শীর্ষ প্রশ্ন
সময়রেখা
চ্যাট
প্রসঙ্গ

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল

বাংলাদেশের রাজনৈতিক দল উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল
Remove ads

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (সংক্ষেপে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে বিএনপি) হলো বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান কেন্দ্র-ডান থেকে ডানপন্থী রাজনৈতিক দল। তৎকালীন জিয়াউর রহমান ১৯৭৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর এই দলটি প্রতিষ্ঠা করেন। এর আগে, ১৯৭৭ সালের ৩০ এপ্রিল, জিয়াউর রহমান তার শাসনকে বেসামরিক করার উদ্দেশ্যে ১৯ দফা কর্মসূচি চালু করেন। পরবর্তীতে, রাষ্ট্রপতির পদের জন্য নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সিদ্ধান্ত নিলে, তার নেতৃত্বে জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক দল (জাগদল) প্রতিষ্ঠিত হয়। এই দলের সমন্বয়ক ছিলেন আব্দুস সাত্তার

দ্রুত তথ্য বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল, সংক্ষেপে ...
Remove ads

ইতিহাস

সারাংশ
প্রসঙ্গ

প্রতিষ্ঠা

Thumb
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান

জাতীয় সংসদ নির্বাচন এগিয়ে আসলে জিয়া বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল গঠন করেন। জাগদলকে বিএনপির সাথে একীভূত করা হয়। রাষ্ট্রপতি জিয়া এই দলের সমন্বয়ক ছিলেন এবং এই দলের প্রথম চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন। অধ্যাপক একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী এর প্রথম মহাসচিব ছিলেন। জিয়ার এই দলে বাম, ডান, মধ্যপন্থি সকল প্রকার লোক ছিলেন। বিএনপির সবচেয়ে প্রধান বৈশিষ্ট্য ছিল এর নিয়োগ পদ্ধতি। প্রায় ৪৫ শতাংশ সদস্য শুধুমাত্র রাজনীতিতে যে নতুন ছিলেন তাই নয়, তারা ছিলেন তরুণ।[] ১৯৭৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর বিকাল ৫টায় রমনা রেস্তোরাঁয় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের প্রতিষ্ঠাতা তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান এক সংবাদ সম্মেলনে আনুষ্ঠানিক ঘোষণাপত্র পাঠের মাধ্যমে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের যাত্রা শুরু করেন। জনাকীর্ণ সংবাদ সম্মেলনে তিনি ঘোষণাপত্র পাঠ ছাড়াও প্রায় দুই ঘণ্টা সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন। সংবাদ সম্মেলনে নতুন দলের আহ্বায়ক কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে তিনি প্রথমে ১৮ জন সদস্যের নাম এবং ১৯ সেপ্টেম্বর ওই ১৮ জনসহ ৭৬ সদস্য বিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করেন। এখানে উল্লেখ্য, বিএনপি গঠন করার আগে জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক দল (জাগদল) নামে আরেকটি দল তৎকালীন উপ-রাষ্ট্রপতি বিচারপতি আবদুস সাত্তারকে সভাপতি করে গঠিত হয়েছিল। ২৮ আগস্ট ১৯৭৮ সালে নতুন দল গঠন করার লক্ষ্যে জাগদলের বর্ধিত সভায় ওই দলটি বিলুপ্ত ঘোষণার মাধ্যমে দলের এবং এর অঙ্গ সংগঠনের সকল সদস্য জিয়াউর রহমান ঘোষিত নতুন দলে যোগদানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

নিচে দলের প্রথম আহ্বায়ক কমিটির পূর্ণাঙ্গ তালিকা দেয়া হলো :

সরকার গঠন

১৯৯০ এর গণতন্ত্রায়নের পর দেশের মোট চারটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি মোট দুইটিতে জয়লাভ করে। ১৯৯১ এর সাধারণ নির্বাচনে বিএনপি ১৪২ টি আসন লাভ করে। তারা জামায়তে ইসলামীর সমর্থন নিয়ে সরকার গঠন করে। ফলশ্রুতিতে বিএনপি সংরক্ষিত ৩০টি মহিলা আসনের ২৮টি নিজেরা রেখে বাকি ২টি জামায়াতকে দিয়ে দেয়। ২০০১ সালের নির্বাচনে বিএনপি-সহ চারদল প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ আসনে জয়লাভ করে।

জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে সরকার

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট, সেনা সদস্যদের গুলিতে সপরিবারে শেখ মুজিবুর রহমানের মৃত্যুর পর প্রায় তিন বছর পর্যন্ত বাংলাদেশ শাসিত হয় অনির্বাচিত সরকার দ্বারা। সে সময় দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নেন তৎকালীন সেনাপ্রধান মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান। তিনি রাষ্ট্রপতি থাকা অবস্থায় ১৯৭৯ সালে দ্বিতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এ নির্বাচনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) ২৯৮টি আসনের মধ্যে ২০৭টিতে জয়লাভ করে। নির্বাচনে অংশ নিয়ে মালেক উকিলের নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লিগ ৩৯টি ও মিজানুর রহমান চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লিগ ২টি আসনে জয়লাভ করে। এছাড়া জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল ৮টি, ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি ১টি ও মুসলিম ডেমোক্রেটিক লিগ ২০টি আসনে জয়লাভ করে। ক্ষমতা গ্রহণের মাত্র দুই বছরের মাথায় জিয়াউর রহমান আততায়ীর হামলায় নিহত হলে তৎকালীন উপ-রাষ্ট্রপতি বিচারপতি আবদুস সাত্তার রাষ্ট্রপতি হন। পরে ১৯৮৩ সালে সাত্তারকে সরিয়ে তৎকালীন সেনাপ্রধান জেনারেল হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ রাষ্ট্রপতি হন।

বিচারপতি আবদুস সাত্তারের নেতৃত্বে সরকার

সেপ্টেম্বর ১৯৮১ নির্বাচন কমিশন এক ঘোষণায় ইতোপূর্বে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের ঘোষিত তারিখ ১৫ সেপ্টেম্বর পরিবর্তন করে ১৫ নভেম্বর পূনঃনির্ধারণ করে। ৮৩ জন প্রার্থী মনোনয়ন দাখিল করলেও শেষ পর্যন্ত ৩৯ জন প্রার্থী রাষ্ট্রপতি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। নির্বাচনে ভোটার সংখ্যা ছিল ৩,৯০,৫১,০১৪ জন। নির্বাচিত বিএনপি প্রার্থী ক্ষমতাসীন অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি আবদুস সাত্তার আওয়ামী লিগ প্রার্থী ড. কামাল হোসেনকে ৮৫,২২,৭১৭ ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করেন। স্বতন্ত্র প্রার্থী মাওলানা হাফেজ্জী হুজুর ৩,৮৭,২১৫ ভোট পেয়ে তৃতীয় হন। জেনারেল ওসমানী, মেজর এম এ জলিল, অধ্যাপক মোজাফফর আহমেসহ অন্য প্রার্থীরা জামানত হারান। বাংলাদেশ আওয়ামী লিগ নির্বাচনের ফলাফলকে পূর্ব পরিকল্পিত বলে অভিযোগ করেছিল।

২০ নভেম্বর বিচারপতি আবদুস সাত্তার বঙ্গভবনের দরবার হলে প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন। ২২ নভেম্বর প্রেসিডেন্ট সাত্তার ড. এমএন হুদাকে ভাইস প্রেসিডেন্ট নিয়োগ করে ২৭ নভেম্বর ৪২ সদস্যের নতুন মন্ত্রিসভা গঠন করেন।[][১০]

২০২৪ সালে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে, নেতাকর্মীরা দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের মাজারে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে প্রথম সরকার (পঞ্চম জাতীয় সংসদ)

সর্বস্তরের জনতার বিক্ষোভ জনসমুদ্রে পরিণত হলে ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ পদত্যাগে বাধ্য হন। তিন দফা রূপরেখা অনুযায়ী প্রধান বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদের নেতৃত্বে ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হয় পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এ নির্বাচনে বিএনপি সর্বাধিক আসনে জয়লাভ করে। এ নির্বাচনের মাধ্যমে দেশে প্রথমবারের মতো গণতন্ত্রের যাত্রা শুরু হয়। এ সরকার পাঁচ বছর দেশ শাসনের পর ক্ষমতা হস্তান্তর ছাড়াই ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আয়োজন করে। এ নির্বাচন আওয়ামী লিগ বয়কট করায় একই বছর ১২ জুন অনুষ্ঠিত হয় সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এ নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লিগ। বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর ২১ বছর পর ক্ষমতায় আসা এ দলটির হয়ে প্রথমবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হন শেখ হাসিনা।

খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে দ্বিতীয় সরকার (ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ)

১৯৯৬ সালের ১৫ ই ফেব্রুয়ারি, বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল ১৯৯১ সালের স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের মাধ্যমে অর্জিত গণতন্ত্রকে অনেকটা হুমকির সম্মুখে ঢেলে একদলীয় নির্বাচন করে ২য় বারের মত সরকার গঠন করে। এই সরকারের মেয়াদ ছিল মাত্র ৪৫ দিন।

খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে তৃতীয় সরকার (অষ্টম জাতীয় সংসদ)

২০০১ সালের অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে সরকার গঠন করে। মোট ২১০টি আসন নিয়ে চারদলীয় ঐক্যজোট ক্ষমতায় যায়। এই সময়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জের কানসাট এ বিদ্যুতের দাবিতে আন্দোলনে পুলিশের নির্মম হত্যাযজ্ঞে ১০ জনের অধিক গ্রামবাসী হত্যা, ঢাকার শণির আখড়ার বিদ্যুৎ ও পানির দাবিতে সাধারণ জনতার আন্দোলন- এর মত কয়েকটি আন্দোলন হয়। এছাড়াও সরকারি ত্রাণ তাহবিল থেকে ত্রাণ সামগ্রী সরকারীদলের সাংসদদের লুটপাটের ঘটনা ঘটে। এ সরকারের বৈধ মেয়াদ ২০০৬ সালের ৬ অক্টোবর শেষ হওয়ার পর ক্ষমতা হস্তান্তর নিয়ে দেশে শুরু হয় ব্যাপক রাজনৈতিক সংঘাত। পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি রাষ্ট্রপতি সারাদেশে জরুরি অবস্থা জারি করেন। আর এ সময় থেকে গত ২৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রায় দুই বছর দেশ পরিচালনা করেন ড. ফখরুদ্দীন আহমদের নেতৃত্বাধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার। এ সরকারের তত্ত্বাবধানে ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২৩০ আসন নিয়ে জয়লাভ করে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ আওয়ামী লিগ। এ নির্বাচনে মাত্র ২৯টি আসন পায় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) এবং ২৭টি আসনে জয়লাভ করে জাতীয় পার্টি।

আন্দোলন

জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর বিচারপতি আবদুস সাত্তার রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। কিন্তু সেনাপ্রধান এরশাদ তাকে ক্ষমতাচ্যুত করে দেশে সামরিক শাসন জারি করে। বিএনপি এই ক্ষমতা গ্রহণকে প্রত্যাখ্যান করে এবং এরশাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে। প্রায় ৯ বছর আন্দোলন করে বিএনপি সহ সকল রাজনৈতিক দল হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদকে ক্ষমতাচ্যুত করে। এরপর ১৯৯১ সালের নির্বাচনে বিএনপি সরকার গঠন করে। ১৯৯৬ সালের ১৫ই ফেব্রুয়ারি বিএনপি একটি একদলীয় নির্বাচন করে এবং গণআন্দোলনের মুখে পুনরায় একটি নির্দলীয় তত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা দিয়ে সকল দলের অংশগ্রহণে পুনরায় নির্বাচনে যোগ দিলে বিএনপি নির্বাচনে পরাজিত হয় এবং দেশের বৃহত্তম বিরোধীদল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। ১৯৯৬ থেকে ২০০১ পর্যন্ত বিএনপি আওয়ামী লিগ সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে। এ আন্দোলন তেমন সফল না হলেও ২০০১ সালের নির্বাচনে বিএনপি নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে নির্বাচিত হয়।

এরশাদ বিরোধী আন্দোলন

বিএনপি বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে স্বৈরাচারী এরশাদ সরকার বিরোধী আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে ৭ দলীয় জোট গঠন করে। আন্দোলনের অংশ হিসেবে বিএনপি এরশাদ আমলে অনুষ্ঠিত ২টি জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও সকল স্থানীয় সরকার নির্বাচন বয়কট করে। এই আন্দোলনে বিএনপির ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। স্বৈরাচারী এরশাদের সাথে কোন আপোস না করা খালেদা জিয়াকে আপোসহীন নেত্রী বলা হয়। বিএনপি সহ সকল বিরোধী দলের গণআন্দোলনে ৬ই ডিসেম্বর ১৯৯০ সালে হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ পদত্যাগে বাধ্য হয়।

সাত দলীয় জোট গঠন

নব্বই এর দশকে এরশাদের সামরিক সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনের জন্য বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে ৭টি দলের সমন্বয়ে ৭ দলীয় জোট গঠন করে।[১১][১২] জোটভূক্ত দলসমূহ:

  1. বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)
  2. জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা)
  3. প্রগ্রেসিভ ন্যাশনালিষ্ট পার্টি (পিএনপি)
  4. বাংলাদেশ মুসলিম লিগ
  5. ডেমোক্র্যাটিক লিগ
  6. ইউনাইটেড পিপলস পার্টি (ইউপিপি)
  7. ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এনডিপি)

চারদলীয় জোট গঠন

১৯৯৯ সালে অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় পার্টি এবং ইসলামী ঐক্য জোট মিলিত হয়ে চার-দলীয় ঐক্য জোট গঠন করে। কিন্তু কিছু দিন পরেই জাতীয় পার্টির একটি অংশ এরশাদের নেতৃত্বে দল থেকে বের হয়ে যায়। কিন্তু নাজিউর রহমান মঞ্জুরের সমর্থক অংশটি জোটে থেকে যায়। জোটভূক্ত দলসমূহ:

  1. বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)
  2. বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী
  3. বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি
  4. ইসলামী ঐক্য জোট

বিশ দলীয় জোট গঠন

২০১২ সালের ১৮ই এপ্রিল বিএনপি আরও রাজনৈতিক দলের সাথে একীভূথ হয়ে ১৮ দলীয় জোট গঠন করে। এই জোটে বিএনপির শরিক হিসাবে রয়েছে চার দলের বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি), ইসলামী ঐক্যজোট সহ নতুন যোগ দেয় লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি (এলডিপি), বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা), খেলাফত মজলিস, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ, বাংলাদেশ মুসলিম লিগ (বিএমএল), ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (এনপিপি), ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এনডিপি), বাংলাদেশ লেবার পার্টি, ইসলামিক পার্টি, ন্যাপ ভাসানী, ডেমোক্রেটিক লিগ (ডিএল) ও পিপলস লিগ। পরবর্তীতে পর্যায়ক্রমে জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর)বাংলাদেশের সাম্যবাদী দল যোগ দিলে জোটটি বিশ দলীয় জোটে রূপান্তরিত হয়।

জোটভুক্ত দলসমূহ:

  1. বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)
  2. বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী
  3. লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি (এলডিপি)
  4. জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর)
  5. বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি - বিজেপি
  6. ইসলামী ঐক্যজোট
  7. খেলাফত মজলিস
  8. জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি-জাগপা
  9. বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি
  10. বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি-বাংলাদেশ ন্যাপ
  11. জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ
  12. বাংলাদেশ মুসলিম লিগ-বিএমএল
  13. ন্যাশনাল পিপলস পার্টি-এনপিপি
  14. ন্যাশনাল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি-এনডিপি
  15. বাংলাদেশ লেবার পার্টি
  16. বাংলাদেশ ইসলামিক পার্টি
  17. ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি -ন্যাপ ভাসানী
  18. ডেমোক্রেটিক লিগ
  19. পিপলস লিগ
  20. বাংলাদেশের সাম্যবাদী দল

বর্তমান নেতৃত্ব

বর্তমানে বিএনপির নেতৃত্বে আছেন সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সহধর্মিণী খালেদা জিয়াবেগম জিয়া বাংলাদেশের প্রথম মহিলা প্রধানমন্ত্রী এবং মুসলিম বিশ্বের দ্বিতীয় মহিলা প্রধানমন্ত্রী। প্রতিবার নির্বাচনে তিনি পাঁচটি আসনে নির্বাচন করে জয়ী হয়েছেন। ২০০৭ সাল থেকে সাবেক সংসদীয় হুইপ ও জ্যেষ্ঠ নেতা খন্দকার দেলোয়ার হোসেন দলের মহাসচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। কিন্তু ২০১১ সালের মার্চে তিনি বার্ধক্যজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করার পর জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে দলের মহাসচিবের ভার দেয়া হয়। দীর্ঘদিন সফলতার সাথে ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের দায়িত্ব পালন করায় বাংলাদেশের পরিচ্ছন্ন রাজনীতিবিদ হিসেবে সর্বজন স্বীকৃত মির্জা ফখরুল ইসলামকে বুধবার, ৩০শে মার্চ, ২০১৬ বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল – বিএনপি’র ৭ম মহাসচিব এর দায়িত্বে নিয়োজিত করা হয়। বর্তমানে তিনিই বিএনপির মহাসচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

দলে ভাঙ্গন

প্রতিষ্ঠার পর বিএনপি অনেকবার ভাঙ্গনের সম্মুখীন হয়। এর প্রতিষ্ঠাতাদের মধ্যে কয়েকজন জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর দল ছেড়ে দেন। এর মধ্যে মওদুদ আহমেদ অন্যতম। ২০০১ সালে নির্বাচনের পর বিএনপি মনোনয়নে দলের প্রথম মহাসচিব অধ্যাপক একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী দেশের রাষ্ট্রপতি হন। কিন্তু কিছু কারণে বদরুদ্দোজা চৌধুরীর সাথে বিএনপি দূরত্ব সৃষ্টি হয়। ফলে প্রায় ছয় মাস রাষ্ট্রপতি থাকার পর বি. চৌধুরী পদত্যাগ করেন। তিনি বিএনপির একটি অংশ নিয়ে নতুন রাজনৈতিক দল বিকল্পধারা বাংলাদেশ গঠন করেন। ২০০৬ সালে অষ্টম জাতীয় সংসদের মেয়াদ শেষ হবার ঠিক আগের দিন বিএনপির প্রতিষ্ঠাতাদের একজন কর্ণেল (অব:) ড: অলি আহমেদ বীর বিক্রম বিএনপি সরকারের কতিপয় নেতা-কর্মী, মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যদের নিয়ে বিএনপি ত্যাগ করেন এবং অধ্যাপক বদরুদ্দোজা চৌধুরীর বিকল্পধারার সাথে একীভূত হয়ে নতুন রাজনৈতিক দল লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি সংক্ষেপে এল.ডি.পি. গঠন করেন।

Remove ads

মূলনীতি

সারাংশ
প্রসঙ্গ

বর্তমান বিএনপি প্রধানত একটি বিগ টেন্ট রাজনৈতিক দল এবং বাম থেকে ডানপন্থী রাজনীতির অধীনে বিভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শ নিয়ে গঠিত। প্রাথমিকভাবে প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লিগের মতো বিএনপির কোনো নিরঙ্কুশ ও সুসংজ্ঞায়িত আদর্শ ছিল না। মূলত ১৯৭৫-এর অভ্যুত্থান-পাল্টা অভ্যুত্থানের ফলে বাংলাদেশে রাজনৈতিক শূন্যতার সৃষ্টি হলে বিএনপি গঠিত হয়েছিল। ফলস্বরূপ সামরিক শাসন প্রত্যাহারের পর, দল ও আদর্শিক অনুষঙ্গ নির্বিশেষে বিভিন্ন রাজনীতিবিদরা মূলধারার রাজনীতিতে ফিরে আসার জন্য নবগঠিত বিএনপিতে যোগ দেন। অনেক রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ মনে করেন, যেহেতু আওয়ামী লিগ উৎখাতের পর বিএনপির জন্ম হয়েছে, সেহেতু আওয়ামী লিগের সীমাবদ্ধতার স্থলে বিএনপি একটি অবস্থান প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করেছিল।[১৩] ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক প্রফেসর সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর মতে, বিএনপি প্রতিষ্ঠার সময় কোনো সুনির্দিষ্ট আদর্শ ছিল না এবং আদর্শগত সংজ্ঞা এসেছে দলটি প্রতিষ্ঠার পরই।[১৩] ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক সৈয়দ মঞ্জুরুল ইসলাম বলেন,

"জিয়াউর রহমান ভাবতেন, তিনি বাংলাদেশ ভিত্তিক এক ধরনের রাজনীতি করবেন। যাতে বামপন্থী থেকে শুরু করে ইসলামপন্থীরা একত্রিত হবে। এবং এরফলে যাঁরা বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদে বিশ্বাস করে বা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাস করে তাঁদের সাথে একটা দূরত্ব রেখে এগুনো যাবে।"[১৩]

বিএনপির সিনিয়র নেতা খন্দকার মোশারফ হোসেন বিএনপির মতাদর্শ সম্বন্ধে বলেন,

"মৌলিক অনেক বিষয়ে যে পরিবর্তন করা হয়, সেগুলোই দলের ভিত্তি বা আদর্শ হয়ে দাঁড়ায়। [...] বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ, আল্লাহর উপর আস্থা বিশ্বাস, বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম এবং ন্যায় ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠা–এগুলোকে আদর্শ হিসেবে নিয়ে বিএনপির জন্ম হয়। একইসাথে ব্যক্তি মালিকানার উদ্যোগকে উৎসাহিত করে এবং মুক্তবাজার অর্থনীতির দিকে বিএনপি এগিয়েছে। মুল এই আদর্শের উপর বিএনপি এখনও দাঁড়িয়ে রয়েছে।"[১৩]

বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ

বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ দলটির কেন্দ্রীয় আদর্শ। এর মূল ধারণা ১৯ দফা কর্মসূচিতে প্রতিফলিত হয় যেখানে ঘোষণা করা হয়েছে যে "বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব ও স্বাধীনতা, ঐতিহাসিক মুক্তি সংগ্রামের সোনার ফল, আমাদের পবিত্র আস্থা এবং অলঙ্ঘনীয় অধিকার"। বিএনপির লক্ষ্য ছিল অর্থনৈতিক উন্নয়ন, গণতন্ত্রায়ন, বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে জাতীয় ঐক্য এবং জনগণের মধ্যে স্ব-নির্ভরতার উত্থান ঘটানো। এগুলোর ভিত্তিতে জিয়াউর রহমান তার ১৯ দফা কর্মসূচি ঘোষণা করেন। জাতীয়তাবাদ প্রসঙ্গে জিয়াউর রহমান মনে করতেন, বাংলাদেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও ভৌগোলিক ভূখণ্ডের উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে "বাংলাদেশী" পরিচয়, যা প্রতিবেশী দেশগুলোর থেকে আলাদা ও নিজের মধ্যে অনন্য।[১৪] বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের প্রবক্তারা যুক্তি দেন যে এই মতাদর্শের আঞ্চলিকতার কারণে বাঙালি জাতীয়তাবাদের উপর এর একটি প্রাধান্য রয়েছে যা বাংলাদেশের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের অন্তর্ভুক্ত করার পাশাপাশি বাংলাদেশের জনগণকে ভারতের বাঙালি জনগণ থেকে আলাদা করে।[১৫]

উদার অর্থনীতি

বিএনপি অর্থনৈতিক উদারতাবাদ প্রচার করে এবং অর্থনীতিতে সীমিত সরকারি হস্তক্ষেপসহ একটি মুক্ত-বাজার অর্থনীতিকে সমর্থন করে। জিয়া বিশ্বাস করতেন যে বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক-প্রভাবিত অর্থনীতি বহু "বছরের ঔপনিবেশিক-ধারার শোষণের" কারণে খারাপ অবস্থায় রয়েছে। এই অবনতিশীল অবস্থার অবসান ঘটানোর জন্য অর্থনৈতিক ব্যবস্থার পুনর্গঠন প্রয়োজন। মুবাশার হাসানের মতে, এই নতুন অর্থনৈতিক ব্যবস্থা ছিল প্রাথমিকভাবে "পুঁজিবাদী ব্যবস্থার রূপরেখা"। ডানপন্থী হওয়া সত্ত্বেও, দলের প্রতিষ্ঠাকালীন নীতিগুলোর মধ্যে সমাজতন্ত্রের আলোকে সামাজিক ও অর্থনৈতিক ন্যায়বিচারকে অন্তর্ভুক্ত করেছিল। এর কারণ দলটির প্রতিষ্ঠালগ্নে বাংলাদেশ বামপন্থী রাজনীতি থেকে একটি ডানপন্থী রাজনৈতিক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছিল এবং নব-প্রতিষ্ঠিত দলের রাজনীতিবিদদের একটি বড় অংশ বাম রাজনৈতিক পটভূমি থেকে এসেছিল, যাঁরা অর্থনৈতিক ও শোষণমুক্তির জন্য সমাজতন্ত্রের পক্ষপাতী ছিল। যেহেতু দলটি শুরুতে বাম-ডান রাজনৈতিক মতপরিসরের মিশ্রণে একটি বৃহৎ পরিসরে বিভক্ত ছিল, তাই জিয়া জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে রাজনৈতিক মতবাদের একটি সাধারণ উপাদান হিসাবে সামাজিক ন্যায়বিচারকে উপস্থাপন করেন।

ইসলাম ও রক্ষণশীলতাবাদ

ইসলামিরক্ষণশীল আদর্শ বিএনপির আদর্শের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। বিএনপির প্রতিষ্ঠাকালীন ইশতেহারে ঘোষণা করা হয় যে বাংলাদেশের জনগণ "...সর্বশক্তিমান আল্লাহর উপর সর্বাত্মক বিশ্বাস ও আস্থা, গণতন্ত্র, জাতীয়তাবাদ[কে দেখতে চায়]"। রক্ষণশীলতার প্রতি বিএনপির অবস্থান "প্রথাগত বাঙালি রীতিনীতি ও মধ্যপন্থী ইসলামের মিশ্রণকে প্রতিনিধিত্ব করে"।[] তাই ক্ষমতা গ্রহণের পর জিয়াউর রহমান একটি রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় ইসলামীকরণ চালু করেন যা সমাজ ও সংস্কৃতিতে উল্লেখযোগ্যভাবে প্রভাব ফেলেছিল।[] যাইহোক, দলটি বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের একটি উপাদান হিসাবে ধর্মীয় স্বাধীনতা ও সহনশীলতাকেও প্রচার করে। দলের অনেক প্রতিষ্ঠাতা নেতা ছিলেন অমুসলিম। জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের শাসনব্যবস্থা হিসেবে ধর্মতন্ত্রকে প্রত্যাখ্যান করেন।[১৬]

Remove ads

দলীয় স্লোগান

"প্রথম বাংলাদেশ আমার শেষ বাংলাদেশ,

জীবন বাংলাদেশ আমার মরন বাংলাদেশ।"

"বাংলাদেশ জিন্দাবাদ"

"শহীদ জিয়া অমর হোক, বেগম খালেদা জিয়া জিন্দাবাদ" [তথ্যসূত্র প্রয়োজন]

উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য

সারাংশ
প্রসঙ্গ

জাতীয়তাবাদী দলের ঘোষণাপত্রে এ দলের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বিস্তৃতভাবে বর্ণিত হয়েছে। সংক্ষেপে এ দলের কয়েকটি মৌলিক লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিচে বর্ণিত হলো:

  • (ক) বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ-ভিত্তিক ইস্পাতকঠিন গণঐক্যের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, নিরাপত্তা, রাষ্ট্রীয় অখণ্ডতা ও গণতন্ত্র সুরক্ষিত ও সুসংহত করা।
  • (খ) উৎপাদনের রাজনীতি, মুক্তবাজার অর্থনীতি এবং জনগণের গণতন্ত্রের মাধ্যমে সামাজিক ন্যায়বিচারভিত্তিক মানবমুখী অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও জাতীয় সমৃদ্ধি অর্জন।
  • (গ) জাতীয়তাবাদী ঐক্যের ভিত্তিতে গ্রামে-গঞ্জে জনগণকে সচেতন ও সুসংগঠিত করা এবং সার্বিক উন্নয়নমুখী পরিকল্পনা ও প্রকল্প রচনা ও বাস্তবায়ন ক্ষমতা ও দক্ষতা জনগণের হাতে পৌঁছে দেওয়া।
  • (ঘ) এমন এক সুষ্ঠু পরিবেশ সৃষ্টি করা যেখানে গণতন্ত্রের শিকড় সমাজের মৌলিক স্তরে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের মনে দৃঢ়ভাবে প্রোথিত হয়।
  • (ঙ) এমন একটি সুস্পষ্ট ও স্থিতিশীল সামাজিক ও রাজনৈতিক ব্যবস্থার নিশ্চিতি দেওয়া যার মাধ্যমে জনগণ নিজেরাই তাদের মানবিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নতি আনতে পারবেন।
  • (চ) বহুদলীয় রাজনীতির ভিত্তিতে জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত একটি সংসদীয় পদ্ধতির সরকারের মাধ্যমে স্থিতিশীল গণতন্ত্র কায়েম করা এবং সুষম জাতীয় উন্নয়ন ও সমৃদ্ধি আনয়ন।
  • (ছ) গণতান্ত্রিক জীবন ধারা ও গণতান্ত্রিক বিধি ব্যবস্থার রক্ষাকবচ হিসাবে গণনির্বাচিত জাতীয় সংসদের ভিত্তি দৃঢ়ভাবে স্থাপন করা এবং জনগণের মৌলিক অধিকার সংরক্ষণ করা।
  • (জ) রাজনৈতিক গোপন সংগঠনের তৎপরতা এবং কোন সশস্ত্র ক্যাডার, দল বা এজন্সী গঠনে অস্বীকৃতি জানানো ও তার বিরুদ্ধে জনমত সৃষ্টি করা।
  • (ঝ) জাতীয় জীবনে মানবমুখী সামাজিক মূল্যবোধের পুনরুজ্জীবন এবং সৃজনশীল উৎপাদনমুখী জীবনবোধ ফিরিয়ে আনা।
  • (ঞ) বাস্তবধর্মী কার্যকরী উন্নয়ন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে জাতীয় জীবনে ন্যায়বিচার-ভিত্তিক সুষম অর্থনীতির প্রতিষ্ঠা, যাতে করে সকল বাংলাদেশী নাগরিক অন্ন, বস্ত্র, স্বাস্থ্য, বাসস্থান ও শিক্ষার ন্যূনতম মানবিক চাহিদা পূরণের সুযোগ পায়।
  • (ট) সার্বিক পল্লী উন্নয়ন কর্মসূচীকে অগ্রাধিকার দান করা ও সক্রিয় গণচেষ্টার মাধ্যমে গ্রাম বাংলার সুখ-শান্তি ও সমৃদ্ধি নিশ্চিত করা।
  • (ঠ) নারী সমাজ ও যুব সম্প্রদায়সহ সকল জনসম্পদের সুষ্ঠু ও বাস ভিত্তিক সদ্ব্যবহার করা।
  • (ড) বাস্তবধর্মী অর্থনৈতিক পরিকল্পনা গ্রহণ এবং সুসামঞ্জস্যপূর্ণ শ্রম ব্যবস্থাপনা সম্পর্ক স্থাপন এবং সুষ্ঠু শ্রমনীতির মাধ্যমে শিল্পক্ষেত্রে সর্বোচ্চ উৎপাদন নিশ্চিত করা।
  • (ঢ) বাংলা ভাষা ও সাহিত্য, বাংলাদেশের সংস্কৃতি, কৃষ্টি ও বাংলাদেশের ক্রীড়া সংরক্ষণ, উন্নয়ন ও প্রসার সাধন।
  • (ণ) বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ বাংলাদেশী জনগণের ধর্ম ইসলাম এবং অন্যান্য ধর্মীয় শিক্ষার সুযোগ দান করে বাংলাদেশের জনগণের যুগপ্রাচীন মানবিক মূল্যবোধ সংরক্ষণ করা, বিশেষ করে অনগ্রসর সম্প্রদায়ের জন্য শিক্ষা সম্প্রসারণ ও বৃহত্তর জাতীয় তাদের অধিকতর সুবিধা ও অংশগ্রহণের সুযোগের যথাযথ ব্যবস্থা করা।
  • (ত) পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে জোট নিরপেক্ষতার ভিত্তিতে আন্তর্জাতিক বন্ধুত্ব, প্রীতি ও সমতা রক্ষা করা। সার্বভৌমত্ব ও সমতার ভিত্তিতে প্রতিবেশী রাষ্ট্রসমূহের সঙ্গে, তৃতীয় বিশ্বের মিত্র রাষ্ট্রসমূহের সাথে এবং ভ্রাতৃপ্রতিম মুসলিম রাষ্ট্রসমূহের সঙ্গে প্রীতি ও সখ্যতার সম্পর্ক সুসংহত এবং সুদৃঢ় করা।[১৭]
Remove ads

সাংগঠনিক কাঠামো

জাতীয়তাবাদী দল দেশের মৌলিক স্তর গ্রাম/ওয়ার্ড পর্যায় থেকে সংগঠিত হয়ে জাতীয় পর্যায় পর্যন্ত সম্প্রসারিত। দলের সাংগঠনিক কাঠামো নিম্নরূপ:

  1. গ্রাম কাউন্সিল ও গ্রাম নির্বাহী কমিটি
  2. শহর/পৌরসভা ওয়ার্ড কাউন্সিল ও শহর/পৌরসভা ওয়ার্ড নির্বাহী কমিটি
  3. ইউনিয়ন কাউন্সিল ও ইউনিয়ন নির্বাহী কমিটি
  4. থানা কাউন্সিল ও থানা নির্বাহী কমিটি
  5. শহর/পৌরসভা কাউন্সিল ও শহর পৌরসভা নির্বাহী কমিটি
  6. জেলা কাউন্সিল ও জেলা নির্বাহী কমিটি
  7. নগর/ওয়ার্ড কাউন্সিল ও নগর ওয়ার্ড নির্বাহী কমিটি
  8. নগর থানা কাউন্সিল ও নগর থানা নির্বাহী কমিটি
  9. নগর কাউন্সিল ও নগর নির্বাহী কমিটি
  10. জাতীয় কাউন্সিল
  11. জাতীয় নির্বাহী কমিটি
  12. জাতীয় স্থায়ী কমিটি
  13. পার্লামেন্টারী বোর্ড
  14. পার্লামেন্টারী পার্টি
  15. বিদেশে দলের শাখা[১৭]
Remove ads

জাতীয় ঐক্য

বিএনপি গঠনের শুরুতে দেশে বিভিন্ন ভাবে বিভক্ত ছিল। এই বিভক্তির ভিত্তি ছিল রাজনৈতিক বিশ্বাস (বাম, ডান, মধ্যপন্থি), মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের ও বিপক্ষের শক্তি ইত্যাদি। এর ফলশ্রুতিতে ছাত্র-শিক্ষক, বুদ্ধজীবী, পেশাজীবি, সাংস্কৃতিক কর্মী, সামরিক বাহিনী এমনকি প্রশাসনও বিভক্ত ছিল। বিএনপি প্রতিষ্ঠার মূল ভিত্তি ছিল এই সকল বিভেদ ভুলে সকলে মিলে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। জিয়ার সময়ই আওয়ামী লিগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা, শেখ মুজিবুর রহমানের মৃত্যুর পর প্রথম দেশে আসেন এবং আওয়ামী লিগ সভানেত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেন। সেই সাথে অখণ্ড পাকিস্তানের সমর্থক জামায়াতে ইসলামীও এই সময় রাজনীতিতে সক্রিয় হয়ে উঠে। তাদের বহু নেতা যারা মুক্তিযুদ্ধের পর দেশের বাইরে ছিল তারা দেশে আসার অনুমতি লাভ করে। উল্লেখ্য, মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী শেখ মুজিবুর রহমানের সরকার মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারি সকল দল ও ব্যক্তির জন্য ক্ষমা ঘোষণা করেন। তবে, যাদের বিরুদ্ধে সরাসরি হত্যা, ধর্ষণ, অগ্নি সংযোগ ও লুটপাট এই চারটি অভিযোগ থাকবে তারা এই ক্ষমার আওতায় পরে নাই। যদিও, এদের বিরুদ্ধে কখনোই কোন ব্যাপক ও কার্যকরী ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

Remove ads

নির্বাচনী ইতিহাস

রাষ্ট্রপতি নির্বাচন/গণভোট

আরও তথ্য নির্বাচন, দলীয় পার্থী ...

জাতীয় সংসদ নির্বাচন

আরও তথ্য সংসদ, দলের নেতা ...
Remove ads

পররাষ্ট্রনীতি

শুরু থেকেই বিএনপির লক্ষ্য ছিল জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠা করা। স্বাধীনতা পরবর্তি সরকারের ভারত-ঘেষা পররাষ্ট্রনীতির ফলে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ভারত-সোভিয়েত অক্ষের দিকে চলে যায়, ফলে বাংলাদেশের অন্যান্য বিশ্বশক্তির সাথে সম্পর্ক তেমন ভালো ছিল না। বিএনপি তার পররাষ্ট্রনীতিতে নিরপেক্ষতা ধারণ করে।[] বিএনপি মুসলিম বিশ্বের দেশগুলোর সাথে সম্পর্ক উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা পালন করে।

অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন

সহযোগী সংগঠন

বিএনপির ১১টি অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন রয়েছে-

পেশাজীবী সংগঠন

সমালোচনা ও বিতর্ক

সারাংশ
প্রসঙ্গ

২০০১-২০০৬ সালের শাসনামলে এবং তার পরে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) ব্যাপক সমালোচনার সম্মুখীন হয়। যার মধ্যে দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি এবং রাজনৈতিক সহিংসতার অভিযোগ ছিল। ২১শে আগস্ট গ্রেনেড হামলা, ২০০৫ সালের দেশব্যাপী বোমা হামলা এবং ১০ ট্রাক অস্ত্র উদ্ধারের মতো বড় বড় ঘটনা জনসাধারণের আস্থাকে ক্ষুণ্ণ করে এবং প্রশাসনিক ব্যর্থতা তুলে ধরে। তাদের ক্ষমতার অবসানের পর আরও দুর্নীতির অভিযোগ এবং আইনের শাসনের অবনতি জনসাধারণের অসন্তোষকে তীব্র করে তোলে যা দলের সুনাম হ্রাসে করে ও গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে সংকটে পড়ে।[১৯][২০][২১]

বিএনপি চেয়ারপার্সনের রাজনৈতিক কার্যালয় ও তথাকথিত কমান্ড সেন্টার যা হাওয়া ভবন নামে পরিচিত, ২০০৬-২০০৮ সালের রাজনৈতিক সংকটের সময় বিতর্কিত হয়ে ওঠে।[২২] অভিযোগ ছিল যে এটি তৎকালীন দলের যুগ্ম সম্পাদক এবং চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ছেলে তারেক রহমানের অধীনে "বিকল্প ক্ষমতার কেন্দ্র" হিসেবে কাজ করে।[২২][২৩][২৪]

২০২৫ সালের ৯ জুলাই বাংলাদেশের ঢাকার মিটফোর্ড হাসপাতালে লাল চাঁদ ওরফে সোহাগ নামে একজন ভাঙ্গারি ব্যবসায়ীকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। এই ঘটনার একটি ভিডিও যা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপকভাবে প্রচারিত হয়েছিল।[২৫] তাতে দেখা গেছে যে আক্রমণকারীরা সোহাগকে বিবস্ত্র করে, কুপিয়ে, পাথর ছুঁড়ে হত্যা করে এবং তার মৃতদেহকে পদদলিত করে।[২৬] আক্রমণকারীরা বিএনপির যুব ও ছাত্র সংগঠন জাতীয়তাবাদী যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল এবং ছাত্রদলের সাথে যুক্ত ছিল বলে জানা যায়।[২৭] ঘটনাটি প্রকাশ্যে দিনের আলোয় ঘটে এবং জনসাধারণের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের জন্ম দেয়।[২৮] প্রতিক্রিয়ায় আইন প্রয়োগকারী কর্তৃপক্ষ এই মামলায় জড়িত ৭ সন্দেহভাজনকে গ্রেপ্তার করে।[২৯] পরবর্তীতে দেশব্যাপী সমালোচনা ও প্রতিবাদের পর বিএনপি এই ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে পাঁচ সদস্যকে বহিষ্কার করে।[৩০]

Remove ads

আরও দেখুন

তথ্যসূত্র

বহিঃসংযোগ

Loading related searches...

Wikiwand - on

Seamless Wikipedia browsing. On steroids.

Remove ads