শীর্ষ প্রশ্ন
সময়রেখা
চ্যাট
প্রসঙ্গ
নূর হোসেন
স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে শহীদ বাংলাদেশী উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
Remove ads
নূর হোসেন ( ১৯৬১– ১০ নভেম্বর, ১৯৮৭ খ্রি.) হলেন বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলনে একজন স্মরণীয় ব্যক্তিত্ব, যিনি ১৯৮৭ সালের ১০ই নভেম্বর তৎকালীন বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি লেফটেন্যান্ট জেনারেল হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের স্বৈরাচারী শাসন ব্যবস্থার বিরুদ্ধে সংগঠিত গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার আন্দোলন চলাকালে পুলিশের গুলিতে নিহত হন।[১]
Remove ads
প্রাথমিক জীবন
নূর হোসেনের পৈতৃক বাড়ি হলো পিরোজপুর জেলার মঠবাড়িয়া উপজেলার ঝাটিবুনিয়া গ্রামে। তবে ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধের পর তার পরিবার পিরোজপুর ত্যাগ করে ঢাকার ৭৯/১ বনগ্রাম রোডে চলে আসেন। পিতা মুজিবুর রহমান পেশায় একজন রিকশা-চালক ছিলেন। তার মায়ের নাম মরিয়ম বিবি।[১] অর্থনৈতিক অসচ্ছলতার কারণে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ার পর নূর হোসেন পড়াশোনা বন্ধ করে গাড়ির ড্রাইভার হিসেবে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। নূর হোসেন আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন। তিনি ঢাকা জেলা আওয়ামী মটর চালক লীগের বনগ্রাম শাখার প্রচার সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলেন।[১][সন্দেহপূর্ণ ][স্পষ্টকরণ প্রয়োজন]
Remove ads
স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন

১৯৮৭ সালের ১০ই নভেম্বর দেশের দুটি রাজনৈতিক দল বিএনপি ও আওয়ামী লীগ একত্র হয়ে স্বৈরশাসক এরশাদের পতনের লক্ষ্যে ঢাকা অবরোধ কর্মসূচির ঘোষণা করে। এর পূর্বে এরশাদ ১৯৮২ সালে একটি সেনা উত্থানের মধ্যদিয়ে ক্ষমতা গ্রহণ করেন এবং ১৯৮৭ সালের নির্বাচনে জয়লাভ করেন, কিন্তু বিরোধী দলগুলো তার এই নির্বাচনকে জালিয়াতি বলে অভিযুক্ত করে। তাঁদের একমাত্র দাবি ছিল নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের নিয়ন্ত্রণে জাতীয় সংসদ নির্বাচন করা।
অবরোধ কর্মসূচির অংশ হিসেবে ঢাকায় একটি মিছিলে নূর হোসেন অংশ নেন এবং প্রতিবাদ হিসেবে বুকে পিঠে সাদা রঙে লিখিয়ে নেন: "স্বৈরাচার নিপাত যাক, গণতন্ত্র মুক্তি পাক" । মিছিলটি ঢাকা জিপিওর সামনে জিরো পয়েন্টের কাছাকাছি আসলে স্বৈরশাসকের মদদপুষ্ট পুলিশবাহিনীর গুলিতে নূর হোসেনসহ মোট তিনজন আন্দোলনকারী নিহত হন। এসময় বহু আন্দোলনকারী আহত হন। নিহত অপর দুই ব্যক্তি হলেন যুবলীগ নেতা নুরুল হূদা বাবুল এবং আমিনুল হূদা টিটু।[১][২][৩]
Remove ads
প্রতিক্রিয়া ও ফলাফল
সারাংশ
প্রসঙ্গ

এই হত্যাকাণ্ডের প্রতিক্রিয়া স্বরূপ বিরোধী দলগুলো ১১ ও ১২ই নভেম্বর সারা দেশে সকাল সন্ধ্যা হরতাল ঘোষণা করে। [তথ্যসূত্র প্রয়োজন] বাংলাদেশের গণতন্ত্রকামী মানুষ বিক্ষোভে ফেটে পড়ে; ফলে স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন আরো ত্বরান্বিত হয়। এই আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর জেনারেল এরশাদ পদত্যাগ করেন। এর মধ্য দিয়ে স্বৈরাচারী সরকারের পতন ঘটে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়।[৪]
এরশাদ পদত্যাগ করলে বাংলাদেশে দুটি হ্যাঁ-না ভোটের মধ্য দিয়ে নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার এবং প্রধানমন্ত্রী-শাসিত সরকার ব্যবস্থা চালু হয়। জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়, এতে বেগম খালেদা জিয়া বাংলাদেশের প্রথম মহিলা প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। এর এক বছর পর সরকারের পক্ষ থেকে নূর হোসেন এর মৃত্যুর দিনটি সরকারিভাবে উদযাপনে উদ্যোগ গৃহীত হয়। দিনটিকে প্রথমে ঐতিহাসিক ১০ই নভেম্বর দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হলেও আওয়ামী লীগ এটিকে শহিদ নূর হোসেন দিবস করার জন্য সমর্থন প্রদান করে এবং এই নামটি এখন পর্যন্ত বহাল রয়েছে।[৪] পদত্যাগের পর এরশাদের জাতীয় পার্টি আওয়ামী লীগের সাথে একত্রে মহাজোট গঠন করে। ১৯৯৬ সালে এরশাদ, নূর হোসেনের মৃত্যুর জন্য জাতীয় সংসদে আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা প্রার্থনা করেন। তার দল জাতীয় পার্টি এখন ১০ই নভেম্বরকে গণতন্ত্র দিবস হিসেবে পালন করে।[৫]
নূর হোসেন সম্পর্কিত বিভিন্ন বক্তব্য
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১০ই নভেম্বরের স্মৃতিচারণ করে বলেন।[৬]
আমরা যখন মিছিল শুরু করছিলাম তখন নূর হোসেন আমার পাশে দাঁড়িয়ে ছিল। আমি তাকে কাছে ডাকলাম এবং বললাম তার গায়ের এই লেখাগুলোর কারণে তাকে পুলিশ গুলি করবে। তখন সে তার মাথা আমার গাড়ির জানালার কাছে এনে বলল, "আপা আপনি আমাকে দোয়া করুন, আমি গণতন্ত্র রক্ষায় আমার জীবন দিতে প্রস্তুত।"
২০০৪ সালে এক সাক্ষাৎকারে প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমানকে নূর হোসেনের পিতা বলেন:[৭]
নূর হোসেন যা চেয়েছিল, তা তো হলো। স্বৈরতন্ত্র নিপাত হলো। এখনো দেশে এত হানাহানি, সন্ত্রাস। গণতন্ত্র তো মুক্তি পেল না।
Remove ads
সম্মাননা
নূর হোসেনের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে তার নামে স্মারক ডাকটিকেট প্রকাশ করা হয়েছে। ১৯৯১ সালে তার চতুর্থ মৃত্যুবাষির্কী উপলক্ষে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক প্রথম দুই টাকা মূল্যের স্মারক ডাকটিকিট প্রকাশিত হয়।[৪] প্রতি বছরের ১০ই নভেম্বর বাংলাদেশে "নূর হোসেন দিবস" হিসেবে পালন করা হয়। এছাড়া তিনি যে স্থানে পুলিশের গুলিতে নিহত হন, তার নামানুসারে সেই জিরো পয়েন্টের নামকরণ করা হয়েছে নূর হোসেন চত্বর।[১] জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে শহীদ নূর হোসেনের একটি মুরাল রয়েছে।[৪] ১০ই নভেম্বর তার মৃত্যুর কিছু সময় পূর্বে তোলা তার গায়ে লেখাযুক্ত আন্দোলনরত অবস্থার ছবিটি বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক আন্দোলনের এক গুরুত্বপূর্ণ প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হয়। খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর নূর হোসেনের বাবাকে অফিসে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। নূর হোসেন স্মরণে স্মারক ডাক টিকেট প্রকাশ করেছিলেন। জিরো পয়েন্টের নাম পালটে আনুষ্ঠানিক ভাবে শহীদ নূর হোসেন চ্বত্তর রেখেছিলেন।
Remove ads
আরও দেখুন
তথ্যসূত্র
বহিঃসংযোগ
Wikiwand - on
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Remove ads