শীর্ষ প্রশ্ন
সময়রেখা
চ্যাট
প্রসঙ্গ

বিক্রমপুর

বাংলাদেশের বর্তমান মুন্সিগঞ্জ জেলার একটি বিস্তৃত এলাকা উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ

বিক্রমপুর
Remove ads

বিক্রমপুর পরগনা[] বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা থেকে ১২ মাইল দক্ষিণে অবস্থিত। বর্তমানে এ অঞ্চলটি মুন্সীগঞ্জ জেলার অন্তর্গত।[] বিক্রমপুর বাংলার একটি ঐতিহাসিক এলাকা। সুপ্রাচীন কাল থেকেই এই অঞ্চল তার বৌদ্ধ জ্ঞান চর্চার জন্য এবং পরবর্তীতে সাংস্কৃতিক প্রভাবের জন্য সুপরিচিত। ধারণা করা হয়, বৈদিক যুগ থেকে ভাওয়ালসোনারগাঁও রাজধানী হিসেবে আবির্ভূত হবার আগে পর্যন্ত এটিই ছিল বাংলার প্রাচীনতম রাজধানী। বিক্রমপুর ছিল রাজা বিক্রমাদিত্যের রাজধানী। এই এলাকায় বাংলার বহু কীর্তিমান ব্যক্তির জন্ম হয়েছে। এখানকার কৃতী সন্তানের মধ্যে রয়েছেন অতীশ দীপঙ্কর, জগদীশ চন্দ্র বসু, দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ, ব্রজেন দাস, সত্যেন সেন প্রমুখ।

Thumb
বিক্রমপুর বিল
Remove ads

নামের উৎপত্তি

ধারণা করা হয়, বিক্রমপুর নামটির উৎপত্তি বিক্রমাদিত্য থেকে। বিক্রমাদিত্য হিন্দু পুরাণের একজন রাজা ছিলেন। তবে বেশ কয়েকজন শাসক যেমনঃ চন্দ্রগুপ্ত–২, ধর্মপাল, সম্রাট হেমু প্রমুখ বিক্রমাদিত্য পদবীটি গ্রহণ করেছিলেন।[][] তাই এটি পরিষ্কার নয় কার নামে বিক্রমপুরের নামকরণ করা হয়েছিল। বিক্রমপুর নামের ‘‘বিক্রম’’ অর্থ সাহস বা বীরত্ব এবং ‘‘পুর’’ অর্থ নগর বা এলাকা, যা উপমহাদেশে বিভিন্ন অঞ্চল বা এলাকার নামের শেষাংশ হিসাবে সাধারণত ব্যবহার করা হয়।[]

Remove ads

বিস্তৃতি

বর্তমানে বিক্রমপুর অঞ্চলের কোন প্রশাসনিক স্বীকৃতি নেই। মুন্সীগঞ্জ জেলার একটি বিস্তৃত অংশের মানুষজন নিজেদের ঐতিহাসিক বিক্রমপুরের অধিবাসী বলে দাবি করে। ধারণা করা হয়, বিক্রমপুর নগরের অবস্থান ছিল এরকম: পশ্চিমে পদ্মা নদী, উত্তর ও পূর্বে ধলেশ্বরী নদী এবং দক্ষিণে আড়িয়াল খাঁমেঘনা নদীর সংযোগস্থল।

১৭৮১ সালের একটি মানচিত্রে দেখা যায়, কালিগঙ্গা নদী এ অঞ্চলের মাঝখান দিয়ে প্রবাহিত যা এলাকাটিকে দুটি অংশে বিভক্ত করেছিল – উত্তর বিক্রমপুর এবং দক্ষিণ বিক্রমপুর। এ সময় বিক্রমপুরের বিস্তৃতি ছিল পূর্ব–পশ্চিমে প্রায় ৩০–৪০ মাইল এবং উত্তর–দক্ষিণে প্রায় ৮–১০ মাইল।[]

ক্রমাগত নদী ভাঙ্গনের ফলে প্রাচীন বিক্রমপুর শহর এবং এর পুরাতাত্ত্বিক নিদর্শনসমূহ প্রায় পুরোটাই কালের আবর্তে বিলীন হয়ে গেছে। তবে নদীর গতি পরিবর্তনের ফলে এ ধরনের ভূমিক্ষয় ঐতিহাসিক ভাবেই বাংলার একটি সাধারণ ব্যাপার।

Remove ads

ইতিহাস

সারাংশ
প্রসঙ্গ

প্রাচীন ইতিহাস

মৌর্য সাম্রাজ্যের সম্রাট অশোক খ্রিষ্টপূর্ব ২৬৯ সাল থেকে খ্রিষ্টপূর্ব ২৩২ সাল পর্যন্ত প্রায় সমগ্র উপমহাদেশ শাসন করেছিলেন।[] গৌতম বুদ্ধের অনুসারি হিসাবে তিনি তার সাম্রাজ্য জুড়ে বৌদ্ধ ধর্মের প্রচার করেছিলেন যার মধ্যে তার সাম্রাজ্যের পূর্বে অবস্থিত বিক্রমপুরও ছিল। পরবর্তীকালে পাল রাজারা বিক্রমপুরে এসে এ অঞ্চল শাসন করেন।[]

পাল যুগ

পাল সাম্রাজ্যের দ্বিতীয় রাজা ধর্মপাল ৭৭০ থেকে ৮১০ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত তার রাজত্বকালে বিক্রমপুরে একটি বৌদ্ধ বিহার নির্মাণ করেন।[] তার মৃত্যুর পর তার ছেলে দেবপাল ৮৫০ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত এ অঞ্চল শাসন করেন। পরবর্তীকারে এ এলাকা পর্যায়ক্রমে শাসন করেন মহেন্দ্রপাল, বিগ্রহপাল, নারায়ণপাল, রাজ্যপাল, গোপাল–২, বিগ্রহপাল–২, মহীপাল, ন্যায়পাল, বিগ্রহপাল–৩, মহীপাল–২, শূরপাল–২, রামপাল, কুমারপাল, গোপাল–৩ এবং মদনপাল।[] সেন সাম্রাজ্যের দ্বারা ক্রমাগত আক্রান্ত হলে ১১৭৪ সালে পাল সাম্রাজ্য ভেঙ্গে পড়ে।[১০]

চন্দ্র যুগ

শ্রীচন্দ্রের শাসনামলে (শাসনকাল ৯৩০ – ৯৭৫ খ্রিষ্টাব্দ) বিক্রমপুরে চন্দ্র সাম্রাজ্যের প্রশাসনিক কেন্দ্র স্থাপন করা হয়।[১১]

সেন যুগ

সেন রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা বিজয় সেনের (শাসনকাল ১০৯৭ – ১১৬০ সাল) সময়কালের একটি তাম্রলিপি ১৯১১ সালে ভারতের ব্যারাকপুরে আবিষ্কৃত হয়। এই লিপিতে বিক্রমপুরকে ওই অঞ্চলের রাজধানী হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছিল।[] সেন রাজত্বের পুরোটা সময় জুড়েই বিক্রমপুর এই রাজ্যের রাজধানী ছিল। ১২০৫ সালে তুর্কি সেনাপতি বখতিয়ার খিলজী সেই সময়কার শাসক লক্ষণ সেনকে নদীয়ায় পরাজিত করেন। পরবর্তীতে লক্ষণ সেন বিক্রমপুরে পালিয়ে ‌আসেন।[১২] তার দুই পুত্র বিশ্বরূপ সেন এবং কেশব সেন সেখান থেকে ১২৩০ সাল পর্যন্ত এ অঞ্চল শাসন করেন।[১৩] তবে তাদের শাসনকালের তাম্রলিপিতে বিক্রমপুরকে রাজধানী হিসেবে উল্লেখ করা হয়নি।[] অপর একজন হিন্দু রাজা, ধনুজ রায়, কেশব সেনের একজন উত্তরসূরিকে পরাজিত করেন এবং এই এলাকা থেকে শাসনকাজ পরিচালনা করেন। ১২৮০ সালের শুরুর দিকে, তিনি এখান থেকে সুবর্ণগ্রামে রাজধাণী স্থানান্তর করেন (পরবতীর্তে যার নামকরণ করা হয় সোনারগাঁও)।[][১৪]

মুঘল আমল

মুঘল সম্রাট আকবর ১৫৭২ – ১৫৮০ সালের প্রশাসনিক সংস্কারের সময় বিক্রমপুরকে একটি পরগণা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করেন। এটি ছিল সুবা বাংলার সোনারগাঁও সরকারের ৫২ টি পরগণার মধ্যে একটি। আকবরের আমলে চাঁদ রায় এবং কেদার রায় বিক্রমপুরের জমিদার ছিলেন। বারো ভূঁইয়াদের বিরুদ্ধে অভিযান চলাকালে মুঘল সুবেদার মান সিংহ ১৬০০ সালের শুরুর দিকে কেদার রায়কে হত্যা করেন।

আওরঙ্গজেবের রাজত্বকাল শেষে নবাব মুর্শিদকুলী খাঁর সময়ে বিক্রমপুরকে ৮টি তালুকে বিভক্ত করা হয়, এগুলো ছিলঃ ভাগ্যকূল, শ্রীনগর, মাইঝপাড়া, সিনহাপাড়া, তালতলা, সিরাজদিখান, লৌহজং এবং বালিগাঁও। প্রতিটি তালুকের একজন করে জমিদার ছিল। গোবিন্দ প্রসাদ রায় একসময় মাইঝপাড়ার জমিদার ছিলেন।

Remove ads

বিখ্যাত ব্যক্তিবর্গ

Remove ads

তথ্যসূত্র

বহিঃসংযোগ

Loading related searches...

Wikiwand - on

Seamless Wikipedia browsing. On steroids.

Remove ads