শীর্ষ প্রশ্ন
সময়রেখা
চ্যাট
প্রসঙ্গ

শিবলিঙ্গ

নির্গুণ সত্ব উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ

শিবলিঙ্গ
Remove ads

শিবলিঙ্গ (সংস্কৃত: लिङ्गं, লিঙ্গ; অর্থাৎ, "শিবের লিঙ্গ"[][]) হল পরমেশ্বর শিবের নির্গুণ সত্বার একটি লিঙ্গ

Thumb
শিবলিঙ্গ, চাম স্তম্ভ, থাপ ডোই, কুই নিয়ন, বিন ডিন প্রদেশ, ভিয়েতনাম।
Thumb
শিবলিঙ্গ

এটা দ্বারা শিবের লিঙ্গ বোঝানো হয়, । বাংলযৌনাঙ্গ্যাকরণলিঙ্গের পূাস্ত্রে কোনো ব্যক্তি বা বস্তু পুরুষ,স্ত্রী নাকি ক্লীব প্রভৃতি চিহ্নিত করতে ব্যবহৃত হয়। শিবলিঙ্গ শব্দের শাব্দিক অর্থ হলো শিবের লিঙ্গ। শিব লিঙ্গ উপরে ৩টি সাদা দাগ থাকে যা শিবের লিঙ্গে থাকে, শিবলিঙ্গটি প্রায়শই একটি ডিস্ক-আকৃতির প্ল্যাটফর্মের মধ্য থেকে উত্থাপিত হয়।[][] শিব লিঙ্গ ডিক্স দ্বারা পার্বতীর যোনী ও শিবের লিঙ্গ একসাথে হওয়াকে বোঝানো হচ্ছে শিবের লিঙ্গ দারুবনে শিব যখন ঋষিদের পত্নীদের নিয়ে যাচ্ছিলো তখন শিবকে ঋষিরা অভিশাপ দেয় যাতে শিবের লিঙ্গ খসে পড়ে তান্ডব চালায় এতে বিশ্ব ব্রহ্মান্ড ধ্বংসের পথে যায় এতে দেবতারা শিবের কাছে ক্ষমা চায় এবং তার লিঙ্গ পুজার শর্তে এই তান্ডব লীলা থামায়।

Remove ads

উৎস

সারাংশ
প্রসঙ্গ
Thumb
লিঙ্গোভাব শিব: শিব এক অনাদি অনন্ত লিঙ্গস্তম্ভের রূপে আবির্ভূত, বিষ্ণু বরাহ বেশে স্তম্ভের নিম্নতল ও ব্রহ্মা ঊর্ধ্বতল সন্ধানে রত। এই অনাদি অনন্ত স্তম্ভটি শিবের অনাদি অনন্ত সত্ত্বার প্রতীক মনে করা হয়।[]

নৃতাত্ত্বিক ক্রিস্টোফার জন ফুলারের মতে, হিন্দু দেবতাদের মূর্তি সাধারণত মানুষ বা পশুর অনুষঙ্গে নির্মিত হয়। সেক্ষেত্রে প্রতীকরূপী শিবলিঙ্গ একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যতিক্রম।[] কেউ কেউ মনে করেন, লিঙ্গপূজা ভারতীয় আদিবাসী ধর্মগুলি থেকে হিন্দুধর্মে গৃহীত হয়েছে।[]

অথর্ববেদে একটি স্তম্ভের স্তব করা হয়েছে। এটিই সম্ভবত লিঙ্গপূজার উৎস।[] কারোর কারোর মতে যূপস্তম্ভ বা হাঁড়িকাঠের সঙ্গে শিবলিঙ্গের যোগ রয়েছে। উক্ত স্তবটিকে আদি-অন্তহীন এক স্তম্ভ বা স্কম্ভ-এর কথা বলা হয়েছে; এই স্কম্ভ চিরন্তন ব্রহ্মের স্থলে স্থাপিত। যজ্ঞের আগুন, ধোঁয়া, ছাই, মাদক সোমরস ও যজ্ঞের কাঠ বহন করার ষাঁড় ইত্যাদির সঙ্গে শিবের শারীরিক বৈশিষ্ট্য ও গুণাবলির যোগ লক্ষিত হয়। মনে করা হয়, কালক্রমে যূপস্তম্ভ শিবলিঙ্গের রূপ নিয়েছিল।[][] লিঙ্গপুরাণে এই স্তোত্রটি ব্যাখ্যা করতে গিয়ে একটি কাহিনির অবতারণা করা হয়। এই কাহিনিতে উক্ত স্তম্ভটিকে শুধু মহানই বলা হয়নি বরং মহাদেব শিবের সর্বোচ্চ সত্ত্বা বলে উল্লেখ করা হয়েছে।[]

ভারত ও কম্বোডিয়ায় প্রচলিত প্রধান শৈব সম্প্রদায় ও অনুশাসন গ্রন্থ শৈবসিদ্ধান্ত মতে, উক্ত শৈব সম্প্রদায়ের প্রধান উপাস্য দেবতা পঞ্চানন (পাঁচ মাথা-বিশিষ্ট) ও দশভূজ (দশ হাত-বিশিষ্ট) সদাশিব প্রতিষ্ঠা ও পূজার আদর্শ উপাদান হল শিবলিঙ্গ।[১০]

প্রাচীনত্ব

Thumb
চার মাথা-বিশিষ্ট পাথরের শিবলিঙ্গ, দশম শতাব্দী, নেপাল

এখনও পূজিত হয় এমন প্রাচীনতম লিঙ্গটি রয়েছে গুডিমাল্লামে। ক্লস ক্লোস্টারমায়ারের মতে, এটি স্পষ্টতই শিশ্নের অনুষঙ্গে নির্মিত। লিঙ্গটির নির্মাণকাল খ্রিষ্টপূর্ব দ্বিতীয় শতাব্দী।[১১] শিবের একটি অবয়ব লিঙ্গটির সম্মুখভাগে খোদিত রয়েছে।[১২]

Remove ads

আধুনিক ব্যাখ্যা

সারাংশ
প্রসঙ্গ

১৮১৫ সালে আ ভিউ অফ দ্য হিস্ট্রি, লিটারেচার, অ্যান্ড মিথোলজি অফ দ্য হিন্দুজ গ্রন্থে লেখক ব্রিটিশ মিশনারি উইলিয়াম ওয়ার্ড হিন্দুদের অন্যান্য ধর্মীয় প্রথার সঙ্গে লিঙ্গপূজারও নিন্দা করেছিলেন। তার মতে লিঙ্গপূজা ছিল, "মানুষের চারিত্রিক অবনতির সর্বনিম্ন পর্যায়"। শিবলিঙ্গের প্রতীকবাদটি তার কাছে ছিল "অত্যন্ত অশালীন; সে সাধারণের রুচির সঙ্গে মেলানোর জন্য এর যতই পরিমার্জনা করা হোক না কেন"। ব্রায়ান পেনিংটনের মতে, ওয়ার্ডের বইখানা "ব্রিটিশদের হিন্দুধর্ম সম্পর্কে ধারণা ও উপমহাদেশে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক কর্তৃত্বের মূল ভিত্তিতে পরিণত হয়েছিল।"[১৩] ব্রিটিশরা মনে করত, শিবলিঙ্গ পুরুষ যৌনাঙ্গে আদলে নির্মিত এবং শিবলিঙ্গের পূজা ভক্তদের মধ্যে কামুকতা বৃদ্ধি করে। অবশ্য ১৮২৫ সালে হোরাস হেম্যান উইলসন দক্ষিণ ভারতের লিঙ্গায়েত সম্প্রদায় সম্পর্কে একটি বই লিখে এই ধারণা খণ্ডানোর চেষ্টা করেছিলেন।[১৩]

Thumb
ওয়াট ফো লিঙ্গম্‌

মনিয়ার উইলিয়ামস তার ব্রাহ্মণইজম্‌ অ্যান্ড হিন্দুইজম্‌ বইয়ে লিখেছেন, "লিঙ্গ" প্রতীকটি "শৈবদের মনে কোনো অশালীন ধারণা বা যৌন প্রণয়াকাঙ্ক্ষার জন্ম দেয় না।"[১৪] জেনেন ফলারের মতে, লিঙ্গ "পুরুষাঙ্গের অনুষঙ্গে নির্মিত এবং এটি মহাবিশ্ব-রূপী এক প্রবল শক্তির প্রতীক।"[১৫] ডেভিড জেমস স্মিথ প্রমুখ গবেষকেরা মনে করেন, শিবলিঙ্গ চিরকালই পুরুষাঙ্গের অনুষঙ্গটি বহন করছে। অন্যদিকে এন. রামচন্দ্র ভট্ট প্রমুখ গবেষকেরা মনে করেন, পুরুষাঙ্গের অনুষঙ্গটি অপেক্ষাকৃত পরবর্তীকালের রচনা।[১৬] এম. কে. ভি. নারায়ণ শিবলিঙ্গকে শিবের মানবসদৃশ মূর্তিগুলি থেকে পৃথক করেছেন। তিনি বৈদিক সাহিত্যে লিঙ্গপূজার অনুপস্থিতির কথা বলেছেন এবং এর যৌনাঙ্গের অনুষঙ্গটিকে তান্ত্রিক সূত্র থেকে আগত বলে মত প্রকাশ করেছেন।[১৭]

রামকৃষ্ণ পরমহংস "জীবন্ত-লিঙ্গপূজা" করতেন।[১৮][১৯] ১৯০০ সালে প্যারিস ধর্মীয় ইতিহাস কংগ্রেসে রামকৃষ্ণ পরমহংসের শিষ্য স্বামী বিবেকানন্দ বলেন, শিবলিঙ্গ ধারণাটি এসেছে বৈদিক যূপস্তম্ভ বা স্কম্ভ ধারণা থেকে। যূপস্তম্ভ বা স্কম্ভ হল বলিদানের হাঁড়িকাঠ। এটিকে অনন্ত ব্রহ্মের একটি প্রতীক মনে করা হত।[][][২০] জার্মান প্রাচ্যতত্ত্ববিদ গুস্তাভ ওপার্ট শালগ্রাম শিলা ও শিবলিঙ্গের উৎস সন্ধান করতে গিয়ে তার গবেষণাপত্রে এগুলিকে পুরুষাঙ্গের অনুষঙ্গে সৃষ্ট প্রতীক বলে উল্লেখ করে তা পাঠ করলে, তারই প্রতিক্রিয়ায় বিবেকানন্দ এই কথা বলেছিলেন।[২১] বিবেকানন্দ বলেছিলেন, শালগ্রাম শিলাকে পুরুষাঙ্গের অনুষঙ্গ বলাটা এক কাল্পনিক আবিষ্কার মাত্র। তিনি আরও বলেছিলেন, শিবলিঙ্গর সঙ্গে পুরুষাঙ্গের যোগ বৌদ্ধধর্মের পতনের পর আগত ভারতের অন্ধকার যুগে কিছু অশাস্ত্রজ্ঞ ব্যক্তির মস্তিস্কপ্রসূত গল্প।[]

স্বামী শিবানন্দও শিবলিঙ্গকে যৌনাঙ্গের প্রতীক বলে স্বীকার করেননি।[২২] ১৮৪০ সালে এইচ. এইচ. উইলসন একই কথা বলেছিলেন।[২৩] ঔপন্যাসিক ক্রিস্টোফার ইসারউড লিঙ্গকে যৌন প্রতীক মানতে চাননি।[২৪] ব্রিটানিকা এনসাইক্লোপিডিয়ায় "Lingam" ভুক্তিতেও শিবলিঙ্গকে যৌন প্রতীক বলা হয়নি।[২৫]

মার্কিন ধর্মীয় ইতিহাস বিশেষজ্ঞ ওয়েনডি ডনিগারের মতে,

For Hindus, the phallus in the background, the archetype (if I may use the word in its Eliadean, indeed Bastianian, and non-Jungian sense) of which their own penises are manifestations, is the phallus (called the lingam) of the god Siva, who inherits much of the mythology of Indra (O'Flaherty, 1973). The lingam appeared, separate from the body of Siva, on several occasions... On each of these occasions, Sivas wrath was appeased when gods and humans promised to worship his lingam forever after, which, in India they still do. Hindus, for instance, will argue that the lingam has nothing whatsoever to do with the male sexual organ, an assertion blatantly contradicted by the material.[২৬]

যদিও অধ্যাপক ডনিগার পরবর্তীকালে তার দ্য হিন্দুজ: অ্যান অল্টারনেটিভ হিস্ট্রি বইতে তার বক্তব্য পরিষ্কার করে লিখেছেন। তিনি বলেছেন, কোনো কোনো ধর্মশাস্ত্রে শিবলিঙ্গকে ঈশ্বরের বিমূর্ত প্রতীক বা দিব্য আলোকস্তম্ভ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এই সব বইতে লিঙ্গের কোনো যৌন অনুষঙ্গ নেই।শিব শব্দের অপর একটি অর্থ হল যাঁর মধ্যে প্রলয়ের পর বিশ্ব নিদ্রিত থাকে; এবং লিঙ্গ শব্দটির অর্থও একই – যেখানে বিশ্বধ্বংসের পর যেখানে সকল সৃষ্ট বস্তু বিলীন হয়ে যায়। যেহেতু হিন্দুধর্মের মতে, জগতের সৃষ্টি, রক্ষা ও ধ্বংস একই ঈশ্বরের দ্বারা সম্পন্ন হয়, সেই হেতু শিবলিঙ্গ স্বয়ং ঈশ্বরের প্রতীক রূপে পরিগণিত হয়।

হেলেন ব্রুনারের মতে,[২৭] লিঙ্গের সামনে যে রেখাটি আঁকা হয়, তা পুরুষাঙ্গের গ্ল্যান্স অংশের একটি শৈল্পিক অনুকল্প। এই রেখাটি আঁকার পদ্ধতি মধ্যযুগে লেখা মন্দির প্রতিষ্ঠা-সংক্রান্ত অনুশাসন এবং আধুনিক ধর্মগ্রন্থেও পাওয়া যায়। প্রতিষ্ঠাপদ্ধতির কিছু কিছু প্রথার সঙ্গে যৌন মিলনের অনুষঙ্গ লক্ষ্য করা যায়। যদিও গবেষক এস. এন. বালগঙ্গাধর লিঙ্গের যৌন অর্থটি সম্পর্কে ভিন্নমত পোষণ করেছেন।[২৮]

Remove ads

গ্যালারি

তথ্যসূত্র

পাদটীকা

বহিঃসংযোগ

Loading related searches...

Wikiwand - on

Seamless Wikipedia browsing. On steroids.

Remove ads