শীর্ষ প্রশ্ন
সময়রেখা
চ্যাট
প্রসঙ্গ

মলাস্কা

অমেরুদন্ডী প্রাণীর পর্ব উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ

মলাস্কা
Remove ads

মোলাস্কা বা কম্বোজপ্রাণ(Mollusca) হল একটি প্রধান অমেরুদণ্ডী প্রাণিপর্ব, যার অন্তর্গত প্রাণীদের বলা হয় মোলাস্ক। এই পর্বে শামুক, কমজাইলকা, ঝিনুক, অক্টোপাসস্কুইডের মতো প্রাণী অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। মোলাস্করা প্রোটোস্টোমিক প্রাণী, অর্থাৎ ভ্রূণ অবস্থায় যেখান থেকে মুখ তৈরি হয়, সেটিই তাদের দেহের প্রথম গহ্বর (blastopore)। এদের দেহে হাড় বা মেরুদণ্ড থাকে না।

দ্রুত তথ্য মোলাস্ক, বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস ...
Thumb
কর্নু আসপেরসাম (পূর্বনাম হেলিক্স আসপেরসা) – একটি বহু জনপরিচিত শামুক

বর্তমানে প্রায় ৭৬,০০০টি জীবিত মোলাস্ক প্রজাতি চিহ্নিত হয়েছে, যা একে আর্থ্রোপোডা-এর পরে দ্বিতীয় বৃহত্তম প্রাণিপর্বে পরিণত করেছে।[][] এছাড়া অতিরিক্ত ৬০,০০০ থেকে ১,০০,০০০ জীবাশ্ম মোলাস্ক প্রজাতির অস্তিত্বের প্রমাণ পাওয়া গেছে।[][]

তবে এখনো বহু মোলাস্ক প্রজাতি বৈজ্ঞানিকভাবে চিহ্নিত হয়নি এবং অনেক গোষ্ঠী পর্যাপ্তভাবে গবেষণা করা হয়নি। ফলে মোলাস্কা পর্বের প্রকৃত বৈচিত্র্য এবং বিস্তার পুরোপুরি জানা যায়নি।[][]

মোলাস্ক হল বৃহত্তম সামুদ্রিক পর্ব, যা সমস্ত নামযুক্ত সামুদ্রিক জীবগুলোর প্রায় ২৩% নিয়ে গঠিত। এছাড়াও অসংখ্য মোলাস্ক মিঠা পানির মোলাস্ক তারা অত্যন্ত বৈচিত্র্যময়, শুধুমাত্র আকার এবং শারীরবৃত্তীয় গঠনে নয়, আচরণ এবং বাসস্থানেও। মলাস্কা পর্ব ৭ বা ৮ টি শ্রেণিতে বিভক্ত[],যার মধ্যে দুটি সম্পূর্ণরূপে বিলুপ্ত। সেফালোপড বা শুঁড়ওয়ালা মোলাস্ক, যেমন: স্কুইড,কাটলফিশ এবং অক্টোপাস, সমস্ত অমেরুদন্ডী-এর মধ্যে সবচেয়ে স্নায়ুবিকভাবে উন্নত-এবং দৈত্য স্কুইড বা প্রকাণ্ড স্কুইড হল বর্তমানে বৃহত্তম পরিচিত অমেরুদণ্ডী প্রজাতি। উদরপদীরা (শামুক, কমজাইলকা, এবালোনি) এখন পর্যন্ত সর্বাধিক শ্রেণিবিশিষ্ট মোলাস্ক এবং তারা এ প্রজাতির প্রায় ৮০%।

শামুক, কমজাইলকা, অক্টোপাস ও ঝিনুকের মতো মোলাস্ক শ্রেণির প্রাণীদের দেহ সাধারণত নরম এবং অধিকাংশটাই পেশিবহুল। এদের শরীরে একটি ম্যান্টল নামের স্তর থাকে, যা দেহের উপরের অংশে অবস্থান করে এবং একটি ফাঁপা গহ্বর তৈরি করে। এই গহ্বর শ্বাসপ্রশ্বাস এবং বর্জ্য অপসারণে সহায়তা করে। বেশিরভাগ মোলাস্কের মুখে রেডুলা নামের একটি জিভের মতো গঠন থাকে, যা দিয়ে তারা খাবার খায়। তবে ঝিনুকসহ কিছু দ্বি-খোলক প্রাণীর রেডুলা থাকে না। মলাস্কদের স্নায়ুতন্ত্র থাকে, যা পরিবেশের স্পর্শ, কম্পন, রাসায়নিক পদার্থ এবং আলোর উপস্থিতি শনাক্ত করতে সাহায্য করে।

মোলাস্করা coelomate, অর্থাৎ এদের দেহের ভেতরে একটি বিশেষ ফাঁকা জায়গা থাকে যেটিকে কোয়েলম (coelom) বলে। এই কোয়েলম হচ্ছে এক ধরনের দেহগহ্বর, যেখানে বিভিন্ন অভ্যন্তরীণ অঙ্গ (যেমন হৃৎপিণ্ড, পরিপাকতন্ত্র ইত্যাদি) স্থাপিত থাকে। তবে অন্যান্য অনেক প্রাণীর তুলনায় মোলাস্কদের কোয়েলম সাধারণত ছোট হয়।

এদের প্রধান দেহগহ্বরকে হেমোকোয়েল (hemocoel) বলা হয়। এটি একটি বড় ফাঁকা স্থান, যার ভেতর দিয়ে রক্ত প্রবাহিত হয়। কারণ মোলাস্কদের রক্ত সংবহন ব্যবস্থা (circulatory system) বেশিরভাগ ক্ষেত্রে খোলা ধরনের (open circulatory system)। এর মানে হচ্ছে, রক্ত শিরা বা ধমনীর মধ্য দিয়ে সম্পূর্ণভাবে সীমাবদ্ধভাবে প্রবাহিত হয় না; বরং রক্ত দেহের ফাঁকা গহ্বরে ঢুকে সরাসরি অঙ্গগুলোর চারপাশে ছড়িয়ে পড়ে। এ ধরনের রক্তপ্রবাহ পদ্ধতি ধীর হলেও মোলাস্কদের মতো ধীরগতির প্রাণীদের জন্য যথেষ্ট কার্যকর।

একটি সাধারণ মোলাস্কের খাদ্যগ্রহণ প্রক্রিয়া বেশ জটিল। এদের মুখে থাকে একটি বিশেষ গঠন, যাকে রেডুলা (radula) বলা হয়। এটি দেখতে জিভের মতো, তবে এর ওপর ছোট ছোট দাঁতের মতো কাঠিন্য থাকে। এই রেডুলা ব্যবহার করে প্রাণীটি খাবার চেঁছে খায় বা চূর্ণ করে। এটি একপ্রকার ঘষা দেওয়া জিভ (rasping tongue)-এর মতো কাজ করে।

এদের পরিপাকতন্ত্র (digestive system) জটিল এবং এতে একাধিক উপাদান কাজ করে। খাবারকে নরম করার জন্য প্রাণীটি মিউকাস (mucus) বা শ্লেষ্মা নিঃসরণ করে। এই মিউকাস খাদ্য গিলতে এবং হজমে সাহায্য করে। পাশাপাশি, সিলিয়া (cilia) নামে অত্যন্ত সূক্ষ্ম ও স্নায়ু-চালিত চুলের মতো গঠন থাকে, যেগুলো ছোট ছোট নড়াচড়ার মাধ্যমে খাবারকে পাচনতন্ত্রে এগিয়ে নিতে সাহায্য করে।

স্নায়ুতন্ত্রের দিক থেকে, একটি সাধারণ মোলাস্কের দেহে সাধারণত দুটি জোড়া স্নায়ুরজ্জু (nerve cords) থাকে। তবে দ্বি-খোলক প্রাণীদের (যেমন ঝিনুক) ক্ষেত্রে এই সংখ্যা তিনটি পর্যন্ত হতে পারে। কিছু মোলাস্কে মস্তিষ্ক (brain) থাকে, যা খাদ্যনালীর চারপাশে রিং-এর মতো ঘিরে থাকে। এই অবস্থানটিকে বলে peri-esophageal nerve ring, অর্থাৎ খাদ্যনালী-ঘেরা স্নায়ুবলয়।

Thumb
ফিলিপাইনের জাতীয় জাদুঘর এ প্রদর্শিত অ্যামোনাইট মলাস্কের জীবাশ্ম

বেশিরভাগ মোলাস্কের চোখ থাকে, এবং তাদের শরীরে এমন সংবেদনশীল অঙ্গ থাকে যা রাসায়নিক পদার্থ, কম্পন এবং স্পর্শ টের পায়। এই সংবেদক অঙ্গগুলো তাদের আশপাশের পরিবেশ বুঝে চলাফেরা ও প্রতিক্রিয়া জানাতে সাহায্য করে।

মোলাস্কদের প্রজনন প্রক্রিয়া সাধারণত সহজ ধরনের হয়। সবচেয়ে সাধারণ পদ্ধতি হলো বহিঃসরণ জনন (external fertilization), অর্থাৎ তারা ডিম এবং শুক্রাণু পানির মধ্যে মুক্তভাবে ছড়ায় এবং এগুলো সেখানে পরস্পরের সাথে মিলিত হয়ে নিষিক্ত ডিম তৈরি হয়। তবে অনেক মোলাস্ক প্রজাতিতে এর চেয়ে জটিল প্রজনন পদ্ধতি দেখা যায়। প্রায় সব মোলাস্ক ডিম পাড়ে, এবং সেই ডিম থেকে জন্মাতে পারে তিন ধরনের বাচ্চা:

  • ট্রোকোফোর লার্ভা (trochophore larvae) – এটি খুবই ছোট এবং সহজ গঠনের শিশু অবস্থা, যা পানিতে সাঁতার কাটে।
  • ভেলিজার লার্ভা (veliger larvae) – এটি কিছুটা বেশি জটিল গঠনের শিশু রূপ, সাধারণত গ্যাস্ট্রোপড ও বাইভালভে দেখা যায়।
  • অথবা কিছু প্রজাতিতে ডিম থেকে সরাসরি ক্ষুদ্রাকৃতির পূর্ণাঙ্গ প্রাণী বের হয়, যাদের দেখতে প্রাপ্তবয়স্কদের মতোই।

এদের কোয়েলমিক গহ্বর (অভ্যন্তরীণ অঙ্গ রাখার ফাঁকা জায়গা) ছোট এবং রক্ত সংবহন ব্যবস্থা খোলা ধরনের। এছাড়া, এদের শরীরে কিডনির মতো নির্গমনের অঙ্গ (excretory organs) থাকে যা দেহের বর্জ্য পদার্থ বাইরে বের করে দেয়।

জীবাশ্ম প্রমাণে দেখা গেছে, মোলাস্কদের অন্তর্গত গ্যাস্ট্রোপড (শামুক), সেফালোপড (অক্টোপাস, স্কুইড) এবং বাইভালভ (ঝিনুক) শ্রেণির প্রাণীরা ক্যামব্রিয়ান যুগে, অর্থাৎ প্রায় ৫৪১ থেকে ৪৮৫ মিলিয়ন বছর আগে পৃথিবীতে প্রথম দেখা যায়। তবে মোলাস্করা যেই পূর্বপুরুষ গোষ্ঠী (Lophotrochozoa) থেকে উদ্ভূত হয়েছে এবং তারা কীভাবে এত বৈচিত্র্যময় রূপে বিবর্তিত হয়েছে, সেই ইতিহাস নিয়ে এখনো বিজ্ঞানীদের মধ্যে গবেষণা চলছে।

মোলাস্ক দীর্ঘকাল ধরে এবং এখনো মানুষের জন্য গুরুত্বপূর্ণ খাদ্য উৎস। ঝিনুক, স্কুইড, সামুদ্রিক শামুকসহ অনেক মোলাস্ক বিভিন্ন দেশে খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়। তবে কিছু নির্দিষ্ট পরিস্থিতিতে কিছু মোলাস্কের দেহে বিষাক্ত পদার্থ জমে যেতে পারে, যা খাওয়ার মাধ্যমে খাদ্যবিষক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে। এজন্য অনেক দেশে মোলাস্ক সংগ্রহ ও বাজারজাত করার ওপর নিয়ন্ত্রণমূলক আইন রয়েছে।

শুধু খাবারই নয়, মোলাস্ক থেকে বহু শতাব্দী ধরে বিলাসবহুল পণ্য তৈরি করা হয়। যেমন:

  • মুক্তো (pearl) – ঝিনুকের দেহে উৎপন্ন চকচকে কঠিন বস্তু
  • মাদার অব পার্ল (mother of pearl) – ঝিনুকের খোলসের ভিতরের চকচকে স্তর
  • টাইরিয়ান বেগুনি রং (Tyrian purple dye) – একধরনের সামুদ্রিক শামুক থেকে পাওয়া ঐতিহাসিকভাবে মূল্যবান রং
  • সামুদ্রিক রেশম (sea silk) – একধরনের মোলাস্ক থেকে তৈরি সূক্ষ্ম তন্তু

এছাড়াও, প্রাক-শিল্প সমাজে কিছু জাতি শামুকের খোলস মুদ্রা হিসেবে ব্যবহার করত।

তবে কিছু মোলাস্ক মানুষের জন্য বিপজ্জনক বা ক্ষতিকর হতে পারে। যেমন:

  • নীল-আংটিওয়ালা অক্টোপাস (blue-ringed octopus) এর কামড় মারাত্মক বিষাক্ত এবং মৃত্যুর কারণ হতে পারে।
  • Enteroctopus dofleini নামের এক ধরনের বড় অক্টোপাসের কামড়ে দীর্ঘ সময় ধরে প্রদাহ বা ব্যথা থাকতে পারে।
  • কোন শামুক (cone snail) নামের গোষ্ঠীর কিছু বড় প্রজাতির দংশনও প্রাণঘাতী হতে পারে। তবে এদের বিষ আজ স্নায়ুবিজ্ঞান গবেষণায় মূল্যবান সরঞ্জাম হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।

এছাড়া, স্কিস্টোসোমায়াসিস (Schistosomiasis) নামে একটি মারাত্মক পরজীবীজনিত রোগ জলশামুকের মাধ্যমে ছড়ায়, যা বর্তমানে বিশ্বের প্রায় ২০ কোটি মানুষকে আক্রান্ত করে। এই রোগটিকে স্নেইল ফিভার নামেও ডাকা হয়।

শামুক এবং কমজাইলকা অনেক সময় কৃষিকাজের ক্ষতিকর পোকা হয়ে ওঠে। তারা গাছের পাতা খেয়ে ফসল নষ্ট করে। আবার অনেক সময় কিছু প্রজাতির শামুক ভুল করে বা ইচ্ছাকৃতভাবে নতুন পরিবেশে ছেড়ে দিলে তা স্থানীয় বাস্তুতন্ত্রে মারাত্মক প্রভাব ফেলে, কারণ তারা স্থানীয় প্রজাতিগুলোকে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে হটিয়ে দিতে পারে।।

Remove ads

বুৎপত্তি

মোলাস্ক (mollusc) এবং মোলাস্ক(mollusk) শব্দ দুটিই ফরাসি মোলাস্ক(mollusque) থেকে উদ্ভূত হয়েছে, যা ল্যাটিন মোলাস্কাস (molluscus) থেকে এসেছে, মলিস অর্থ নরম ।মোলাস্কাস এরিস্টটলের τὰ μαλάκια এর একটি অভিযোজন ছিল ta malákia (নরম; < μαλακός malakós "soft"), যা তিনি ক্যাটলফিশের সাথে অন্যান্য বিষয়ের সাথে প্রয়োগ করেছিলেন। মোলাস্কের বৈজ্ঞানিক অধ্যয়নকে সেই অনুযায়ী ম্যালাকোলজি বলা হয়।

মোল্লাসকোইডা (Molluscoida) নামটি পূর্বে ব্র্যাচিওপড, ব্রায়োজোয়ান এবং টিউনিকেট সমন্বিত প্রাণীজগতের একটি বিভাগ বোঝাতে ব্যবহৃত হয়েছিল, তিনটি দলের সদস্যদের কিছুটা মোলাস্কের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ বলে মনে করা হয়েছিল।এখন জানা গেছে, এই গোষ্ঠীগুলোর মোলাস্কের সাথে কোনও সম্পর্ক নেই এবং একে অপরের সাথে খুব কম সম্পর্কিত, তাই মোল্লাসকোইডা নামটি পরিত্যাগ করা হয়েছে।

Remove ads

বৈশিষ্ট্য

  • এদের দেহ নরম। নরম দেহটি শক্ত খোলস ম্যান্টল দিয়ে আবৃত। ম্যান্টল থেকে ক্ষরিত পদার্থে চুনময় খোলক গঠিত হয়।
  • পেশিবহুল পা দিয়ে এরা চলাচল করে।
  • বহিঃত্বক ,ফুসফুস বা ফুলকার সাহায্যে শ্বাসকার্য চালায়।
  • এরা বৈচিত্র্যপূর্ণ প্রাণী।
  • এরা অধিকাংশই সামুদ্রিক।
  • সিলোমেট,অধিকাংশ দ্বিপার্শ্বীয় প্রতিসম।
  • রক্তে হিমোসায়ানিন (haemocyanin) ও অ্যামিবোসাইট (amoebocyte) কণিকা থাকে।
  • দেহে ম্যান্টল নামক পাতলা আবরণ থাকে।
  • উদাহরণ- শামুক, অক্টোপাস, ললিগো, সেপিয়া প্রভৃতি।
Remove ads

তথ্যসূত্র

Loading related searches...

Wikiwand - on

Seamless Wikipedia browsing. On steroids.

Remove ads