শীর্ষ প্রশ্ন
সময়রেখা
চ্যাট
প্রসঙ্গ

ভারতীয় জাতীয় বর্ষপঞ্জি

উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ

Remove ads

ভারতীয় জাতীয় বর্ষপঞ্জি (অথবা শালিবাহন পঞ্জিকা) হল ভারতীয় উপমহাদেশে বহুলপ্রচলিত একটি প্রাচীন সৌরচান্দ্রিক নির্ভর বর্ষপঞ্জীর সংশোধিত সৌরনির্ভর রূপ যা বর্তমানে ভারতের জাতীয় বর্ষপঞ্জি। এর পঞ্জিকা সাল বঙ্গাব্দের ৫১৫ বছর পূর্বে এবং খ্রিস্টাব্দের ৭৮ বছর পরে প্রচলিত হয়।

ইতিহাস

সারাংশ
প্রসঙ্গ

উৎপত্তি

Thumb
শকাব্দীয় মুদ্রা

এর বর্ষপঞ্জীর উৎস নিয়ে ঐতিহাসিকদের মধ্যে মতানৈক্য আছে। কুষাণ রাজা কণিষ্ককে এই বর্ষপঞ্জির আদিপুরুষ শক পঞ্জিকার প্রণেতা বলে বিশ্বাস করা হয়। তবে অধিকাংশ ঐতিহাসিকের মতানুসারে প্রাচীন ভারতীয় নৃপতি শালিবাহনের প্রয়াণ দিবস থেকেই এর সূচনা। এটি একটি সৌর পঞ্জিকা এবং পূর্বে এর মাস এবং দিনাঙ্ক গণিত হত খ্রিস্টীয় চতুর্থ শতাব্দীতে উদ্ভূত প্রাচীন ভারতীয় জ্যোতির্বিষয়ক গ্রন্থ ‘সূর্য সিদ্ধান্তের’ সৌরবর্ষ গণনার বিধি মান্য করে অর্থাৎ রবিসংক্রান্তি অনুসারে।[]

একটি রাশি থেকে অপর একটি রাশিতে সূর্যের আপাতগমনের (প্রকৃতপক্ষে পৃথিবীর বার্ষিক গতি) ফলে মাস পরিবর্তিত হত।[] পূর্ব ভারতে প্রচলিত বঙ্গাব্দে এবং ভাস্করাব্দে বর্ষগণনার ক্ষেত্রে এখনও এই প্রাচীন পদ্ধতিটিই অনুসৃত হয়ে থাকে। শক পঞ্জিকায় অঞ্চলভেদে বিভিন্ন সময়ে বর্ষারম্ভ হত। যেমন উত্তর ভারতে বছর শুরু হত চৈত্র মাসে কিন্তু পূর্ব ভারতে নববর্ষ অনুষ্ঠিত হত বৈশাখ মাসে। ভারতীয় ইতিহাসের আধুনিক যুগেও অন্যান্য অব্দের পাশাপাশি এর ব্যবহার বহুলভাবে লক্ষিত হয়। আসামে "ভাস্করাব্দ" নামক একটি পঞ্জিকা ও পঞ্জিকা সালের প্রচলিত থাকলেও শক পঞ্জিকা ও এর পঞ্জিকা সাল শকাব্দের ব্যবহারই বহুল প্রচলিত। সূর্যসিদ্ধান্তের প্রাচীন নিয়ম মেনেই অসমে ১ বহাগ (বৈশাখ) পালিত নববর্ষ উৎসব "বহাগ বিহু" থেকে শকাব্দ গণনা করা হয়।[] ঊনবিংশ শতাব্দীতে বঙ্গদেশে প্রকাশিত বিভিন্ন দৈনিক এবং সাময়িক পত্রে এর উল্লেখ পাওয়া যায়। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য “তত্ত্ববোধিনী পত্রিকা”।

জাতীয় বর্ষপঞ্জি হিসেবে গ্রহণ

১৯৫০ খ্রিস্টাব্দে স্বাধীন ভারত একটি প্রজাতান্ত্রিক যুক্তরাষ্ট্রে রূপান্তরিত হবার পরে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার একটি জাতীয় পঞ্জিকা প্রচলনের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে। এর ফলে ১৯৫৭ খ্রিস্টাব্দে অর্থাৎ ১৮৭৯ শকাব্দে ভারত সরকার বিজ্ঞানী মেঘনাদ সাহার নেতৃত্বে একটি “পঞ্জিকা সংস্কার কমিটি” গঠন করেন। এই কমিটি শকের পঞ্জিকা সহ ভারতে প্রচলিত অন্যান্য বর্ষপঞ্জিসমূহের সংস্কারসাধনে নিযুক্ত হয়। উক্ত কমিটি শকাব্দকে ঋতুনিষ্ঠ ও সর্বস্তরে ব্যবহারোপযোগী করে তোলার জন্য এবং আন্তর্জাতিক স্তরে প্রচলিত গ্রেগরীয় বর্ষপঞ্জীর সঙ্গে সমন্বয় রেখে চলার জন্য এই বর্ষপঞ্জীকে সংস্কার করতে উদ্যোগী হয়। “সূর্য সিদ্ধান্তে” উল্লিখিত নিরয়ণ বর্ষগণনারীতি[] পরিহার করে “পঞ্জিকা সংস্কার কমিটি” সায়ন সৌর পঞ্জিকায় রূপান্তরিত করে এবং বারো মাসের দৈর্ঘ্য স্থির করে দেয়।[][][] এছাড়া বার্ষিক গতির সাথে সমন্বয় রেখে অধিবর্ষে চৈত্র মাসে একটি অতিরিক্ত দিন যোগ করার সিদ্ধান্তে উপনীত হয়। ১৯৫৭ খ্রিস্টাব্দের ২২ মার্চ (১ চৈত্র ১৮৭৯ শক) ভারত সরকার এই সংস্কারপ্রাপ্ত পঞ্জিকাকে ভারতের জাতীয় পঞ্জিকা হিসাবে গ্রহণ করে এবং কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারের সর্বস্তরে গ্রেগরীয় বর্ষপঞ্জীর সাথে “ভারতীয় জাতীয় বর্ষপঞ্জি”-এর ব্যবহার প্রচলন করে।[][][] কিন্তু সমস্ত প্রশাসনিক বিভাগে, আকাশবাণী এবং দূরদর্শনের ঘোষণায় শক পঞ্জিকা এবং এর পঞ্জিকা সাল শকাব্দের প্রচলন হলেও[] এখনও ১ চৈত্র (২১/২২ মার্চ), ভারতীয় জাতীয় বর্ষপঞ্জীর নববর্ষের দিন জাতীয় ছুটির দিন হিসাবে স্বীকৃত হয়নি। ধর্মীয় নিরয়ণ বর্ষপঞ্জীর বহুল প্রচলনের কারণেই সম্ভবত সংস্কারকৃত এই বর্ষপঞ্জিটি উপেক্ষিত রয়ে গেছে।[][]

Remove ads

বর্ষপঞ্জির গঠন

সারাংশ
প্রসঙ্গ

বর্ষপঞ্জির মাসগুলো পার্শ্বীয় রাশি এর পরিবর্তে বৌদ্ধ পঞ্জিকায় ব্যবহৃত ক্রান্তীয় রাশি অনুসরণ করে। উক্ত কমিটির সিদ্ধান্তানুসারে ভারতের জাতীয় বর্ষপঞ্জির বারো মাসের দিনসংখ্যা হল এইরূপ[][][]:

আরও তথ্য #, মাস ...

কমিটির ঘোষণা অনুসারে প্রত্যেক বছর মহাবিষুবের পরদিন অর্থাৎ গ্রেগরীয় বর্ষপঞ্জীর ২২ মার্চ তারিখে এই পঞ্জিকার বর্ষ আরম্ভ হয় এবং তারিখ অনুসারে সেই দিনটি হল ১ চৈত্র। কেবল অধিবর্ষে বর্ষারম্ভ হয় ২১ মার্চ।

মাসগুলোর নাম পুরনো বৌদ্ধ সৌরচান্দ্রিক পঞ্জিকা থেকে নেওয়া হয়েছে, তাই বানানের বিভিন্নতা বিদ্যমান, এবং কোন তারিখটি কোন পঞ্জিকার অন্তর্গত তার সম্ভাব্য উৎস নিয়ে বিভ্রান্তির রয়েছে।

এই বর্ষপঞ্জিতে সপ্তাহের প্রথম দিন রাভিভারা (রবিবার)।[] রবিবার আধুনিক বর্ষপঞ্জিটির প্রণেতা ভারত সরকারের সরকারি ছুটির দিন।[]

আরও তথ্য সপ্তাহের দিন, শক ...

এই সংশোধিত পঞ্জিকায় বর্ষগণনার বিধি অনুসারে এই পঞ্জিকার সালের সাথে ৭৮ যোগ করে প্রাপ্ত যোগফলকে ৪ (চার) দ্বারা ভাগ করে যদি ভাগশেষ থাকে ০ (শূন্য) তাহলে সেই বছর অধিবর্ষ হয়। কিন্তু শকাব্দের সাথে ৭৮ যোগ করার পর প্রাপ্ত যোগফল যদি ১০০-এর গুণিতক হয় তাহলে তাকে ৪০০ দ্বারা ভাগ করার পর যদি ভাগশেষ থাকে ০ (শূন্য) তাহলে সেই বছর অধিবর্ষ হয়।[][][]

Remove ads

আরও দেখুন

তথ্যসূত্র

বহিঃসংযোগ

Loading related searches...

Wikiwand - on

Seamless Wikipedia browsing. On steroids.

Remove ads