শীর্ষ প্রশ্ন
সময়রেখা
চ্যাট
প্রসঙ্গ

নবরত্ন (সভাসদ)

ভারতের কিছু রাজার দরবারে নয়জন অসামান্য ব্যক্তিদের সমষ্টি উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ

Remove ads

নবরত্ন (সংস্কৃত: नवरत्न, ন্ওয়রত্ন্অ, উচ্চারিত [nɐʋɐrɐt̪nɐ]) বা নবরতন বলতে ভারতের বিভিন্ন সম্রাটের দরবারের নয়জন অসামান্য ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে বোঝানো হতো। সর্বাধিক পরিচিত নবরত্নের মধ্যে রয়েছে কিংবদন্তি সম্রাট বিক্রমাদিত্য, মুঘল সম্রাট আকবরনদিয়ার রাজা কৃষ্ণচন্দ্র রায়ের দরবারের সদস্য।

বিক্রমাদিত্যের নবরত্ন

সারাংশ
প্রসঙ্গ

বিক্রমাদিত্য হলেন উজ্জয়িনীর এক কিংবদন্তি সম্রাট। প্রচলিত কাহিনী অনুযায়ী, তাঁর দরবারে নয়জন বিখ্যাত পণ্ডিত ছিলেন। বিক্রমাদিত্যের এই কাহিনীর সবচেয়ে পুরনো উৎস হচ্ছে কালিদাসের নামে জ্যোতির্বিদ-অভরন (২২।১০) গ্রন্থ। এই গ্রন্থের লেখা অনুযায়ী, কালিদাস সহ নিম্নলিখিত নয়জন পণ্ডিত বিক্রমাদিত্যের দরবারে উপস্থিত ছিলেন:[]

  1. অমরসিংহ
  2. কালিদাস
  3. ক্ষপণক
  4. ঘটকর্পর
  5. ধন্বন্তরি
  6. বরাহমিহির
  7. বররুচি
  8. বেতালভট্ট
  9. শঙ্কু

অপর জনপ্রিয় কাহিনীতে ঘটকর্পরের জায়গায় ব্রহ্মগুপ্ত ও বেতালভট্টের জায়গায় জাদুকর বৈতালিকের উল্লেখ পাওয়া যায়।[]

কিন্তু জ্যোতির্বিদ-অভরন হচ্ছে কালিদাসের পরের তারিখের এক সাহিত্যিক জালিয়াতি,[] এবং সম্ভবত একে জনপ্রিয় করার জন্য কালিদাসের নামে একে রচনা করা হয়েছিল।[] বাসুদেব বিষ্ণু মিরাশি এই রচনাকে দ্বাদশ শতাব্দীর রচনা হিসেবে উল্লেখ করেছেন, এবং পর্যবেক্ষণ করেছেন যে এটি সম্ভবত কালিদাসের রচনা নয়, কারণ এতে ব্যাকরণগত ত্রুটি আছে।[] অন্যান্য পণ্ডিত এই রচনাকে ত্রয়োদশ, ষোড়শ কিংবা অষ্টাদশ শতাব্দীর রচনা হিসেবে উল্লেখ করেছেন।[]

আগের সাহিত্যে এধরনের নবরত্নের উল্লেখ নেই। দীনেশ চন্দ্র সরকার এই পরম্পরাকে ঐতিহাসিক অভিসন্ধির দিক থেকে "একদম গুরুত্বহীন" বলে অভিহিত করেছেন।[]

এই নয়জন পণ্ডিত যে একই রাজার সমসাময়িক ব্যক্তিত্ব ছিলেন এর কোনো ঐতিহাসিক প্রমাণ নেই।[][] বররুচি সম্ভবত খ্রিস্টীয় তৃতীয় বা চতুর্থ শতাব্দীর মধ্যে জীবিত ছিলেন। কালিদাসের সময়কাল বিতর্কিত, কিন্তু বেশিরভাগ ঐতিহাসিক তাঁকে খ্রিস্টীয় পঞ্চম শতাব্দীতে স্থাপন করেন। বরাহমিহির খ্রিস্টীয় ষষ্ঠ শতাব্দীতে জীবিত ছিলেন। ধন্বন্তরি ডাক্তারি শব্দকোষ নিঘণ্টুর রচয়িতা ছিলেন, তাঁর জীবনকাল অনিশ্চিত। অমরসিংহকেও নিশ্চিতের সঙ্গে কোনো তারিখে স্থাপন করা সম্ভব নয়, কিন্তু তাঁর শব্দকোষে ধন্বন্তরি ও কালিদাসের রচনা ব্যবহৃত হয়েছে; তাই তাঁকে খ্রিস্টপূর্ব প্রথম শতাব্দীতে স্থাপন করা সম্ভব নয়, যখন বিক্রমাদিত্য ৫৭ খ্রিস্টপূর্বাব্দে বিক্রম সংবৎ স্থাপন করেছিলেন। শঙ্কু বেতালভট্ট, ক্ষপণক ও ঘটকর্পরের সম্বন্ধে তেমন কিছু জানা যায়নি। কিছু জৈন লেখক সিদ্ধসেন দিবাকরকে ক্ষপণক বলে চিহ্নিত করেছেন, কিন্তু এই দাবি ঐতিহাসিকদের দ্বারা গৃহীত নয়।[]

কালিদাসই একমাত্র ব্যক্তিত্ব যাঁর সঙ্গে বিক্রমাদিত্যের সম্পর্ক জ্যোতির্বিদ-অভরন রচনার আগের রচনায় উল্লেখ পাওয়া যায়। রাজশেখরের কাব্যমিমাংসা (দশম শতাব্দী) ও ক্ষেমেন্দ্রের ঔচিত্য-বিচার-চর্চা (একাদশ শতাব্দী) রচনায় এটি উল্লেখ পাওয়া যায় যে বিক্রমাদিত্য কালিদাসকে কুন্তল দেশের (বর্তমান উত্তর কন্নড়) দূত হিসেবে নিয়োগ করেছিলেন। এইসব কাহিনীর ঐতিহাসিকতা নিয়ে সন্দেহ বর্তমান।[]

Remove ads

আকবরের নবরত্ন

Thumb
আকবরের দরবারের তথাকথিত নবরত্নের কিছু রত্ন: তানসেন, টোডর মল, আবুল ফজল ইবনে মুবারক, ফৈজিআবদুল রহিম খান, আনু.ষোড়শ শতাব্দী

প্রচলিত কাহিনী অনুযায়ী, মুঘল সম্রাট আকবরের দরবারে নয়জন বুদ্ধিজীবী ছিলেন যাঁরা একত্রে "নবরত্ন" নামে পরিচিত। বিক্রমাদিত্যের মতোই এই কাহিনীর কোনো ঐতিহাসিক ভিত্তি নেই। ঐতিহাসিক গোবিন্দ সখারম সারদেশাইয়ের মতে, শাহজাহান বা দারা শিকোহের দরবারের হিন্দু পণ্ডিত জগন্নাথরায় ও কবীন্দ্রাচার্য সম্ভবত এই কাহিনীর সূচনা করেছিলেন।[]

যেহেতু এই কাহিনীটি ঐতিহাসিকভাবে ত্রুটিপূর্ণ, সেহেতু উৎসভেদে আকবরের নবরত্নের বিভিন্ন রত্নদের নাম বিভিন্ন। নবরত্নের বিভিন্ন তালিকায় উল্লেখিত কিছু নাম হলো:[][][]

Remove ads

রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের নবরত্ন

মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্র রায় (১৭১০-১৭৮৩) নদীয়ার রাজা এবং কৃষ্ণনগর রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা ভবানন্দ মজুমদারের বংশধর। কৃষ্ণচন্দ্র ছিলেন রাজনৈতিক দূরদৃষ্টিসম্পন্ন একজন কূটকৌশলী ব্যক্তি।[নোট ১] তার রাজদরবারের নবরত্নগণ হলেনঃ

  1. পুরাণবিশারদ পণ্ডিত গদাধর তর্কালঙ্কার,
  2. সংস্কৃতজ্ঞ কালিদাস সিদ্ধান্ত ও কন্দর্প সিদ্ধান্ত,
  3. রাজজ্যোতিষী অনুকূল বাচস্পতি,
  4. রাজবৈদ্য আয়ুর্বেদাচার্য গোবিন্দরাম,
  5. বাণেশ্বর বিদ্যালঙ্কার,
  6. কৃষ্ণানন্দ বাচস্পতি,
  7. হরিরাম তর্কসিদ্ধান্তর
  8. সভাকবি ভারতচন্দ্র
  9. বিদূষক- গোপাল ভাঁড় []

অনুরূপ সভাসদ

ভারতের বিভিন্ন সম্রাটদের সভাসদদের অনুরূপভাবে চিহ্নিত করা হতো। যেমন, কৃষ্ণ দেব রায়ের দরবারের গুরুত্বপূর্ণ সদস্যদের অষ্টদিগ্গজ ("আটজন পণ্ডিত") বলে অভিহিত করা হতো। সেন রাজা লক্ষ্মণসেনের দরবারে "পঞ্চরত্ন" ছিল। শিবাজীর সভাসদদের উপাধি ছিল অষ্টপ্রধান মণ্ডল।[১০]

টীকা

  1. তাঁর শাসনকালে বাংলায় ইংরেজ শাসন কায়েম হয় এবং মুসলমান রাজত্বের অবসান ঘটে। রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের সার্থে তিনি ইংরেজদের সঙ্গে মিত্রতা করেন এবং ক্লাইভের পক্ষ নিয়ে নবাব সিরাজউদ্দৌলার পতন ত্বরান্বিত করেন। ইংরেজদের সঙ্গে সংঘর্ষের সময় নবাব মীর কাশিম তাঁকে বন্দি করে মৃত্যুদন্ড দিলেও ইংরেজদের সহায়তায় তিনি মুক্তিলাভ করেন। ইংরেজদের প্রতি পক্ষপাতিত্বের পুরস্কারস্বরূপ তিনি ইংরেজ কর্তৃক মহারাজা উপাধিতে ভূষিত হন একইসাথে ক্লাইভের নিকট থেকে উপঢৌকন হিসেবে পান পাঁচটি কামান।
Remove ads

তথ্যসূত্র

Loading related searches...

Wikiwand - on

Seamless Wikipedia browsing. On steroids.

Remove ads