রতিবাদে ধুতির বদলে 'তাহ্‌বান্দ' নামে এক ধরনের বস্ত্র পরিধান শুরু করেন। তিতুমীর হিন্দু জমিদার কৃষ্ণদেব রায় কর্তৃক মুসলমানদের উপর বৈষম্যমূলকভাবে আরোপিত 'দাড়ির খাজনা' এবং মসজিদের করের তীব্র বিরোধিতা করেন। তিতুমীর ও তার অনুসারীদের সাথে স্থানীয় জমিদার ও নীলকর সাহেবদের মধ্যে সংঘর্ষ তীব্রতর হতে থাকে। আগেই তিতুমীর পালোয়ান হিসাবে খ্যাতি অর্জন করেছিলেন এবং পূর্বে জমিদারের লাঠিয়াল হিসাবে কর্মরত ছিলেন। তিনি তার অনুসারীদের প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ করে তোলেন।

তিতুমীরের অনুসারীর সংখ্যা বেড়ে এক সময় ৫,০০০ এ গিয়ে পৌঁছায়।[১২] তারা সশস্ত্র সংগ্রামের জন্য প্রস্তুত হয়। ১৮৩১ সালের ২৩ অক্টোবর বারাসতের কাছে বাদুড়িয়ার ১০ কিলোমিটার দূরে নারিকেলবাড়িয়া গ্রামে তারা বাঁশের কেল্লা তৈরি করেন। বাঁশ এবং কাদা দিয়ে তারা দ্বি-স্তর বিশিষ্ট এই কেল্লা নির্মাণ করেন।

Remove ads

বারাসাতের যুদ্ধ ও তিতুমীরের মৃত্যু

সারাংশ
প্রসঙ্গ

তিতুমীর বর্তমান চব্বিশ পরগনা, নদীয়া এবং ফরিদপুরের বিস্তীর্ণ অঞ্চলের অধিকার নিয়ে সেখানে ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। নিজেকে 'বাদশাহ করে মৈনুদ্দিন নামে জনৈক ওয়াহাবীকে প্রধানমন্ত্রী ও তার ভাগ্নে গোলাম মাসুমকে সেনাপতি নিযুক্ত করেন। স্থানীয় জমিদারদের নিজস্ব বাহিনী এবং ব্রিটিশ বাহিনী তিতুমীরের হাতে বেশ কয়েকবার পরাজয় বরণ করে। তন্মধ্যে বারাসত বিদ্রোহ অন্যতম। উইলিয়াম হান্টার বলেন, ঐ বিদ্রোহে প্রায় ৮৩ হাজার কৃষকসেনা তিতুমীরের পক্ষে যুদ্ধ করেন।[]

অবশেষে ১৮৩১ সালের ১৩ নভেম্বর ব্রিটিশ সৈন্যরা তাদের চারদিক থেকে ঘিরে ফেলে। তিতুমীর স্বাধীনতা ঘোষণা দিলেন, "ভাই সব, একটু পরেই ইংরেজ বাহিনী আমাদের কেল্লা আক্রমণ করবে। লড়াইতে হার-জিত আছেই, এতে আমাদের ভয় পেলে চলবে না। দেশের জন্য শহীদ হওয়ার মর্যাদা অনেক। তবে এই লড়াই আমাদের শেষ লড়াই নয়। আমাদের কাছ থেকে প্রেরণা পেয়েই এ দেশের মানুষ একদিন দেশ উদ্ধার করবে । আমরা যে লড়াই শুরু করলাম, এই পথ ধরেই একদিন দেশ স্বাধীন হবে।"[তথ্যসূত্র প্রয়োজন] ১৪ নভেম্বর কর্নেল হার্ডিং-এর নেতৃত্বে ব্রিটিশ সৈন্যরা ভারী অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে তিতুমীর ও তার অনুসারীদের আক্রমণ করে।[১৩] তাদের সাধারণ তলোয়ার ও হালকা অস্ত্র নিয়ে তিতুমীর ও তার সৈন্যরা ব্রিটিশ সৈন্যদের আধুনিক অস্ত্রের সামনে দাঁড়াতে পারে নি। ১৯ নভেম্বর[১৪] তিতুমীর ও তার চল্লিশ জন সহচর শহীদ হন। তার বাহিনীর প্রধান মাসুম খাঁ বা গোলাম মাসুমকে ফাঁসি দেওয়া হয় এবং বাশেঁর কেল্লা গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়।

বিশ্লেষণ

অনেক ঐতিহাসিক তিতুমীরের লড়াইকে সাম্প্রদায়িক ও ধর্মীয় আখ্যা দেন কারণ তিনি মূলত হিন্দু জমিদারদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছিলেন। একথা সত্য তিতুমীর প্রজাদের একজোট করেছিলেন ধর্ম এবং জেহাদের ডাক দিয়ে। ঐতিহাসিক বিহারিলাল সরকার, নদীয়া কাহিনীর রচয়িতা কুমুদ নাথ মল্লিক তিতুমীরকে ধর্মোন্মাদ ও হিন্দুবিদ্বেষী বলেছেন। অত্যাচারী হিন্দু জমিদার কৃষ্ণদেব রায়কে আক্রমণ, দেবনাথ রায় হত্যা, গো-হত্যা ইত্যাদির উদাহরণ হিসেবে টানা যায়। অপরপক্ষে অমলেন্দু দে'র ভাষায় তিতুমীরের লক্ষ্য ও পথ ছিল ইসলামে পূর্ণবিশ্বাস এবং হিন্দু কৃষকদিগকে সাথে নিয়ে ইংরেজ মদতপুষ্ট জমিদার ও নীলকরদের বিরোধিতা। তিতুমীরের আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু হিন্দুদের পাশাপাশি ধনী মুসলমানও ছিল। তার বক্তৃতা শোনার জন্যে দলে দলে হিন্দু মুসলিম কৃষক জমা হতো। ঐতিহাসিক সুপ্রকাশ রায়ের ভাষায় তিতুমীরের এই সংগ্রাম ছিল প্রকৃত কৃষক বিদ্রোহ যার অভিমুখ ছিল অত্যাচারী জমিদার ও নীলকর সাহেবরা।[]

Remove ads

বাঁশের কেল্লা

তিতুমীর যুদ্ধের অভিজ্ঞতা থেকে বুঝতে পারেন যে, ইংরেজ সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে হলে প্রয়োজন সমর প্রস্তুতি ও উপযুক্ত সেনা-প্রশিক্ষণ। সেনাবাহিনীর আত্মরক্ষার প্রয়োজনে তিনি একটি দুর্গ নির্মাণের প্রয়োজনীতা গভীরভাবে অনুভব করেন। সময় এবং অর্থাভাবে তিনি আপাতত কলকাতার নিকটবর্তী নারিকেলবাড়িয়া নামক স্থানে একটি বাশের কেল্লা বা দুর্গ নির্মাণ করেন। ইতিহাসে এ কেল্লাই নারিকেলবাড়িয়া বাঁশের কেল্লা নামে পরিচিত।

Remove ads

সামসময়িক প্রতিক্রিয়া

ইংরেজ ও খ্রিস্টান মিশনারিদের পরিচালিত সংবাদপত্র ও সাময়িকীগুলো সরকারের পক্ষাবলম্বন করে।[১৫] বাঙালি হিন্দু মধ্যবিত্ত শ্রেণির নিয়ন্ত্রিত সংবাদমাধ্যম যেমন সমাচার চন্দ্রিকা, রিফর্মার, জ্ঞানঅন্বেষণ প্রভৃতি জমিদারদের পক্ষ অবলম্বন করে তিতুমীরকে আইন-শৃঙ্খলার জন্য বিঘ্নস্বরূপ হিসেবে চিত্রিত করে নিন্দা জানায়।[১৫]

সম্মাননা

সারাংশ
প্রসঙ্গ

২০০৪ সালে, বিবিসির পরিচালিত সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালির জরিপে তিতুমীর একাদশ (১১তম) স্থানে অবস্থান করেন।[১৬]

বাংলাদেশ

শেখ কামাল পরিচালিত "তিতুমিরের বাঁশের কেল্লা" নাটকটি ১৯৬৭ সালে বাংলাদেশ টেলিভিশনে (তৎকালীন পিটিভি) প্রচারিত হয়; একই নামের একটি গ্রাফিক নভেলও পূর্ব পাকিস্তানে জনপ্রিয় ছিল।[১৭][১৮] ১৯৭১ সালে ঢাকার জিন্নাহ কলেজ এর নাম পরিবর্তন করে সরকারি তিতুমীর কলেজ রাখা হয়।[১৯] তার নামে বুয়েটে একটি ছাত্র হলের নামকরণ করা হয় তিতুমীর হল[২০] ১৯ নভেম্বর ১৯৯২ সালে, তার মৃত্যুবার্ষিকীর ১৬১তম দিনে, বাংলাদেশ সরকার তিতুমীরের সম্মানে একটি স্মারক ডাকটিকিট প্রকাশ করে।[২১] ১০ ডিসেম্বর ১৯৭৪ সালে, ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে তিতুমীরের অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ শেখ মুজিবুর রহমান খুলনা শহরে রূপসা নদীর তীরে বানৌজা তিতুমীর নামে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর একটি ঘাঁটি কমিশন করেন ও ‘নেভাল এনসাইন’ প্রদান করেন। এছাড়া বাংলাদেশ নৌবাহিনীর একটি জাহাজের নামকরণ করা হয় বিএনএস তিতুমীর[২২][২৩] রাজশাহীনীলফামারী জেলার চিলাহাটি স্টেশনের মধ্যে তিতুমীর এক্সপ্রেস নামে একটি আন্তঃনগর ট্রেন চলাচল করে।[২৪]

ভারত (পশ্চিমবঙ্গ)

মহাশ্বেতা দেবী তিতুমীর শিরোনামে একটি উপন্যাসিকা রচনা করেন, যেখানে তিনি উপেক্ষিত ও প্রান্তিক মানুষের ইতিহাস পুনরুদ্ধারের প্রয়াস চালিয়েছেন।[২৫][২৬] ১৯৭৮ সালে উৎপল দত্ত তিতুমীর শিরোনামে একটি আগিটপ্রপ নাটক নির্দেশনা দেন, যেখানে তিনি উপনিবেশিক ইতিহাসে তিতুমীরের বিকৃত ও একপাক্ষিক উপস্থাপনাকে তীব্রভাবে সমালোচনা করেন।নাটকটি সমালোচকদের প্রশংসা লাভ করে এবং বাণিজ্যিকভাবেও সফল হয়।[২৭] কলকাতা মেট্রোর অরেঞ্জ লাইনের একটি স্টেশনের নাম তিতুমীরের নামে রাখা হয়েছিল, যা পরে ২০২১ সালে পরিবর্তন করে ‘সিটি সেন্টার II’ রাখা হয়।[২৮] উত্তর চব্বিশ পরগনার বারাসাত শহরের চাপাডালি মোড়ে অবস্থিত প্রধান বাসস্ট্যান্ডটির নামকরণ করা হয় "তিতুমীর সেন্ট্রাল বাস টার্মিনাল"।[২৯]

Remove ads

আরও দেখুন

তথ্যসূত্র

Loading related searches...

Wikiwand - on

Seamless Wikipedia browsing. On steroids.

Remove ads